নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগের স্বত্বাধিকারী সামিয়া

সামিয়া

Every breath is a blessing of Allah.

সামিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

পথে ঘাটে পর্ব (১৬)

২০ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:৫৬

লোকটি আমার পাশে বসার সময় তার আমার সীট এর মাঝে ১ টা ওয়ারলেস এর মত দেখতে মোবাইল, একটা খাম বন্ধ চিঠি ২/৩ টা আরও কিছু পেপার রাখলো। ফ্যাকাসে চেহারা, ঠোটের দুই কিনারে থুথু জমে থেকে থেকে যেন সাদা হয়ে গেছে, শুকনা একহারা গরন, দীর্ঘদিন ধরে কোন যন্ত্রনা সহ্য করার দীর্ঘস্থায়ী ছাপ চেহারায় সুস্পষ্ট। বাস স্টার্ট দিতেই মনে হল সীটে রাখা তার কাগজ পত্র গুলো নীচে পরে যাওয়ার সম্ভাবনা।
বললাম এই যে, আপনার এগুলো হাতে নিয়ে বসুন, বাসের ঝাকুনিতে নীচে পরে যেতে পারে, সে আমার দিকে তাকিয়ে লজ্জিত ভঙ্গীতে হেসে তার জিনিষপত্র গুলো হাতে নিলো,

আপনি অমুক জায়গায় জব করেন? জিজ্ঞেস করলো লোকটা (গলায় আমার আই ডি কার্ড দেখে বলল) অফিসের আই ডি কার্ড ঝুলিয়ে রাখা অনেকে খ্যাত মনে করলেও আমি এটা গলায় পড়ি, প্রথমত এর কারন হল নিজের একটা আইডেন্টিটি, আমি রোজ অফিসে আসার সময় আমার এলাকা থেকে ব্যাপক গার্মেন্টস কর্মীও একই টাইমে বাসে ওঠে, বাস ড্রাইভাররা কন্ট্রাক্টররা ওদের সাথে, ওরা ড্রাইভার কনট্রাক্টরের সাথে, এমনকি নিজেরা নিজেদের সাথে প্রচণ্ড বাজে তিক্ত ব্যাবহার করে প্রায়ই দেখি, বলা যায় নানান বিজাতীয় এক দল মানুষের সাথে রোজ চলাফেরার পথে যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হতে না হয় তাই আই ডি কার্ড ইউজ করি রাস্তায়। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় মরে গেলে আমার লাশটার যেন অন্তত একটা পরিচয় পাওয়া যায় সহজেই, রাস্তার পর হল অফিস, এখানে এন্ট্রি থেকে শুরু করে হেন জায়গা নাই যেখানে কার্ড পাঞ্চিং ছাড়া দরজা খোলে। আমি দুই বার বাসায় আই ডি ফেলে এসেছিলাম এই জন্য কি যে পেরেশানিতে আমার দিন গেছে বোঝাতে পারবোনা, অফিসে থেকেও আমি ছিলাম ইনভিসিবাল, এই জন্য ডিপার্টমেন্ট হেড এর পিছনে ঘোরাঘুরি, এইচ আরে যাও তুমি ভিসিবাল লিখিত প্রমান দিয়া আসো হেন তেন আরও কত কি।


যাক গে পথে ঘাটে প্রসঙ্গে আসি, আমি বললাম হ্যাঁ আমি ওইখানে job করি,
সে বলল সে ট্যাক্স অফিসে সাব ইন্সপেক্টর পোস্ট এ কাজ করছে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে, তার কথাতে জানতে পারলাম বাংলাদেশে আয়ের দিক থেকে ফ্রেশ কোম্পানি এই বছর নাম্বার ওয়ান পজিশনে, সেকেন্ডে আছে নাসির গ্লাস, জানলাম তাদের monthly আয় কত বাৎসরিক আয় কত, তাদের সরকার কে কত percent ট্যাক্স দেয়ার কথা, আসলে তারা কত percent ট্যাক্স দেয়, আমাদের কোম্পানির বাৎসরিক total income কত? ফ্রেশ কোম্পানির মালিকের ২টা মেয়ে আছে, তারা সাইট ভিসিট করতে ২ বোন আলাদা আলাদা প্রাইভেট হেলিকপ্টার ইউজ করে, তাকে একদিন সেই হেলিকপ্টারে চড়তে দিয়েছিল, এই পর্যায়ে সে তার ওয়ারলেস টাইপ মোবাইলে হেলিকপ্টারের সামনে তোলা তার ছেলের ছবি দেখাল, তার ছেলে ইংলিশ মিডিয়ামে কোন স্কুলে পরে বলল, ফ্রেশ কোম্পানির মেয়েরা তাকে বলছে এই যে আপনি একদিন হেলিকপ্টার ইউজ করলেন তাতে আমাদের খরচ হল ৫ লক্ষ টাকা, সে ঘুষ খায় না বলেই তার জন্য ফ্রেশ কোম্পানির মালিকের হেলিকপ্টার ব্যাবস্থা।


এরকম হেন তেন নানা কথা কথা কথা, আমি শুনতে শুনতে বিরক্ত ভাবছি কখন নামবে!! এত টাকা টাকা টাকা গল্প একদম ভাল্লাগছে না আর, ভিতরে ভিতরে উনার সম্পর্কে ঘুষ খোর বাচাল এই টাইপ ধারনা করে বসে আছি।


আমি তার ছেলের হেলিকপ্টারের সাথে তোলা পিকের দিকে তাকিয়ে আছি ওটা মোবাইল স্কিনে দেয়া,
বললাম আকাশের উপর সারাদিন থাকতে ভাললাগলো? যদি সারাদিনের জার্নি হয় এটা তো খুব বোরিং হওয়ার কথা?
সে হাসল বলল মাঝে মধ্যে নামছি, খাইছি দাইছি ছবি তুলছি,
হুম... আপনার ওয়াইফ ও ছিল?
সে ছিলনা, সে অসুস্থ?
কি হয়েছে?
Paralysis অর্ধেক বডি নাড়াতে পারেনা।
কত দিন ধরে?
৩ মাস কম ১৬ বছর হয়ে গেলো। বিয়ের এক বছর পর্যন্ত সে সুস্থ ছিল।
কি বলেন? ডাক্তার কি বলে? কি হয়েছিলো উনার?
ডাক্তার বলছে আশা ছেড়ে দিতে, কেননা ওর রক্তনালী নাকি শুকিয়ে যাচ্ছে,
এই পর্যন্ত শুনে তাকে আমি নতুন ভাবে দেখতে লাগলাম, তাকে বোঝার চেষ্টা করলাম সে ঠিক বলছে কিনা, তার চোখ দেখে বুঝলাম সে সত্যি বলছে, এক মহাকাল ব্যাপী বেদনায় ভর্তি হয়ে আছে তার চোখ।

আপনাদের পছন্দের বিয়ে?
ও আর আমি একই ক্লাসে পড়তাম তখন আমি নতুন নতুন চাকরি পেয়েছি, ওর পরাশুনা শেষ, বিয়ে করতে চাইলাম বাসায় মানলোনা, ওর বাসায় ও একই অবস্থা, আমরা সবার অমতে বিয়ে করে একটা বাসা ভাড়া করে থাকতে শুরু করলাম, আত্মীয় স্বজন সবাই আমাদের এক ঘরে করে দিলো কেউ আমাদের সাথে সম্পর্ক রাখতে নারাজ, আমরা ভাবলাম ঠিক হয়ে যাবে।
ঠিক হল??
না, অনেক চেষ্টা করেছি আমরা দুইজনই, কিন্তু হয়নি, এখনও, এত বছর পর ও না।

তারপর?
বিয়ের এক বছরের মাথায় ও সন্তান সম্ভবা হল, তখন ঢাকা শহরে আমাদের কেউ নেই, ও শুরু থেকেই খুব অসুস্থ থাকতো, কাজেই ওকে ওদের বাড়ি নিয়ে গেলাম, ওরা বাড়ি থেকে বের করে দিলো, আমার ওয়াইফ ওর বাবার পা ধরে কান্নাকাটি করলো তবু তারা ওকে মেনে নিলো না, আর আমাদের বাড়িতে রাখা তো সম্ভবই না তারা তো মেনে নিবেনই না, তাই ঢাকা ফেরত এলাম, সারাদিন চাকরি করে বাসায় ফিরে আমি যতটুকু পারতাম ওকে সাহায্য করতাম।

এর ভেতর আমার ট্রেনিং এর জন্য থাইল্যান্ড যেতে হল, নতুন চাকরি তার উপর সরকারি তাই ওকে একা রেখেই যেতে বাধ্য হলাম, তখনকার সময় মোবাইল ছিলনা, তাই সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, দেশে ফিরে বাসায় গিয়ে শুনলাম পাড়া প্রতিবেশীরা ওকে কোন হাসপাতালে দিয়ে এসেছে সে নাকি দুই রাত প্রসব বেদনা নিয়ে ঘরে পরে ছিল, হাসপাতালে তার তেমন কোন চিকিৎসাই হয়নি উদ্বাস্তু ভেবেছিল হয়ত, কোন রকম ওরা বাচ্চা টাকে বের করে ছিল, সেই থেকে সে paralysis। তবু আমি খুশি যে ও বেঁচে আছে, আমার ১ টা ছেলে আছে এইবার ক্লাস এইটে উঠেছে, এই তো আমার সুখ, কেউ যখন আমাকে বিয়ে করতে বলে আমার চিৎকার করে কান্না আসে, বিয়ে করব কেন! আমার ঘর আলো করে আমার বউ তো আছে হোক সে paralysis।

গাড়িতে অচেনা মানুষদের সাথে একটু কথা বার্তা বললে বিদায় বেলায় মৌখিক ভদ্রতায় বলি ভালো থাকবেন। তাকে পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা ভরে বললাম আপনাদের জন্য অনেক অনেক দোয়া রইলো।


জগৎ খুবি রহস্যময় একটা জায়গা, এখানে পরিপূর্ণ সুখী কেউ হতেই পারেনা।


বিঃ দ্রঃ এটা কোন গল্প নয় আমার জীবনে পথে ঘাটে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:১৩

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: অদ্ভুত তিক্তমধুর কাহিনি।

২১ শে জুন, ২০১৬ সকাল ৯:৩৩

সামিয়া বলেছেন: অদ্ভুত তিক্তমধুর বাস্তব ঘটনা :) :)

২| ২১ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৩৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এটাই তো জীবন। চমৎকার একটি লেখা পড়লাম। ভদ্রলোক তার প্যারালাইজড স্ত্রী নিয়ে এত বছর ধরে বসবাস করছেন, তাকে ত্যাগ করেননি বা দ্বিতীয় বিয়ে করেননি- এটা জেনে তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জেগে উঠলো।

ধন্যবাদ ইতি সামিয়া।

২১ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:৫৪

সামিয়া বলেছেন: হুম জীবন টা এমনি, অনেক কিছুই আমাদের মেনে নিতে হয়। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ প্রেয়নামুলক মন্তব্য করার জন্য। শুভ কামনা।

৩| ২১ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:০০

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: কত কষ্ট েয মানুষের বুকে লুকিয়ে থাকে তার ইয়ত্তা নেই । সুন্দর লিখনি

২১ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:১১

সামিয়া বলেছেন: সেটাই।। কয়েকদিন আগে আমার ফুপাতো বোনের এক মাত্র ছেলে সামান্য জ্বরে ভুগে মরে গেলো, ছেলেটা মরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তারা ছিল ঈর্ষা করার মত সুখী, আর এখন তাদের সব শেষ।
ভালো থাকবেন শুভ কামনা রইলো।

৪| ২১ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ২:০৩

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: অনেকদিন পর আপনার পথেঘাটে পর্ব পড়লাম।

২২ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:২১

সামিয়া বলেছেন: অনেকদিন পর হলেও আমার পথে ঘাটে পর্ব পড়ার জন্য কৃতজ্ঞ । অনেক ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.