নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগের স্বত্বাধিকারী সামিয়া

সামিয়া

Every breath is a blessing of Allah.

সামিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপেক্ষার অবসান

২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৫




জলিল মিয়ার বয়স ৭৩ বছর কিংবা কাছাকাছি, তার বউ এর বয়স তার থেকে অনেক কম সম্ভবত ৪০/৪২ হবে। জলিল মিয়া তার প্রথম এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিন নম্বর বউকে নিয়ে সংসার করছে, সংসার বলতে একটা ছোট্ট মাটির ঘড়, উপরে ছন এর চালা, ঘরের মেঝেতে পাটি পাতা সংসার।

বয়সের জন্য হোক কিংবা আলস্যজনিত কারনে সে কোন কাজই করেনা, ভাইবোন আত্মীয় পাড়া প্রতিবেশীর কাছ থেকে এটা ওটা সাহায্য পেয়েই জীবন কাটে, আর যখন কিছুই কেউ দেয় না তখন তারা দুইজনই না খেয়ে থাকে, জলিল মিয়া ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে খুব কষ্ট হয়, যখন কোন খাবার জোটে না তখন সে চুপ করে থাকে। সে বোঝে তার বউয়ের ও অনেক কষ্ট হয়, সে তার স্ত্রীকে অনেক ভালবাসে, কিন্তু আফসোস তার প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য সে কিছুই করতে পারেনা। এই ভাবেই দিন গুলো পার হচ্ছিল তাদের।

এরকম একদিন সময়ে জলিল মিয়ার স্ত্রীকে তার আগের ঘরের মেয়ে নিতে আসে, মেয়ের নাম ময়না, ময়নার মা জলিল মিয়াকে বিয়ে করবার আগে তার আগের ঘরের মেয়েকে এক বাসায় কাজ করতে দিয়ে আসে, তারা মানুষ ভাল ময়নাকে লেখাপড়া করিয়ে বড় ঘরে বিয়ে দিবে কথা দেয়, তারা কথা রেখেছে, মেয়েকে বেশ ভালো বর দেখে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে, ছেলের কাপড়ের ব্যবসা, কাপড়ের ব্যবসার ব্যবস্থা তারাই করে দিয়েছে।
মেয়ে মাশাল্লাহ দেখতে যেমন সুন্দর হইসে তেমন চালাক চতুর শিক্ষিত ও, কথায় বার্তায় চলনে বলনে কে বলবে ময়না তার মেয়ে!! মেয়ে এখন তার মাকে নিজের কাছে নিতে এসেছে, কিন্তু জলিল মিয়াকে না, জলিল মিয়া ময়নার বাবা না, তাই ওই লোকের প্রতি বিন্দু মাত্র মায়া মমতা ময়নার মধ্যে তৈরি হয়না, ময়নার মা কিছুক্ষন গাই গুই করে রাজি হয়, ভাল ঘরে থাকার লোভ বৃদ্ধ স্বামীর প্রতি টান কমিয়ে দেয়। যাওয়ার সময় একটা মোবাইল নাম্বার দিয়ে যায় স্বামীর হাতে, কোন দরকার হলে কল দিতে, যদিও ময়নার মাকে সব কিছুতেই জলিল মিয়ার দরকার, ময়নার মা বুঝেও বুঝতে চায় না, চলে যাওয়ার সময় জলিল মিয়া বলে, ময়নার মা; না গেলে হয় না? আমাকে ফেলে তুমি যাইবাই যাইবা? আমি একলা কেমনে থাকব? ময়নার মা সেই কথার ভুক্ষেপ করেনা, চলে যায় সে।

এর পর অনেক দিন জলিল মিয়াকে দেখা যেত পথে পথে বসে থাকতে, পুরনো দুমড়ানো মুচড়ানো কাগজটা এর ওর হাতে দিয়ে বলত বাবা একটা কল দিয়া দেন কেউ কেউ কল দিয়ে দিত, কিন্তু বন্ধ নাম্বার, জলিল মিয়া তা বুঝতে চাইত না, সে চেষ্টা করেই যেত, যাদের বাসায় ল্যান্ড লাইন আছে তাদের বাড়ির গেটের কাছে মোবাইল নাম্বার লেখা কাগজটা নিয়ে বসে থাকতো ভিখারির মত। খেতে সাধলেও খেত না, কখনো কখনো তাকে কাঁদতে দেখা যেত।


একদিন শীতের সকালে তাকে দেখা যায় সে খালি গায়ে সবুজ ঘাসের উপর পড়ে আছে চোখ বন্ধ করে, পক্ষাঘাত গ্রস্ত এবং মৃত্যুর খুব কাছাকাছি। দীর্ঘ সময় ওভাবে পড়ে থাকার পর যখন চোখ মেলল তখনো অনেক দুর্বল কণ্ঠে বলতে লাগলো ময়নার মা কে একটু ফোন করে দিবা!? কাগজটি তখনো হাতে দেখা যাচ্ছিলো তার।

এর দিন দুয়েক পর তার মৃত্যু হল।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৬

বিজন রয় বলেছেন: বিদারক।

২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৮

সামিয়া বলেছেন: :(

২| ২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৪

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: গল্প নাকি বাস্তব

২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:০১

সামিয়া বলেছেন: বাস্তব

৩| ২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:০৮

ডাঃ প্রকাশ চন্দ্র রায় বলেছেন: ভীষন মর্মান্তিক হৃদয়বিদারক।।

২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:১৭

সামিয়া বলেছেন: :( :( :(

৪| ২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:১০

সুমন কর বলেছেন: ভালো লাগল।

২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৪৫

সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন কর

৫| ২০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:২৬

উল্টা দূরবীন বলেছেন: হৃদয় বিদারক। বাস্তব না ইয়ে গল্প হলেও পারতো। (দীর্ঘশ্বাস)

২১ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:১১

সামিয়া বলেছেন: হুম উল্টা দূরবীন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.