নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগের স্বত্বাধিকারী সামিয়া

সামিয়া

Every breath is a blessing of Allah.

সামিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

পথে ঘাটে পর্ব (৯)

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:০৩




আমি ছেলেটির পাশের সীটটায় বসতে চাইতেই ছেলেটি ধুম করে উঠে দাঁড়ালো, শুধু যে দাঁড়ালো তাই_ই না ধপাস করে রোদে ভরা সীটে গিয়ে বসলো। আমি ওইখানে বসতে পারতাম কিন্তু সীটটা ছিল ভাঙা আর সীটের ফোম বের হয়ে আছে ছেড়া টেরা বিচ্ছিরি দেখতে। তার থেকেও খারাপ ব্যাপার হল ওখানে জঘন্য রকম রোদ পড়েছে, জানালার কাঁচ ভাঙা।
যে কারনে বাধ্য হয়েই আমি ছেলেটির পাশে বসতে গিয়েছিলাম, তাই বলে এই রকম আচরন করতে হবে! একদম উঠে চলে যেতে হবে!! এই রকম আচরন আমি কখনো কাউকে করতে দেখিনি, মেয়েদেরকেও না। মিনিট খানেক ভেতরে ভেতরে বেশ অপমান বোধ করছি, জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি, সামনে তাকালেই জঘন্য ছেলেটার দিকে চোখ পরে যাচ্ছে, নিজেকে কি ভাবে!!
হুহ। উঠে গেছিস ভাল করেছিস আমি হ্যান্ডব্যাগ পাশের সীটে রেখে আরাম করে বসেছি, অফিসের আইডি কার্ড খুলে ইউনিভার্সিটির আইডি পরে নিলাম। আইডি কার্ড ছাড়া ভার্সিটিতে ঢুকতে দেয় না, কত নিয়ম কত কি!! একটা আতঙ্কের ভেতর থাকতে হয় এই বুঝি আইডি কার্ডটা বাসায় ফেলে এসেছি।
এক্সকিউজ মি, আমি কি আপনার পাশের সীটে বসতে পারি???
পাশে তাকিয়ে দেখি সেই ছেলেটা যে কিছুক্ষন আগে তার পাশে বসায় উঠে গিয়েছিলো। লম্বা ফর্সা, উঁচু কপাল, চোখগুলো বড় বড়, বেশ স্নিগ্ধ হাসি ঠোট জুড়ে, মাথার চুল উঠি উঠি করছে অনুমান করছি অল্প কদিনের মধ্যে তার মাথা নেরা করেছিলো, এইটুকু বাদে সে সুদর্শন ছেলে।
মুখে হাসিটা এখনো আছে, আমি জবাব না দিয়ে ব্যাগ সরিয়ে নিলাম। সে বসলো।
- আপনি এ,ইউ,বি তে পড়েন?
- হুম
- আমি আই,ইউ,বি,এ,টি তে পড়তাম
- ও
- আপনি কিশে? বি,বি,এ না এম,বি,এ?
- এম,বি,এ
- আমি ও
- ওহ
- আমার ছোট ভাই একটা আছে আপনাদের ইউনিতে পড়ে
- তাই!
- হুম
- আপনার মেজর কি
- Accounting
- আমার Finance
- হু বলে আমি চুপ, ছেলেটি কথা বলেই যাচ্ছে, আজকের আকাশটা কেমন দেখছেন? কেমন গাড় বেগুনী রঙ, দেখলেই কেমন মন খারাপ হয়ে যায়,
আমি বাইরে তাকালাম দেখলাম আকাশ খটখটে সাদা। তাকে অবিশ্বাসও করতে পারলাম না হয়তো ছিল কোথাও বেগুনি রঙ।
- আমি কিন্তু তুখোড় ছাত্র ছিলাম, ২ মাস আগে আমার স্কলারসিপ নিয়া লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল,
- যাননি কেন?
- অসুস্থ হয়েছিলাম।
- ও
- একটা ব্যাপার দেখে খুব অবাক লাগছে
- কোনটা ?
- এইযে গাছ ভর্তি এত পাখি। আজকাল ঢাকায় পাখি বেরে গেছে অনেক তাইনা?
- কই
- ওইযে, ওইখানে
বাইরে তাকালাম টুকটাক যা গাছ আছে রাস্তায় দেখলাম, পাখি দেখলাম না, ভাবলাম যে গাছে পাখি ছিল সেটা বুঝি পেছনে ফেলে এসেছে বাসটা।
- আপনি কিন্তু অন্যরকম
- তাই! এই কয়েক মিনিটেই কথা বলে আপনি বুঝে গেলেন আমি অন্যরকম!! কেন মনেহল এমন!?
- এই যে আমি আপনার পাশে বসলাম অথচ আপনি সীট থেকে উঠে গেলেন না! আমি হলে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে উঠে যেতাম, একমুহূর্ত বসতাম না। আমি কারো পাশে বসিনা।
- আমি বুঝলাম, অবশেষে তাকে বুঝলাম। আমার পাশে বসে অনর্গল কথা বলা সুদর্শন যুবকটি কেন এলোমেলো বকছে something is wrong. এই জন্যই হয়তো চুলগুলো এত ছোট করে ছাঁটা, ঘটনা বুঝতে পেরে আমার অস্বস্তি লাগছে তার পাশে বসতে, বাস ভর্তি মানুষজন, এটা ভরসার ব্যাপার।
- আমি কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনা, শুধু আপনাকে ভাললাগছে তাই কথা বলছি, আমি সব মেয়েদের ঘৃণা করি, আমি কখনো কোন মেয়ের মুখ দেখতে চাইনা, এই যে রাস্তা ঘাঁটে চলাফেরা করি আমি কোন মেয়ের দিকে তাকাইনা কথা বলিনা, আজ কি হল কে জানে আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করলো, আমার ভার্সিটিতে যেতে ইচ্ছে করে, পড়তে ইচ্ছে করে, ডাক্তার বলেছে, আরও রেস্টে থাকতে, ব্রেনে প্রেসার দেয়া যাবেনা, আমার এসব ভাললাগেনা, বাসায় সারাক্ষন পাহারা দিয়ে রাখে। কিছু করতে দেয় না, কোথাও যেতে দিতে চায় না ভাবে বুঝি হারিয়ে যাব। কিন্তু আমি তো একি রকম আছি তারা বোঝে না, আম্মাকেও সহ্য হয় না, আমার আম্মা শুধু কাঁদে, বাবাকে আমার ভাললাগে বাবা কাঁদেনা, আপনি কিন্তু আজ থেকে আমার ফ্রেন্ড।
- আপনার কি হয়েছে?
- ব্রেন স্ট্রোক, টানা তিন দিন আমি অজ্ঞান ছিলাম।
- কি কারনে হয়েছিল
- কি কারনে হয়েছিল তো মনে করতে পারিনা এখন, ডাক্তার বলছে ওসব নিয়ে না ভাবতে।
- ঠিকাছে ওসব নিয়ে কথা বলার দরকার নেই।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো ছেলেটার জন্য। কি রকম হড়বড় করে বাচ্চাদের মত কথা বলে যাচ্ছে, আহারে
- আপনার মোবাইল নাম্বার কত?
- মোবাইল নাম্বার! আমি হকচকিয়ে গেলাম (এর জন্য মন খারাপ হলেও মোবাইল নাম্বার দেয়া যাবেনা, নিজেকে সেফ রাখার জন্যই আমাদের স্বার্থপর হতে হয় গো।) আমি বললাম আপনারটা বলেন।
- আমার তো কিছুই মনে থাকেনা তবু ভাবতে হবে, সাথে ফোন নিয়ে বেরও হইনি ফোন নিয়ে বের হলে ফোন করে করে বিরক্ত করে ছাড়ত বাসা থেকে, ছেলেটি মোবাইল নাম্বার মনে করার জন্য ভীষণ চেষ্টা করতে লাগলো, দেখলাম মুখ চোখ ঘামে ভিজে গেছে গরমে কিনা কে জানে মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ বলে উঠলো
- আপনি কি আমার মোবাইল নাম্বার ভুলে গেছেন?
- কই নাতো (একটু চালাকি করলাম, বোধহয় তার মনে হয়েছে আমাকে ওর মোবাইল নাম্বার ইতিমধ্যে দিয়ে দিয়েছে)
- আমিও তো তাই বলি, আমি তো আপনাকে নাম্বার বলেছি, শুধু শুধু বেগুনী আকাশ দেখছিলাম।
আমি বললাম, আমি এখন নামবো
- আচ্ছা আমিও তাহলে নামি, বলে উঠে দাঁড়ালো ছেলেটি, সামনে গিয়ে নেমে পড়লো গাড়ী থেকে, আমি নিজের সিকুরিটির জন্য আর একটু চালাকি করলাম, আমি আবার বসে পরলাম, নামলাম না, আমার পরের ষ্টপিসে নামলেও চলবে, আমি জানি আমি এখন ওর সাথে সাথে নামলেই আমাকে ও অনুসরণ করবে, ক্লাসের কোন পোলাপাইন দেখে ফেললে পচিয়ে আর রাখবেনা আমায়।
যখন দেখল আমি নামছিনা ও অবাক হয়ে গেলো একটু এগিয়ে এসে বলতে লাগলো আপনি নামছেন না কেন? নেমে আসুন নেমে আসুন।
বাস ছেড়ে দিলো, ছেলেটি আরও খানিকটা এগিয়ে এলো আমার জানালার কাছে, চোখে মুখে অবাক দৃষ্টি।

হে অচেনা যুবক। ভালো থেকো। আশা করি বেঁচে আছো এবং এতদিনে সুস্থ হয়ে গেছো।

বিঃ দ্রঃ এটা কোন গল্প নয় আমার জীবনে পথে ঘাটে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:০৮

বিজন রয় বলেছেন: হে অচেনা যুবক। ভালো থেকো। আশা করি বেঁচে আছো এবং এতদিনে সুস্থ হয়ে গেছো।

+++

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৪১

সামিয়া বলেছেন: হুম। ধন্যবাদ বিজন রয়

২| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:১৫

নুর আমিন লেবু বলেছেন: :(

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৪২

সামিয়া বলেছেন: :( :(

৩| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:১৮

আল মামুন রাজীব বলেছেন: ভালো লাগলো

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৪২

সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আল মামুন রাজীব

৪| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৪২

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: অচেনা অবাক ছেলে।

পড়ে ক্যামন জেনো ফাঁকা লাগছে।

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:১২

সামিয়া বলেছেন: হুম ধন্যবাদ দিশেহারা রাজপুত্র

৫| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৮

হাবীব কাইউম বলেছেন: দারুণ...ঘাঁটের মঁধ্যে চঁন্দ্রবিন্দুঁ কেঁন?

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:২৯

সামিয়া বলেছেন: হাহাহা ঠিক করে দিচ্ছি, ধন্যবাদ ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য, অনেক সময় অনেক কিছু চোখে পড়েনা।

৬| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:২০

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন: ক্ষনিকের পরিচয় । পথে যেতে যেতে হয়ত আবার দেখা হয়।
হয়ত আবার নতুন পরিচয়।

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:২৫

সামিয়া বলেছেন: সেটাই অপু দযা গ্রেট্ ধন্যবাদ

৭| ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৫৮

উল্টা দূরবীন বলেছেন: ভালো লাগল

২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৭

সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ উল্টা দূরবীন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.