নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মেয়েটিকে দেখেছিলাম মেয়েটির সাথে কথা বলার অনেক পরে, ফোনে কথা বলে নয়, বাস্তবে, ক্লাসে আমি মেয়েটির সামনে বসেছিলাম আর ও ঠিক আমার পেছনে বসা, এটা ছিল ঢাকা ইউনি’র নিউস প্রেজেন্টেশন এর ক্লাস। ক্লাস শুরু হতো ৪ টা থেকে চলতো ৭টা ৮টা পর্যন্ত। আমার বাড়ি দূরে বলে আমি ক্লাস কখনই কমপ্লিট করতাম না আগে বের হয়ে আসতাম। বিভিন্ন টিভি সেলিব্রেটিরা ক্লাস নিত। তাই ক্লাস চলাকালীন সময় বেরিয়ে আসাটা সত্যি খুব টাফ। কারন টের পেলে ভেতরে ভেতরে সেলিব্রেটিরা অপমান বোধ করতে পারে।
সেদিন বিটিভির সংবাদ পাঠক জায়েদ ইকবাল ক্লাস নিচ্ছিলেন।নভো থিয়েটারে করা তার ওয়ার্ক নিয়ে আলোচনা করছিলেন, চেক ওয়ান চেক টুঁ কথা গুলো বলার সময় কীভাবে ভয়েস ওঠানামা করেছিলেন সেই আলোচনা। ঘড়িতে সাড়ে ৮ টা বাজি বাজি করছে উনার থামা থামি নেই। রাস্তায় জ্যাম তো নিশ্চিত থাকবে জানা কথা, আজ বাসায় যেতে খবর আছে চিন্তা করতে করতে ভীষণ উসখুস করছিলাম।
ক্লাসে তেমন পরিচিত কেউ নেই আমার, এই সল্প সময়ের কোর্স গুলোতে তেমন পরিচিত থাকেও না তবে হ্যাঁ দল বেঁধে ভর্তি হলে সেটা ভিন্ন কথা। ঠিক তখনি মেয়েটি পেছন থেকে কথা বলে উঠলো। তুমি কি ক্লাস থেকে বের হতে চাও, সামনের সারিতে বসে পেছনে তাকিয়ে কথা বললে স্যার এর নজরে পরে যেতে পারি ভেবে সামনে ফিরেই চাপা স্বরে জবাব দিলাম হ্যাঁ। মেয়েটি বলল চল তাহলে! বলেই উঠে দাঁড়াল! এবং খুব দ্রুত বেরোনোর দরজা পর্যন্ত পৌঁছে গেল। পড়নে জিন্স নীল ফতুয়া পড়া মেয়েটি পেছন ফিরে চাইলো আমি তখনো বসা দেখে চোখ রাঙিয়ে হাত নেরে ইশারা করলো মেয়েটি। আমি তার ইশারা উপেক্ষা করতে পারলাম না। সাথে বাসায় ফেরার প্রচণ্ড তাড়া ও অনুভব করলাম।
বের হয়ে ওর দিকে চেয়ে বিজয় এর হাসি দিলাম। জিজ্ঞেস করে জানলাম ওর আমার বাড়ি একি দিকেই। ওর দূরত্ব একটু বেশি এই যা। ফোন নাম্বার চাইতেই দিল, নাম সেফ করার প্রয়োজনীয়তায় জানলাম মেয়েটির নাম শ্রাবণ। ও আমার নাম জিজ্ঞেশ করতেই বললাম কিন্তু মেয়েটা আমার নাম সেফ করলো যোধা আকবর মুভির এক চরিত্র যোধা বাই নাম দিয়ে ,আমাকে নাকি ওর কাছে সেইরকম লাগছে, ব্যাপারটায় বিরক্ত হলাম, বুঝতে দিলাম না, কে জানে কে কোথায় থাকি না থাকি, বাকি ক্লাস গুলো ওকে একটু এরিয়ে চললেই হবে। যদি অন্য কারো সামনে নামটি বলে বসে!!মেয়েটা অতিরিক্ত রোগা।
আজকাল আমরা এত বেশি যান্ত্রিক হয়ে গেছি কারো দিকে মুখ তুলে তাকাবার সময়টুকু পর্যন্ত আমাদের হাতে নেই। এতদিন ধরে ক্লাস করছি অথচ মেয়েটিকে এই প্রথম দেখেছিলাম আমি, জিজ্ঞেস করতেই জানলাম ও নিয়মিত ক্লাস করে, যাই হোক কথা বলতে বলতে শাহবাগ বাস স্ট্যান্ড পৌঁছে গেলাম মেয়েটি দুটা টিকেট কাটল, একটা আমার লোকেশন আর একটা ওর লোকেশন এর। আর তখনি বাস চলে এলো, শ্রাবণ আমার হাতে টিকেট দুটি দিয়ে বলল তুমি যাও বাসে ওঠো আমি বাকি টাকা নিয়ে আসি,
আমি বাসে উঠার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বাস ছেড়ে দিলো। মেয়েটি বাসে উঠতে পারলো না ।যে কোন ছোট বড় প্রবলেম এ আমার মাথা এত ক্লিন হয়ে যায় যে আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই, কারন কার্যত আমি তা নই। আমি পলকের মধ্যে মোবাইল বের করে ফোন করলাম ওকে, সাথে সাথেই ফোন ধরে ব্যাকুল কণ্ঠে মেয়েটি বলল ইতি আমি তো একা হয়ে গেলাম পরের বাস কখন আসবে ঠিক নেই, তুমি বাস থেকে নেমে যাও আমার খুব একা একা লাগছে প্লিজ তুমি নামো বাস থেকে।
আমি বললাম আমি নেমে কি করব! তুমি ওয়েট কর নেক্সট বাসের জন্য তাছাড়া বাস স্ট্যান্ড এ তো আরও যাত্রীরা আছে! একা লাগার কিছু নেই।
আমার কথা শুনে মেয়েটা থতমত খেয়ে গেল, বুঝলাম এই কয়েক মিনিটেই মেয়েটা আমাকে তার বন্ধু ভেবে ফেলেছে, আমার কাছে এখন তার অনেক এক্সপেকটেশন। অভিমানী এবং হতাশ গলায় বলল ঠিকাছে তুমি যাও ইতি। সরি তোমায় বিরক্ত করার জন্য।
আমি বললাম ওকে ডিয়ার বাই, নেক্সট ক্লাসে তোমার টিকেট এর দাম দিয়ে দেব, এখন বাস থেকে নেমে তো আর দেয়া সম্ভব না।
-টিকেট এর দাম তোমাকে দিতে হবে না, তুমি যাও।
আমি অবুঝের মত ওর মনের ভাব বুঝতে না পারার ভাব ধরে যান্ত্রিক বাই বলে ফোন কেটে দিয়েই উঠে দাঁড়ালাম!
মানুষের ভালবাসার কত যন্ত্রনা যে সহ্য করতে হয়!! অতি দ্রুত আমি ড্রাইভার কে বলে গাড়ী থামিয়ে নেমে পড়লাম, হাটা শুরু করলাম যে বাস স্ট্যান্ড পেছনে ফেলে রেখে এসেছি সেটার দিকে, জ্যাম এর জন্য তেমন এগোতে পারেনি বাস, তবু বেশ অনেকটা পথ হেঁটে আসতে হল, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ১৬ মিনিট চলে গেছে, আমি ভাবলাম মেয়েটিকে হয়ত পাওয়া যাবে না, হয়ত অন্য কোন বাস অথবা সি,এন,জি নিয়ে চলে গেছে।
বাস স্ট্যান্ড অনেকটা দৃষ্টির সীমানায় আসতেই দেখলাম আছে ও, মেয়েটা হতাশ হয়ে যাওয়া শুকনো মুখখানা নিয়ে একা দাঁড়িয়ে তখনো, আমি ওকে ডাকবো ডাকবো ভাবতে ভাবতেই ঠিক ওর সামনে যেয়ে দাঁড়ালাম। ও ভুত দেখার মতই চমকে উঠে একটা লাফ দিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
খুব কাছের মা, বাবা, ভাইবোন এই ধরনের কাছের মানুষকে দেখলে মানুষ যেভাবে জড়িয়ে ধরে ও ঠিক সেভাবেই আমাকে ধরল, রাস্তার মানুষ জন কিছু একটা ভাল হয়েছে ভেবে আমাদের স্নেহময় দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো, শ্রাবণ অতিরিক্ত বিশ্বয়ে আর আবেগ মাখা কণ্ঠে বার বার বলতে থাকল আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা তুমি ফিরে এসেছ। একদম বিশ্বাস হচ্ছে না। কি আশ্চর্য তুমি আমার জন্য এতটা পথ হেঁটে এসেছ আবার! আমার অনেক ভাললাগছে, থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ একশোটা থ্যাংক ইউ। আমিও হাসি ওর আনন্দ দেখে সত্যি খুব ভাললাগছিল সেই মুহূর্ত টা।
অনেক দিন হয়ে গেলো সেল ফোন হারানোর সাথে সাথে ওর নাম্বার ও হারিয়ে ফেলেছি। মেয়েটি ফেইসবুক কিংবা নেট এর কোন সাইটই ইউজ করেনা যে খুজে বের করবো ওকে। ডিয়ার শ্রাবণ যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস।
বিঃ দ্রঃ এটা কোন গল্প নয় আমার জীবনে পথে ঘাটে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা।
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩২
সামিয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ অনেক ধন্যবাদ
২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:২৭
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অামার তো রাগ হচ্ছিলো । যখন দেখলাম অাপনি তার কাছে গিয়েছেন, এবার রাগটা কমলো । মমত্ববোধ ভালো লাগলো । অাজকাল এটার খুব অভাব! ভালো থাকুক সে, সাথে অাপনিও । শুভ কামনা ।
১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৫
সামিয়া বলেছেন: হা হা হা ভাললাগলো আপনার রাগ হচ্ছিল জানতে পেরে। ধন্যবাদ অনেক অনেক। আপনিও ভাল থাকবেন
৩| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৩৫
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: শ্রাবণের আবেগটায় খুব সরলতা রয়েছে। ভালো লাগলো আপনি নেমে তার কাছে আবার গিয়েছিলেন বলে।
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৩৯
সামিয়া বলেছেন: হাহা হুম মনে করলে মন বেশ ভালো হয়ে যায় , এই রকম ঘটনা ছিল এটা একটা।
৪| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৫১
মাআইপা বলেছেন: বন্ধুকে যারা মনে রাখতে চায়
বন্ধু হারানো জ্বালা তারাই পায়।
আমিও খুঁজে ফিরি আমার কিছু বন্ধুকে, পাই না; হয়তো পাবও না।
শুভ কামনা রইল।
০৫ ই মে, ২০১৮ রাত ৯:৩৫
সামিয়া বলেছেন: আপনার প্রতি অনেক অনেক শুভকামনা ভালো থাকুন বন্ধুকে খুঁজে পান সেই দোয়া রইল।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৫৮
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: কাউকে এমন করেই ভাল লেগে যায়। আর ভার লাগার মানুষটির জন্য শুভকামনাত থাকবেই।
ভাল লাগল অাপনার লিখা।