নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগের স্বত্বাধিকারী সামিয়া

সামিয়া

Every breath is a blessing of Allah.

সামিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

পথে ঘাটে পর্ব (১)

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৩৫



সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে অবশেষে বাস থেকে নামলাম। সেখান থেকে ১৫ মিনিট লাগে রিক্সায় বাড়ি পর্যন্ত যেতে। নেমে এক পা না এগোতেই এক বুড়ো রিক্সাওয়ালা খুব ডাকতে লাগলো মা কই যাবেন কই যাবেন করে। আমি তার রিক্সায় উঠতে চাইলাম না, কারনটা কারোই অজানা নয়, এই বয়সের লোকেরা তাড়াতাড়ি move করতে পারেনা আর অনেক insecure লাগে এই বুঝি কোন বাসের সাথে লাগিয়ে দিল। কিন্তু উনার জোরাজুরিতে মায়া হল। উঠে পড়লাম, ভাবলাম কিছু হবে না উনি ভালই চালাতে পারবে রিক্সা, আর হলই না হয় একটু দেড়ি প্রায় চলেই তো এসেছি, দিনটা তো শেষ হয়েই এল, আজকের মত সমস্ত কাজের অবসান।

কিছুদুর যেতেই আবিস্কার করলাম সে এক পা দিয়ে রিক্সা চালাচ্ছে, ভালো করে তাকাতেই চোখে পড়লো তার অন্য পা হাঁটুর উপর থেকে কাঁটা। তখন পেছনে ট্রাক, পাশে আনাবিল বাস ক্রস করছে, সামনে প্রাইভেট কারের সারি,ওনার পা এর কথা চিন্তা করে না্‌! আমি এক্সিডেন্ট করে ফেলতে পারি লোকটা রিক্সাটা এক পা দিয়ে সামলাতে পারবে কিনা এই চিন্তায় আমি অস্থির বোধ করতে লাগলাম। পরনে তার সাদা রঙের লুঙ্গি , যতটা সম্ভব পা টেনে ঢাকা। আমি বললাম মামা আপনার দেখি এক পা। এক পা দিয়ে রিক্সা চালাচ্ছেন যদি এক্সিডেন্ট করেন!?উনি আমার কথার জবাব দিলেন না, যে পা কাঁটা ওটা উনি আরো যতটা সম্ভব ঢেকে দিলেন, বুঝলাম উনি ভয় পাচ্ছেন, যদি আমি তার রিক্সা থেকে নেমে যাই!।

মনটা এবার সত্যিকার অর্থেই খারাপ হতে লাগলো লোকটার কথা চিন্তা করে। উনি প্রতিটা step কি কষ্ট করেই না এগোচ্ছে! কি সংগ্রাম! বেঁচে থাকার জন্য কি অমানুষিক কষ্ট।

জীবনে চলার পথে অনেক সময়ই মনে হয়েছে, আর পারছিনা। ঘরে বাইরে নিষ্ঠুর সমালোচনা, বরাবরই আমার মনঃকষ্টের কারন।

মনে হতো এত কষ্ট এত সংগ্রাম শুধু আমার বেলায়ই কেন! কিন্তু এই রিক্সাওয়ালার এক পা দিয়ে রিক্সার paddle করা দেখে মনে হচ্ছে এটা বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ, এক মুঠো অন্ন মুখে দেয়ার যুদ্ধ, হেরে না যাওয়ার জন্য যুদ্ধ, আমিও মানুষ আমিও পারি সুখী হতে এই পৃথিবীর দুঃখ বিলাসী মানুষকে তা দেখিয়ে দেয়ার জন্য যুদ্ধ, ভাবছি তার কি ছেলে মেয়ে নেই? জীবিকা নির্বাহের জন্য এত কষ্ট!? অবশ্য এত বড় দুনিয়ায় কত কিছুই তো হচ্ছে! কত অন্যায় আর কত বৈষম্য।

উনার প্রতিটা step এ আমি কষ্ট পাচ্ছিলাম, হয়ত আমি খুব আবেগপ্রবন মানুষ এই জন্য, বাসার গেটের কাছে আমাকে ভালোভাবেই পৌঁছে দিলেন সে। নামতে নামতে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কতদিন ধরে রিক্সা চালান?

এই কথাটার আগে আমার মাথায় এসেছে আসলে তার পা কিভাবে কাঁটা পড়লো।! আমাদের এই যুগটা আমাদের খুব বেশি সন্দেহপ্রবন বানিয়ে দিয়েছে, আমি ভাবলাম যার জন্য আমি এত দুঃখ করছি হতে পারে সে চুরি করতে গিয়ে পা হারিয়েছে, ( আমাদের দেশেতো এমন অহরহই হচ্ছে, আর চোরদের জন্য আর যাই হোক মায়া দেখানো উচিৎ নয়।

আমাদের সমাজ পাপকে নয় পাপীকেই ঘৃণা করা শিখিয়েছে যুগে যুগে। আর চোর মানেই সীমাহীন ঘৃণা, আমাদের দেশে খুনিকে কিংবা অনেক বড় ধরনের অন্যায়কারীকেও এতটা শাস্তি এতটা ঘৃণা করা হয়না যতটা না এক গরীব সহায় সম্বলহীন চোরকে করা হয়। ন্যায় আর অন্যায় এর মধ্যে আমাদের দেশে রয়েছে প্রকব বৈষম্য। অন্যায়টা কি তা দেখার আগে দেখা হয় অন্যায়টা কে করলো। যাদের যথেষ্ট অর্থ আছে!! তাদের এসব ব্যাপারে সাত খুন মাফ। ক্ষমতাশীল মানুষদের অন্যায় বলে, দোষ বলে, ভুল বলে কিছু নেই, যত দোষ যত ভুল ক্ষমতাহীন গরিবদের। বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালা বলল অনেক বছর, আমি সারাজীবন রিক্সাই চালাইছি। বললাম পা কি এক্সিডেন্ট করে কাটা গেছে, হ মা হ মা বলে ঘন ঘন মাথা দুলিয়ে বলল আমি কিন্তু রিক্সা খারাপ চালাইতাম না, ওই দিন বাসায় তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য খুব তাড়াহুড়া করছিলাম, সেই ভুলে আজ পা হারাইয়া বসে আছি।

আমি বললাম আপনি একটা দোকান দিয়েও তো বসতে পারেন, এক পা দিয়ে রিক্সা চালালে আপনার ও risk আর যে আপনার রিক্সায় চরবে তার ও risk. আমি তাকে কিছু টাকা বেশি দিলাম, অনেক বেশি দেয়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু মানুষ আজকাল কোন কিছুই সহজ ভাবে নিতে পারে না। দেখলাম তার মুখ হাসিতে ভরে গেল বললো, আজ আর রিক্সা চালামু না আপনে যে টাকা দিছেন তা দিয়ে মাছ কিনে বাসায় যামু, আজকে মাছ দিয়া রাতে ভাত খাব।
ওনার কথা শুনে মনে হল হায় আমি তো তাকে আর ও বেশি টাকা দিতে পারতাম!! বার বার তাকে বলে দিলাম রিক্সা না চালাতে, বসে কাজ করা যায় এমন কিছু করতে। সে যে আমার কথা শুনবে তা অনিশ্চিত। আমি জানি তার এই এক পা দিয়ে রিক্সা চালানোর দৃশ্য ভুলতে আমার বেশ সময় লাগবে!!

ডেল কার্নেগীর প্রেরনা তত্ত্ব সবার বেলায় কাজ করেনা, কারো পা নেই দেখে এটা ভেবে খুশি হয়না যে হায় আমি জুতার জন্য আফসোস করছি!! কারো কারো তো পা-ই নেই! বরং উল্টাটাও হতে পারে, জীবন সম্পর্কে মানুষ পুরোপুরি হতাশ হয়ে যেতে পারে।
এটা মনে হতে পারে জীবন মানেই খারাপ কিছু, জীবন মানেই যন্ত্রণা।

প্রায়ই রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে এই রকম ঘটনা অহরহ দেখা যায়, গুলশান ২ এর মোড়ে কয়েকদিন ধরেই দেখছি এক লোক পা ছড়িয়ে বসে ভিক্ষা করছে, তার পা দুইটা গাছের মতন আঙ্গুল গুলোতে যেন শেকড় গজিয়েছে, খুবি ভয়ংকর দৃশ্য।

আমার মতন দুর্বল মনের মানুষরা এই দৃশ্য একবার দেখলে বহুদিন লাগে তা সেরে উঠতে। ফ্লাইওভার দিয়ে চলার সময় এই সকল দৃশ্যের শেষ নেই, তারা তাদের অস্বাভাবিক বিকলাঙ্গ অঙ্গ দেখিয়ে ভিক্ষা চায়।

মনেপড়ে খুব ছোটবেলায় আমি যখন বাবার সাথে প্রথম ফার্মগেইট গিয়েছিলাম আর ফুট ওভারব্রিজ পার হওয়ার সময় অনেক গুলো বিকলাঙ্গ শরীর দেখে ভয়ে এবং তাদের কষ্টে খুব কান্না শুরু করে দিয়েছিলাম, সেই কান্না সারাদিনে আর থামেনি, বাবা ও বুঝতে পারেনি কেন এত কাঁদছি! আর পরের দিন গুলো বেশ খারাপ গিয়েছিলো তাদের ভাবনায়।

আমাদের দেশ উন্নত হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে, দিনে দিনে সরকার কত নিয়ম করছে, কিন্তু দেশের পঙ্গু,ভিক্ষুক, গরিবদের জন্য কেন কিছু করছেনা!!

পঙ্গুদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র করে এদের যদি সাধারন মানুষের চলার পথ থেকে তুলে দেয়ার প্রকল্প হাতে নিতো সরকার, তবে তারাও রক্ষা পেতো আর আমার মতন দুর্বল মনের মানুষদের জন্য ও ভাল হতো। তাছাড়া বয়স্কদের বয়স্ক ভাতা , পঙ্গুদের জন্য পঙ্গু ভাতা, একটা নির্দিষ্ট স্কেলের নিচে গরীবদের যদি ভাতা প্রদান করা হতো, তাহলে আমাদের দেশের একটা বিরাট অংশের জনসাধারন শান্তিতে বসবাস করতে পারতো। অনেক মানুষ রক্ষা পেত শেষ বয়সের জীবন যুদ্ধ থেকে। জীবনের শেষের দিন গুলো অন্তত খাওয়া পড়ার চিন্তায় একটা পা নিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হতোনা।

কানে বেজে চলেছে বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালার শেষ কথাগুলো ‘’আজ আর রিক্সা চালামু না আপনে যে টাকা দিয়েছেন তা দিয়ে মাছ কিনে বাসায় যামু, আজকে মাছ দিয়া রাতে ভাত খাবো।‘

হায় এই বৃদ্ধ বয়সের মানুষদের জীবনের শেষ দিনগুলো যদি সবসময় আনন্দময় হত।

বিঃ দ্রঃ এটা কোন গল্প নয় আমার জীবনে পথে ঘাটে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা।

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৩

লেখোয়াড়. বলেছেন:
প্রথম প্লাস, প্রথম মন্তব দিলাম।
লেখাটি ভাল লাগল।

ব্লগে স্বাগতম। শুভকামনা।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৮

সামিয়া বলেছেন: ওহ অনেক ধন্যবাদ লেখোয়াড় :)

২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫১

শ্রাবণ আহমেদ হিমু বলেছেন: ইতি চমৎকার লেখা।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৮

সামিয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

৩| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৬

বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর বলেছেন: আপু পড়ে অনেক কষ্ট লাগলো, যাদের পা আছে তারা কখনো বুঝবেনা যাদের পা নেই তাদের কি কষ্ট :||

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৮

সামিয়া বলেছেন: সেটাই বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর

৪| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৭

প্রামানিক বলেছেন: লোকটার কষ্ট দেখে কষ্টই পেলাম। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার লেখনির জন্য।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১০

সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক

৫| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৫৪

রিয়াজ উল ইসলাম বলেছেন: সম্ভবতঃ বাস্তব ঘটনা। পর্যবেক্ষণ ও ভাবনাগুলো খুব ভালো।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:০১

সামিয়া বলেছেন: খুলে প্রসংসা করার জন্য ধন্যবাদ

৬| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১১

বুলবুল আবু সুফিয়ান বলেছেন: oh

৭| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: বাংলা ব্লগের এ আসরে আপনাকে বিলম্বিত সুস্বাগতম জানাচ্ছি! এখানে আপনার বিচরণ স্বচ্ছন্দ হোক, আনন্দময় হোক, দীর্ঘস্থায়ী হোক!
আপনার প্রথম পোস্টটা পড়তে এখানে চলে এলাম, পড়ে মোটামুটি ভাল লাগলো। লেখাটি পড়ে আপনার একটি সংবেদনশীল মনের পরিচয় পেলাম। আমার আজকের কবিতায় প্রথম মন্তব্য করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩০

সামিয়া বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ এত এত ভালো ভালো কথা শুনে মন ভরে গেলো। আপনার সুস্বাস্থ্য এবং সুন্দর জীবন কামনা করছি।

৮| ১৯ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৪

বিজন রয় বলেছেন: আপনার প্রথম পোস্টে আমিও স্মৃতিচিহ্ণ রেখে গেলাম।
শুভকামনা রইল।

আপনার ব্লগে প্রথম মন্তব্যকারী লেখোয়াড় মহাশয়কে আজকাল দেখি না।
অনেক ভাল কবিতা লিখতেন তিনি।

২০ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৯:৪৯

সামিয়া বলেছেন: মনে করে স্মৃতি চিহ্ন দিয়ে গেলেন , এর থেকে ভালো শুভকামনা আর কি হতে পারে! সত্যিই ভালো লাগলো।।

৯| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৩৪

Sujon Mahmud বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো সেই সাথে মনটাও খারাপ হয়ে গেল

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:০৬

সামিয়া বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ Sujon Mahmud

শুভকামনা।।

১০| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:১২

মাআইপা বলেছেন: ছোট বেলায় একজনকে দেখেছি ইয়াং, সুঠাম স্বাস্থ্য কিন্তু একটা পা নেই।
প্রথমে দেখলাম ভিক্ষা করতে, এর কিছুদিন পর দেখি পেপার বিক্রি করতে। লোকজন আগ্রহ করেই কিনতো, অনেকে আবার বাড়তি কিছু দিত খুশি হয়ে। পরবর্তীতে দেখি রিক্সা চালাতে। আর দশজন চালকের সাথে পাল্লা দিয়েই চালাতো। এক পা বলে যে স্পীড কম, তা নয়। এভাবেই একজন অন্ন যোদ্ধাকে দেখেছি সংগ্রাম করতে। কোন কারণে ভাগ্য তার সহায় হয়নি, তাই সে আবার ভিক্ষুক। বহুবছর হলো দেখিনা তাকে। আপনার লেখা পড়ে মনে পড়ে গেল। দেখি আগামীকাল খোঁজ করবো তাকে, কেমন আছে সে।
যে কাজে পা’টাই মূল হাতিয়ার সেখানে বৃদ্ধ মানুষ এক পা নিয়ে। এমন সংগ্রাম করা কত মানুষ যে আছে, তাদের কথা চিন্তা করলেই কষ্ট হয়। তখন মনে হয় কত সুখে আছি আমরা তাদের চেয়ে।
শুভ কামনা রইল।

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:০৩

সামিয়া বলেছেন: হুম বাস্তব বড্ড কঠিন।।
কৃতজ্ঞতা ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.