নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://web.facebook.com/salauddin.shahria

সালাউদ্দিন শাহরিয়া

আমার মনের মৃত্যু হয়েগেছে দেহের মৃত্যু বাকি, বিষাক্ত ধুলিমাখা দীর্ঘজটে দেহটা কোথায় রাখি? - সালাউদ্দিন শাহরিয়া

সালাউদ্দিন শাহরিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসার \'রেড্ডি\' আর আমাকে চেনে না

০৯ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:১০



আমার একটা পোষা কুকুর ছিল। নাম দিয়েছিলাম মুমু। পরে ছোট্ট আপু রাগ করাতে নাম চেঞ্জ করি। মুমু নামটা ভালোবেসে দিয়েছিলাম। কারণ মুমু নামের স্মৃতি একটু গাঢ়৷ ভালোবেসে হোক কিংবা যে কোন কারণেই হোক একটা কুকুরের নাম মুমু রাখাটা আপত্তিকর হওয়ায় কুকুরের নামটি হয় মুমু থেকে রেড্ডি।

রেড্ডি যখন ছোট ছিল তখনও সে আমার পিছু পিছু থাকত৷ পরীক্ষা করার জন্য রাতে কয়েক বাড়ি দূরে গিয়ে লুকিয়ে যাই। রেড্ডি বেশ খুঁজাখুঁজি করছিল৷ পায়নি। রাত নয়টা। হঠাৎ রেড্ডিকে দেখি না। চারপাশে পাগলা কুকুরের হুংকার। সে ভয় পেয়েছিল। আর আমি ভয় পেয়েছিলাম তার জন্য। অনেক খুঁজাখুঁজি করার পর যখন পাইনি তখন বললাম, যাক হারছে ভালো হইছে। বাসায় চলে যাই। তখন এতো মায়া জন্মায়নি। নামও রাখিনি। বাসায় আসার পর দেখি উঠোনে বসে আছে। আমার অপেক্ষায়৷ দূর থেকে আমাকে দেখে দৌড়ে এসে পায়ের সাথে মাথা লাগিয়ে ভালোবাসা জানিয়েছিল। সেদিন থেকেই তার প্রতি ভালোবাসা জন্মায়।

নাম রাখলাম। নাম পরিবর্তন করলাম। আমার কথায় উঠে-বসে, দৌড়াদৌড়ি করে। ছোট্ট আপুসহ বাকিদের চিনে কিন্তু অতটা সাড়া দেয় না তাদের সাথে।

তখন ছিল শীতকাল৷ বাড়িতে ওজু পড়ে কেঁপে কেঁপে ফজরের নামাজ আদায় করতে মসজিদে যাই। রেড্ডি আমার সাথে মসজিদ পর্যন্ত যেত। অবাক করা বিষয় হলো রেড্ডি মসজিদের গেইটের ভিতরে ঢুকত না৷ অনেক স্পেস থাকা সত্ত্বেও গেইটের আশপাশ থেকে অপেক্ষা করত নামাজ কখন শেষ হবে। নামাজ শেষ হলে আবার বাড়িতে আসত৷ এশার নামাজে গাফলতি থাকত বা বাজারে পড়তাম। রেড্ডি এশার নামাজে আব্বুর সাথে মসজিদে যেত আবার আব্বুর সাথে আসতো। আব্বুকে জিগ্যেস করলাম কুকুরটা কি মসজিদের গেইটের ভিতর ঢুকত? আব্বু বলতেন না৷ গেইটের বাইরে থাকত। আর গায়ের সাথে ঘষাঘষির চেষ্টা করত। আমি লাঠি দিয়ে একটু দূরে রাখতাম। যাতে ওজু নষ্ট না হয়৷ আমার সাথেও ঘষাঘষির চেষ্টা করত বাট আমিও নামাজে যাওয়ার সময় বাঁধা দিতাম। সো রেড্ডিও বুঝত। এরপর থেকে নামাজে যাওয়ার সময় ঘষাঘষির চেষ্টা মোটেও করত না৷

আমি বাজারে গেলে আমার সাথে বাজারে যেত। বাজারে ঢুকার পর রেড্ডি বাড়িতে চলে আসত। আসলে রেড্ডি আমাকে বাজারে এগিয়ে দিত। বাড়ি থেকে বাজার চার-পাঁচ মিনিটের দূরত্ব।

নিজ থেকে বুঝদার রেড্ডিকে নিয়ে অনেক স্মৃতি। মসজিদের গেইটের ভিতরে ঢুকা যাবে না, বাজারে আমার সাথে থাকা যাবে না সহ অনেক কিছুই আমি শিখাইনি। সে নিজেকে বুঝত।

রেড্ডি শিশু থেকে এখন কিশোরী। এলাকার সবাই জানে এইটা আমার কুকুর। অনেক শয়তান। এখন এ বাড়ি ও-বাড়ি দুষ্টুমি করে। নালিশ আসতেই থাকে। বেশিরভাগ নালিশ হলো মানুষের জুতা কামড়ায়। আসলে এক বাড়ির জুতা আরেক বাড়িতে রেখে আসে। অনেকটা হাস্যকর কাহিনি করে থাকে।

একদিন তার ফ্যামিলি দেখা পায়। রেড্ডির ফ্যামিলিকে আমি চিনতাম। ছোট্ট বেলায় ফেলে চলে গেছিল। অসহায় হয়ে রেড্ডি আমার আশ্রয় নেয়। আপন হয়ে যায়। যখন তার ফ্যামিলির দেখা পাওয়ার পর রেড্ডির সাথে বাড়িতে আরো কুকুর বেড়ে যায়৷ মোট তিনটা। রেড্ডি, তার মা ও বাবা। কিন্তু রেড্ডি ত তাদের মত না। তাকে একদম আলাদাভাবে গড়ে তুলেছি আমি। কিন্তু যতই হোক না কেন? তার ফ্যামিলিকে খুঁজে পেয়েছে৷

রেড্ডি তার ফ্যামিলিকে পাওয়ার পর আমাকে আর সময় দেয় না। বাজারে যাওয়ার সময় রেগুলার এগিয়ে দেয় না। নামাজে যাওয়ার সময়-ও ঠিকঠাক আমার সাথে যায় না। ফ্যামিলির সাথে থাকে। সারাদিন এ বাড়ি ও-বাড়ি বখাটের মতো থাকে। সন্ধ্যার সময় রেড্ডি ও তার মা-বাবা বাড়িতে আসে৷ কি করে কিছুই জানি না৷ কথা অনেকটা শুনে অনেকটা শুনে না।

আগের মত আদর করে খাবার-দাবার দেই না। গ্রামের এ বাড়ি ও-বাড়িতে মুরগি চুরি করে আর নালিশ আসে। সালাউদ্দিনের কুকুর মুরগিটা খেয়ে ফেলছে। আসলে তার এতো সাহস ছিল না। ফ্যামিলি পেয়ে এই সাহসগুলো বেড়ে গেছে।

দুই আড়াই মাস কেটে গেল। এখন ত রেড্ডির দেখাই মিলে না৷ হঠাৎ একদিন চাচ্চুমনি বললেন রেড্ডি প্রেগন্যান্ট। সন্ধ্যায় বাড়িতে আসে। দিনে দু-চারবার। প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর অনেকটা রাক্ষুসে হয়েগেছে৷ আমার জানা ছিল সে কতটুকুই বা খায়। কিন্তু ইদানীং মানুষের জুতা কামড়িয়ে ছিঁড়ে ফেলে। মুরগের আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায়।

রেড্ডির সাথে তার মা-বাবাও আমাকে ভালো করে চিনে। বাড়িরে আসার পর যখন রেড্ডি আমার কথা শুনত, খেলত সেই সময় রেড্ডির মা-বাবা পাশে থাকত। সেই থেকে আমাকে ভালো চিনে।

কিন্তু ইদানীং দেখি রেড্ডি, তার মা-বাবা আর বখাটে প্রেমিক। চারটি কুকুরের বিষয়টি এবার বাড়ির কেউ ভালো চোখে দেখছে না। অপরদিকে নালিশের যন্ত্রণায় আম্মুও অতিষ্ঠ। আরো একমাস কেটে গেল।

অতিরিক্ত নালিশের কারণে একদিন এতো বেশি মারধর করেছিলাম রেড্ডি, তার মা-বাবা ও বখাটে প্রেমিমকে বাড়ি ছাড়রে বাধ্য হয়েছিল। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি রেড্ডি বারান্দায় বসে আছে। একদিকে প্রেগন্যান্ট অন্যদিকে আমার অমানবিক অত্যাচার। তারপরেও সে আমার বারান্দায় বসে আছে অনেক বেশি অভিমান নিয়ে। রাত্রিবেলা আমারও কষ্ট লেগেছিল৷ একটা প্রিয় কুকুর। তাও প্রেগন্যান্ট। এই প্রেগন্যান্ট অবস্থায় এতো বেশি মারধর করাটা ঠিক হয়। মানুষের কাতারে পড়েনি। রাত্রিবেলা অনেক চিন্তা করেছিলাম রেড্ডিকে নিয়ে।

সকালে যখন দেখলাম কান্নারত অবস্থায় ঘাড় ফিরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে অভিমানে। তখন কাছে গেলাম। দাঁড়িয়ে থাকলাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একদম নিরব। যাক খাবার দিলাম। রাক্ষুসের মত খেল। বিকেলে দেখি আবার রেড্ডির সাথে সেই তিনটা কুকুর। মেজাজটা একটু খারাপ হল। তবে রেড্ডির দিকে তাকিয়ে মেজাজ ঠান্ডা হয়ে গেল।

দুইদিন যেতে না যেতেই তাদের আগের অবস্থা শুরু। নালিশ আর নালিশ। একটা কুকুরের জন্য এতো নালিশ ভাবা যায়? শুধু রেড্ডির জন্য হাজার হাজার নালিশ সমস্যা ছিল না। কিন্তু রেড্ডির সাথে থাকা ওই তিনটে কুকুরের জন্য নালশ সহ্য হয় না। আর রেড্ডি আগের মত মোটেও না। চারটি কুকুর। গায়ে কখনো ড্রেইনের আবর্জনা, গু সহ অনেকে বিশ্রি কার্যকলাপ।

এবার ত আমার পরিবারে শান্তি নাই। রেড্ডির জন্য রীতিমতো আমাকে বের করে সেই অবস্থা৷ ফের একদিন প্রেগন্যান্ট রেড্ডিকে না মেরে তার সঙ্গ তিনটি কুকুরকে এতো বেশি মারধর করি তাদের সাথে রেড্ডিও বাড়ি থেকে পালায়।

ফিরে আসে না। একদিন। দুইদিন। তিনদিন। চারদিন। রেড্ডির কোথাও খোঁজ নেই। রেড্ডিকে তো মারিনি৷ তবে রেড্ডি কেনো ফিরে আসে না৷

রেড্ডি ভুলে গেছি৷ ছোট শিশু থেকে কিশোরী পর্যন্ত তিলে তিলে গড়ে তুলা রেড্ডি আর আসে না। আমিও খুঁজি না।

হঠাৎ একদিন রেড্ডিকে দেখি চার বাচ্চার মা। রেড্ডি এখন তার মা-বাবা আর বখাটে প্রেমিকের সাথে থাকে না। সে তার চার বাচ্চা নিয়ে এদিকে ও-দিক ঘুরেফিরে ঠিকই ভালো দিনকাল কাটাচ্ছে। রাস্তায় দেখা হল। রেড্ডি আমাকে চেনে না। সুন্দর সুন্দর চার বাচ্চা। রেড্ডি আমাকে ভুলে গেছে। চিনে না।

রেড্ডি কেনো আমার জীবনে আসল? কেনোই বা রেড্ডির মা-বাবা ফিরে আসল৷ প্রেম করল এক বখাটে কুকুরের সাথে৷ কেনোই বা আবার সেই তিনটা কুকুর তাকে ছেড়ে চলে গেল৷ রেড্ডি এখন আর আমাকে চেনে না। রেড্ডি আমাকে ভুলে গেছে।

ছোট্ট আপু ডাঃ ইমরানা ইমা রেড্ডির কথা কি তোর মনে আছে? সেই পালিত কুকুর। যে আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝত না৷ সেই কুকুরটি মুমু যেটির নাম তুমি দিয়েছিলে রেড্ডি। সেই রেড্ডি আর আমাকে চেনে না। আজও দেখা হয়েছিল পথে। রেড্ডি আর আমাকে চেনে না।

© সালাউদ্দিন শাহরিয়া

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:৩৩

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: রেড্ডি আপনার ভালবাসা কে অবমূল্যায়ন করেছিল। সেটা রেড্ডির জন্য বা তার বখাটে প্রেমিকের জন্য। তাই সে তার কলুষিত মুখটি আপনার সামনে দেখাতে চায় না। সে নিজে শুধরে নিয়েছে আর এজন্যই বাখাটেরা তাকে ছেড়ে গেছে সে তার জায়গাতেই রয়ছে। হতে পারে এই পোষ্ট লেখার পর রেড্ডে আপনাকে চিনতে পারবে। এবং আপনি তাকে বাচ্চাসহ আবার ঠাই দিবেন।

০৯ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:৪০

সালাউদ্দিন শাহরিয়া বলেছেন: রেড্ডিকে অনেকদিন পর দেখছি। এখন চিনেও না আমাকে। চারটি সুন্দর সুন্দর বাচ্চাও দেখেছিলা। আর দেখিনি এখনও। বাড়িতেও আসে না। আশেপাশেও দেখা যায় না।

২| ০৯ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:৩৯

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: তবে কি ভালবাসা মানে যন্ত্রনা। মানুষ কেন ভালবাসে??

০৯ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:৫২

সালাউদ্দিন শাহরিয়া বলেছেন: সেটা মানুষও জানে না মনে হয়।

৩| ০৯ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:৫৬

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: আমাদের আছে টমি। তবে খুব একটা বিরক্ত করে না। শুধু খাবার দেখলে ছুটে আসে।

০৯ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:৫৭

সালাউদ্দিন শাহরিয়া বলেছেন: ওহ ভালো। আসলেই এদের প্রতি আলাদা একটা মায়া জন্মায়।

৪| ০৯ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৪:০১

রাজীব নুর বলেছেন: রেড্ডির প্রতি আপনি প্রচণ্ড মমতা দেখিয়েছেন।
যা আজকাল দেখা যায় না।

০৯ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৪:২৬

সালাউদ্দিন শাহরিয়া বলেছেন: ❤️❤️❤️

৫| ০৯ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



রেড্ডি মসজিদের দরজা অবধি যেতো না কেন?

১০ ই জুন, ২০২১ রাত ৯:৩০

সালাউদ্দিন শাহরিয়া বলেছেন: জানি না। তবে গেলেও বাঁধা দিতাম। নিজ থেকেই যায়নি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.