নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাজী সায়েমুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড পলিসি বিষয়ে মাস্টার্স। জন্ম ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম শহরের দামপাড়ায়। তার পূর্বপুরুষ ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের বাউফলের ঐতিহ্যবাহী জমিদার কাজী পরিবার। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখিতে হাতে খড়ি। তবে ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত হন। তিনি যুগান্তর স্বজন সমাবেশের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক। ২০০৪ সালে তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। পরে ইংরেজী দৈনিক নিউ এজ এ সিনিয়র প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে ২৮ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন সদস্য হিসেবে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রেক্টর (সচিব) এর একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপিতে লিয়েনে চাকরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামে ন্যাশনাল কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। শিল্প সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷বর্তমানে সরকারের উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলা ছাড়াও ইংরেজী, আরবী, উর্দ্দু ও হিন্দী ভাষা জানেন। ছোটবেলা থেকেই কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যেকোনো প্রয়োজনে ইমেইল করতে পারেন। [email protected]
(গত ২৯ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতের হায়দরাবাদে ছিলাম। ওই সময়ে ভ্রমণ নিয়ে ফেসবুকের টাইমলাইনে বেশ কিছু স্টাটাস দিয়েছিলাম। লেখাগুলো প্রিয় সামুতে শেয়ার করছি)
চতুর্থ পর্ব
বিদেশি মেয়ে দেখে বাঙালি ছেলেরা প্রেমে পড়বে এটা কোন নতুন বিষয় নয়। অন্যদিকে বিদেশিনীরাও বাঙালি ছেলেদের
প্রেমে পড়েন। মালয়শিয়াতো রীতিমতো আতংকিত। দেশটির সরকার বিষয়টিকে সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখছে। সৌদী আরব আইন করেছে যাতে বাঙালি ছেলেরা সৌদী মেয়েদের সাথে প্রেম করতে না পারে। ইন্দোনেশিয়ার মেয়েদেরাও বাঙালি ছেলে বলতে পাগল। আমার একবার একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিল। ইলা ব্রাউন। অষ্ট্রেলিয়া থাকেন। সামোয়ান দ্বীপপূঞ্জে তার আদি নিবাস। তার একটা ছেলে। ছেলেটির বাবা বাঙালি। কিন্তু ছেলের বাবা তাকে ফেলে গেছেন। আমার সাথে যখন পরিচয়- তখন তিনি আরো কয়েকজন বয়ফ্রেন্ডের সাথে সংসার করে ফেলেছেন। তবে কথা বলার পর বুঝতে পেরেছি। তিনি বাঙালি ছেলেটাকে ভুলতে পারেননি। তাকে খুজঁছেন। তার উপায় হিসেবে আমাকে বের করেছেন। কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলাম। বলেছেন, বাঙালি ছেলেরা ভালোবাসতে জানে।
আমাদের বাঙালিদের নিঃশ্বাস হলো রবীন্দ্রনাথ। তিনিই বা কম কিসে। ২৫ আশ্বিন, ১৩০২ বঙ্গাব্দ বা ১৮৮৫ সালে লিখেছিলেন একটি কালজয়ী গান।
'আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী।
তুমি থাক সিন্ধুপারে ওগো বিদেশিনী॥
তোমায় দেখেছি শারদপ্রাতে, তোমায় দেখেছি মাধবী রাতে,
তোমায় দেখেছি হৃদি-মাঝারে ওগো বিদেশিনী।'
গানের শেষে লিখেছিলেন,
ভূবন ভ্রমিয়া শেষে, আমি এসেছি নূতন দেশে,
আমি অতিথি তোমারি দ্বারে ওগো বিদেশিনী॥
কবি যখন গানিটি লিখেছিলেন কোন বিদেশিনীর দেখা পাননি। তবে ঠিকই বিদেশিনীর সাথে তার দেখা হয়েছিল। কবি বিদেশিনীর দেশে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। সেটা ১৯২৪ সালের নভেম্বরে। বিদেশিনীর সাথে শুধু দেখাই নয়৷ প্রেম হয়েছিল নিজের গানের মানুষটির সাথে। আর তার জন্যই গনাটির অনুবাদ করেছিলেন ইংরেজিতে। তিনি ওই বিদেশিনীর নাম দিয়েছিলেন, বিজয়া। আসলে তার নাম ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। বাড়ি আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসে। তখন রবীন্দ্রনাথের বয়স তখন ৬৩। আর ওকাম্পোর ৩৪। প্রেম কি আর বয়স মানে!
খুন হওয়া অস্ট্রেলিয়া প্রবাসি লেখক অভিজিৎ রায় এ নিয়ে একটা বই লিখেছিলেন। নাম “ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো: এক রবি-বিদেশিনীর খোঁজে”। পড়লে মনে হবে জমজমাট প্রেমের উপন্যাস। গল্পটা আমি একটু সংক্ষেপে বলতে চাই। আমার ভারত ভ্রমণ হবে ১০ দিনের। নিজের কাহিনী বলার অনেক সময় আছে। এখন মুম্বাই এয়ারপোর্টে। কেবল প্লেনে উঠেছি। গন্তব্য হায়দরাবাদ। এই বিমানবন্দরটির কথা না বললেই নয়। প্রতিদিন ৭৮০টি বিমান ওঠানামা করে এই এখানে। প্রতি দুই মিনিটে একটি বিমান ওঠানামা করে। আমরা এয়ারপোর্টে ঢুকতেই একজন এসে বাংলায় জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কি জন্য এসেছেন। আমি উল্টা প্রশ্ন করলাম, আপনি কি বাঙালি? তিনি বললেন, তাতো বটেই। জানলাম, তিনি বিমানবন্দরে চাকুরি করেন। জানালাম, আমরা বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা। হায়দরাবাদ যাবো। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্টাফ কলেজ অব ইন্ডিয়াতে আমাদের দশ দিনের প্রশিক্ষণ আছে। তিনি সিভিল সার্ভিস অফিসার বিশেষ করে প্রশাসনের অফিসার শুনে আরো আগ্রহ দেখালেন। কারণও আছে। ভারতে ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস (আইএএস) এর বিশাল প্রভাব। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী আমলাতন্ত্র ভারতের। যার নিয়ন্ত্রণ করে আইএএস। ব্রাহ্মণ আর কি। খাটি বাংলায় ইমাম। বাকী ক্যাডারের অফিসাররা তাদের পেছনে নামাজ আদায় করেন। মনে মনে বললাম, আমাদের অবস্থান যদি জানতেন! আমাদের দেশে কোন ব্রাহ্মণ থাকুক কেউ চায়না। ঘি আর তেলের দাম সমান। এ বিষয় নিয়ে লেখা আছে। লেখার বিষয় আছে, মুম্বাই এয়ারপোর্ট নিয়েও। কেন কিভাবে ভারতের সরকার বেসরকারী সংস্থার সাথে চুক্তি করে সুন্দর করে বিমানবন্দর পরিচালনা করছেন। একটির পর একটি পুরস্কার জিতে যাচ্ছে। ২০১৬ সালেও সেন্ট্রাল এশিয়া ও ভারতের সেরা এয়ারপোর্টের পুরস্কার জিতেছে এই বিমান বন্দর। বাঙালি বাবুর কাছ থেকে জেনেছি।
তবে মোবাইলে কতটা লিখতে পারবো তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। কারণ একবার এই লেখা লিখেছিলাম ফেসবুকে। কিন্তু পোস্ট করার আগেই কিভাবে যেন রিফ্রেশ হলো। এখন দ্বিতীয় বার এই লেখা লিখছি।
যাই হোক, রবীন্দ্রনাথ আর বিজয়া থুক্কু ওকাম্পোর প্রেমের কাহিনীটা বলার লোভ সামলাতে পারছিনা৷ একবার ভারতবর্ষে পেরু সরকারের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে এক প্রতারক কবিকে পেরু যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ইংকায় স্পেন বিরোধী একটি স্মারক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবে। লোকটির এই দাওয়াতে কবি পেরু যাত্রা করলেন। ঘটনাক্রমে বিমান থেকে নামলেন অার্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে। কবির কাছে বেশি অর্থ ছিলনা। শহরের ছোট্ট একটি হোটেলে উঠেন কবি। অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সেখানেই তাঁকে আবিষ্কার করলেন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। কবি ততদিনে বিখ্যাত। নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত। তার কবিতা পৃথিবীর অনেক ভাষায় অনুদিত হয়েছে। সুযোগ নিলেন ওকাম্পো। সময় নষ্ট না করে কবিকে সুন্দর নিসর্গ বান্ধব একটি বাড়িতে নিয়ে এলেন। সান ইসিদ্রো শহরে। ভাড়া বাড়ি। এসময় ওকাম্পোর সাথে ভালোবাসায় জড়িয়ে যান রবীন্দ্রনাথ। আর্জেন্টিনায় রবীন্দ্রনাথের সাত দিন থাকার কথা থাকলেও সেটা ক্রমশ বেড়ে দাঁড়ায় দুই মাসের কাছাকাছি। শোনা যায়, রবিঠাকুরের ভরণপোষণের এই খরচ মেটানোর জন্য ওকাম্পোকে খুব দামী একটি হীরের টায়রা খুব নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে হয়েছিল। ওকাম্পোর কথা না বললেও নয়। তিনিও সাহিত্য সংস্কৃতির জগতে বিখ্যাত। আর্জেন্টাইন বুদ্ধিজীবী, লেখক ও সাহিত্য সমালোচক। কি নন তিনি। আর্জেন্টিনার বিখ্যাত সুর পত্রিকার সম্পাদক। রবীন্দ্রনাথ যে বাড়িতে ছিলেন সেটা ১৯৭৩ সাল থেকে ইউনেস্কোর সম্পত্তি। রবীন্দ্রনাথ হয়ত ওকাম্পোর জীবনে বড় কোন অধ্যায় ছিলেন না। কারণ এই বাড়িতে তিনি অতিথি করেছিলেন আরো অনেক বিখ্যাত মানুষকে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের জন্য ওকাম্পো ছিলেন অনেক কিছু। কবি মানুষ। ওকাম্পোর সাথে তার স্বামীর দাম্পত্য ঝামেলা চলছিল। সেই সময় একজন সাচ্চা বাঙালির দেখা পেলেন ওকাম্পো। এ যেন সোনায় সোহাগা। ওকাম্পোর হাসি দেখেই প্রেমে পড়ে গেছিলেন রবী। বিদেশী ফুল নামের কবিতায় সেটাই বলেছেন,
হে বিদেশী ফুল, যবে আমি পুছিলাম—
‘কী তোমার নাম’,
হাসিয়া দুলালে মাথা, বুঝিলাম তরে নামেতে কী হবে।
আর কিছু নয়,
হাসিতে তোমার পরিচয়।
রবীন্দ্রনাথের কথা আর কি লিখবো। তিনি যেমন লিখেছেন। তেমনি বাস্তবে তার প্রয়োগ করেছেন। নজরুলও কম যাননি। তিনিও লিখেছিলেন। গান।
বিদেশিনী বিদেশিনী চিনি চিনি
ঐ চরণের নূপুর রিনিঝিনি॥
দীপ জেগে ওঠে পাথার জলে তোমার চরণ-ছন্দে,
নাচে গাঙচিল সিন্ধু-কপোত তোমারি সুরে আনন্দে।'
আহা বিদেশিনীরা। তোমরা তো বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ করে দিলে। বাংলা সাহিত্যের কবিদের বিদেশিনী প্রেম লিখতে গেলে উপন্যাস হয়ে যাবে। বিখ্যাতদের এই একটি সমস্যা। কোথাও অভিসার করলে তা আর গোপন থাকেনা। গবেষকরা খুটিয়ে খুটিয়ে বের করে ফেলেন। তিলকে বানিয়ে ফেলেন তাল। আমার ক্ষেত্রে একটি সুৃবিধা আছে। বিখ্যাত নই। আজকে এই ফ্লাইটে আমার পাশে বসা ভারতীয় এক নন্দিনীর সাথে আমার কি কথা হয়েছিল তা কেউ জানতে চাইবেনা৷ আগ্রহ থাকার কোন কারণ নেই। ভবিষ্যতেও থাকবেনা। কারণ দিনের শুরুতে সকালেই বলা যায়, দিনটি কেমন হবে। আমারতো এখন মধ্য দুপুর।
প্লেনের সিট বেঁধে ফেললাম। উড্ডয়নের জন্য চলতে শুরু করেছে। বাম পাশে বসা দুৃধে আলতা মেয়ের সাথে টুকটুক কথা হচ্ছে। হায়দরাবাদের মেয়ে। সানিয়া মীর্জার নিজ শহরের। মুম্বাই থেকে নিজের শহরে যাচ্ছে। আমার ডান পাশে ইত্যবসরে একজন ছেলে এসে বসেছেন। আমার বয়সী। এসেই সামনের সিটের পেছনে রাখা ম্যাগাজিন পড়তে শুরু করে দিয়েছেন। কেমন পড়ুয়ারে বাপ! আরে ভাই ফ্লাইটাকে উড়তে দে আগে। তারপর না হয় পড়া শুরু কর! মুল রানওয়েতে ওঠার আগে প্লেন অপেক্ষা করে। ইতোমধ্যে আরেকটি প্লেন অবতরণ করেছে। সেটা এই বিমানের সামনে দিয়েই ক্রস করবে। দুই মিনিট অপেক্ষা করতে হলো। আমাদের সামনে থেকে একটি বিমান ক্রস করে গেল। আর আমাদেরটা মূল রানওয়েতে উঠে জোরে চলতে শুরু করলো। বিমান তখন হায়দরাবাদ অভিমুখে। পেছনে মুম্বাইয়ের চাকচিক্য। নিচে আলোর মিছিল। হঠাৎ একটি মেয়ে পেছন থেকে এসে আমাদের সিট বরাবর। এসেই কি যে বললো, মাথার উপর দিয়ে গেলো। পরে জেনেছি, সেটা তেলেগু। তেলেগু বাংলায় শুনতে কেমন যেন লাগে। তেলেগু খাবার খাওয়া যায়। তেলেগু ভাষা বুঝা দায়। আমার ডান পাশে বসা ছেলেটা উঠে পেছেনে চলে গেল। মেয়েটা সেখানে বসে গেল। চেহারায় ভারতের দক্ষিণের ছাপ। বসতেই বিপত্তি। দুই সিটের মাঝখানে হাতলের ওপর রাখা আমার হাতে আঘাত লাগলো। বললো, সরি। আমি বললাম, ইটস ওকে।
একটা জিনিস না বললেই নয়। ভারতের ভেতরে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানের ভাড়া খুবই কম। মুম্বাই থেকে হয়দরাবাদ ২ হাজার রুপি। আবার হায়দরাবাদ থেকে গোয়া ১৭ শ রুপির মতো। এক রুপি এক টাকা পচিশ পয়সা। রাতের খাবারের সময় আসলো। দুপুরে ঢাকা থেকে আসার পথে জেড এয়ারওয়েজে খাবার দিয়েছিল। আমি নিলাম নন ভেজ খাবার। মুরগি। সব্জি। ভাত। দই। চকলেট। কফি। কি নেই। পেট ভরে যায়। তবে সুন্দরি বিমানবালা এসে জিজ্ঞাসা করেছিল, হুইস্কি লাগবে কিনা? বললাম, না। লাল একটা হার্ড ডিংকও দেখলাম। সাদা চামড়ার যাত্রীদেরকেই ওগুলো পান করতে দেখলাম। রাতের খাবারের আগে, বিমানবালা এসে প্রশ্ন করলো। ভেজ অর নন ভেজ। আমি বললাম, আই অ্যাম নন ভেজ। বাট দিস টাইম অই উড লাইক টু হ্যাভ ভেজ। শুনে পাশের দুই মেয়েও মজা পেয়েছে। তারাও বললো, ভেজ। রাতের খাবার এলো। মটর ডাল সিদ্ধ। সাথে আলুর চপ। কফি, দই, চকলেট তো আছেই। এবার শ্যামলা মেয়েটার পানির বোতল পড়ে গেল। পড়বি তো পড়। বোতল আমার পায়ের কাছে। তার পক্ষে উঠানো সম্ভব নয়। সে চেষ্টা করতে লাগলো। আমি দেখছি। এক পর্যায়ে বললাম, ইউ ইউল নট অ্যাবেল টু পিক দ্যা বোটল, অ্যাজ ইট ইট বিসাইড মাই লেফট লেগ। প্লিজ লেট মি পিক ইট আপ ফর ইউ।
কিছুক্ষণ কথা নেই। আমি মাঝের সিটে৷ অার আমার দুই পাশে দুই বিদেশিনী। কথা না বলে, আমি ম্যাগাজিন দেখছি। কিছু পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয়া আছে। এয়ারপোর্ট থেকে মুক্তা কিনলে ছাড় আছে। অর্ধেকের কমে পাওয়া যাবে। এইসব। তবে আমার কাছে কেমন যেন লাগছে। সত্যজিৎ রায় সহযাত্রীদের সাথে কথা বলে তা ছবিতে এঁকে পুরো গল্প তৈরী করেছিলেন। আর আমি কিনা- নীরবে বসে যাবো। হোয়াট আই অ্যাম ডুয়িং অবভিয়াসলি অ্যাগেইনেস্ট ন্যাচার।
শ্যামলা মেয়েটার সাথে কথা বললাম, এক্সকিউজ মি, আর ইউ ফ্রম হায়দরাবাদ?
-ইয়েস। হোয়ার আর ইউ ফ্রম?
-বাংলাদেশ। দিস ইজ ফর ফাস্ট টাইম আই অ্যাম ইন হায়দরাবাদ অ্যাজ ওয়েল অ্যাজ ইন ইন্ডিয়া।
-ওহ, আই সি! ওয়েলকাম টু হয়দরাবাদ। হোয়ার উইল ইউ স্টে?
- অ্যাট হোস্টেল অব অ্যাডমিনিস্টেটিভ স্টাফ কলেজ অব ইন্ডিয়া।
-হোয়ার ইট ইজ?
-বানজারা হিলস। অ্যাকচুয়ালি উই আর সিভিল সার্ভেন্টস ফ্রম বাংলাদেশ বিলঙ টু অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ক্যাডার। লাইক আইএএস অব ইউর কান্ট্রি। উই আর গুয়িং টু অ্যাটেন্ড অ্যা ট্রেনিং অরগানাইজড বাই দ্যাট ইনস্টিটিটিউশন। আওয়ার গভের্নমেন্ট হ্যাজ অ্যা এমওইউ উইথ দ্যাট ইনস্টিটিউশন টু কনডাক্ট ট্রেনিং ফর মিডল লেভেল পলিসি মেকারস অব আওয়ার কাউন্ট্রি। অাই অ্যাম হেয়ার অ্যাজ অ্যা পার্ট অব কোর্স ম্যানেজমেন্ট৷
-ভেরি গুড। ইউল ইউ গেট টাইম টু ভিজিট হায়দরাবাদ।
-ইট ইজ পার্ট অব আওয়ার ট্রেনিং। ক্যান ইউ টেল মি দ্য নেমস অব সাম প্লেজেস হোয়ার আই স্যুড ভিজিট?
- ইউ মে গো গোলকুন্ডা, হিস্টিরিক্যাল প্লেস। ক্যান ভিজিট প্যালেসেস অব নিজাম। চার মিনার। ইউ নো হায়দরাবাদ ইজ ভেরি নাইস অ্যান্ড বিউটিফুল প্লেস।
-হাহাহা। নট অনলি প্লেস। বাট অলসো গার্লস।
-হাহাহা। রিয়েলি?
-দিস টাইম ইট ক্যান বি সেইড ফ্যাঙ্কলি। হাহাহা।
-ওকে এনজয় বিউটি অব গার্লস। বাট ডোন্ট ফরগেট টু এনজয় টেস্ট অব হায়দরাবাদি বিরিয়ানি।
-হাহাহা। রিয়েলি। বিকজ, এ থিং অব বিউটি ইজ জয় ফর এবার।
-ইট লাভলিনেস ইনক্রিজেস, ইউ উইল নেভার।
-পাস ইনটু নাথিংনেস বাট স্টিল উইল কিপ
- এ বোয়ার কোয়াইট ফর আস, অ্যান্ড ফর আস, ফুল অব সুইট ড্রিমস, অ্যান্ড হেলথ, অ্যান্ড কোয়াইট ব্রেদিং।
আমি বললাম, রিয়েলি?
-হোয়াই নট? অ্যাজ ইউ হ্যাভ অলেরেডি বিকাম ফ্রেন্ড।
অামি অবাক হলাম৷ এউ যুগেও কেউ জন কিটস এর কবিতা মুখস্ত করে নাকি৷ অামাকে বলে সৌন্দর্য নিয়ে লর্ড বায়রনও একটি সুন্দর কবিতা লিখেছেন৷ বললাম, শুনতে চাই৷ সুন্দর কণ্ঠে কবিতা অাবৃত্তি করে গেলো সে৷ অামি তন্ময় হয়ে শুনছি৷
সি ওয়াকস ইন বিউটি, লাইক দ্য নাইট
অব ক্লাউডলেস ক্লাইমস অ্যান্ড স্টারি স্কাইস;
অ্যান্ড অল দ্যাটস বেস্ট অব ডার্ক অ্যান্ড ব্রাইট
মিট হার অাসপেক্ট অ্যান্ড হার অাইস:
দেড়ঘন্টা সময় কেটে গেছে। ভাবছি, মানুষের সৌন্দর্য কোথায়৷ অামার ডান পাশে বসা শ্যামলা মেয়েটার মনের ভেতরের যে সৌন্দর্যের সন্ধান পেয়েছি তা এক কথায় অসাধারণ৷ তাকে বললাম- শুনেছি, হায়দরাবাদে মণি মুক্তা অার হীরা পাওয়া যায়৷ হয়ত এর মূল্য খুব বেশি৷ এই মূল্যবান রত্ন বিক্রি করে নিজাম হয়ত দুনিয়ার সেরা ধনী হয়েছেন৷ কিন্তু অামি যে অাজ হীরার সন্ধান পেলাম, তার হয়ত কোন অার্থিক মূল্য নেই৷ তবে এই সম্পদ কারো কেনার সাধ্য নেই৷ অামার নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে৷ এই রত্নের শহর হায়দরাবাদে যাচ্ছি৷ বুকটা গর্বে ফুলে উঠছে৷ নিজামদের মতো দরিদ্র মানুষ অার দুনিয়াতে নেই৷ তারা এই রত্ন হারিয়েছেন৷
হায়দরাবাদের এয়ারপোর্ট তখন দেখা যাচ্ছে৷ এদিকে বিমানের ক্রু ঘোষণা দিচ্ছেন, লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান, অ্যাজ উই স্টার্ট অাওয়ার ডিসসেন্ট, প্লিজ মেক সিওর ইওর সিট ব্যাকস অ্যান্ড ট্রে টেবিলস অার ইন দেয়ার ফুল অাপরাইট পজিশন৷ মেক সিওর ইওর সিট বেল্ট ইজ সিকিউরলি ফাসেনড অ্যান্ড অল ক্যারি অন লাগেজ ইজ স্টোয়েড অান্ডারনেথ দ্যা সিট ইনফ্রন্ট অব ইউ অর ইন দ্যা ওভারহেড বিনস৷ থ্যাংক ইউ৷
খুব কম সময়ের মধ্যে বিমান থেকে বের হয়ে এলাম৷ ঢাকা বিমানবন্দরের মতোই দেখতে৷ তবে দালাল নেই৷ হাউকাউ নেই৷ কত শৃংখলা৷ অামার অাগেই বেরিয়েছিল ডানপাশের মেয়েটি৷ শ্যাম বরণ৷ চেহারায় দক্ষিণী ছাপ৷ উচু নাক৷ যেন হিন্দী মুভির নায়িকা টাবু দাড়িয়ে৷ মনে হচ্ছে কতদিন ধরে চিনি৷ এবার বিদায়ের পালা৷ অামি হাত নাড়লাম৷ বললাম, নাইস টু টক টু ইউ৷ মেয়েটিও হাত নাড়ালো৷ মুখে হাসি৷ একা একা হায়দরাবাদ বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে অাসতে অাসতে কবিগুরুর কবিতার চরণ মনে পড়ে গেল৷ যা তিনি অার্জেন্টিনা থেকে বিদায় নেবার অাগে লিখেছিলেন৷
হে বিদেশী ফুল, যবে তোমারে শুধাই ‘বলো দেখি
মোরে ভুলিবে কি’,
হাসিয়া দুলাও মাথা; জানি জানি মোরে ক্ষণে ক্ষণে
পড়িবে যে মনে।
দুই দিন পরে
চলে যাব দেশান্তরে,
তখন দূরের টানে স্বপ্নে আমি হব তব চেনা—
মোরে ভুলিবে না।
কাজী সায়েমুজ্জামান
বানজারা হিলস, হায়দরাবাদ
২৯ জানুয়ারী, ২০১৭
রাত ২ টা৷
চলবে.....
তৃতীয় পর্ব
চোখে লাগা সৌন্দর্য
দ্বিতীয় পর্ব
এই ক্যারাভান নিরাশার নয়
প্রথম পর্ব
ভ্রমণের স্বাদ, ভারতের হায়দরাবাদ
২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:১৩
সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
২| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:২৪
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: চলুক না।
২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:০৬
সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:২৭
জাহিদ হাসান বলেছেন: রাশিয়ান মেয়েদের জন্য আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে।
আমি রাশিয়ান মেয়ে বিয়ে করব। দোয়া রাইখেন।
২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:০৫
সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: চালিয়ে যান। আল্লাহ ভরসা।
৪| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:২৩
আজীব ০০৭ বলেছেন: চলুক........।
২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:০৬
সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: পঞ্চম পর্ব পোস্ট করা হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:০৪
বিজন রয় বলেছেন:
হে বিদেশী ফুল, যবে তোমারে শুধাই ‘বলো দেখি
মোরে ভুলিবে কি’,
হাসিয়া দুলাও মাথা; জানি জানি মোরে ক্ষণে ক্ষণে
পড়িবে যে মনে।
দুই দিন পরে
চলে যাব দেশান্তরে,
তখন দূরের টানে স্বপ্নে আমি হব তব চেনা—
মোরে ভুলিবে না।
+++++++++++++++++