নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাজী সায়েমুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড পলিসি বিষয়ে মাস্টার্স। জন্ম ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম শহরের দামপাড়ায়। তার পূর্বপুরুষ ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের বাউফলের ঐতিহ্যবাহী জমিদার কাজী পরিবার। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখিতে হাতে খড়ি। তবে ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত হন। তিনি যুগান্তর স্বজন সমাবেশের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক। ২০০৪ সালে তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। পরে ইংরেজী দৈনিক নিউ এজ এ সিনিয়র প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে ২৮ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন সদস্য হিসেবে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রেক্টর (সচিব) এর একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপিতে লিয়েনে চাকরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামে ন্যাশনাল কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। শিল্প সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷বর্তমানে সরকারের উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলা ছাড়াও ইংরেজী, আরবী, উর্দ্দু ও হিন্দী ভাষা জানেন। ছোটবেলা থেকেই কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যেকোনো প্রয়োজনে ইমেইল করতে পারেন। [email protected]
এক.
২০০৭ সাল। আমি তখন দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার। একদিন বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি কেন্দ্রিক সাস্কৃতিক সংগঠনের কয়েকজন সদস্য আমার অফিসে দেখা করতে আসেন। বিকালে রিপোর্টারদের প্রচন্ড ব্যস্ততা থাকে। এরপরও তাদের সময় দিতে হলো। মূলত তারা শীতার্তদের জন্য গরম কাপড় বিতরণ করার অভিজ্ঞতা জানাতে এসেছিলেন। ওই সময় সারাদেশে প্রচন্ড শীত পড়েছিল। দেশের উত্তরাঞ্চলে বেশ কয়েকদিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। শীতের তীব্রতার কারণে গরম কাপড় সংগ্রহে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এগিয়ে আসে। অনেকেই ঢাকা শহরের পাড়া-মহল্লা থেকে গরম কাপড় সংগ্রহ করেন। আর সেগুলো শীতার্ত মানুষের কাছে পৌছেঁ দিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে যান। আমার সঙ্গে যারা দেখা করতে এসেছেন তারা দেশের উত্তারঞ্চলের একটি মঙ্গাপিড়িত এলাকায় গিয়েছিলেন। তাদের সাথে ছিল সংগ্রহ করা বেশ কয়েক বস্তা কাপড়। তাদের হিসাবে হাজার দুয়েক মানুষকে তারা কাপড় দিতে পারবেন। এক রাতে একটি প্রত্যন্ত চরে তারা কাপড় বিতরণে যান। স্থানীয় একটি ছোট হাটে লোকজন জমায়েত হন। মুহুর্তের মধ্যে টানা হেচড়ায় সব কাপড় শেষ। বিপত্তিটা বাধেঁ যারা কাপড় পায়নি তাদের হট্টগোলের কারণে। তারা এসে বলে যাদের দরকার নেই তারা কাপড় পেয়েছে- আমরা পাইনি কেন? পরিস্থিতির কারণে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে চাইলেন। কিন্তু কয়েকজন তাদের পথ আটকায়। এক পর্যায়ে তাদের শরীর থেকে গরম কাপড় খুলে রেখে দেয়। তীব্র শীতে একদিকে কাঁপতে কাঁপতে অন্যদিকে অপমানে, যন্ত্রণায় কাঁদতে কাঁদতে তারা জেলা শহরে রাত কাটাতে হোটেলে ফিরেন। আমি তাদেরকে বললাম, এই নিউজ করা হলে- মানুষের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে সামাজিক কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে গরীব লোকজন যে দু একটা পুরাতন গরম কাপড় পেতেন- তাও বন্ধ হয়ে যাবে। পরে সান্ত্বনা দিয়েই তাদের বিদায় দিয়েছিলাম। ওই বিষয়ে কোন নিউজ করিনি।
দুই.
২০১২ সাল। আমি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট। একদিন সকালে আমাকে মোবাইলে ফোন দিলেন বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোকলেসুর রহমান স্যার। বললেন, ‘গার্লস স্কুলের একজন ছাত্রীকে উত্যক্ত করার অপরাধে পুলিশ হাতেনাতে কয়েকজনকে ধরেছে বলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি জানিয়েছেন। তুমি তাড়াতাড়ি ঘটনাস্থলে যাও। মোবাইল কোর্ট করতে হবে।’ আমি সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থল ডিসি অফিসের রেকর্ড রুমের সামনে গিয়ে উপস্থিত হই। এর আরেক পাশেই স্কুলের গেট। গিয়ে দেখি স্কুলের শিক্ষার্থীসহ বেশ কিছু লোকজনের জটলা। খবর পেয়ে সাংবাদিকরাও এসেছেন। পুলিশ ১৮/১৯ বছর বয়সের দুইজন ছেলেকে ধরে বসিয়ে রেখেছে। ভিক্টিম মেয়েটিও আছে। আছেন বেশ কয়েকজন অভিভাবকও। পুলিশ আমাকে জানায়- “এদের মধ্যে একজন মেয়েটির পথ রোধ করেছিল। আরেকজন তার বন্ধু। সে তাকে সহায়তা করেছে। আমি ধৃত দুজনের কাছে আসল ঘটনা জিজ্ঞাসা করি। তারা বলে, কিছুই জানিনা। স্কুলের ছুটির সময় তারা এদিক দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। পুলিশ শুধু শুধু আটক করেছে।” মেয়েটি দশম শ্রেণিতে পড়ে। তাকে জিজ্ঞাসা করি, ঘটনা কি? মেয়েটা বলে, “প্রতিদিন স্কুল থেকে বাসায় যাতায়াতের পথেই বেশ কিছু ছেলে দাড়িয়ে বিরক্ত ও উত্যক্ত করে। আজকে স্কুল ছুটির পর এরা আমার পথ আটকে রেখেছে। বলেছে, কথা না বললে যেতে দেবেনা। এসময় পাশ দিয়ে পুলিশ যাচ্ছিল। তাদেরকে ঘটনা বলি। পুলিশ তাদের আটক করেছে।” আমি ছেলে দুটোর কাছে যতই সত্যি জানতে চাই-তারা ততই অস্বীকার করে। উপস্থিত লোকজনকে জিজ্ঞাসা করি, তারা জানায় মেয়েটির কথাই ঠিক। পুলিশ জানায়, স্যার আপনি আসার আগে তারা সবকিছুই স্বীকার করেছিল। বলেছিল, প্রেমের প্রস্তাব দিতে গিয়ে আজকে তারা ধরা পড়েছ। আমি বললাম, আপনারা যাদেরকে আসামী বলছেন, তারা কিছুতেই ঘটনা স্বীকার করছেনা। মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ অনুযায়ী এদর শাস্তি দেয়ার এখেতয়ার আমার মোবাইল কোর্টের নেই। এই কোর্টে কাউকে আইনানুগ শাস্তি দিতে হলে আসামীর দোষ স্বীকার করা প্রয়োজন। এখানে উভয় পক্ষের লোকজন আছে। আছেন সাংবাদিকরা। প্রকাশ্যে এই আদালতের বিচার হয় বলে এখানে জোর করে স্বীকারোক্তি নেয়ার কোন সুযোগ নেই। এক কাজ করুন, এর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করুন। যারা এখন সাক্ষ্য দিচ্ছেন তাদের ওই মোকদ্দমায় সাক্ষী হিসেবে নাম দিন। মুহূর্তেই লোকজন সরে পড়তে শুরু করলো। মেয়ের অভিভাবক কিছুতেই থানায় মামলা করবেন না। তিনি এ ব্যাপারটি এখানেই শেষ কের দিতে চান। কেউ সাক্ষ্য দিতে রাজি নন। কিছুক্ষণ পর তাকিয়ে দেখলাম। আমি পুলিশ আর ওই দুইজন ছেলে। আর তাদের দুই অভিভাবক। আর কেউ নেই। মামলায় সাক্ষী হতে হবে শুনেই সবাই কালবিলম্ব না করে সরে পড়েছেন। পুলিশ বলে, স্যার সাক্ষী নেই। ভিক্টিম মামলা করতে রাজি নয়। পুলিশকে নিয়মিত মামলা দায়েরের নির্দেশ দিলে আরেক ঝামেলা। বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্যারকে ফোন দিলাম। তিনি পরামর্শ দিলেন, সাক্ষী পাওয়া না গেলে নিয়মিত মামলা দায়েরের জন্য ওসিকে নির্দেশ দিলেও কার্যকারিতা হারাবে। তারচেয়ে থানায় নিয়ে মুচলেকা দিয়ে দুজনকেই ছেড়ে দাও। পুলিশও এটা চাইছিল। শেষ পর্যন্ত তাই করা হলো। ছাড়া পেয়ে গেল দুই বখাটে।
তিন
দেশে হঠাৎ করে একশ্রেণির বোদ্ধারা বলে যাচ্ছেন আমলাদের কাজ কোর্ট পরিচালনা নয়। তারা সরকারের সাহায্য সহযোগিতা সাধরণ মানুষের কাছে পৌছেঁ দেবেন। উন্নয়ন কর্মকান্ড এগিয়ে নেবেন। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে তারা সঠিক কথাই বলেছেন। তবে বাস্তবতা ভিন্ন৷ সহজে বলতে গেলে এখনো এদেশের বেশিরভাগ মানুষ 'লাইনে' দাড়াতে অভ্যস্থ নয়৷ মোবাইল কোর্ট না থাকলে শৃংখলার সাথে সাহায্য পৌছেঁ দেয়াটাই অসম্ভব হতো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারী কর্মকতারা নিজেদের পোষাক নিয়ে অফিসে ফিরতে পারতেন কিনা সন্দেহ। মারধরের শিকার হবেন অহরহ৷ কারণ ছোটখাট অপরাধই বড় অপরাধের জন্ম দেয়। এসব ছোটখাট অপরাধ দমন না করা হলে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচলনা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ কারণেই আইন প্রণেতাগণ দেশের বাস্তব অবস্থা চিন্তা-ভাবনা ও পর্যালোচনা করেই মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ প্রনয়ণ করেছেন। সরকারী কর্মকর্তা যারা উন্নয়ন কর্মকান্ড সমন্বয় করে থাকেন, সরকারের সেবা মানুষের কাছে পৌছেঁ দেয়ার কাজ করেন- তাদের সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পাদনের জন্যই নির্বাহী বিভাগকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। অনেকে মনে করেন- মোবাইল কোর্ট বিচার বিভাগ পৃথককীকরণের স্পিরিটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আসলে ব্যাপারটি হলো- এই মোবাইল কোর্ট অবশ্যই উচ্চ আদালতের কাছে দায়বদ্ধ। সব ধরণের ছোটখাটো মামলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে বিচার করা হলে নিম্ন আদালত মামলার ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে যাবে। এবছরের গত ১৭ জুলাই মাননীয় আইনমন্ত্রী সংসদকে জানিয়েছিলেন, “২০১৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট ৩১ লাখ ৯ হাজার ৯৬৭টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।” অন্যদিকে গত ২৭ মে রাজধানীর ইস্কাটন রোডে অবস্থিত বিয়াম ফাউন্ডেশন অডিটোরিয়ামে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাঃ জননিরাপত্তা ও সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রন শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে- “গত ২০১৫ সালে এক বছরে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭৫৪ জনকে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে এবং ৩৭ কোটি ৩৭ লাখ ৮৮ হাজার ২৪৬ টাকা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ৫৭ হাজার ১৫৭টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ টি মামলার নিষ্পত্তি করা হয়।” অর্থাৎ মোবাইল কোর্ট না থাকলে এবং আইন শৃংখলা পরিস্থিতি বর্তমান অবস্থায় রাখতে আরো প্রায় এক লাখ ৩৭ হাজার মামলা নিম্ন আদলতকে পরিচালনা করতে হতো। এতে নিম্ন অাদালতের কি অবস্থা হতো? তবে মামলার জট কমাতে অপরাধের মূল উৎস বন্ধ করা দরকার। অপরাধ সংঘটনের আগে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই তা সম্ভব হয়। মোবাইল কোর্ট একটি অপরাধ প্রতিরোধকল্পে গৃহীত ব্যবস্থা। সরকার দেশের এই মামলা জট কমাতে শুধু এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এর মাধ্যমে পরিচালিত মোবাইল কোর্টকেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত গ্রাম আদালতকেও কার্যকর করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশে বর্তমানে তিন ধরণের বিচার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। একটি নিয়মিত আদালত বা জুডিশিয়াল বিচার ব্যবস্থা, আরেকটি প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যদের মাধ্যমে ঘটনাস্থলে অপরাধ আমলে গ্রহণ করে দোষ স্বীকারের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক বিচারের ব্যবস্থা। সর্বশেষ জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ছোটখাট অপরাধের বিচার করা। এর উদ্দেশ্য মূলত একটিই। আর তা হলো- নিম্ন আদালতকে সহায়তা করা। বলাই বাহুল্য যে, এর প্রতিটি মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা যায়। ধাপ পেরিয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরাই এই আপীল শুনে থাকেন। আদালতকে সহায়তার এ বিষয়টি শুধূ এদেশেই নয়। খোদ বৃটেনে ‘লে ম্যাজিস্ট্রেট’ নিয়োগ করা হয়। অনেকেই মনে করেন বিচারক হতে গেলে আইনের ছাত্র হতে হয়। তারা বৃটেনের উদাহরণ দেখতে পারেন। বৃটেনের 'লে ম্যাজিস্ট্রেট' হতে গেলে আইন পড়তেই হবে এরকম কোন বাধ্য বাধকতা নেই। একজন কোন কোম্পানীতে কাজ করছেন- তিনি সপ্তাহে নির্দিষ্ট ঘন্টা ‘লে ম্যাজিস্ট্রেট’ হিসেবে কাজ করতে পারবেন। এ জন্য নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করবেন। তবে ম্যাজিস্ট্রেসির জন্য কোন বেতন পাবেন না। তারা স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে কাজ করে থাকেন। 'লে ম্যাজিস্ট্রেট'রা ছোটখাটো অপরাধের বিচার করে থাকেন। যেমন, অ্যাসল্ট, মটর গাড়ি সংক্রান্ত অপরাধ, চুরি ও চুরির মালামাল বহনের জন্য তারা শাস্তি দিতে পারেন। এক্ষেত্রে জরিমানা, কমিউনিটি সার্ভিস প্রদানের আদেশ এবং ক্ষেত্র বিশেষে ৬ মাস থেকে এক বছরের কারাদন্ড দিতে পারেন। এক্ষেত্রে তো কেউ বিচার বিভাগের সম্মাণ ক্ষুন্ন হওয়ার কথা বলেন না। আসলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাস্তবতার নিরিখে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। তা অন্য দেশের ব্যবস্থার সঙ্গে মেলানো যায়না। আমাদের দেশে বিচার বিভাগ পৃথককীকরণের আগে প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরাই নির্বাহী বিভাগের পক্ষে ফৌজদারী কোর্টের বিচার কাজ পরিচালনা করতেন। তবে ওই সময়ও খুনের বিচারসহ বড় ধরণের অপরাধের বিচার জেলা দায়রা জজ আদালতই প্রদান করতেন। প্রায় দুইশ বছর ধরে ছোটখাট অপরাধের বিচারের অভিজ্ঞতা, কাঠামো, লজিস্টিক সাপোর্ট প্রশাসন ক্যাডারের রয়েছে বলেই যুক্তিসংগতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা তাদের দেয়া হয়েছে। মাননীয় সংসদ সদস্যদের সদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনার আলোকে জন্ম নেয়া এই মোবাইল কোর্টের প্রত্যাশাও প্রশাসন ক্যাডার পূরণ করতে সমর্থ হয়েছে। এ বছর দেশের মানুষ সুলভে ইলিশ মাছ খেয়েছেন। এই সময়ও মা ইলিশ রক্ষার জন্য সারারাত ধরে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটরা নদী পাহারা দিয়ে চলছেন। দেশের মানুষ আজ ভেজালমুক্ত খাদ্যের নিশ্চয়তা পাচ্ছেন। মোবাইল কোর্টের তৎপরতার কারণেই এবছর কোন ফলমূলে ফরমালিন পাওয়া যায়নি। ইভটিজিং এর মহমারি দূর হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে। মোদ্দাকথা, যেসব ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্টকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে- তার সবগুলো ক্ষেত্রেই সাফল্য এনেছে মোবাইল কোর্ট। আর এ কারণে দেশবাসীর মাঝে মোবাইল কোর্টের জনপ্রিয়তাও আকাশচুন্বী। একারণে এখনো মোবাইল কোর্ট এর কার্যক্রম নিয়ে খবরের পাতায় সংবাদ ছাপা হয়।
চার.
মোবাইল কোর্টের সাফল্যের কারণে এর সীমাবদ্ধতা দূর করে আরো কার্যকরভাবে প্রয়োগের জন্য জনদাবী উঠেছে । এর একটি সীমাবদ্ধতা হলো- অপরাধিরা জেনে গেছে- অপরাধ স্বীকার না করলে মোবাইল কোর্ট শাস্তি দিতে পারেনা। আমার নিজের একটি অভিজ্ঞতা প্রথমেই বলেছি। এছাড়াও মাদক ব্যবসায়ী যারা দু একবার কারাভোগ করেছে তারা কিছুতেই অপরাধ স্বীকার করতে চায়না। এসব মামলায় সাক্ষী পাওয়া দুস্কর। যে কারণে অপরাধিদের সহজেই ছাড়া পাওয়া সম্ভব হয়। এই বিষয়টি নিয়ে সরকার চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে- মোবাইল কোর্ট আইনের সীমাবদ্ধতা দূর করে আরো কার্যকর করা হবে। এবার সাক্ষ্য-প্রমাণ বিবেচনায় নিয়ে ঘটনাস্থলে অপরাধীদের যাতে শাস্তি দেয়া যায় তার বিধান রেখে গত ২২ জুন ‘মোবাইল কোর্ট (সংশোধন) আইন, ২০১৫’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। কিন্তু এরপরই ওই শ্রেণির বোদ্ধারা আবারও বিরোধীতায় মেতে উঠেছেন। তাদের জন্যই খনার বচনের অবতারণা করেছি। ‘কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত।’ বর্তমান বাস্তবতায় ডকট্রিন অব নেসেসিটি হিসেবে মোবাইল কোর্টের বিকল্প নেই। সরকারের নির্বাহী কর্মকান্ডকে সুশৃংখলভাবে পরিচালনার জন্য মোবাইল কোর্ট এখন আবশ্যিক। তবে গাছ লাগালেই হবেনা৷ একে শক্তিশালি করা প্রয়োজন৷ তাহলেই ভালো ফলন পাওয়া যাবে৷ পাতা কেটে ফেলার কোন মানে নেই। ফল পেতে হলে এর পরিচর্যা প্রয়োজন। মোবাইল কোর্টকে আরো কার্যকর শক্তিশালী করলেই Not only must Justice be done; it must also be seen to be done কথাটির স্বার্থকতা লাভ করবে।
কাজী সায়েমুজ্জামান
২৬ অক্টোবর, ২০১৬
বিসিএস প্রশাসন এককাডেমি, শাহবাগ
(২৪তম ফিটিলস্টভুক্ত ইউএনওদের জন্য অরিয়েন্টেশন কোর্সের প্রকাশিত সুভেিনর 'ফ্যাকটোটাম' এর জন্য লেখা।)
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ২:২২
ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
Not only must Justice be done; it must
also be seen to be done
কথাটির সমান ওজনে বাস্তবিক সফলতা পাক। সেই কামনা করি! শুভকামনা!