নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘মরীচিকা’ কবিতায় লিখেছেন, ‘যারে বাঁধি ধরে তার মাঝে আর রাগিণী খুঁজিয়া পাই না।/
যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না ॥’ ওস্কার ওয়াইল্ড বলেছেন, ‘জীবনের দুইটা মাত্র ট্রাজেডি। এক- যা চাইলা তা পাইলা না, দুই- তা পাইয়া গেলা।’ আবার ফরাসি মনোসমীক্ষক ও দার্শনিক জ্যাক লাকা (Jacque Lacan) লিখেছেন, ‘আমরা যা চাই তা ঐ বস্তু নয় বরং ঐ বস্তু চাওয়ার কল্পনা এবং উত্তেজনাই আমরা মূলত চাই।’ ছোটগল্পকার শহীদুল জহির (১৯৫৩-২০০৮) তাঁর ‘কোথায় পাব তারে’ গল্পে এমনি একটি বিষয়কে কাহিনিতে রূপ দিয়েছেন।
গল্পের শুরুতেই বলা হয় ‘দক্ষিণ মৈশুন্দি, ভূতের গলির লোকেরা পুনরায় এক জটিলতার ভিতর পড়ে।’ এবং তা খোরশেদ আলমের বেকার পুত্র আব্দুল করিমের ‘ময়মনসিং’ যাওয়াকে কেন্দ্র করে। মহল্লার লোকেরা বিশ্বাস করতে চায় না আব্দুল করিম ‘ময়মনসিং’ যাবে। ফলে আজিজ ব্যাপারি তাকে ডাইলপুরি খাওয়াইতে খাওয়াইতে নানাভাবে প্রশ্ন করে জানতে চায় সে আসলে কোন উদ্দেশ্যে যেতে চায়। এই জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আব্দুল করিম বলে সে তার এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছিল এবং বন্ধুত্ব হয়েছিল মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে। তার নাম শেফালী।
কিন্তু তবুও এলাকাবাসীর বিশ্বাস হয় না আব্দুল করিম যাবে অথবা তাদের সন্দেহ দূর হয় না। এরপর এক সময় আব্দুল করিম আজিজ ব্যাপারির ছেলে দুলাল মিয়াকে সাথে নিয়ে ময়মনসিংহ রওনা দেয়। দুলাল মিয়াকে সাথে দিয়েছিল আজিজ ব্যাপারি। এলাকার লোকেরা এতে খুশি হয়। কারণ দুলাল মিয়ার কাছ থেকে জানা যাবে তাদের ‘ময়মনসিং’ ভ্রমণের বিত্তান্ত বা সেখানে গিয়ে শেফালীর সাথে দেখা হল কি না।আব্দুল করিম শেফালির দেয়া অদ্ভুত ঠিকানা ধরে কিছুদূর যায়। তারপর হঠাৎ করেই সে ফিরে আসে। দুলাল মিয়াকে বলে, ‘ল, দুলাল, যাইগা’ দুলাল এতে বিস্মিত হয়। তারা সেই রাতেই এলাকায় ফিরে আসে।
এখানে আব্দুল করিম কেন গেল আবার ফিরেই বা আসল কেন? সম্ভবত শেফালি, ময়মনসিং, ডাল কেনা, আলু কেনা ইত্যাদি হল আব্দুল করিমের ফ্যান্টাসিভিত্তিক চাওয়া। আব্দুল করিমের এই আকাঙ্ক্ষার বস্তুগুলোর হয়ত অস্তিত্বই নেই, হয়ত পুরোটাই কাল্পনিক। এই ফ্যান্টাসির ব্যাপারটাও একটু ঘোলাটে। ব্যাপারটাকে যদি ছবি মনে মনে করা হয়, তাহলে ছবির আউটলাইনটাও একদম ক্লিয়ার না। ছবিটাও একটু ঝাপসা। কিন্তু আব্দুল করিম এগুলো চেয়েছে এবং এগুলোর পাওয়ার চেষ্টার কল্পনা সে করেছে, আজিজ ব্যাপারির সাথে ডাইলপুরি খেতে খেতে এ নিয়ে আলাপ করেছে। অন্যরাও এ বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
এই ধরনের অনুভূতির মাঝে মানুষের চাওয়া জিনিসের দুর্বোধ্যতা ধরা পড়ে। মানুষ জানে না সে কি চায়, যেইরূপ আব্দুল করিমও আসলে জানতো না। কিন্তু এর মধ্যে যে জিজ্ঞাসা আছে তা যেন মানুষের চিরন্তন ডিজায়ার ঘটিত জিজ্ঞাসাই। কোথায় পাবো তারে বা তার অস্তিত্ব আছে নাকি বা তাকে আসলে চাই কিনা? বাউল গগন হরকরার তাঁর গানে বলেছেন. ‘আমি কোথায় পাব তারে,/ আমার মনের মানুষ যে রে।/ হারায়ে সেই মানুষে, তার উদ্দেশে দেশ-বিদেশে-/ আমি দেশ-বিদেশে বেড়াই ঘুরে;’ সম্ভবত এই চিরন্তন অধরা আকাঙ্ক্ষা ঘটিত জিজ্ঞাসা থেকেই শহীদুল জহির গল্পের নামকরণ করেছেন ‘কোথায় পাবো তারে’।
ছবি কৃতজ্ঞতা: মুরাদুল ইসলামের নিউজলেটার
২| ০৫ ই মে, ২০২৩ দুপুর ২:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: শহীদুল জহিরের এ গল্পটি আমার পড়া হয়নি,
৩| ০৫ ই মে, ২০২৩ রাত ৯:১২
অপু তানভীর বলেছেন: শহীদুর জহির আমাদএর দেশের অন্যতম সেরা কথা সাহিত্যিক । কিন্তু আফসোস তাকে দেশের মানুষ সেভাবে চিনতে পারে নি । তার গল্প সমগ্র রয়েছে আমার কাছে । বেশ কিছু গল্পও পড়া হয়েছে । আপনার লেখাটা পড়ে গল্পটা পড়ার আগ্রহ জন্মালো । খুজে দেখি গল্পটা আছে কিনা !
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা মে, ২০২৩ রাত ১১:২৪
শেরজা তপন বলেছেন: বুঝতে একটূ কষ্ট হল!