নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেকদিন হয় টিউশনটা ছেড়ে দিয়েছি। বই-খাতা-কলম আর বন্ধুদের নিয়েই সময় পার হয়। আমি গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ করি না। প্রতিদিন ক্লাসে যাই; লাইব্রেরি যাই, সেমিনারে যাই; বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান থাকলে মাঝে মধ্যে অংশ নিই, ঘুরে আসি। অলসটাইপ বিলাসী মানুষ। বেশিরভাগ সময় কাটে খাতা আর কলম নিয়ে। আর নানা বিষয়ে নতুন কিছু খোঁজে বের করা নিয়ে। ক্লান্তি ভর করে মাঝে মাঝে। ছাদে ঘুরে আসি রাত অর্ধাঅর্ধি হলে। অমাবস্যার অন্ধকার দেখি, জ্যোৎস্নার আলো দেখি; আবার মাঝে মাঝে চোখ বুজে ক্লান্তির রেশ কাটাই, প্রশান্ত করি দেহ, মন। ভেবেছিলাম আজ জ্যোৎস্না দেখবো, ছাদে নয়, রাস্তায় ঘুরে ঘুরে। পকেটে শ'দেড়েক টাকা আছ, যদি লাগে! অন্যদিন বন্ধুদের ফোন দিই, মনির বেশিরভাগ সময় সঙ্গে থাকে। আজ সেও ক্লান্ত ; খেটেছে খুব দিনে। আমি হাঁটতে শুরু করেছি, রাত ১২: ৩৭। ভিসি চত্ত্বর - ফুলার রোড- পলাশী- বুয়েট- চানখানপুল- গুলিস্তান হয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। আকাশ সুন্দর, চারপাশ মোটামুটি ভালোই নীরব; দিনের তুলনায়। এতো পথ হেঁটে সময় অনেক হয়ে গেছে। ঘুমও আসছে। একটা চাওয়ালার কাছ থেকে এককাপ চা নিলাম। দু'ঢোক গিলেই এগুতে আরম্ভ করেছি। পা চলছে না। একটা খালি রিক্সা সামনে এসে দাঁড়ালো।
" মামা কোথায় যাবেন?"
ইচ্ছে ছিলো হেঁটেই ফিরবো। পা ধরে আসছে। তাই আর হাঁটতে মন চাইছে না।
বললাম- "কবি জসীম উদদীন হল চলেন"।
হাইকোর্ট মোড় পর্যন্ত দু'জন নীরব ছিলাম। আমি কি ভাবছিলাম মনে নেই। হয়তো আটটায় ক্লাস, ঘুমুতে হবে গিয়ে, কিংবা মিডটার্মের পড়াগুলো শেষ করতে হবে কিংবা হয়তো অন্যকিছু। আজকাল টাকার সংকটে পড়তে হয় খুব।
"মামা, আপনি একা একা দাঁড়িয়ে ছিলেন দেখলাম"। লোকটা হঠাৎ বলে উঠলো শুনে চিন্তা সরে গেছে। ওনার কথায় মনোযোগ দিলাম।
"না, মামা। ঘুরতে বেরিয়েছি। কেউ সঙ্গে আসেনিতো, আর চা খেয়েছিলাম দাঁড়িয়ে। " কথা বলছিলাম ঠিকই কিন্তু আওয়াজ খুব বেশি হচ্ছিল না।
লোকটা আমার দেশের বাড়ি জিজ্ঞেস করলো। এভাবে বাংলা একাডেমি পর্যন্ত পরিচয় পর্ব চললো। আমি জবাব দিয়েই যাচ্ছিলাম। এরপর আমিও ভদ্রতার খাতিরে দুএকটা প্রশ্ন শুরু করলাম।
" আপনার বাড়িতে কে কে আছেন ,মামা? "
দুই ছেলে, এক মেয়ে । মেয়েটার বিয়ে হয়েছে তিনবছর, একটা নাতি আছে। ছেলেদের বিয়ে হয়েছে। বউ নিয়ে সংসার করে। ওরা আলাদা থাকে। ওনি ওনার স্ত্রী নিয়ে একা। তাঁর আজ জ্বর। - এসব জানতে পারলাম।
"আপনি এখনো আছেন যে!"
লোকটা বলে যাচ্ছিলো - ''চাউল কেনার টাকা হলেই চলে যাব । আমি তো এসেছি সন্ধ্যা পর ।বাড়ির কাজ সেরে, ওকে গোসল করিয়ে ,খাওয়াই বের হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে । এসে ১৫০ টাকা ভাড়া মেরেছিলাম। টিউব নষ্ট হয়ে গেছিল । ১২৫ টাকা দিয়ে টিউব কিনেছি । আর মিকারকে ১৫ টাকা দিয়েছি লাগানোর জন্য । আমার কাছে আছে ১০ টাকা । "
-চাচীকে ডাক্তার দেখিয়েছেন ?
--হ , বাবা , দেখাইছি ।
-- ওষুধ খাওয়াচ্ছেন ?
-- হ , বাবা । অনেক দামি দামি ওষুধ । ওর ওষুধ কিনে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।
ভিসি চত্ত্বর এসে ডানদিকে রিক্সা ঘুরাতে বললাম। আমি আর কিছু বলতে পারিনি। হলের সামনে এসে রিক্সা থেকে নেমে ১০০ টাকা দিয়ে রুমে চলে এলাম। হয়তো সকালে আবার মনিরকে বলতে হবে - "দোস্ত, কিছু টাকা ধার দে। আগেরটা শেষ হয়ে গেছে।
২| ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৩০
সৈয়দ ইসলাম বলেছেন:
সার্থক!
৩| ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১:৩৮
সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: অসম্ভব ভাল লাগল।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:১১
প্রতিভাবান অলস বলেছেন: মন খারাপ করে দেয়া অসম্ভব সুন্দর লিখনি।
শুভকামনা জানবেন।