নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের সম্পর্কে লিখতে লজ্জা পাই,কারন নিজেকে নিয়ে বিশেষভাবে যে কি লিখবো তাই খুঁজে পাই ন।তবে হ্যাঁ আমি একজন মানুষ, রোবট নই এটুকু বলতে পারি।
:- লাবনী দরজা খুল।হইছে তো, আর কত...
ভেতর থেকে কোন উত্তর পেলাম না।শুধু কিছু একটা ভাঙার শব্দ শুনতে পেলাম।মানে আরও একটা প্লেট ভাঙলো।এই মুহুর্তে এখানে থাকাটা নিরাপদ মনে করছি না।যেকোন সময় দেখবো দরজা খুলে গিয়ে দু এক ঘা ঝাঁটার বাড়ি পড়ে গেছে গায়ে।তার চেয়ে মান সম্মান নিয়ে আপাতত এখান থেকে কেটে পড়াই ভাল।
:- আচ্ছা শোন, আমি একটু ঘুরে আসছি। ততক্ষণে মাথাটা ঠান্ডা করে নাও।
এই বলে আমি সিঁড়িতে পা বাড়ালাম।আরেকটা কিছু ভাঙার শব্দ শুনতে পেলাম মনে হলো।
লাবনী,আমার বউ।যেনতেন বউ না, একদম আট বছর প্রেম নামক ইনভেস্টমেন্টের পর বউ করে এনেছি ঘরে।প্রেম কে ইনভেস্টমেন্ট বলাতে আবার কেউ চোখ ছোট ছোট করে তাকাবেন না।আমাদের মত কর্পোরেট জগতের মানুষেরা ইনভেস্টমেন্ট, প্রফিট, লস এই তিন শব্দ মনের অজান্তেই সব জায়গায় ঢুকিয়ে দেই।যেমন টা নিজের সরু নাক সব জায়গায় ঢুকিয়ে বেড়ান তিন তলার আসাদ সাহেব।এই যে একটু আগে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় বেঁটে, উদ্ভট হাসি মিশ্রিত মুখ নিয়ে সামনে হাজির
:- হে হে হে...তা আজ কি নিয়ে শুরু হল ফারুক ?
- জ্বি... নাহ, তেমন কিছু না।একটু তাড়া আছে আংকেল, চলি।
:- হ্যাঁ... বটে..বটে।না আমি বলছিলাম যে আজ কি তরকারিতে ঝাল বেশি হয়েছে বলেছিলে নাকি ভাত ফুটেনি...হা...হা...হা...
আমি আর কথা বাড়ানোর প্রয়োজন মনে করলাম না।এই উটকো লোকের সাথে কথা বাড়ানোই বৃথা। ব্যাটা বুড়ো ভাম।
নাহ, আজ তরকারিতে ঝাল, ভাত সবই ঠিক ছিল।সমস্যা হয়েছে আমের আচার নিয়ে।সেদিন বাজার থেকে কিছু কাঁচা আম এনেছিলাম,ডালের সাথে খাওয়া যাবে ভেবে।লাবনী তা-ই দেখে কি মনে করে আচার বানানোর ভুত চেপে ধরল।সেই থেকে শুরু।এখন যদি আমি বলতে যাই "লাবনী আচার করেছো কখনো ? থাক।বাদ দাও। আমি আচার কিনে এনে রাখবো " তাহলে আমার তিন রাতের ঘুম হারাম হবে তার কথার বানে।তার চেয়ে যা করতে চায় করুক।আমার সমস্যা কি! কিন্তু সমস্যা হলো। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল,শুধু লবণ একটু বেশি হয়ে গেল আচারে এই যা। সেটা বড় বিষয় ছিল না।বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াল "আচারে লবণ একটু বেশি হয়েছে" কথাটা আমি বলাতে।কে জানতো আমার এই একটা কথার ওজন জাপানে ফেলা লিটল বয়-ফ্যাটম্যান বোমার চেয়েও বেশি হবে।
- একটা বেনসন
দোকানদার জামাল মামা ভুত দেখার মত করে আমার দিকে তাকালেন।সেটাই স্বাভাবিক।সিগারেট ছেড়েছি অনেক দিন হল।লাবনীর কড়া নিষেধ।সেই থেকে জামাল মামার একজন নিয়মিত কাস্টমার কমলো।
-মামা একটা বেনসন
:- এঁ...! জ্বে স্যার। স্যার তো আর আমার দোকানে আহেন না এখন
-এই যে আসলাম।এখন থেকে আসব।সিগারেট খাওয়া শুরু করেছি আবার
:-জ্বে স্যার।খুব ভাল কইচ্ছেন। হে... হে...হে...
হ্যাঁ সিগারেট খাবই আমি।কেন খাব না!অবশ্যই খাব।এত কথা মেনে চলি তারপরও সামান্যতম কিছু একটা নিয়েই ঝামেলা শুরু করে দেয়।এটা কি ঠিক? কখনই না।এখন থেকে আমিও আর সব কথা মেনে চলছি না হু।
-একি ফারুক,তুমি আবার সিগারেট ধরলে কবে থেকে...!
আসাদ সাহেব কখন সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন টের পাইনি।আজ সারাদিনে সর্বোচ্চ খারাপ হয়তো এটাই হওয়া বাকি ছিলো।
:- না...মানে এই আর কি।একটা পুরনো বন্ধুর সাথে অনেক দিন পর হঠাৎ দেখা।অনেক জোর করে সাধলো।না করতে পারলাম না।
জামাল মামা আমার দিকে বড় বড় চোখ করব তাকিয়ে আছে।পা দিয়ে সিগারেট নিভিয়ে বাসার দিকে হাঁটা শুরু করলাম।
অফিসের কম্পিউটারটা হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে।অনান্য দিন হলে এতক্ষণে মেজাজ খারাপ হয়ে পড়তো, কিন্তু এখন হচ্ছে না।এই মুহুর্তে কাজ নেই খুব একটা।ভালই হয়েছে নষ্ট হয়েছে।রফিক কে নিয়ে এক কাপ কফি খেয়ে আসা যাক।রফিক আমার বন্ধু।এক অফিসেই কাজ করি আমরা।এখনো বিয়ে করেনি।তবে পারিবারিকভাবে নাকি মেয়ে দেখা হয়েছে একটা।রফিকেরও পছন্দ হয়েছে বললো।হোক বিয়ে হোক।সব ব্যাটা ছেলের বিয়ে হোক।একটা না পাঁচ দশটা করে হোক।বুঝুক সবাই বিয়ের কি মজা।একা আমি ভোগবো কেন! বিয়ের আগে মেয়েগুলো থাকে প্রেমিকা, বিয়ের পর হয় ডাইনি।কথায় কথায় স্বামীর মাথা খাওয়াই এদের মূখ্য কাজ।
রফিক,মেয়ে,প্রেমিকা,বিয়ে এগুলোর মত জটিল ও কঠিন বিষয়গুলো নিয়ে আমার গভীর গবেষণায় বাঁধা দিলো পিয়ন শামীম
: স্যার ম্যাডাম আসছেন
:- হ্যাঁ তা তো প্রতিদিনই আসেন।অফিসে বস আসবেন না তো কি হাতি ঘোড়া আসবে ?
: না মানে স্যার, লাবনী ম্যাডাম আসছে।
এর চেয়ে বরং অফিসে ডাইনোসরের আবির্ভাব হয়েছে শুনলে কম অবাক হতাম।একটা বড় ঢোক গিলে লাবনীর মুখোমুখি হলাম।পরনে কালো পাড় নীল শাড়ি, কপালে কালো টিপ, হাতে কাঁচের চুড়ি। আহা কি সৌন্দর্য। দেখতেই রূপা রূপা ফিল আসছে একটা।কিন্তু এটা কি!! রুপার হাতে তো বাজারের ব্যাগ থাকার কথা না।"রুপার হাতে বাজারের ব্যাগ" এমন কোন বই হুমায়ুন আহমেদ লিখে গেছেন বলেও তো মনে হচ্ছে না।তবে লাবনী বাজারের ব্যাগ নিয়ে অফিসে হাজির কেন!!
: চলো
:- কি ব্যাপার তুমি এই অসময়ে। আর বাজারের ব্যাগ নিয়ে আসছো কেন? হা হা হা...
: হাসি শেষ হলে বাজারে চলো।আম কিনবো কিছু।কাঁচা আম।
:- হ্যাঁ তা ঠিক আছে।আমাকে বললেই পারতে।নিয়ে আসতাম।আচ্ছা চল।আমারও কাজ নেই এখন।
লাবনীর মাথা থেকে আচারের ভূত এখনো নামে নি বুঝা গেলো। আমার মুখ থেকে "বাহ, চমৎকার আচার হয়েছে তো" এই কথা না শোনা অব্দি এই ভূত নামবার নয়।
রাত প্রায় আড়াইটার দিকে আসাদ সাহেবের স্ত্রীর ফোন পেয়ে ঘুম ভাঙলো।আসাদ সাহেবের বুকে ব্যাথা উঠেছে।এম্বুল্যান্স কল করে তিন তলায় গেলাম।অবস্থা খুব একটা ভালো ঠেকছে না।এর আগেও স্ট্রোক হয়েছে একবার।হাসপাতালে নেয়ার পথে যেন অবস্থা আরও খারাপের দিকে না যায় সেই প্রার্থনাই করছি এখন এম্বুল্যান্সে বসে বসে।কি মনে করে আসাদ সাহেব হঠাৎ করে আমার হাত চেপে ধরলেন।
: ফারুক
:- জ্বি আংকেল
: সুমন কি আসছে ?
:- হ্যাঁ আসছে।এইতো রওনা দিল বলে।আপনি চিন্তা করবেন না
সুমন উনার ছেলে।স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কানাডায় স্থায়ী হয়েছে।আমি মিথ্যে বলেছি।সুমনের সাথে আমার কথা হয়েছে।বড় কোন কিছু ঘটে গেলেও তার এইমাসের ভেতর দেশে আসা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে।
: ফারুক
:- জ্বী আংকেল, বলুন
: এযাত্রায় বোধহয় আর বাঁচবো না বাবা।
হঠাৎ করেই আসাদ সাহেবের জন্যে খুব বেশি খারাপ লাগা কাজ করছে।এই মানুষটাকে আমি খুব একটা পছন্দ করতাম না।অথচ এখন মনে হচ্ছে আমার অতি আপন কেউ তার অন্তিমসময় পাড় করছে চোখের সামনে।
:- আপনি একদম ঠিক হয়ে যাবেন।কিছু হবেনা। ভরসা রাখুন বাবা।
আমি মুখ ফিরিয়ে চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করলাম।
বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় সাড়ে চারটা বেজে গেলো। লাবনী আর ঘুমোয় নি, আমার অপেক্ষা করছিলো।
: কি অবস্থা এখন আসাদ আংকেলের ?
:- ভালো।আইসিইউ লাগেনি। কেবিনেই আছেন।ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছে।
: হুম
:- কাল বিকালে আসার সময় হাসপাতাল হয়ে আসবো।
এক সপ্তাহ পর আসাদ সাহেবকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে বাসায় ফিরলাম।সিঁড়িতে প্রতিদিনই দেখা হতো।এই সাত দিন দেখা হয়নি।মানুষটাকে খুবই মিস করেছি।এখন আর তাকে বিরক্তিকর লাগে না।মানুষের চলার পথে এমন কিছু বিরক্তিকর মানুষেরও প্রয়োজন আছে।
লাবনী সাজতে বসেছে আয়নার সামনে।গুন-গুন করে পুরনো একটা গান গাইছে।তবে কোন গান সেটা ঠিক ধরতে পারছি না।ঘড়িতে এখন রাত নয়টা। রাতের বেলা লাবনী সাজতে বসেছে মানে কোন গিফট অপেক্ষা করছে আজ আমার জন্যে। বরাবরই দেখে এসেছি কোন বিশেষ উপহার দেবার আগে লাবনী সাজতে বসে।কোন একটা পুরনো গান ধরে।তারপর উপহার হাতে সামনে এসে বলে চোখ বন্ধ করতে।আজ একটু পর সেরকমই কিছু ঘটতে যাচ্ছে বুঝতে পারছি।তাই আমিও বিছানায় হেলান দিয়ে বই পড়ার ভান ধরে অপেক্ষা করছি।সে উঠে পাশের রুমে চলে গেলো। একটু পর আবার ফিরে এলো। তার হাত পেছনে, উপহারটি লুকিয়ে রাখছে।
: চোখ বন্ধ কর
আমি এটা শোনার জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম।হাসি হাসি মুখ করে চোখ বুজলাম।হার্টবিট বেড়ে গেছে টের পাচ্ছি।কি উপহার পেতে যাচ্ছি আজ!!
: এবার চোখ খোল
লাবনীকে অপূর্ব সুন্দর দেখাচ্ছে।আর তার হাতে মোটামুটি মাঝারি সাইজের একটা বাটি।আচার।আমের আচার
: কি ভেবেছিলে আচার বানাতে পারবো না?? এই নাও, এবার চেখে দেখো টক-ঝাল-মিষ্টি
ঠিকঠাক হয়েছে কি-না।
অগত্যা আমাকে এই রাতের বেলা বেশ খানিকটা আচার খেতে হলো।
:- বাহ, বেশ ভালো আচার বানিয়েছো তো।খুব মজা হয়েছে।কখন করলে এতসব!!
লাবনীর মুখে বিজয়ীর হাসি।সে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।আমি তার উষ্ণতা অনুভব করতে পারছি।আর মনে করার চেষ্টা করছি কিচেনে চিনি কোথায় রাখা আছে।ঝালে কান গরম হয়ে আসছে।
২| ১৩ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:০৩
নেওয়াজ আলি বলেছেন: অসাধারণ লেখা
৩| ১৩ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: লাবনী ভালো থাকুক।
৪| ১৩ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৬
লাবনী আক্তার বলেছেন: গল্পের প্রথমেই নামটা (লাবনী) দেখে চোখ আটকে গেল গল্পে। অনেকদিন পর ব্লগে এসে গল্প পড়লাম।
আমাদের জীবনের চেনা একটা অধ্যায় এই গল্পটা। আপনি লিখেছেন " বিয়ের আগে মেয়েগুলা থাকে প্রেমিকা, বিয়ের পর হয় ডাইনি" লাইনটা পড়ে হাসলাম অনেক্ষন। ছেলে মেয়ে উভয়েরই মনে হয় এমন অনুভূতিগুলো হয়ে থাকে।
যাইহোক, গল্পে ভালোলাগা জানবেন।
৫| ১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ২:২৫
মা.হাসান বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে।
বউয়ের হাতের রান্না খাবার পর যে পাপিষ্ঠ নরাধম তা খারাপ বলে তার কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:৪১
বিজন রয় বলেছেন: আসলে কান কিসে গরম হলো? ঝালে না অন্য কিছুতে?