নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শাকিরা ইসাবেল মেবারাক রিপোল তিনি শাকিরা নামেই বেশি পরিচিত । তিনি একজন কলম্বিয়ান গায়িকা-গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত প্রযোজক, নৃত্যশিল্পী এবং জনহিতৈষী। শাকিরা ১৯৭৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি কলম্বিয়ার বার্রানকিলাতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তার মা নিদাইয়া দেল কারমেন রিপোল তোর্রাদো এবং লেবানিজ বংশোদ্ভূত বাবা উইলিয়াম মেবারাক শাদিদের একমাত্র সন্তান। শাকিরার মোট ভাইবোনের সংখ্যা আট, যারা সবাই তার বাবার আগের স্ত্রীর গর্ভজাত।তার দাদা-দাদি লেবানন থেকে নিউ ইয়র্কে বসবাস করা শুরু করেন এবং সেখানেই তার বাবার জন্ম হয়। এরপর ৫ বছর বয়সে তার বাবা সেখান থেকে কলম্বিয়াতে চলে আসেন।আরবিতে শাকিরা শব্দের অর্থ কৃতজ্ঞ। এটি আরবি শাকির শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ। তার নামের পরবর্তী অংশ ইসাবেল এসেছে তার দাদির নামানুসারে। এর অর্থ আমার ঈশ্বর আমার প্রতিজ্ঞা আমার ঈশ্বরের ঘর । তার দ্বিতীয় ডাকনাম রিপোল এসেছে ক্যাটালান থেকে। শাকিরা তার যৌবনকালের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন উত্তর কলম্বিয়ার শহর বার্রানকিলায়। ভালো বুদ্ধিমত্তা এবং আইকিউ পরীক্ষায় ভালো স্কোর করার জন্যও শাকিরা বিশেষভাবে পরিচিত।শাকিরা বার্রানকিলাতে তার বেড়ে ওঠা। স্কুল জীবনে সরাসরি উপস্থাপনার মাধ্যমে তিনি তার প্রতিভার প্রকাশ ঘটাতে শুরু করেন। সেখানে তার নিজস্ব বেলি ড্যান্সিং-এর সাথে তিনি তার কণ্ঠে স্বার্থকভাবে রক অ্যান্ড রোল, ল্যাটিন, পূর্ব মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গীত ফুটিয়ে তুলতেন। শাকিরার মাতৃভাষা স্পেনীয় হলেও তিনি অনর্গল ইংরেজি, পর্তুগিজ, এবং ইতালীয় ভাষায় কথা বলতে পারেন।
মাত্র চার বছর বয়সে শাকিরা তার প্রথম কবিতাটি লেখেন যার শিরোনাম ছিলো লা রোসা দে ক্রিস্টাল La Rosa De Cristal অর্থাৎ স্ফটিকের গোলাপ। বড় হওয়ার সাথে সাথে তিনি তার বাবাকে একটি টাইপরাইটারে গল্প লিখতে দেখে এ ব্যাপারে আগ্রহী হন এবং বড়দিনের উপহার হিসেবে একটি টাইপরাইটার চান। সাত বছর বয়সে তিনি একটি টাইপরাইটার পান এবং তখন থেকেই তিনি কবিতা লেখা চালিয়ে যান। তার কবিতাগুলো ক্রমেই গানে রূপ নেয়। শাকিরার দুই বছর বয়সে তার এক বড় সৎ ভাই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান। এ কারনে তার বাবা নিজের দুঃখ ঢাকতে চার বছর কালো চশমা পরে ছিলেন। এ ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শাকিরা আট বছর বয়সে তার প্রথম গান তুস গ্রাফাস ওসকুরাস Tus Gafas Oscuras লিখেন যার অর্থ তোমার কালো চশমা।চার বছর বয়সে শাকিরার বাবা তাকে এক্টি স্থানীয় মিডল ইস্টার্ন রেস্টুরেন্টে নিয়ে যান। সেখানেই তিনি প্রথমবার ডোম্বেক শোনেন এবং টেবিলের উপর উঠে নাচতে শুরু করেন। ডোম্বেক একটি আরবীয় বাদ্যযন্ত্র যা বেলি ড্যান্সিং এ ব্যবহার করা হয়। তিনি তার ক্যাথলিক স্কুলের সহপাঠী এবং শিক্ষকদের গান শোনাতে ভালোবাসতেন। কিন্তু দ্বিতীয় গ্রেডে থাকার সময় তিনি তার স্কুলের গায়কদল নির্বাচনের সময় বাদ পরেছিলেন কারন তার গলার কম্পন খুবই শক্তিশালী ছিল। স্কুলে তাকে প্রায়ই দুষ্টুমির জন্য ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া হত। তিনি প্রতি শুক্রবারে তার শেখা বেলি ড্যান্সিং এর ধাপগুলো স্কুলে করে দেখাতেন। তিনি বলেন আর এভাবেই আমি লাইভ পারফর্মেন্স এর প্রতি নিজের ভালোবাসা আবিষ্কার করি।শাকিরার মাঝে কৃতজ্ঞতাবোধ তৈরি করতে তার বাবা তাকে স্থানীয় পার্কের অনাথ শিশুদের দেখাতে সেখানে নিয়ে যেতেন। সেই দৃশ্যগুলো তার মনে গেঁথে যায় এবং একদিন তিনি এই শিশুদের সাহায্য করবেন বলে মনে মনে ঠিক করেন।
কলম্বিয়ার স্থানীয় প্রযোজকদের সহায়তায় শাকিরার সঙ্গীত জীবনের প্রথম দুটি অ্যালবাম প্রকাশ পায় কিন্তু সেগুলো কলম্বিয়ার বাইরে খুব একটা পরিচিতি পায় নি এবং সেগুলো ব্যবসায়িকভাবে সফল না হওয়ায় শাকিরা পরবর্তীতে নিজেই নিজের অ্যালবাম প্রযোজনার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯৫ সালে তার নিজস্ব প্রযোজনায় অ্যালবাম পিয়েস দেসকালসোস Pies Descalzos প্রকাশ পায় যা তাকে লাতিন আমেরিকা এবং স্পেনে খ্যাতি এনে দিয়েছিল এবং একই সাথে তাকে একজন রহস্যময় সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু ১৯৯৮ সালে দোন্দে এস্তান লোস লাদ্রোনেস Dónde Están Los Ladrones অ্যালবামটি শিল্পী হিসেবে তার গুরুত্ব বাড়াতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। এই অ্যালবামটির জন্য তিনি রোলিং স্টোন, অল মিউজিক গাইড, এবং বিলবোর্ড ম্যাগাজিনের সঙ্গীত সমালোচকদের কাছ থেকে উৎসাহব্যাঞ্জক সাড়া পান।তিনি দুইবার গ্র্যামি পুরস্কার, সাতবার ল্যাটিন গ্র্যামি পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের জন্যও মনোনীত হয়েছিলেন। বিএমআই এর তথ্যানুসারে তিনি কলম্বিয়ার সর্বকালের সবচেয়ে বেশি অ্যালবাম বিক্রিত শিল্পী এবং সেই সাথে তিনি ব্যবসায়িকভাবে সফল দ্বিতীয় ল্যাটিন অ্যামেরিকান নারী শিল্পী যার অ্যালবাম বিশ্বব্যাপী পাচ কোটি কপি বিক্রিত হয়েছে। তাছাড়াও তিনি দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সুযোগ পাওয়া একমাত্র শিল্পী যিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিলবোর্ড হট ১০০, কানাডিয়ান বিলবোর্ড হট ১০০, অস্ট্রেলিয়ান এআরআইএ চার্ট এবং ইউকে সিঙ্গেলস চার্টে প্রথম স্থান পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।হলিউড ওয়াক অফ ফেইমে একজন তারকা হিসেবে শাকিরা পুরস্কৃত হয়েছেন।
গিনেস ওয়ার্ল্ডস-রেকর্ডস
শাকিরা সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা সাইটে একটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন । তিনি ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যে কিনা ফেসবুকে ১০০ মিলিয়ন লাইক পেয়েছেন । তিনি ম্যারাকানা স্টেডিয়ামে দাঁড়ানো আছেন এমন একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন । ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার একটু আগের মুহূর্ত ছিল সেটা । ছবিটি ৪ দিনের মধ্যেই ৩.৫ মিলিয়ন লাইক পেয়ে গেছিল, এটাই এই তারকার সবচেয়ে বেশী লাইক পাওয়া ছবি হয়ে গেছিল তখনই ।
শাকিরার একটি অলাভজনক ফাউন্ডেশন রয়েছে। নিজের জনপ্রিয় অ্যালবাম পিয়েস ডেসক্যালজোস এর নামে ১৯৯৭ সালে শাকিরা তার ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন নিজ দেশে। সার্বজনীন শিক্ষার প্রচারই এর মূল উদ্দেশ্য। যার অর্থায়নে তিনি মানব সেবার কাজ করে থাকেন। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি আটটি বিদ্যালয় গড়েছেন। তাছাড়া বিভিন্ন চ্যারিটেবল কনসার্টে তিনি অংশগ্রহণ করেন। তার বিভিন্ন অ্যালবাম এবং গান থেকে অর্জিত কিছু অর্থ তিনি এই ফাউন্ডেশনে দান করেন। তাছাড়াও তিনি যুক্ত আছেন ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে।
শাকিরার প্রেম ভালোবাসা
শাকিরার প্রথম প্রেমিকের নাম অ্যান্টোনিও। অ্যান্টোনিও ছিলেন আর্জেন্টিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফার্নান্দো ডে লা রুয়ার ছেলে। শাকিরা এবং অ্যান্টোনিও দীর্ঘ ১১ বছর একসঙ্গে বাস করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের প্রেম টেকেনি। বিচ্ছেদের পরই শাকিরার বিরুদ্ধে আড়াই'শ মিলিয়ন ডলারের মামলা করেছিলেন অ্যান্টোনিও। আদালতে দাখিল করা কাগজপত্রে অ্যান্টোনিও উল্লেখ করেন শাকিরা নামটি একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। এর পুরো কৃতিত্ব নিজের বলেই তিনি মনে করেন। তাছাড়া শাকিরার তুমুল জনপ্রিয় হিপস ডোন্ট লাই এবং ওয়াকা ওয়াকা গান দুটি তৈরির ভাবনাও প্রথম তার মাথায় এসেছিল। এসব কারণেই তিনি মনে করেন শাকিরার আয়ের একটি অংশ তার প্রাপ্য। কিন্তু মামলাটি ধোপে টেকেনি। তারপর আরও ৩টি মামলা করেন তিনি। কোনো মামলায়ই তিনি সুবিধা করতে পারেননি। সবগুলো মামলার রায়ই শাকিরার পক্ষে যায়।অ্যান্টোনিওর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর স্প্যানিশ ফুটবল তারকা জেরার্ড পিকেকে নতুন সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন শাকিরা। জেরার্ড পিকের সাথে শাকিরার পরিচয়টাও গান এবং ফুটবলের মাধ্যমেই। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের আগে স্পেনের হয়ে অনুশীলনে শাকিরার সঙ্গে পিকের প্রথম সাক্ষাৎ হয়। পিকে ছিলেন দলীয় অনুশীলনে আর শাকিরা গিয়েছিলেন বিশ্বকাপের অফিসিয়াল সঙ্গীত ওয়াকা ওয়াকা'র রেকর্ডিংয়ে। তখন থেকেই তাদের শুরু। আর ঠিক তার এক বছর পরই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেমের ঘোষণা দেন এ জুটি। তাদের দুজনের মধ্যে বয়সের পার্থক্য ১০ বছর। জেরার্ড পিকে শাকিরার চেয়ে ১০ বছরের ছোট। তারপরও কোনো বাধা মানেনি তাদের ভালোবাসা। এখন তাদের সংসারে রয়েছে একটি ছেলে সন্তান।
©somewhere in net ltd.