নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মামুন ইসলাম

মামুন ইসলাম

মামুন ইসলাম

হ্যাপী নিউইয়ার

মামুন ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:০৭

ভানুসিংহের প্রথম কবিতা রচনাকালে ভানুসিংহ কিশোর রবীন্দ্রনাথ, ১৮৭৭সালে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্কেচ অবলম্বনে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর অঙ্কিত একটি চিত্রকলা
ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ব্রজবুলি ভাষায় রচিত একটি কাব্যগ্রন্থ। রবীন্দ্রনাথ কৈশোর এবং প্রথম যৌবনে ভানুসিংহ ছদ্মনামে বৈষ্ণব কবিদের অনুকরণে কিছু পদ রচনা করেছিলেন। ১৮৮৪ সালে সেই কবিতাগুলিই ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী নামে প্রকাশিত হয়। কবিতাগুলি গ্রন্থাকারে প্রকাশের পূর্বে বিভিন্ন সময়ে ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। কবিতাগুলি রচনার ইতিহাস পরবর্তীকালে জীবনস্মৃতি গ্রন্থের ভানুসিংহের কবিতা অধ্যায় বিবৃত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কৈশোরে রবীন্দ্রনাথ অক্ষয়চন্দ্র সরকার এবং সারদাচরণ মিত্র সম্পাদিত প্রাচীন কাব্য সংগ্রহ গ্রন্থের মধ্যযুগীয় মৈথিলি কবিতাগুলির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। অক্ষয়চন্দ্র সরকারের কাছ থেকে জেনেছিলেন চ্যাটার্টন নামক জনৈক বালককবির কথা, যিনি প্রাচীন কবিদের অনুকরণে কবিতা লিখতেন। চ্যাটার্টনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রবীন্দ্রনাথও কোমর বাঁধিয়া দ্বিতীয় চ্যাটার্টন হইবার প্রচেষ্টায় প্রবৃত্ত হন। জীবনস্মৃতি গ্রন্থে ভানুসিংহের প্রথম কবিতা রচনার যে ইতিহাসটি বর্ণিত হয়েছে তা নিচের মত করে লেখাঃ
একদিন মধ্যাহ্নে খুব মেঘ করিয়াছে। সেই মেঘলাদিনের ছায়াঘন অবকাশের আনন্দে বাড়ির ভিতরে এক ঘরে খাটের উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া একটা শ্লেট লইয়া লিখিলাম (গহন কুসুমকুঞ্জ-মাঝে)। লিখিয়া ভারি খুশি হইলাম, তখনই এমন লোককে পড়িয়া শুনাইলাম বুঝিতে পারিবার আশঙ্কামাত্র যাহাকে স্পর্শ করিতে পারে না। সুতরাং সে গম্ভীরভাবে মাথা নাড়িয়া কহিল, “বেশ তো,, এ তো বেশ হইয়াছে।”
পূর্বলিখিত আমার বন্ধুটিকে একদিন বলিলাম, সমাজের লাইব্রেরি খুঁজিতে খুঁজিতে বহুকালের একটি জীর্ণ পুঁথি পাওয়া গিয়াছে, তাহা হইতে ভানুসিংহ-নামক কোনো এক প্রাচীন কবির পদ কাপি করিয়া আনিয়াছি।” এই বলিয়া তাঁহাকে কবিতাগুলি শুনাইলাম। শুনিয়া তিনি বিষম বিচলিত হইয়া উঠিলেন। কহিলেন, “এ পুঁথি আমার নিতান্তই চাই,,। এমন কবিতা বিদ্যাপতি-চণ্ডীদাসের হাত দিয়াও বাহির হইতে পারিত না। আমি প্রাচীন কাব্যসংগ্রহ ছাপিবার জন্য ইহা অক্ষয়বাবুকে দিব।”
তখন আমার খাতা দেখাইয়া স্পষ্ট প্রমাণ করিয়া দিলাম, এ লেখা বিদ্যাপতি-চণ্ডীদাসের হাত দিয়া নিশ্চয়ই বাহির হইতে পারে না, কারণ এ আমার লেখা। বন্ধু গম্ভীর হইয়া কহিলেন, “নিতান্ত মন্দ হয় নাই।


সম্ভবত কবিতাটি ১৮৭৭ সালের গোড়ার দিকে লেখা। "গহির নীদমে অবশ শ্যাম মম" পদটি ছাড়া ভানুসিংহের অন্যান্য পদগুলির পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় না। তাই কবিতাগুলিকে কালানুক্রমিকভাবে বিন্যস্ত করার সুযোগ নেই। "গহির নীদমে অবশ শ্যাম মম" গানটি অহমদাবাদে সম্ভবত ১৮৭৮ সালে রচিত হয়।তাছাড়াও "মরণ রে,, তুঁহু মম শ্যামসমান" "কো তুঁহু বোলবি মোয়" "আজু সখি মুহুমুহু" প্রভৃতি কয়েকটি পদও রবীন্দ্রনাথের অপেক্ষাকৃত পরিণত বয়সের লেখা।

ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী প্রকাশিত হয় ১৮৮৪ সালের ১ই জুলাই। গ্রন্থটির আখ্যাপত্রটি ছিল নিচের মতঃ
"ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী। শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্ত্তৃক প্রকাশিত। কলিকাতা আদি ব্রাহ্মসমাজ যন্ত্রে শ্রী কালিদাস চক্রবর্ত্তী দ্বারা মুদ্রিত। সাল ১২৯১’।প্রশান্তকুমার পালের মতে, "শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্ত্তৃক প্রকাশিত" কথাগুলির মধ্যে একটি আত্মপ্রকাশের ভাব থাকলেও প্রকাশকের বিজ্ঞাপনে এই গোপনীয়তা অনেকটাই উদ্ঘাটিত হয়েছে।গ্রন্থের প্রথম সংস্করণের মুদ্রণ সংখ্যা ছিল ১০০০। মূল্য ছিল আট আনা। পৃষ্ঠাসংখ্যা ছিল সবশুদ্ধ ৬০।রবীন্দ্রনাথ ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী উৎসর্গ করেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী কাদম্বরী দেবীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে। উৎসর্গপত্র থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথের নূতন বৌঠান কাদম্বরী দেবী তাকে ভানুসিংহের কবিতাগুলি ছাপাতে অনুরোধ করেন। উল্লেখ্য, এই গ্রন্থ প্রকাশের পূর্ববর্তী বছরেই আত্মহত্যা করেছিলেন কাদম্বরী দেবী।পরবর্তীকালে ভানুসিংহের পদগুলিতে কবি প্রচুর সংশোধনী আনেন।
ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী গ্রন্থের কবিতাগুলি বৈষ্ণব পদাবলির অনুসরণে লিখিত হলেও ড. কবিতা দে মনে করেন, "কবিতাগুলির মধ্যে বৈষ্ণব পদাবলীর মতো কোন পালাবদ্ধ ক্রমপরিণতি নেই।" ড. দে পদাবলির বিষয়নির্দেশ অনুসারে ভানুসিংহের কবিতা ২০টি কবিতার বিষয় বিন্যাস করেছেন: ঋতুবিষয়ক ৪টি কবিতা (২টি বসন্ত ও ২টি বর্ষা বিষয়ক), বংশীধ্বনি পর্যায়ে ৫টি কবিতা, এবং রসপর্যায় বিষয়ক ১১টি কবিতা। রসপর্যায় বিষয়ক কবিতাগুলির মধ্যে রাধাবিরহ বিষয়ক ৮টি, বাসকসজ্জা বিষয়ক ১টি, মান বিষয়ক ১টি এবং মিলন বিষয়ক ১টি কবিতা স্থান পেয়েছে।
অন্যান্য সংকলনে ভানুসিংহের কবিতা
গ্রন্থে মুদ্রিত ২১টি পদের ১৩টি ভারতী পত্রিকায় "ভানুসিংহের কবিতা" শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকাশকালে সব কটি গানের সুরনির্দেশ থাকলেও, মাত্র নয়টি গানের সুর পাওয়া যায়। নয়টি গানের সুর সংকলিত হয়েছে স্বরবিতান ২১-এ। কাব্যগ্রন্থাবলীতে ১৯টি পদ শিরোনাম সহ প্রকাশিত হয়েছিল।রবীন্দ্রনাথ তার পরবর্তীকালের কাব্য এবং গীতিসংকলনে ভানুসিংহের কবিতাগুলিকে বিশেষ স্থান দেননি। পরিণত বয়সে জীবনস্মৃতি গ্রন্থে এই কবিতাগুলি সম্পর্কে বিরূপ সমালোচনা করেছিলেনঃ
ভানুসিংহ যিনিই হউন, তাঁহার লেখা যদি বর্তমানে আমার হাতে পড়িত তবে আমি নিশ্চয়ই ঠকিতাম না, এ কথা আমি জোর করিয়া বলিতে পারি। উহার ভাষা প্রাচীন পদকর্তার বলিয়া চালাইয়া দেওয়া অসম্ভব ছিল না। কারণ, এ ভাষা তাঁহাদের মাতৃভাষা নহে, ইহা একটা কৃত্রিম ভাষা; ভিন্ন ভিন্ন কবির হাতে ইহার কিছু না কিছু ভিন্নতা ঘটিয়াছে। কিন্তু তাঁহাদের ভাবের মধ্যে কৃত্রিমতা ছিল না। ভানুসিংহের কবিতা একটু বাজাইয়া বা কষিয়া দেখিলেই তাহার মেকি বাহির হইয়া পড়ে। তাহাতে আমাদের দিশি নহবতের প্রাণগলানো ঢালা সুর নাই, তাহা আজকালকার সস্তা আর্গিনের বিলাতি টুংটাংমাত্র।

এতদসত্ত্বেও সঞ্চয়িতা কবিতা সংকলনে ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যামসমান’ (মরণ) ও ‘কো তুঁহু বোলবি মোয়’ (প্রশ্ন) কবিতাদুটি এবং গীতবিতান গীতিসংকলনে ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যামসমান’ (প্রেম পর্যায়ে) ও ‘শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা’ (প্রকৃতি পর্যায়ে) সংকলিত হয়। ‘কো তুঁহু বোলবি মোয়’ পদটি ইতিপূর্বে ১২৯২ বঙ্গাব্দের মাসিক "প্রচার" মাসিকপত্র ও কড়ি ও কোমল কাব্যগ্রন্থের প্রথম সংস্করণেও প্রকাশিত হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.