নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তথ্যের মৌমাছি, জ্ঞানের ভিক্ষুক, প্রজ্ঞার সাধক।

মিথমেকার

তথ্যের মৌমাছি, জ্ঞানের ভিক্ষুক, প্রজ্ঞার সাধক।

মিথমেকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

পিডোফিলিয়া: বাংলাদেশে ধামা-চাপা পড়া এক তেতো সত্য।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:০৪


ছবি: নেট

“পিডোফিলিয়া” শব্দটি হয়ত অনেকের কাছে নতুন অথবা অচেনা লাগছে, লাগাটাই স্বাভাবিক। কারণ আমাদের উপমহাদেশে খুব কম প্রচলিত এই শব্দটি, ইদানীং সময় বাংলাদেশের বহু শিশুর মৃত্যুর কারণ পিডোফিলিয়া!
“পিডোফিলিয়া” অর্থ শিশুকামীতা, যে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি শিশুদের উপর বিশেষভাবে যৌন আকর্ষণ অনুভব করে তাকে বলে "পিডোফাইল"। এটি একটি সাইক্রাটিক ডিসওডার, যেটি কিনা যে কারো হতে পারে। পশ্চিমা বিশ্বে এর ব্যাপক প্রবণতা দেখা যায়, প্রচুর শিশু পিডোফাইলদের নৃশংসোতার শিকার হয়, ধর্ষিত হয়। আমাদের উপমহাদেশেও এর অস্তিত্ব সেই আদিকাল থেকেই রয়েছে। আমাদের সমাজ রক্ষণশীল হওয়ায় কোন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হলে পরিবার থেকে তেমন কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় না লোকলজ্জার ভয়ে। "পিডোফিলিয়া" এটি একটি মারাত্মক মানুষিক রোগ, যার শিকার হয় কমলমতি শিশুরা।
আমাদের সমাজ এতটাই রক্ষণশীল যে, সেটা রীতিমতো আত্মঘাতী বলা চলে। শিশু অবস্থায় আমাদের শিশুদের দেওয়া হয় না কোনো যৌন শিক্ষা। এমনকি কৈশরে যখন শারীরিক ও মানুষিক পরিবর্তন হয় তখনও কোন ধরনের শিক্ষা দেওয়া হয় না, পুরো ব্যাপারটি থাকে মাঘ মাসের ঘন কুয়াশার মত। আমাদের সমাজ এতটাই ভদ্র যেখানে সেক্স একটি ট্যাবু, এটা নিয়ে কথা বলা রীতিমতো বিব্রতকর ব্যাপার। আমাদের মোরব্বিদের ধারণা যৌনচারন একটি প্রাকৃতিক ব্যাপার যেটির ভাল ও খারাপ দিক শিক্ষা দেয়া বা নেওয়া সম্ভব নয়, এটা প্রাকৃতিক ভাবেই সম্পূর্ণ হবে।
সত্যই যদি এগুলো প্রাকৃতিক ভাবে সম্পূর্ণ হতো তাহলে আমাদের এত যৌন অপরাধ অবলোকন করতে হত না, দেখতে হত না শিশু ধর্ষণ, শিশু যৌন নির্যাতনের মত পৈশাচিক কর্মকাণ্ড। দেখতে হত না ডাষ্ঠবিনে, শৌচাগারে পড়ে থাকা ছোট্ট মৃত শিশু। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এতটাই হাস্যকর যেখানে সাধারণ যৌনাচারন বিষয়ের অধ্যায় স্কুল থেকে পড়ানোতে বিরত থাকা হয়, বলা হয় এই অধ্যায় বাসায় পড়ে নিও।
এই লেখার পেছনে একটিই কারণ, সেটা যৌন নির্যাতন। সম্প্রতি এই সম্পর্কিত নিউজ প্রচুর সামনে আসছে, তাছাড়া ভিকারুন্নেসা এর চলমান আন্দোলন। এই নিউজটি বেশ আলোচিত ছিল তাই হয়ত আমরা এ বিষয়ে জানতে পেরেছি, সত্যি কথা বললে প্রতিনিয়ত হরহামেশাই এমন শিশু ধর্ষণ হয়ে আসছে যা কিনা থেকে যাচ্ছে আমাদের জানা শোনার বাইরে। পরিবারের লোকলজ্জার ভয়ে অথবা পুলিশ মামলা না নেওয়ায়, হুমকিতে, ন্যায্যো বিচারের শংকায়, এরকম হাজার কারণে এই নিকৃষ্ট অপরাধটি থেকে যাচ্ছে ধামার নিচে।
২০২৩ সালের ৯ মাসেই ৭৮৬জন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশে, ৩৭১ জন শিশু খুন হয়েছে। ১৫৫টি নির্যাতন ঘটেছে ওই শিশুদের শিক্ষকদের হাতে, এদের ভেতর ২৯১ জনই ধর্ষণের শিকার।* বাংলাদেশে ৯৫.৩ শতাংশ শিশুই কোন না কোন ভাবে ঘরে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতনের শিকার; যেখানে, ছেলে ৯৪.৫%, মেয়ে ৯৬.২%।** আমরা একটু চিন্তা করলেই বুজবো যে দেশে এই হারে শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয় সে দেশে আইনশৃঙ্খলা বলতে কতটুকু অবশিষ্ট আছে! "চাইল্ড অ্যাবিউজ ইন বাংলাদেশ" লিখে গুগল করলেই বুঝে থাকবো দেশের বর্তমান আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি। এই শিশুরদের ভেতর যারা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পায় তারা পরবর্তীতে হয় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে সারাটি জীবন। একটি শিশু যখন বড় হয়ে বুঝতে শুরু করে যৌন আচারের ব্যাপারে তখন তার শৈশবের নির্যাতনের কথা তাঁকে মানসিক ভাবে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়, ফলে কৈশরে অকালে ঝরে যায় অনেক তাজা প্রাণ।
আমাদের সমাজে চক্ষু লজ্জা বলতে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে, অনেক পিতামাতা এই চক্ষুলজ্জার ভয়ে শিশু কান্নাকাটি করলেও শিশুকে অন্যের কোলে যেতে বধ্য করে। অন্যের বাসায় যেতে বাধ্য করে। সিংহভাগ পিতামাতাই বোধহয় জানেন না, শিশুদের এই কান্না একেবারে সাধারণ কান্নাকাটি নাও হতে পারে। পেছনে থাকতে পারে এক পেডোফাইলের যৌন নির্যাতনের কাহিনি যার নির্মম শিকার আপনার শিশু। শিশুরা কোমলমতি তারা যখন ব্যথা পায় তখনই সেটা তাদের কাছে খারাপ লাগে, তবে অনেক যৌন আচরণে শিশুরা ব্যথা পায় না এবং তারা বুঝতেও পারে না। শিশু বয়সে এর কোনো প্রভাব না পড়লেও কৈশরে বা যৌবনে পড়তে পারে মারাত্মক মানসিক প্রভাব। এজন্যই অনেক কিশোর-কিশোরী বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। তাদের শৈশবের স্মৃতি তারা মেনে নিতে পারে না, এবং এগুলো কারোর সাথে শেয়ারও করতে পারে না। আমাদের সমাজ যে খুব ভদ্র! তাই ওকথাগুলো সেয়ারিংও মানা। এদিকে আমাদের দেশে সাইকোলজিকাল সাপোর্ট নেয়াকে দেখা হয় বোকা চোখে, অনেকে সাইক্রেটিস্টদের বা সাইকোলজিস্টদের বলে পাগলের ডাক্তার!
এদেশের কোন সুস্থ মস্তিষ্কের নাগরিকই এমন নিকৃষ্ট কর্মকাণ্ড আর দেখতে চান না। কেউই চান না তার ছোট্ট অবুজ শিশুটি কোন পেডোফাইলের যৌন লালসার শিকার হোক, আজ লজ্জিত পুরো দেশ। আজ লজ্জিত পুরো জাতী। আমার কেন জানি সব কিছুতেই অনেক টলারান্ট হয়ে যাচ্ছি। এদেশের পাঠ্যক্রমে গবেষণালব্ধ সঠিক পরিপূর্ণ যৌনশিক্ষার অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং শিক্ষকদের এবিষয় পূর্ণ এবং সঠিক ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা হোক। যাতে তাঁদের মুখে আর না শুনতে হয় এই অধ্যায় বাসায় পড়ে নিও কথাটি। পেডোফাইদের জনসম্মুখে ফাঁসির আইন পাস করা, এটা ১৮ কোটি মানুষের মনের দাবি!
আমরা আর কত মুখ বন্ধ করে রাখব? আর কত সব কিছু দেখে না দেখার ভ্যান করে থাকব? এভাবে চলতে থাকলে; সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন দেশটা বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে। দেশ বাস করবে কিছু মানুষরূপী পশু আর সাইকোপ্যাথ..

তথ্য সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন*, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড**।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.