নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়: কে ধ্বংস করেছিল? ইতিহাসের বহুমুখী দিক

২৯ শে জুন, ২০২৪ রাত ১:১৫



প্রায়শই আমরা যে বিষয়গুলোতে আগ্রহ অনুভব করি না, প্রকৃতি সেই বিষয়গুলো আমাদের জানার জন্য বাধ্য করে। ইতিহাস আমার কাছে এমনই একটি বিষয়, যার প্রতি আমার কখনোই কোনো আগ্রহ ছিল না। ইতিহাসের গুরুত্ব নিয়ে আমি কখনো বিশেষ কৌতুহলী ছিলাম না, এবং আজও নই। তবে, আমি এমন কিছু বিষয় লক্ষ্য করছি যা নিয়ে লিখতে গেলে ইতিহাসের জ্ঞান ছাড়া চলবে না। এমনকি, ইতিহাস না জানার কারণে আমার গল্পের গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

আজকের আলোচনা হলো বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় ‘নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়’ নিয়ে। আমি ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে এবং বহু আর্টিকেল পড়ে খুঁজে বের করেছি যে, কে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসের জন্য দায়ী। এখন আমার সামনে চ্যালেঞ্জ হলো এই তথ্যগুলোকে নিরপেক্ষভাবে উপস্থাপন করা।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, যা প্রায় ৫ম শতাব্দীর শুরুতে বর্তমান ভারতের বিহারের মগধে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, একটি বিশ্বব্যাপী শিক্ষার মিলনস্থল ছিল। এখানে প্রায় ১০,০০০ শিক্ষার্থী এবং ২,০০০ শিক্ষক ছিলেন, যারা কোরিয়া, জাপান, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, তুরস্ক এবং তিব্বত সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ছিলেন। এটি বৌদ্ধ ধর্মের একটি প্রধান গবেষণা কেন্দ্র ছিল, যা অনেকে ‘মহাবিহার’ বলে অভিহিত করেন। এখানে বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র, দর্শন, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য এবং শিল্পজ্ঞানের মতো বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হত, এবং হিন্দু এবং জৈন ধর্মের উপরও পাঠদান করা হত।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস অনুযায়ী, মুহাম্মদ ঘুরীর সেনাপতি এবং বাংলা ও বিহার বিজেতা ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করেছিলেন। তার এই কর্মের ফলে অনেক বৌদ্ধ ভিক্ষু অত্যাচারের শিকার হন। খলজি দিল্লী সালতানাতের একজন প্রভাবশালী সেনাপতি ছিলেন এবং তার সময়ে ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটে। তবে, তিনি কেন একটি বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করেছিলেন, এই প্রশ্নটি আজও বিতর্কের বিষয়। বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশে এই ঘটনা নিয়ে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। খলজির ইসলাম প্রচারের কাজকে মুসলিমরা প্রশংসা করলেও, যদি তিনি সত্যিই বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস ও গণহত্যায় জড়িত থাকেন, তাহলে তা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। এই ঘটনার পেছনের কারণগুলো নিয়ে আজও অনেক প্রশ্ন রয়েছে।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় একাধিকবার আক্রমণের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে তিনটি প্রধান আক্রমণ উল্লেখযোগ্য: ১. প্রথম আক্রমণ: ৫ম শতাব্দীর শেষভাগে, সম্রাট মিহিরকুল নালন্দায় আক্রমণ করেন এবং অনেক ছাত্র এবং বৌদ্ধ গুরুদের হত্যা করা হয়। ২. দ্বিতীয় আক্রমণ: সপ্তম শতাব্দীতে, বাংলার গৌরদেশ রাজবংশ নালন্দায় আক্রমণ করেছিল বলে ধারণা করা হয়। ৩. তৃতীয় বা সর্বশেষ আক্রমণ: এই আক্রমণের পর নালন্দা আর পুনর্গঠিত হয়নি। এই আক্রমণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় লাইব্রেরি পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং অনেক অর্থ-সম্পদ লুন্ঠন করা হয়। অধিকাংশ ইতিহাসবিদ এই আক্রমণের দায় খিলজীকে দেন, যদিও কিছু ইতিহাসবিদ ইন্দ্রদ্যুম্ন, গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক, বা আফগান শাসক মালিক ইয়াসুদিনের নামও উল্লেখ করেন।

ডি.এন. ঝাঁ এর মতামত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসের বিষয়ে একটি বিকল্প দৃষ্টিকোণ প্রদান করে। তার গবেষণা অনুযায়ী, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসের জন্য হিন্দু সেন রাজবংশকে দায়ী করা হয়। তার যুক্তিগুলি হলো:

- ধ্বংসের সময়: ঝাঁ অনুযায়ী, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ১২ম শতাব্দীর শেষভাগে ধ্বংস হয়েছিল, যখন ভারতে হিন্দু সেন রাজবংশ শাসন করছিল।
- ধর্মীয় কারণ: ঝাঁ মনে করেন যে নালন্দা একটি বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সেন রাজাদের দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছিল।
- ঐতিহাসিক প্রমাণ: ঝাঁ মুসলিম ঐতিহাসিক ইবন আহমাদের লেখা উল্লেখ করেন, যিনি বলেছিলেন যে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় এক 'স্থানীয় রাজা' দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছিল, যাকে ঝাঁ সেন রাজা হিসেবে চিহ্নিত করেন।

অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতামত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসের বিষয়ে একটি বহুমাত্রিক দৃষ্টিকোণ প্রদান করে। তিনি এই ঘটনার জন্য কোনো নির্দিষ্ট পক্ষকে সরাসরি দায়ী করেননি এবং বলেন যে এটি একক কারণ দ্বারা ব্যাখ্যা করা যাবে না। তার মতে, নালন্দার ধ্বংসের পেছনে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ এবং অন্যান্য বহুমুখী কারণ রয়েছে। তিনি আরও বলেন যে সেন রাজারা, যারা হিন্দু ছিলেন, তারা বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব অবলম্বন করেছিলেন, যা নালন্দা ধ্বংসের একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।

রমেশচন্দ্র মজুমদার এবং শশীভূষণ সেনগুপ্ত, উভয়েই বিখ্যাত ভারতীয় ঐতিহাসিক, যারা বাংলার ইতিহাস নিয়ে গভীর গবেষণা করেছেন। মজুমদারের মতে, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের জন্য সেন রাজা ত্রিলোচনপাল দায়ী ছিলেন, যিনি একজন কট্টরপন্থী হিন্দু ছিলেন এবং বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করতেন। অন্যদিকে, সেনগুপ্ত মনে করেন যে সেন রাজা বিজয়সেন নালন্দা ধ্বংসের জন্য দায়ী ছিলেন, যিনি একজন শক্তিশালী রাজা ছিলেন এবং সম্ভবত তার শক্তি প্রমাণ করতে এই কাজ করেছিলেন।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসের পেছনে সেন বংশের দায়িত্বের পক্ষে যুক্তিদাতা হিসেবে উল্লেখিত ঐতিহাসিকদের মতামত নিম্নরূপ:

১. আন্টোনিও টেসোরি: ইতালীয় পণ্ডিত যিনি তিব্বতের ইতিহাস ও সংস্কৃতির উপর গবেষণা করেছেন।
২. মেলভিন কাউর: আমেরিকান পণ্ডিত, তিব্বতের রাজনৈতিক ইতিহাসের উপর গবেষণা করেছেন।
৩. তিব্বতী ঐতিহাসিকরা: তিব্বতের বৌদ্ধ গ্রন্থগুলিতে নালন্দা ধ্বংসের জন্য সেন রাজাদের উল্লেখ পাওয়া যায়।
৪. যদুনাথ সরকার: মধ্যযুগীয় ভারতের ইতিহাসের উপর লেখা বইয়ের জন্য বিখ্যাত ভারতীয় ঐতিহাসিক।
৫. শরৎচন্দ্র দাশ: বাংলার ইতিহাসের উপর লেখা বইয়ের জন্য বিখ্যাত বাঙালি লেখক ও ঐতিহাসিক।
৬. লামা তারানাথ: ভারতের ইতিহাস সম্পর্কে লেখা বইয়ের জন্য বিখ্যাত তিব্বতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু ও ঐতিহাসিক।
৭. ড. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত: প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপর লেখা বইয়ের জন্য বিখ্যাত ভারতীয় ইতিহাসবিদ।
৮. বুদ্ধপ্রকাশ: বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শনের উপর লেখা বইয়ের জন্য বিখ্যাত ভারতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু ও পণ্ডিত।
৯. ভিক্ষু সুনীথানন্দ: বৌদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির উপর লেখা বইয়ের জন্য বিখ্যাত ভারতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু ও পণ্ডিত।

এই ঐতিহাসিকদের মতামত অনুযায়ী, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসের পেছনে সেন বংশের হাত রয়েছে।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসের বিষয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মতামত এবং গবেষণা রয়েছে, যা এই ঘটনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে। বখতিয়ার খিলজির দ্বারা ধ্বংসের পক্ষে মিনহাজ-উদ-দীন সিরাজ, আবুল ফজল, এবং H.C. Raychaudhuri এর মতামত রয়েছে। অন্যদিকে, K.A. Nilakanta Sastri এবং Ramesh Chandra Majumdar স্থানীয় আক্রমণকারীদের দ্বারা ধ্বংসের সম্ভাবনা উল্লেখ করেছেন। Bimal Churn Law এবং Ramgopal আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও দুর্নীতির কারণে ধ্বংসের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন, এবং D.D. Kosambi এবং Sunil Kumar Sinha প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ধ্বংসের সম্ভাবনা উল্লেখ করেছেন।

ঐতিহাসিক প্রমাণ অনুসারে, বখতিয়ার খিলজি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করেছিলেন - এই ধারণাটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত, তবে বিতর্কিতও। বর্তমানে অনলাইন মিডিয়া ও কিছু লেখায় খিলজিকে একমাত্র দায়ী করা হচ্ছে, যা হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষ বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং সম্প্রীতি নষ্ট করছে।

আমি মনে করি, নালন্দা ধ্বংসের জন্য সমস্ত সম্ভাব্য কারণ ও দায়ীদের বিশ্লেষণ করা উচিত। ধর্মীয় পক্ষপাত ছাড়াই বস্তুনিষ্ঠ তথ্য উপস্থাপন করা প্রয়োজন। ইতিহাসের পুরো চিত্র উপস্থাপন করা উচিত, যাতে ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়।

আমাদের উচিত ঐতিহাসিক তথ্যের সঠিক ও নিরপেক্ষ উপস্থাপনার মাধ্যমে ধর্মীয় বিভেদ দূর করা এবং হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি করা।

ছবি সতর্কতা: এই ছবিটি কাল্পনিক (Bing Enterprise - Copilot Ai)
Also Read It On: নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়: কে ধ্বংস করেছিল? ইতিহাসের বহুমুখী দিক

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০২৪ রাত ১:২৯

ফিনিক্স পাখির জীবন বলেছেন: অনেক তথ্য জানলাম। আশা করি সম্প্রীতি ফিরে আসবে ইতিহাস জানার পর।
যদিও আমি অতীতের ভুলের জন্য বর্তমান ও ভবিষ্যতকে শাস্তি দিতে নারাজ। বরং অতীতের ভুল থেকে সচেতন হয়ে সেই ভুলের জন্য সৃষ্ট বিবাদ মীমাংসা করে মিলেমিশে যাবার পক্ষে।

ধন্যবাদ ও শুভকামনা।

২| ২৯ শে জুন, ২০২৪ রাত ২:৩০

কামাল১৮ বলেছেন: নালন্দা যখন ধ্বংস হয় তখন দিল্লীর ক্ষমতায় মুসলমানরা।কোন হিন্দু রাজা এটাকে ধ্বংস করবে এটা কোন যুক্তিতেই আসে না।হিন্দু রাজারা তখন ভয়েছিলো এই বুঝি মুসলমানরা তাদের দেশ আক্রমন করে দখল করে নেয়।খিলজি ধ্বংস করেছে এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য।এটা নিয়ে আজো মুসলমানরা গর্ভ করে।

৩| ২৯ শে জুন, ২০২৪ সকাল ১১:১৪

অধীতি বলেছেন: গতকালকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে একটা আলোচনায় প্রশ্নোত্তরের সময় ব্রাহ্মণদেরকে নালান্দা ধ্বংসের জন্য দায়ী করা হয়। ঘুরী প্রথমে ভেবেছিলেন এটা একটা দূর্গ এবং পরবর্তীতে যখন ভেতরে প্রবেশ করেন তখন দেখেন যে এটা বিশ্ববিদ্যালয়, পরে তিনি আর আক্রমন করেন নি।

৪| ২৯ শে জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২০

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:



সভ্যতা বদলেছে নালন্দা?

৫| ২৯ শে জুন, ২০২৪ রাত ৮:৩২

বাউন্ডেলে বলেছেন: নালন্দার সবকটি মঠই নকশা ও সাধারণ গঠনভঙ্গিমার দিক থেকে অনেকটা একই রকম। এগুলির নকশা আয়তাকার। এগুলির কেন্দ্রে ছিল একটি চতুষ্কোণাকার অঙ্গন, যেটি একটি বারান্দা দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকত। বারান্দাটি আবার বাইরের দিক থেকে ভিক্ষুদের বাসের জন্য নির্মিত কক্ষের বহিঃস্থ সারির দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকত। কেন্দ্রীয় কক্ষটির মুখ ছিল অঙ্গনটির প্রবেশপথের দিকে। এই কক্ষটি ছিল মন্দিরকক্ষ। এটির নির্মাণশৈলী এমন ছিল যাতে ভবনটিতে প্রবেশ মাত্রেই মন্দিরকক্ষটির দিকে দৃষ্টি যায়। ১ক ও ১খ সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত ভবনদুটি ছাড়া সবকটি মঠের মুখ ছিল পশ্চিম দিকে এবং সেগুলির পয়ঃপ্রণালীর মুখ ছিল পূর্ব দিকে। সিঁড়িগুলি ভবনগুলির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে নির্মিত হয়েছিল।[২৪]:২১৯[২০]:২৮ ১ সংখ্যক মঠটিকে সর্বপ্রাচীন মনে করা হয়। এটি মঠশ্রেণির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এই ভবনটিতে নির্মাণকার্যের একাধিক স্তর পরিলক্ষিত হয়। মনে করা হয়, এই নিম্নবর্তী মঠটি ৯ম শতাব্দীতে দেবপালের রাজত্বকালে শ্রীবিজয়ের রাজা বালপুত্রদেবের অর্থানুকূল্যে নির্মিত হয়েছিল। এই ভবনটি আদিতে অন্তত দোতলা উঁচু ছিল এবং এখানে উপবিষ্ট বুদ্ধের একটি বিশালাকার মূর্তি ছিল।[২০]:১৯


নালন্দার খনিত ধ্বংসাবশেষের একটি মানচিত্র।
নালন্দা মহাবিহার চত্বরের স্থাপনাগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ৩ নং মন্দিরটি। একাধিক সিঁড়ি এই মন্দিরটির শীর্ষদেশ অবধি উঠে গিয়েছে। প্রথম দিকে মন্দিরটি ছিল একটি ক্ষুদ্রকায় স্থাপনা। পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে এটির আকার বৃদ্ধি পায়। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে, সর্বশেষ কাঠামোটি এই ধরনের সাতটি পুনর্নির্মাণের ফলে গঠিত হয়। এই স্তরবিশিষ্ট মন্দিরগুলির মধ্যে ৫ নং মন্দিরটি সর্বাপেক্ষা অধিক মনোগ্রাহী ও সর্বাধিক সুসংরক্ষিত। এই মন্দিরটির চার কোণে চারটি স্তম্ভ রয়েছে। এগুলির মধ্যে তিনটি স্তম্ভ বহির্মুখী। সিঁড়ির ধারের স্তম্ভগুলিও গুপ্তযুগীয় শিল্পকলায় সমৃদ্ধ অসাধারণ প্যানেলে সজ্জিত। এই প্যানেলগুলিতে নানারকম স্টাকো মূর্তি খোদিত রয়েছে। এই মূর্তিগুলিতে বুদ্ধ ও বোধিসত্ত্বগণ, জাতক কাহিনির দৃশ্যাবলি, শিব, পার্বতী, কার্তিক ও গজলক্ষ্মী প্রমুখ ব্রাহ্মণ্য দেবদেবী, বাদ্যরত কিন্নর, মকরদের বিভিন্ন রূপ এবং নরনারীর মৈথুনচিত্র দেখা যায়। এই মন্দিরটির চারদিকে ব্রতোদ্যাপনকল্পে স্থাপিত অনেকগুলি স্তুপ দেখা যায়। সেগুলির কয়েকটি ইটের তৈরি। এগুলির গায়ে বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ থেকে নানা উদ্ধৃতি খোদিত রয়েছে। ৩ নং মন্দিরের শীর্ষদেশে একটি বেদিকক্ষ রয়েছে। বর্তমানে এই কক্ষে একটি বেদি রয়েছে। অতীতে এই বেদির উপর বুদ্ধের একটি বিশাল মূর্তি স্থাপিত ছিল।[২৪]:২২২[২০]:১৭

২ নং মন্দিরে ২১১টি ভাস্কর্য প্যানেলের একটি ড্যাডো দেখা যায়। এই প্যানেলগুলিতে ধর্মীয় মোটিফ এবং শিল্পকলার ও দৈনন্দিন জীবনের নানা দৃশ্য লক্ষিত হয়। ১৩ নং মন্দির চত্বরটির বৈশিষ্ট্য হল চারটি কক্ষযুক্ত ইটের তৈরি ধাতু গলানোর একটি চুল্লি। এখানে পোড়া ধাতু ও ধাতুমল আবিষ্কৃত হয়েছে। তা থেকে বোঝা যায় যে, এটি ধাতু নিষ্কাষণের কাজে ব্যবহৃত হত। এই মন্দিরটির উত্তর দিকে রয়েছে ১৪ নং মন্দিরটির ধ্বংসাবশেষ। সেই মন্দিরে বুদ্ধের প্রকাণ্ড একটি মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। এই মূর্তির বেদিটিই নালন্দার একমাত্র ম্যুরাল চিত্রকলার নিদর্শন, যা অদ্যাবধি রক্ষিত আছে।[২০]:৩১–৩৩

অসংখ্য ভাস্কর্য, ম্যুরাল, তামার পাত, উৎকীর্ণ লিপি, সিলমোহর, মুদ্রা, ফলক, মৃৎপাত্র এবং পাথর, ব্রোঞ্জ, স্টাকো ও টেরাকোটায় নির্মিত শিল্পকলা নালন্দার ধ্বংসাবশেষের ভিতর থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে যে বৌদ্ধ ভাস্কর্যগুলি রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন ভঙ্গিমায় বুদ্ধের মূর্তি, অবলোকিতেশ্বর, জম্ভল, মঞ্জুশ্রী, মারীচি ও তারার মূর্তি। এছাড়াও ধ্বংসাবশেষের মধ্যে থেকে বিষ্ণু, শিব-পার্বতী, গণেশ, মহিষাসুরমর্দিনী ও সূর্য – এই সকল ব্রাহ্মণ্য দেবদেবীর মূর্তিও পাওয়া গিয়েছে।[১]
ঃ-উইকিপিডিয়া থেকে।

বিশ্লেষনঃ- বৌদ্ধ ধর্মীয় ধর্মশালায় বা বিশ্ববিদ্যালয় বা মহাবিহারে বৌদ্ধের মুর্তির পাশাপাশী সনাতন ধারার মুর্তির অবস্থান “ধর্মনিরপেক্ষতার” সুগন্ধযুক্ত। যা একটি পরিপুর্ন বহুমুখী জ্ঞানদান প্রতিষ্ঠান রুপেই প্রতিয়মান হয়। পরবর্তীতে শিরক বিরোধী সম্প্রদায়ের আবির্ভাব নালন্দার বিলুপ্তির অন্যতম কারন বলতে দ্বিধা থাকে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.