নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সংখ্যালঘু হওয়ার অনুভূতিটা এক ধরনের স্বতন্ত্রতা, যেটা জীবনকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে শেখায়। দেশের মাটিতে, সেই শৈশব থেকেই আমার চিন্তা-ভাবনা আর আদর্শের কারণে আমি নিজেকে এক প্রকার সংখ্যালঘু বলে মনে করতাম। দেশের মানুষের সাথে ভেতরে-বাইরে, আচরণ-চিন্তায় আমি মেলাতে পারিনি। আমার চিন্তা, আমার বিশ্বাস, কোনটাই দেশের মূলধারার সাথে মিশে যেতে পারেনি। এই বিভাজনটা যেন আমার শিকড়ে, মননের গভীরে বাসা বেঁধেছিল।
বিদেশের ভূমিতে এই অনুভূতিটা যেন আরেক ধাপ গাঢ় হয়ে যায়। এখানেও আমি সংখ্যালঘু, তবে এবার জাতিগতভাবেই। দেশের বাইরে এসে স্বদেশীয় কোনো পরিচিত কাঠামো পাইনি, যে কাঠামোতে নিজেকে নিরাপদ মনে করা যায়। এখানে আমি একজন “অপর”, একটি ভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষ, যার শরীরের রঙ, ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, সংস্কৃতি—সবকিছুই এই জায়গার মানুষের থেকে আলাদা। আমার মতো আরও অনেকে আছে, যারা একইভাবে নিজেদের ভিনদেশি মনে করে, যারা জানে, স্থানীয় সমাজের মূল স্রোতে মিশে যাওয়া কতটা কঠিন। তাদের সাথে এক ধরনের মনের যোগাযোগ তৈরি হয়, তবে তাও ক্ষণস্থায়ী।
এমন নয় যে আমি কখনো কোন দলের মধ্যে জায়গা পেতে চাইনি। ডানপন্থী, বামপন্থী, পূর্ব বা পশ্চিম—সব দিকেই আমি দৃষ্টি দিয়েছি। কিন্তু কোনো দলই আমাকে তাদের মানুষ বলে গ্রহণ করেনি। সব জায়গায়, একধরনের শূন্যতা যেন আমাকে ঘিরে ছিল। সমাজের কাঠামো, রাজনীতি, আদর্শ—সবকিছুতে আমি এক outsider, এক বহিরাগত।
এটা একটা অভিশাপ, কারণ এই দলহীনতা একজন মানুষকে একাকী করে তোলে। যখন আপনি কোনো গোষ্ঠীর অংশ হতে পারেন না, তখন আপনাকে নিজের লড়াই একা একা করতে হয়। নিজের চিন্তা-ভাবনা, নিজস্বতার প্রতি আনুগত্য বজায় রাখতে গিয়ে বন্ধুহীন হতে হয়, আপনাকে কেবল নিজের ওপর নির্ভর করতে হয়। এই দলহীনতা কিন্তু একধরনের মুক্তিও দেয়, কারণ এর মধ্যে আপনি নিজস্ব সত্তা এবং চিন্তাশক্তিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন। এটা আপনাকে প্রশ্ন করতে শেখায়, ভাবতে শেখায়, এবং অন্যের কথা শুনতে শেখায়। দলহীন হওয়া মানে নিজের মতো করে পথ খোঁজা, যেখানে অন্যের নির্দেশ বা আদর্শ আপনাকে আবদ্ধ করে না।
এই দলহীন জীবনযাত্রায়, আমি নাজিম হিকমতের আদর্শকে খুঁজে পেয়েছি। নাজিম, যিনি তুরস্কের অন্যতম কবি ও বিপ্লবী, তার জীবন ও চিন্তা থেকে আমি শিখেছি কীভাবে মানুষের পাশে থাকা যায়, কীভাবে তাদের জন্য কথা বলা যায়। তিনি কবিতায় বলেছিলেন, “মানুষকে ভালোবাসো, তাদের মুক্তি ও সুখের জন্য সংগ্রাম করো।” তার কথার অনুপ্রেরণায়, আমিও সেই চেষ্টা করি—আমি তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি, যারা সমাজের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে, যাদের কণ্ঠ সবার কানে পৌঁছায় না।
নাজিম হিকমতের মতো, আমিও সেই অগণন মানুষদের জন্য কথা বলতে চাই, যারা মাটির পিঁপড়ের মতো নিষ্ঠুর পরিশ্রম করে, সমুদ্রের মাছের মতো বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করে, আকাশের পাখির মতো স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে। এই মানুষগুলো কখনো ভীরু, কখনো বীর; কখনো নিরক্ষর, কখনো শিক্ষিত; কখনো শিশুর মতো সরল, আবার কখনো ধ্বংসাত্মক। তাদের জন্য আমার ভালোবাসা অপরিসীম, কারণ তাদের মধ্যেই আমি আমার সত্যিকারের পরিচয় খুঁজে পাই।
যাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি, তাদের প্রত্যেকের জীবন একেকটি গল্প। এই গল্পগুলো সহজ, সরল, এবং গভীর। একজন শ্রমিক, যে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজের খোঁজে বের হয়, একজন শিক্ষার্থী, যে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য সংগ্রাম করে, একজন মা, যে তার সন্তানের মুখে হাসি দেখার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে—তাদের এই ছোট ছোট গল্পগুলোই আমার কাছে বিশাল এবং গুরুত্বপূর্ণ।
তারা কেউ কোনো রাজনীতির অংশ নয়, কোনো আদর্শিক দলে নেই। তাদের জীবন খুব সাধারণ, খুব বাস্তব। তবু তাদের জীবনেই আমি মানুষের প্রকৃত চেহারা দেখি। আমি দেখি কষ্ট, আশা, ভালোবাসা, আর ভাঙাগড়ার চক্র। তারা সৃষ্টিশীলও, ধ্বংসাত্মকও; তাদের মধ্যে আমি প্রতিদিন নতুন কিছু শিখি। তাদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে আমি অনুভব করি জীবন কতটা বৈচিত্র্যময় এবং গভীর হতে পারে।
সংখ্যালঘু হয়ে ওঠার এই অভিজ্ঞতা আমাকে নতুনভাবে দেখতে শিখিয়েছে। এটা আমাকে কেবল একা করে দেয়নি, বরং আমাকে একধরনের শক্তিও দিয়েছে। আমি শিখেছি, দলহীনতার মধ্যেও নিজের আদর্শের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখতে হয়। আমি শিখেছি, একা থাকলেও, মানুষের জন্য, তাদের মুক্তির জন্য লড়াই করা যায়।
এই সংখ্যালঘু পরিচয় আমার জীবনের দুঃখ হলেও, এটা আমার গর্বও। আমি জানি, আমি কারো দলে না থেকেও মানুষের পাশে আছি। তাই আমি সংখ্যালঘু হলেও, একক হলেও, আমি একা নই। আমি তাদের সঙ্গে আছি, যারা মাটির, সমুদ্রের, আকাশের—আমি তাদের জীবনের গল্পে বেঁচে থাকি। আর এই গল্পগুলোই আমার জীবনের অর্থ, আমার লড়াইয়ের প্রেরণা।
২৫ শে অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৬:৫৫
আমিই সাইফুল বলেছেন: বেচে থাকার লড়াই, অস্তিত্বের লড়াই। বিদেশের মাটিতে এর চেয়ে বড় লড়াই আর কি হতে পারে ভাই।
২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: দলে থাকলে অনেক সময় দলের অনৈতিক কাজে সমর্থন দেয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৫৯
কামাল১৮ বলেছেন: এটা আপনার ব্যর্থতা।চিন্তাকে প্রশারিত করুন।পাইনি তাই যা আপনি চিন্তা করেন।
৪| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:২৬
কামাল১৮ বলেছেন: আপনি তাই যা আপনি চিন্তা করেন হবে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৬:৪৩
সোনাগাজী বলেছেন:
আপনি কিসের লড়াই করছেন?