নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন ইউরোপ প্রবাসী, জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পার করে আজকের এই আমি। ব্লগে আবেগ অনুভূতি শেয়ার করি যেগুলো হয়ত সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়না। আমি একজন অনুভূতির ফেরিওয়ালা......

আমিই সাইফুল

চলতে চলতে হবে পরিচয়.....

আমিই সাইফুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবাসে পার্ট টাইম জব, পড়াশোনা এবং অসুস্থতা। নিউজল্যান্ড টু ইউরোপ। (পর্ব ৮)

১৯ শে জুন, ২০২১ ভোর ৬:৫৭



ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস আর পার্ট টাইম জব একসাথে মেনটেইন করা মোটেও সহজ কাজ নয়। যারা একবার এর মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন তারাই বলতে পারবেন এটা কতটুকু কষ্টসাধ্য ব্যাপার। মাঝে মাঝে এমন হতো ক্লাস শেষ করেই সরাসরি কাজে ঢুকতে হতো, অথবা কোন সপ্তাহে এমন শিফট পেতাম ক্লাস আর কাজ একই সময় হয়ে যেত। কাজ মিস করলে সপ্তাহ শেষে টাকা আসবেনা আবার ক্লাস মিস করলে উপস্তিতির হার ৯০℅ এর নিচে নেমে গেলেই ইমিগ্রেশন পরবর্তী ভিসা আটকে দিতে পারে। তাই এ দুটোকেই ব্যালেন্স করে চলতে হতো, আর মাঝে মাঝে অসুস্থ হলেত কথাই নেই। এখানে সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে হেলথ ইন্সুইরেন্স, যত অসুস্থই হবেন টেনশন নাই ওরাই আপনার সব পে করবে।

এখানে হয়ত আমরা মাঝেই অসুস্থ হতাম, কিন্তু মাঝে মাঝে অসুস্থ না হয়েই ভান ধরতাম। যেমন, মাঝে মঝেই ক্লাসে কারো অসুস্থতার খবর পাওয়া যেত তার মানে এই না যে সে সত্যিই অসুস্থ। এমনও হতে পারে ঐ সপ্তাহে তার বেশি টাকার দরকার তাই সিটির বাহিরে ক্ষেপ মারতে গেছে। ক্ষেপ মারা বিষয়টা এখানে খুবই কমন কারন এর সাথে জড়িত পরবর্তী সেমিস্টারের টিউশন ফী। টাকাই যদি না থাকে টিউশন ফী দিবে কোথা থেকে? আর টিউশন ফী না দিলে ভিসা হবেনা। সবার বাবা-মা ত আর এত বড়লোক না যে প্রত্যক সেমিস্টারে টাকা পাঠাবে!!! শতে হয়ত ৫জন দেশ থেকে টাকা নিয়ে পড়তো বাকি যারা আছে সবাই এই জবের উপর ভরসা করেই পড়াশোনাটা চালাতো।

এখানে ইংল্যান্ডের মত অহর অহর বাংলাদেশি ডাক্তার পাবেননা। ৯০ এর দশকে ৫/৬ জন ডাক্তার বাংলাদেশ থেকে নিউজিল্যান্ডে গিয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন ডাক্তার পড়াশোনা করে এ পেশায় টিকে আছে আর বাকিরা অন্যান্য পেশায় জড়িয়ে গেছেন। তো একজন বাংলাদেশি ডাক্তারই সেখানে প্রাইভেট একটি ক্লিনিক খুলেছেন তিনি হচ্ছেন ডাঃ বশির। বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের এই ভদ্রলোক মোটামুটি এখানকার কমিউনিটির পর্স লেভেলের নেতা। উনি সব ধরনের মিটিং বা প্রোগ্রামে এটেন্ড করতেননা। যেটাতে এটেন্ড করতেন ধরে নিতে হবে সেটা হিউজ কোন প্রোগ্রাম! পর্স নেতাদের আবার কিছু সমস্যা থাকে! এদের ছেলে মেয়েরা এসব প্রোগ্রামের ধার ধারেনা। এদের ছেলে মেয়েরা সেখানে বেড়ে উঠাতে এরা এখন আর নিজেদের বাঙালি মনে করে না। এই ধরুন ডাঃ বশিরের মেয়েকে অকল্যান্ডের রাস্তা ঘাটে গাঞ্জা টানতে অনেক দেখেছি কিন্তু কোন অনুষ্ঠানে উনাকে দেখিনি। উনারা বাঙালি দেখলেও এভয়েড করার ট্রাই করবে আর একেবারেই না পারলে বাঙালি জেনেও ইংলিশে কথা বলবে যাতে অপর ব্যাক্তি খুব বেশি আগাতে না পারে! মানে কমফোর্ট ফিল না করে।

এখানে কয়েক ধরনের ইমিগ্র‍্যান্ট আছে, স্টুডেন্টরা সাধারণত কারো জন্মদিন এনিভার্সারিতে ওভাবে দাওয়াত পায়না, এরা পার্ট টাইম জবের ঠেলা সামলাতেই এদের জীবন পার। কিন্তু যারা সদ্য ওয়ার্ক পার্মিট কিংবা পিআর পেয়েছে তারা ভিবিন্ন ফ্যামিলি প্রোগ্রাম আয়োজন করে কিংবা এটেন্ড করে থাকে, প্রত্যেক সপ্তাহেই কোথাও না কোথাও একটা গেট টুগেদার হবেই। সেখানে সবাই তাদের চাকচিক্য এবং আভিজাত্য প্রমাণে ব্যাস্ত থাকে। আর তৃতীয় ক্যাটাগরিতে আছে যারা পাসপোর্ট ধারী! এরা সব অনুষ্ঠানে এটেন্ড করেনা। নিজেদের কিউই ভাব দেখানোর জন্য এরা খুব কমই ভিবিন্ন পার্টিতে যায়। এরা পার্সোনাল প্রোগ্রামে যায় না শুধু কমিউনিটির যৌথভাবে আয়োজিত প্রোগ্রাম গুলুতে এটেন্ড করে আর পদ পদবি নিয়েই ব্যাস্ত থাকে। আর যাদের দু চারটা বাড়ি আছে তারাই এসব প্রোগ্রামের প্রধান অতিথি। এরা আবার কেউ এদের এভয়েড করলে নিতে পারেনা! একবার কমিউনিটির এক প্রোগ্রামে আমরা কয়েকজন মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এক ভদ্র মহিলা এসে বললেন কেমন আছ সবাই। আমরা বললাম ভালো আছি, কিন্তু তেমন পাত্তা দিলাম না। পরে উনি বললেন আমি মিন্টু ভাইয়ের ওয়াইফ!!! আমরা হাসি দিয়ে অবাক হওয়ার ভান করে আবার আড্ডায় মনযোগ দিলাম। কারণ তখন কে এই মিন্টু ভাই আমরা সেটাই চিনতাম না!!! ওনার ওয়াইফ আমাদের এই আচরণ ভালোভাবে নেয়নি! পরে বড় ভাইদের কাছে জানতে পারি আমরা নাকি বেয়াদব। মিন্টু ভাইয়ের বউ জেনেও ভালোভাবে কথা বলিনি এটা বেয়াদবি কারন মিন্টু ভাই কমিউনিটির আব্বা!!!

তো মাঝে মাঝে অসুস্থ হলে আমরা ডাঃ বশিরের কাছেই যেতাম। উনি জিপি(জেনারেল প্র‍্যাক্টিসিয়েন্ট) ছিলেন। পরবর্তীতে কোন গুরুতর অসুস্থ হলে উনিই বিশেষজ্ঞদের কাছে রেফার করতেন। উনার চেম্বারে গেলেই হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করতেন অসুস্থ নাকি ছুটি লাগবে? যারা অসুস্থ তারা চিকিৎসা নিতো আর যারা ক্লাস ফাকি দিয়ে ক্ষেপ মারার ধান্দায় থাকতো তারা বলতো ভাই সার্টিফিকেট লাগবে। উনি ঠান্ডা জ্বর লিখে এক বক্স প্যারাসিটামল লিখে দিতেন আর সার্টিফিকেটএ এক সপ্তাহের রেস্ট রেকমেন্ড করতেন। এই সার্টিফিকেট নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে জমা দিলেই এক সপ্তাহের ছুটি মঞ্জুর হয়ে যেতো আর পোলাপান সাথে সাথে ক্ষেপ মারার জন্য তাউরাংগার কোন এক কৃষি খামারে ফল তুলতে চলে যেতো। এই সার্টিফিকেট নিতে আমাদের দিতে হতো ৯০ ডলার আর ঔষধ আরো ২০ ডলার এগুলোর রিসিট আমরা ইন্সুইরেন্সকে পাঠিয়ে দিতাম তারা আমাদের এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা ফেরত দিয়ে দিতো।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুন, ২০২১ সকাল ৯:১৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: বুঝলাম বাঙালি বিদেশেও গেলেও মজ্জাগত সমস্যাগুলির তেমন পরিবর্তন হয় না। আপনার অকপট বর্ণনা ভালো লাগছে। বিদেশে যারা থাকে তারা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই শুধু বিদেশের ভালো দিকগুলি হাইলাইট করে। অন্ধকার বিষয়গুলি এড়িয়ে যায়। ফলে আমরা জানতে পারি না। তবে ইন্টারনেটের যুগে মানুষের জানার সুযোগ বেড়েছে, ফলে কোন কিছুই চাপা থাকে না। আপনার সত্য ভাষণের জন্য ধন্যবাদ এবং আপনার পরিশ্রম লব্ধ সাফল্যের জন্য অভিনন্দন। এই সাফল্য আপনার প্রাপ্য ছিল।

১৯ শে জুন, ২০২১ সকাল ১০:০৬

আমিই সাইফুল বলেছেন: তাও যদি এরা বাঙালী থাকতো!!! যারা এখানে জন্মেছে বা বড় হয়েছে তারা সম্ভব হলে নিজেদের চামড়া পাল্টে ফেলতো। এরা নিজেদের কিউই আমেরিকান কিংবা অজি পরিচয় দিতেই কমফোর্ট ফিল করে। শুধু চামড়ার কারনে পারেনা। যদি কখনো সম্ভব হয় অবশ্যই ছেলে মেয়ের স্কুলিংটা দেশে করাবো। অন্তত বাঙালি নিজেদের বলতেত লজ্জা পাবেনা।

২| ১৯ শে জুন, ২০২১ সকাল ১১:২৪

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: বিষয়গুলোর সাথে আমি বেশ পরিচিত তবে আমার কখনো এ ধরনের কাগজ প্রয়োজন পড়ে নি। অফিস থেকে দৌড়ে ক্লাসে যাওয়ার অভিজ্ঞতাও অনেক। একবার অফিস শেষে দেখি ধুমসে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল, ছাতা সাথে নেই। রীতিমতো ভিজে গোসল করে ক্লাসে গিয়েছি, সবাই দেখে হতবাক। পরীক্ষা ছিলো তাই দেরী করে যাওয়ারও সুযোগ ছিলো না। যায় দিন ভালোই।

নিজেকে বাঙালী বলে পরিচয় দিতে দ্বিধা নেই, তবে পারতপক্ষে বাঙালী কমিউনিটি এড়িয়ে চলি। বাংলাদেশী বা বাঙালী বন্ধু বলতে যেটা বোঝায় সেটা আমার হয়ে ওঠেনি, আর ওঠার সম্ভাবনাও নেই। ভালো বাঙালী বন্ধু বলতে দু'জন আছেন দু'দেশে। একজন বাংলাদেশে আরেকজন অস্ট্রেলিয়ায়। হাতে গোনা ক'জন আমেরিকান, চাইনিজ আর কিছু ইউরোপিয়ান বন্ধু আছে, ওদের সাথেই যোগাযোগ মাঝে মধ্যে হয়। তবে আগের তুলনায় অনেক কম। লিখার জন্য ধন্যবাদ।

১৯ শে জুন, ২০২১ সকাল ১১:৩৯

আমিই সাইফুল বলেছেন: ভাই প্রথমত আমি ইন্টার শেষ করেই বিদেশে পাড়ি জমাই তাই আমার পক্ষে গিয়ে ডেস্ক জব পাওয়া সম্ভব হয়নি। অড জব করেই আমার ছাত্র জীবনের বেশিরভাগ সময় শেষ হয়েছে।

বাঙালী কমিউনিটি এড়িয়ে চলাটাও কতটা যুক্তিযুক্ত আমার জানা নেই। বাঙালি কিছু ফ্যামিলির সাথে পরিচয় থাকলে বা সম্পর্ক রাখলে জাত যাবে এমন ধারনায় আমি বিশ্বাসি নই। আমি এখনো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমাদের কালচারে বেড়ে ওঠাকেই প্রেফার করি। পাসপোর্ট পাল্টে আমেরিকান কিংবা ইউরোপিয়ান হয়ে যাওয়া খুব সহজ, কিন্তু শেষ সময়ে নিজের বাবা মা আত্মীয় স্বজনদের পাশে থাকতে না পারার বেদনাটা অনেক বেশি। আমি পার্সোনালি এই জিনিসটা খুব মিস করি। মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ।

৩| ১৯ শে জুন, ২০২১ দুপুর ১:৩২

গফুর ভাই বলেছেন: মানুষের চেয়ে সত্য রঙ ধারি হল কয়লা কারন কয়লা যতই পানিতে ধুয়ে ফেলা হোক নাহ কেন অথবা যে পরিবেশ এ রাখা হোক নাহ কেন তার রঙ কালোই থাকবে।কিন্তু বাংলা রংধনু পছন্দ বাঙ্গালিদের।

১৯ শে জুন, ২০২১ রাত ৮:৪১

আমিই সাইফুল বলেছেন: ঠিক বলেছেন!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.