নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"যখন নসী বাবুর তালুকের খাজনা আসে, তখন মানুষ-কোকিলে তাঁহার গৃহকুঞ্জ পুরিয়া যায়-কত টিকি, ফোঁটা, তেড়ি, চসমার হাট লাগিয়া যায়-কত কবিতা শ্লোক, গীত, হেটো ইংরেজি, মেটো ইংরেজি, চোরা ইংরেজি, ছেঁড়া ইংরেজিতে নসী বাবুর বৈঠকখানা পারাবত-কাকলি-সংকুল গৃহসৌধবৎ বিকৃত হইয়া উঠে। যখন তাঁহার বাড়ীতে নাচ, গান, যাত্রা, পর্ব্ব উপস্থিত হয়, তখন দলে দলে মানুষ-কোকিল আসিয়া, তাঁহার ঘর বাড়ী আঁধার করিয়া তুলে-কেহ খায়, কেহ গায়, কেহ হাসে, কেহ কাশে, কেহ তামাক পোড়ায়, কেহ হাসিয়া বেড়ায়, কেহ মাত্রা চড়ায়, কেহ টেবিলের নীচে গড়ায়। যখন নসী বাবু বাগানে যান, তখন মানুষ-কোকিল, তাঁহার সঙ্গে পিপীড়ার সারি দেয়।
আর যে রাত্রে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি হইতেছিল, আর নসী বাবুর পুত্রটি অকালে মৃত্যু হইল, তখন তিনি একটি লোক পাইলেন না। কাহারও “অসুখ”, এজন্য আসিতে পারিলেন না; কাহারও বড় সুখ-একটি নাতি হইয়াছে, এজন্য আসিতে পারিলেন না; কাহারও সমস্ত রাত্রি নিদ্রা হয় নাই, এজন্য আসিতে পারিলেন না; কেহ সমস্ত রাত্রি নিদ্রায় অভিভূত, এজন্য আসিতে পারিলেন না। আসল কথা, সে দিন বর্ষা, বসন্ত নহে, বসন্তের কোকিল সে দিন আসিবে কেন?" - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যাদের 'বসন্তের কোকিল' হতে নেয়া।
আজকাল পত্রিকার পাতা খুললেই দেখি বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, জননেত্রী, তাঁর পুত্র, কন্যা, সাবালক-নাবালক ভাইবোন, সবাইকে নিয়ে নানা কিসিমের 'সাহিত্যিক' লেখালেখির প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। এই বিশেষ শ্রেণীর লেখকদের দৌঁড়ঝাঁপের কারণে এখন আসল লেখকদের লেখা পত্রিকায় ঠাঁই পাওয়াই মুশকিল। লেখালেখির চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো 'লেখাগুলো' পত্রিকায় প্রকাশের পর যে কোন মূল্যেই হাল আমলের 'নসী বাবুর' নজরে আনা। তাঁর গোচরীভূত না হলে এ একান্তই পন্ডশ্রম।
এই বিশাল লেখকগোষ্ঠীর কিঞ্চিতাংশও যদি বৈরী সময়ে এই বিশেষ ধরণের লেখালেখি করতেন তবে কিন্তু জননেত্রীকে এতো দীর্ঘকাল ক্ষমতার বাইরে থাকতে হতো না। বঙ্কিম বাবুর গল্পের মতো কখনো 'নসী বাবুর পুত্রটির অকালে মৃত্যু হইলে' এই লেখকের পাল যেন উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প হতে নিজেদের রক্ষার আদলে খাট বা টেবিলের তলায় আত্মগোপন না করেন আবার!
'নসী বাবুরা' সময়মতো বিষয়টি বুঝতে পারলেই এ অধম যারপরনাই খুশি।
ML Gani
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ৮:২৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
ব্লগে কি নসীবাবু আছেন?