নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শরণার্থী হিসেবে কানাডার অভিবাসন আবেদনে করণীয়
https://bangla.bdnews24.com/probash/article1902408.bdnews
এম এল গনি, কানাডা থেকে, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 16 Jun 2021 01:50 AM BdST Updated: 16 Jun 2021 01:50 AM BdST
এক দম্পতি বাংলাদেশ থেকে টুরিস্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন এ আশায় যে কিছুদিন সেখানে ঘুরে কানাডায় প্রবেশ করে শরণার্থী হিসেবে অভিবাসন আবেদন করবেন। এরইমধ্যে কেউ একজন তাদের আমার সাথে কথা বলার পরামর্শ দিলেন।
ওই দম্পতি- হায়দার চৌধুরী এবং তাপসী চৌধুরী (ছদ্মনাম) একই সঙ্গে কানাডায় আমার সাথে ফোনে কথা বললেন। তাদের সঙ্গে কথাবার্তার চুম্বক অংশ নিয়েই আজকের লেখা।
'আমার স্ত্রীর তাপসী সেনগুপ্তা। বিয়ের সময় মুসলিম হয়েছে। মুসলিম হয়েও রক্ষা নেই। ঘরে বাইরে সমালোচনা করছে সবাই। মাঝে মাঝে অপরিচিত ফোন নম্বর হতে ফোনে হুমকিও পাই। জীবন আমাদের বিপন্ন। কানাডার মন্ট্রিয়লের এক লোক পরামর্শ দিয়েছেন কানাডা গিয়ে রিফিউজি ক্লেইম করতে। তাই, কানাডা যাবো ঠিক করেছি। কিন্তু, আমেরিকায় আমাদের ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু বললো একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আপনার সাথে আগে কথা বলতে। তাই পরামর্শ চাইছি।'
এক নিঃশ্বাসে অনেক কথা বলে ফেললেন ভদ্রলোক। ভিডিও কল চলছিল। দেখলাম, তাপসী চৌধুরী কোন কথা না বলে কেবল স্বামীর মুখপানে অপলক চেয়ে আছেন। বয়স তিরিশের কাছাকছি মানানসই এক যুগল, যেন একবৃন্তে দুই গোলাপ।
ভদ্রমহিলাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, 'তাপসী, আপনি কিছু বলবেন?'
ধাতস্থ হয়ে তাপসী বললেন, 'ভাইয়া, জীবন আমাদের অসহ্য। বাবার বাড়ি, স্বামীর বাড়ি কোথাও যেন আমার স্থান নেই। বাবার পরিবার বলে আমি তাদের মুখে চুনকালি লেপে দিয়েছি। মা তো আমার চেহারা দেখার আগেই মরণ চাইছেন। ওদিকে স্বামীর পরিবারও আমাকে নিয়ে মহাবিব্রত। আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত পড়ি কিনা সেদিকে সবার চোখ। অথচ, ওই পরিবারের অন্যরা কয় ওয়াক্ত নামাজ পড়লো তার খবর নেই। রাস্তাঘাটে হাঁটতেও বিপদ। হিন্দু মেয়ের সাথে সংসার করছে অজুহাতে আমার স্বামীও মাঝেমাঝে জীবননাশের হুমকি পায়। কানাডায় বসবাসের রাস্তা দেখিয়ে দিয়ে আমাদের বাঁচার পথ করে দিন। আপনার ফি এক ডলারও কম দেব না।'
সবশুনে কী বলবো ভাবছিলাম। এরই মাঝে হায়দার চৌধুরী প্রশ্ন করলেন, 'ভাই, আমাদের অবস্থা শুনে আপনার কী মনে হয়? আমরা কি কানাডা এসে রিফিউজি ক্লেইম করবো? রেজাল্ট কি পজিটিভ হবে?'
আপনাদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগে আমার কিছু প্রশ্ন আছে। আপনাদের উত্তর শুনে অনুমান করতে পারবো কতটা সম্ভাবনা আছে বা নেই।
শুরু হলো প্রশ্নোত্তর পর্ব।
'দেশে কী করেন?'
'আমি ব্যাংকার ও তাপসী স্কুল শিক্ষক।' - ভদ্রলোক জবাব দিলেন।
'আচ্ছা, আপনারা আমেরিকায় রিফিউজি ক্লেইম না করে কানাডায় করতে চাইছেন কেন?'
'কারণ, কানাডায় লেখাপড়া ফ্রি, চিকিৎসা ফ্রি, অপরাধ কম, গভর্নমেন্ট সুযোগ-সুবিধা ভালো, ইত্যাদি; তাই।'
'আপনাদের দুপক্ষের কারো কোন পরিবারের সদস্য কানাডায় বসবাস করেন?'
'না।'
'বাংলাদেশে কি আপনারাই প্রথম এ ধরনের দম্পতি যাদের ভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিয়ে হয়েছে?'
'না, আরো অনেক আছে।'
'তারাও কি আপনাদের মতো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন?'
(পরষ্পরের চোখে চোখ রেখে) ‘না, মনে হয় না।'
'তাহলে আপনাদের কেন এ অবস্থা? এর পেছনে অন্য কোন কারণ আছে কী?'
তাপসী কি একটা বলতে গিয়েও বললেন না বলে মনে হলো। দুজনই চুপচাপ।
'আচ্ছা বলুন, আপনাদের যে হুমকি দেওয়া হয়েছে তা কি টেলিফোনে?' - আবারো প্রশ্ন করি।
'জি, ফোনে।'
'কবে, কত নম্বর হতে, এসব রেকর্ড আছে?'
'সব নেই, কয়েকটা আছে।'
'যে কয়টা রেকর্ড আছে তা কি পুলিশ বা অন্য কোন সংস্থার সাথে শেয়ার করে সুরক্ষা বা সহায়তা চেয়েছেন?'
'না, অফিসিয়ালি তেমন কিছু করিনি।'
'আপনারা বাংলাদেশের কোথায় বসবাস করেন?'
'চট্টগ্রাম।'
'কতদিন ধরে এসব হুমকিধামকি পাচ্ছেন?'
'প্রায় তিন বছর। আমাদের বিয়ের বয়সও তিন।'
'হুমকি এড়াতে দেশের অন্য কোথাও বসবাস করার চেষ্টা করেছেন?'
'না, আমরা তো চট্টগ্রামেই বড় হয়েছি। তাপসী ড. খাস্তগীর স্কুল, আর আমি কলেজিয়েট স্কুলে পড়েছি। পরিচয় সেই স্কুল জীবন হতেই। চট্টগ্রাম ছেড়ে আর যাবো কোথায়?' - হায়দার চৌধুরী জবাব দিলেন।
সব শুনে এ দম্পতির উদ্দেশ্যে বললাম, “দেখুন, সেইফ থার্ড কান্ট্রি এগ্রিমেন্ট নামে আমেরিকা ও কানাডার মধ্যে সম্পাদিত একটা চুক্তি আছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী আপনি প্রথমে আমেরিকায় প্রবেশ করে সেখান থেকে এসে কানাডায় রিফিউজি ক্লেইম করতে পারেন না। একইভাবে, এর বিপরীতও সত্য; কয়েকটি ব্যতিক্রমীক্ষেত্র আছে যদিও। কাজেই, আপনারা আমেরিকা হতে কানাডা ঢুকে রিফিউজি ক্লেইমের চিন্তা মাথা হতে ঝেড়ে ফেলুন।”
“তাছাড়া, বাংলাদেশে যেহেতু ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিবাহ সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য তাই আপনারা কিভাবে এতো নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন তা প্রমাণ করা খুবই কঠিন হবে। অধিকন্তু, নিগ্রহের হাত হতে রক্ষা পেতে আপনাদের যেসব ব্যবস্থা নেবার সুযোগ ছিল বা আছে তাও আপনারা গ্রহণ করেননি।”
'যেমন?' - তাপসীর প্রশ্ন।
“যেমন ধরুন, আপনারা পুলিশ বা অন্য কোন সংস্থার কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে এর প্রতিকার চাইতে পারতেন, যা আপনারা করেননি। প্রয়োজনে দেশের অন্য অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়ে নতুন জীবন শুরুর চেষ্টা চালাতে পারতেন, যে উদ্যোগ আপনারা নেননি, ইত্যাদি। আপনারা ক্লেইম সাবমিট করলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা রিভিউ করার সময় এসব প্রশ্ন সঙ্গতকারণেই আসবে। এসবের কোন শক্ত জবাব আপনাদের নেই। তাই, কেইস সফল হবার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ।”
‘তাহলে আমাদেরকে মন্ট্রিয়লের ওই লইয়ার কানাডায় ঢুকতে বলেছেন কেন?’
‘উনি ভুল বলেননি, কানাডায় না ঢুকে আপনি রিফিউজি ক্লেইম দাখিল করতে পারেননা; তবে, এভাবে আমেরিকা হতে নয়। প্রথম যাত্রায় আপনাদের কানাডা প্রবেশ করা উচিত ছিল।'
'তাহলে কি আমরা পরবর্তীতে সরাসরি কানাডা ঢুকে যাবো?'
'কানাডায় ঢুকে লাভ হবে মনে হয় না। কারণ, দেশ ছাড়ার আগে যেসব কাজ করার দায়িত্ব ছিল তা আপনারা করেননি। আপনাদের দলিলপত্র দাখিল করে প্রমাণ করতে হবে আপনারা নিজ দেশে বসবাসের যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালিয়েও অবশেষে নিরুপায় হয়ে কানাডা পাড়ি জমিয়েছেন। ওই চেষ্টায় ঘাটতি দেখলে কানাডা আপনাদের রিফিউজি স্ট্যাটাস দেবার কথা নয়।'
'খুব ভালো লইয়ার দিলেও হবে না?'
'লইয়ার নিজে থেকে কোন কিছু বানিয়ে বলবেন না। আপনার দলিলপত্র দেখে আর্গুমেন্ট দাঁড় করবেন। আপনাদের তো রেকর্ড বলতে কিছুই দেখছি না। ফলে আপনাদের সহায়তা দেবার গ্রাউন্ডই তো তৈরি হয়নি।'
'তাহলে এখন কী করা?'
'আপাতত দেশে ফিরে দালিলিক প্রমাণাদি তৈরি করার চেষ্টা করুন। মোটামুটি প্রস্তুত মনে হলে আমার সাথে আরেকবার কথা বলতে পারেন।'
আলাপ শেষ করতে জানতে চাইলাম, 'আপনাদের আর কোন প্রশ্ন আছে?'
যদিও এ দুজনের আশপাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে মনে হলো না, তারপরও ডানে-বাঁয়ে দ্রুত পরখ করে নিয়ে আমতা আমতা করে হায়দার বললেন, “আসলে এর আগে তাপসীর একটা বিয়ে হয়েছিল ওদের ধর্মের এক প্রতিষ্ঠিত ডাক্তারের সাথে। বিয়েটা ওর পরিবার জোর করেই দেয়, কারণ ও আমাকে ভালোবাসতো। আমি ছাত্র থাকায় তখন বিবাহের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। পরে তাপসী ওই বিয়ে ভেঙে দিয়ে আমার কাছে চলে আসে। সেভাবেই আমাদের বিয়ে। আগের পক্ষ লোকজন লাগিয়ে এখন খুব ঝামেলা করছে। ওদের সাথে লোকাল ছাত্রনেতাদের ভালো সম্পর্ক।”
“যেভাবেই আপনাদের সম্পর্ক হউক, রিফিউজি স্ট্যাটাস ক্লেইম করতে হলে আপনাদের আমি যেসব বিষয়ে আলাপ করেছি সেসব করতেই হবে। আমার মনে হয়না রিফিউজি কেইসে সফল হবার মতো শক্ত ভিত্তি বা মেরিট আপনাদের আছে। আপনারা বয়সে তরুণ এবং উচ্চডিগ্রিধারী প্রফেশনাল। সম্ভব হলে কানাডা ইমিগ্রেশনের অন্যান্য পথ খুঁজে দেখতে পারেন। আমাদের কোম্পানি 'এমএলজি ইমিগ্রেশান' বিশ্বব্যাপী অনেককেই কানাডা ইমিগ্রেশন ও কানাডায় পড়াশোনার ব্যাপারে সহায়তা দিয়েছে। প্রয়োজনে আপনাদেরকেও সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত। মনে রাখবেন, একবার রিফিউজি ক্লেইম করে বিফল হতে ভবিষ্যতে কানাডা বা আমেরিকায় প্রবেশ আপনাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। তাই, কানাডা ইমিগ্রেশনের অন্য অপশন থাকলে সেদিকে না যাওয়াই ভালো।”
যাক, এ লেখা আর দীর্ঘ না করি। কানাডায় পড়াশোনা, বা ইমিগ্রেশন বিষয়ে কোনও বিশেষ প্রশ্ন থাকলে আমাকে নিচের ইমেইল ঠিকানায় জানাতে পারেন। পরের কোনও লেখায় আপনার আগ্রহের প্রতিফলন ঘটানোর প্রয়াস থাকবে।
বর্তমান পর্বসহ এ সিরিজের অন্য পর্বগুলোতে কানাডা ইমিগ্রেশন বিষয়ে যে সাধারণ আলোচনা করা হয়েছে তা যেন কোনভাবেই লিগ্যাল অ্যাডভাইস বা, আইনি পরামর্শ হিসেবে বিবেচনা করা না হয়। কারণ, সুনির্দিষ্ট আইনি পরামর্শ দেওয়া হয় ব্যক্তিগত সাক্ষাতে, সাধারণ আলোচনায় নয়। মনে রাখা দরকার, প্রত্যেকের ইমিগ্রেশন কেইসই কোন না কোনভাবে আলাদা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ নিয়মিত চোখ রাখুন কানাডা ইমিগ্রেশন নিয়ে আমার নতুন নতুন লেখা পড়তে। ভবিষ্যতে আপনাদের সাথে আরো অনেক মূল্যবান তথ্য সহভাগের প্রত্যাশা নিয়ে আজ এখানেই শেষ করি।
লেখক: কানাডীয় ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট, আরসিআইসি।
ইমেইল: [email protected]; / ফেইসবুক: ML Gani
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই জুন, ২০২১ সকাল ৮:১৬
আমিই সাইফুল বলেছেন: ইউরোপিয়ান পাসপোর্টধারীরা কিভাবে কানাডায় বসবাস করতে পারে এ বিষয়ে একটা পোস্ট দিলে উপকৃত হবো।