নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালবাসি বই পড়তে আর পছন্দ করি টুকটাক লিখতে, ভালো লাগে বুদ্ধিমানদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। দেশটাকে ভালোবাসি। সৎ-পরিশ্রমীদের শ্রদ্ধা করি। । আমার ব্লগ নিয়ে অনেক আগ্রহ আছে। কিন্তু কিছু জানি না। তাই জানতে চাই
ঢাকা গভঃ মুসলিম হাই স্কুলের যে কয়টি মেমরি আজো তাজা আছে তার মধ্যে প্রিন্স বেকারীর মেমরি আজো কই মাছের মত তাজা আছে আর থাকবেও।
রিসেন্টলি রাজেশ ভাইএর মৃত্যুতে প্রিন্স বেকারীটা বন্ধের কথা শুতেছি। এটা আসলেই একটা কষ্টের বিষয়। যদিও প্রিন্স বেকারীর ঐতিহাসিক নান ঘটনা আছে, ১৭০ বছরের মত এটার বয়স ইত্যাদি ইত্যাদি.
আমার কাছে এটা অন্য রকমের আনন্দের জায়গা ছিল সেই ছোট বেলার ক্রস বন, বাটার বন, ক্রিম রোল, পেস্টি, পেটিস, প্লেনকেক আরো নানান খাবার।
বর্তমান সময়েও আমার বাসায় লতা টোস্টটা প্রিন্স বেকারীর হতে হবে। কেন হতে হবে তা জানি না।
একটা অন্য রকম ভাল লাগা কাজ করত। আবার স্কুলের লিস্টেড বেকারি ছিল প্রিন্স বেকারীসে ক্ষেত্রে আমরা যারা স্কুলের স্বাউট থেকে শুরু করে ভোলেনটিয়ার ছিলাম তাদের নাস্তা যেত প্রিন্স বেকারী থেকে।
আমার চেনা জানা খ্রিস্টান প্রতিবেশীরা বলতো-বড়দিনের কেক বিশেষ করে ফ্রুটকেক প্রিন্স বেকারী হতে না হলে যেন বড়দিনের আনন্দই হয়না।
প্রিন্স বেকারীর বন্ধের জন্য নানান লোক নানান কথা বলছে তবে আমার কেন যেন একটা খারাপ লাগছে।
শেষদিকে যদিও প্রিন্স বেকারীর সুনামে বেশ ভাটা পরেছিল তবুও আমার মনে হয় মালিক পক্ষ এর ঐতিয্য বিবেচনা করে অন্য কোন ভাবে চিন্তা করতো পারতো।
এর ইতিহাস নেট দুনিয়া বা আমি যা জানি তা হলঃ-
১৮৫০ সালের দিকে গ্রেট ব্রিটেনের ওয়েলস থেকে এক ভদ্রলোক ভারতবর্ষে এসেছিলেন। তিনি ঢাকায় এসে একটি বেকারীর যাত্রা শুরু করলেন। নাম দিলেন ‘প্রিন্স অব ওয়েলস’। পুরান ঢাকার সদরঘাট যাবার পথে ভিক্টোরিয়া পার্কের বাঁয়ে ঘুরে কিছুদূর এগোলেই লক্ষ্মীবাজার। এখানেই দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ অঞ্চলের প্রথম বেকারি প্রিন্স অব ওয়েলস। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবেও সম্ভবত সবচেয়ে পুরাতন এই বেকারী।
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় মি. ওয়েলস যখন বাংলাদেশ ছেড়ে নিজের দেশে চলে যান, তখন তার বাংলাদেশি শিষ্য শেখ বুদ্ধু মিয়ার হাতে এই বেকারী দিয়ে যান। বুদ্ধু মিয়া ১২ বছর বয়স থেকে মি. ওয়েলসের এই বেকারিতে কাজ শেখেন। তারপর পৈতৃক সূত্রে এই প্রতিষ্ঠানের মালিক হন নুরুদ্দিন আহমেদ। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন নুরুদ্দিন আহমেদের ছেলে আজহারুদ্দিন আহমেদ রাজেশ এর বংশধর। সে সময় ভারতবর্ষের এই অঞ্চলে যেসব ব্রিটিশ এসেছিল, তাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে মি. ওয়েলস এই বেকারি প্রতিষ্ঠা করেন। জায়গা হিসেবে লক্ষ্মীবাজারকে বেছে নেওয়ার কারণ সম্ভবত লক্ষ্মীবাজারস্থিত সেন্ট গ্রেগরি মিশন ও আশে পাশের এলাকা।
বেকারীর সঙ্গেই কারখানা। সেখানে এখনো সনাতন পদ্ধতিতে খাবার প্রস্তুত কিংবা বেক করা হয়। কারখানার যন্ত্রপাতি বা অন্যান্য সিস্টেম সেই আদিকালের। এখনো কাঠের আগুনে চুল্লি জ্বালানো হয়। স্টিলের লম্বা হাতায় করে ট্রেগুলোকে ভেতরে পাঠানো কিংবা বাইরে আনা হয়।
সর্বপরি সবকিছুর চাইতেও বড় কথা হল পুজিবাদি রং চটচটা বানিজ্য। হয়তো বা এখানে আরো বড় আলো ঝলমলে, আরো দামি আর মজাদার মোরকে আরো আকর্ষনিয় কিছু হবে।
--চকচকে থাই গ্লাস জায়গা দখল করবে পুরাতন ঘোলা, কোনা দিয়ে ফাটা, আবার টেপমারা আয়নাকে।
--আধুনিক পার্টেক্স এর বোর্ড দখল করবে পুরাতন ময়লা ধরা কাঠের সেল্ফএর।
হাতিল বা অটবির সোফা জায়গা দখল করবে নারিকেলের ছোবরার স্প্রিং এর চেয়ারের।
--গায়ের ঘাম আর ময়লার স্থায়ি দাগ হয়ে যাওয়া গেঞ্জির সেই কারিগর কাকার জায়গা দখল করবে শুশিক্ষিত হেট আর শেফ কোর্ট পরা শেফ ও সু-শেফ।
--পাউরুটি কাটার সেই শ-মিলের ব্লেড যেটা রুটি আর প্লেন কেক কাটতে কাটতে ক্ষয়ে গিয়ে নতুন এক আকৃতি নিয়েছে তার জায়গা দখল করবে আধুনিক বেকারি কাটার বা নাইফ।
--মোটা ফুডগ্রেডের(!) কাগজে বানানো বক্স দখল করবে পুরাতন রিসাইকেল করা কাগজের ঠোঙ্গাকে।
--সেই সিলভরের জগে ভরা পানির জায়গা দখল করবে ওয়ানটাইম মিনারেল ওয়াটার।
--সেই গ্যাস লাইট বা লাল আলোর ১০০ ওয়াটের লাইট তো LED আগেই দখল করে আছে।
--রুটির চুলা যা গাছের ফালি কেটে আগুন জালানো হত, কয়লা দিয়ে তাপের ব্যবস্থা করা হত সেই জায়গা দখল করবে ইলেকট্রিক ওভেন।
সবাই বলবে এটা তো আধুনিকতা আপনাকে মানতেই হবে। সবই মানি তবে আমার সেই ক্রস বনের স্বাদ কই?
আমার ক্রিম রোলের ভিতর থেকে আংগুলে খুচিয়ে খাওয়া ক্রিমের মজা কই??
আমার বাটার বনের ভিতরের চেটে খাওয়া বাটারি ক্রিম কই???
আমার প্যাটিসের সেই ভাজে ভাজে মচমচ শব্দ করা কামর কই????
সেই প্যাটিসের ভাজ কি করে যে আনতো তা আজো আমার কাছে এক আর্শ্চাযের বিষয়।
ভাল থাকুক নাম নাজানা সেই কারিগরেরা, ভাল থাকুক শৈশবের মেমরিগুলো, ভাল থাকুক সবাই………………
**ছবি,তথ্য সুত্রঃ ইন্টারনেট।
©somewhere in net ltd.