নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তুমি জীবন খুঁজো সুখের নীড়ে, আমি জীবন খুঁজি দুঃখের ভীরে।,,, রহমান লতিফ,,,,
দ্বাদশ শতাব্দীর শেষভাগে(১১৭৫-১২৯২) পারস্যে তথা ইরানের সুপ্রসিদ্ধ সিরাজ নগরের তাউস নামক স্থানে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে শেখ সাদী জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম আবু মুহাম্মদ মুসলিহ আল দীন বিন আবদাল্লাহ শিরাজি (শেখ সাদি বা সাদি শিরাজি বলেও পরিচিত) ছিলেন মধ্যযুগের গুরুত্বপূর্ণ ফার্সি কবি তার লেখার মান এবং সামাজিক ও নৈতিক চিন্তার গভীরতার জন্য তাকে কদর করা হয়। ধ্রুপদি সাহিত্যের ক্ষেত্রে সাদিকে একজন উচু মানের কবি ধরা হয়।
শেখ সাদীর প্রাথমিক শিক্ষা সিরাজ নগরেই লাভ ঘটে। এরপর তিনি উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য এলেন তদানীন্তন মুসলিম বিশ্বের সেরা জ্ঞানকেন্দ্র বাগদাদে। বাগদাদে এক পর্যায়ে তিনি বিখ্যাত নিযামিয়া মাদরাসায় শিক্ষা লাভ করেন। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি এই মাদরাসায় শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি মেধাবী ছাত্র হিসেবে মশহুর হয়ে পড়েন এবং শিক্ষাবৃত্তি লাভ করেন। মাদরাসায় কুরআন, হাদিস তাফসিরশাস্ত্র, ফিকাহ, উসুল, ফারায়েজ, হিকমা, দর্শন, ভাষাবিজ্ঞান, ধ্বনিবিজ্ঞান, অলঙ্কারশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে তিনি গভীর পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। বাগদাদে অবস্থানকালে শেখ সাদী গাউসুল আযম হয়রত আবদুল কাদির জিলানীর সান্নিধ্যে গিয়ে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন।
পোশাকের গল্প --
শেখ সাদী একবার বাদশাহর বাড়িতে দাওয়াতে যাচ্ছিলেন। মাঝপথে রাত হলে এক বাড়ির ছোট্ট একটি ঘরে আশ্রয় পেলেন তিনি। বাড়ির পক্ষ থেকে সামান্য কিছু খাবারও জুটল। পরের দিন শেখ সাদী বিদায় নিলেন। শেখ সাদীকে পেয়ে বাদশাহ অনেক খুশি। সেজন্য বিদায় বেলায় কবিকে বাদশাহ বেশ দামি উপহার ও একটি জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক দিলেন। শেখ সাদী সেই পোশাক পরে উপহার নিয়ে বিদায় নিলেন। ফেরার পথে সেই একই বাড়িতে আবার রাত্রিকালীন আশ্রয় নিলেন।
বাড়ির লোকেরা এবার তাকে দেখে সম্মানের সঙ্গে নিজেদের ঘরে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দিলেন। একই সঙ্গে অনেক ধরনের রাতের খাবারের ব্যবস্থাও করলেন। সবার সঙ্গে খেতে বসে শেখ সাদী না খেয়ে সব খাবার পোশাকের পকেটে রাখতে লাগলেন। তা দেখে বাড়ির একজন কৌতূহল ধরে না রাখতে পেরে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা আপনি না খেয়ে খাবারগুলোকে পোশাকের পকেটে কেন রাখছেন?
শেখ সাদী বললেন, 'আমি যখন কয়দিন আগে এ বাড়িতে রাত্রিযাপন করেছিলাম তখন আমার অবস্থা খুব সাধারণ ছিল। তাই আমার সমাদরও হয়েছিল খুব সাধারণ। আজ আবার যখন এ বাড়িতে আসলাম তখন আমার অবস্থা খুব উচ্চ অবস্থায়। এর সবই পোশাকের গুণেই হয়েছে। তাই খাবারগুলো তারই প্রাপ্য। তাই আমি না খেয়ে পোশাককে তা খাওয়াচ্ছি।'
একথা শুনে তাদের খুব লজ্জা হলো এবং এ রকম ব্যবহারের জন্য তারা শেখ সাদীর কাছে ক্ষমা চাইলেন।
ফার্সি সাহিত্যে একটি প্রবাদ আছে— ‘সাতজন কবির সাহিত্যকর্ম রেখে যদি বাকি সাহিত্য দুনিয়া থেকে মুছে ফেলা হয়, তবু ফার্সি সাহিত্য টিকে থাকবে। এই সাত জন কবি হচ্ছেন মাওলানা জালালুদ্দিন রুমী, ফেরদৌসী, হাফেজ, নিজামী, শেখ সাদী, রুদাকি এবং জামি।
তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ বোস্তানে তিনি বলেছেন-----
নানান দেশে ঘুরে ঘুরে জীবন হল গত যে
নানান রকম লোকের সাথে দিন কেটেছে কত যে।
যেথায় গেছি কিছু কিছু নিয়েছি মোর থলিতে
নিয়েছি ভাল যা পেয়েছি পথের ধারে চলিতে।
ফার্সি গদ্যের জনক মহাকবি শেখ সাদি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাভাষী পাঠকের কাছে অতি প্রিয় কবি। শুধু বাঙালিই নয় বিশ্বজুড়ে তিনি অত্যন্ত সমাদৃত।
তার কিছু বিখ্যাত উপদেশ।
১. তিন জনের নিকট কখনো গোপন কথা বলিও না- (ক) স্ত্রী লোক (খ) জ্ঞানহীন মূর্খ (গ) শত্রু।
২. অকৃতজ্ঞ মানুষের চেয়ে কৃতজ্ঞ কুকুর শ্রেয়।
৩. আমি আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভয় পাই, তার পরেই ভয় পাই সেই মানুষকে যে আল্লাহকে মোটেই ভয় পায় না।
৪. এমনভাবে জীবনযাপন করে যেন কখনো মরতে হবে না,আবার এমনভাবে মরে যায় যেন কখনো বেচেই ছিল না।
৫. হিংস্র বাঘের উপর দয়া করা নীরিহ হরিনের উপর জুলুম করার নামান্তর।
৬. যে সৎ, নিন্দা তার কোন অনিষ্ট করতে পারে না।
৭. প্রতাপশালী লোককে সবাই ভয় পায় কিন্তু শ্রদ্ধা করে না।
৮. দেয়ালের সম্মুখে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় সতর্ক হয়ে কথা বলো, কারন তুমি জান না দেয়ালের পেছনে কে কান পেতে দাঁড়িয়ে আছে।
৯. মুখের কথা হচ্ছে থুথুর মত, যা একবার মুখ থেকে ফেলে দিলে আর ভিতরে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই কথা বলার সময় খুব চিন্তা করে বলা উচিত।
১০. মন্দ লোকের সঙ্গে যার উঠা বসা, সে কখনো কল্যানের মুখ দেখবে না।
১১. পরিক্ষা ভিন্ন কিছু বিশ্বাস করিও না।
১২. বাঘ না খেয়ে মরলেও কুকুরের মতো উচ্ছিষ্ট মুখে তুলে না।
১৩. না শিখিয়া ওস্তাদি করিও না।|
১৪. কোন কাজেই প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস করিও না|
১৫. অজ্ঞের পক্ষে নীরবতাই হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম পন্থা। এটা যদি সবাই জানত তাহলে কেউ অজ্ঞ হত না।
১৬. তুমি বদ,লোকে বলে সৎ-ইহা অপেক্ষা তুমি সৎ, লোকে বলে বদ, ইহা ভালো”।
১৭. মিথ্যাবাদীর স্বরণশক্তি অধিক|
১৮.বল অপেক্ষা কৌশল শ্রেষ্ঠ ও কার্যকারী।
১৯.বানরকে স্নেহ করিলে মাথায় উঠে, বিড়ালকে স্নেহ করিলে কোলে উঠে।
২০.বিদ্যা এমন সম্পদ যা বিতরণে বাড়ে।
২১.একজন ঘুমন্ত ব্যক্তি আর একজন ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগ্রত করতে পারে না।
২২.এক জনের জুতো নেই। এই নিয়ে তার আক্ষেপ। তার আক্ষেপ ঘুচল। কেননা সে দেখল এক জনের পা-ই নেই।
২৩.লৌহদন্ড প্রস্তরগাত্রে যেমন বিদ্ধ হয় না, তেমনি কৃষ্ণ অন্তরেও সদুপদেশ ক্রিয়া করে না
২৪.অযোগ্য লোককে দায়িত্ব দেওয়া চরম দায়িত্বহীনতা।
২৫. ভদ্র লোক সেই, যে সত্যের উপাসক
২৬, নিজের হাতের উপার্জিত একটি রুটি, অন্যের দয়ায় দেওয়া কোরমা পোলাওয়ের চাইতেও উত্তম।
২৭. আগন্তুকের কোনো বন্ধু নেই,আরেকজন আগন্তুক ছাড়া।
২৮. দুই শত্রুর মধ্যে এমন ভাবে কথাবার্তা বল, তারা পরস্পরে মিলে গেলেও যেন তোমাকে লজ্জিত হতে না হয়।
২৯,সকল কাজেই মধ্যপন্থা অবলম্বন করিও।
৩০.তুমি যদি উচচ সম্মান লাভ করিতে চাও তবে অধীনস্থ ব্যক্তিকে নিজের মতো দেখতে অভ্যাস করো। তাকে সামান্য মনে না করিয়া সম্মান করিবে।
৩১.ইহ- পরকালে যাহা আবশ্যক তাহা যৌবনে সংগ্রহ করিও।
৩২.যে ব্যক্তি কাউকে গোপনে উপদেশ দিল সে তাকে খুশি করল ও সুশোভিত করল আর যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে কাউকে উপদেশ দিল সে যেন তাকে লাঞ্ছিত ও কলঙ্কিত করল।
৩৩.পথের সম্বল অন্যের হাতে রাখিও না।
৩৪.প্রতিশ্রুতি খুব কম দিও। দয়া করবার আগে ন্যায়বান হও।
৩৫.স্ত্রী লোককে বেশী বিশ্বাস করিও না।
সাদীর রচিত মোট ২২ খানা গ্রন্থের নাম শোনা যায়। শেখ সাদীর শ্রেষ্ঠগ্রন্থ গুলিস্তা বিশ্বসাহিত্যের এক অতুলনীয় সম্পদ। ইংরেজি, ফরাসি, ডাচ, জার্মান, আরবি, উর্দু, তুর্কি, স্প্যানিশ ইত্যাদি বহু ভাষায় এ জনপ্রিয় গ্রন্থের অনুবাদ হয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান অনুসারে, তাঁর রচিত বুস্তান বইটি সর্বকালের সেরা ১০০ বইয়ের মাঝে স্থান পেয়েছে। মাস্টার অফ স্পিচ,দ্য মাস্টার ইত্যাদি বহু খেতাবেই তিনি পরিচিত। আজও তাঁর কবিতা বিশ্বের কাব্যাঙ্গনে উচ্চারিত হচ্ছে সমগ্র আবেদন নিয়ে। শেখ সাদীর ভাষা ছিল অত্যন্ত অলঙ্কারময়। আর প্রকাশভঙ্গির জাদুকরী প্রভাব পাঠকচিত্তকে মোহিত করে রাখতো। শেখ সাদীর হৃদয় ছিল উদার ও মহৎ। তাঁর দৃষ্টিতে সকল মুসলমান ছিলেন সমান।তার রচিত বুস্তাঁ গ্রন্থে বলেন, ফুলের সংস্পর্শে মাটির ঢেলা যেমনিভাবে সুগন্ধি প্রাপ্ত হয়,অনুরূপ জ্ঞানী-গুণীর সংস্পর্শে থাকলে মানুষের চরিত্রেও এ প্রভাব পড়াটা স্বাভাবিক। আবার ‘গুলিস্তাঁ’ গ্রন্থে বলেন,একদা গোসলখানায় এক মাটির ঢেলা হাতে নিয়ে শুঁকে দেখলাম অফুরন্ত খুশবু, তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি আতরদানি, না সুবাসে ভরা গুলিস্থান? মাটির ঢেলা বলল, এসব আমি কিছু নই, আমি অতি নিচু মাটি, ফুলের সঙ্গে থেকে আমার সুবাস খাঁটি হয়েছে।
শেখ সাদী দীর্ঘজীবনের ৩০ বছর লেখাপড়ায়, ৩০ বছর দেশ ভ্রমণে, ৩০ বছর গ্রন্থ রচনায়, ৩০ বছর আধ্যাত্মিক চিন্তায় একনিষ্ঠ সাধনা চালিয়ে ১২৯২ খ্রিষ্টাব্দে ইরানের সিরাজ নগরে মহাকবি শেখ সাদী ইন্তেকাল করেন।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৩৯
ল বলেছেন: ১ম উপদেশ দিলে ভালো হতো ...............
২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ২:২৯
রাকিবুল হাসান রাজ বলেছেন: শেখ সাদি ১২১০-১২৯১
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ২:৩৯
ল বলেছেন: Saadi was born in Shiraz, Iran, according to some, shortly after 1200, according to others sometime between 1213 and 1219.[6] In the Golestan, composed in 1258, he says in lines evidently addressed to himself, "O you who have lived fifty years and are still asleep"; another piece of evidence is that in one of his qasida poems he writes that he left home for foreign lands when the Mongols came to his homeland Fars, an event which occurred in 1225
দ্বাদশ শতাব্দীর শেষভাগে জন্ম তারিখ নিয়ে মতান্তর আছে।।
ঠিক মৃত্যু তারিখ নিয়েও পরস্পর বিরোধী মতবাদ আছে।।।
৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৪:৫৬
সোহানী বলেছেন: 1 ও 35 নং উপদেশ নিয়ে দু:খ পেয়েছি।
আরো কিছু লিখা পড়েছিলাম উনাকে নিয়ে। তবে সেই পোষাকের গল্পটা বললে পাঠক সহজেই বুঝতে পারতো আপনি কাকে নিয়ে লিখেছেন।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৫:১৮
ল বলেছেন: আপনার কথামতো সংযোজন করি দিয়েছি --/
দুঃখ পেয়ে লাভ নেই - এই ধারাবাহিকতা থেকে খুব সামান্য নারীই বের হয়ে আসতে পেরেছে।।
আপনিও তাদের একজন।।। ভালো থাকুন।।
৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:২২
ইসিয়াক বলেছেন: অসাধারণ ও অনন্য পোষ্ট। বিস্তারিত মন্তব্যে পরে আসছি.....
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:৫৫
ল বলেছেন: ধন্যবাদ।।।
৫| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:৫২
ইসিয়াক বলেছেন: সাদি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইরানের শিরাজে, কারও কারও মতে, ১২০০ এর কিছু পরে, ১২১৩ এবং ১২১৯-এর মধ্যে অন্যদের মতে। ১২৫৫-এ রচিত গোলানস্তানে তিনি স্পষ্টতই নিজেকে সম্বোধন করেছিলেন, "হে পঞ্চাশ বছর আপনি যারা বেঁচে আছেন! এবং এখনও ঘুমিয়ে আছে "; আর একটি প্রমাণের অংশটি হ'ল তার একটি কাসিদা কবিতায় তিনি লিখেছেন যে মঙ্গোলরা তার স্বদেশ পার্সে আসার সময় তিনি বিদেশে চলে গিয়েছিলেন, এটি একটি ঘটনা যা ১২২৫ সালে ঘটেছিল।
মনে হয় ছোটবেলায় তার বাবা মারা গিয়েছিলেন। তিনি উত্সবকালে বাবার সাথে ছোটবেলায় বেরোনোর স্মৃতি বর্ণনা করেন। শিরাজ ত্যাগ করার পরে তিনি বাগদাদের নিজামিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, যেখানে তিনি ইসলামী বিজ্ঞান, আইন, প্রশাসন, ইতিহাস, ফারসি সাহিত্য এবং ইসলাম ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন করেন; মনে হয় সেখানে পড়াশোনার জন্য তার স্কলারশিপ ছিল। গোলেস্তানে তিনি আমাদের বলেছিলেন যে তিনি আলেম আবু-ফরাজ ইবনে আল জাওয়ির অধীনে পড়াশোনা করেছেন (সম্ভবতঃ এই নামটির দুইজন পন্ডিতের মধ্যে তিনি কনিষ্ঠ ছিলেন, যিনি ১২৩৮ সালে মারা গিয়েছিলেন)।বুস্তান এবং গোলেস্তান সাদি তার ভ্রমণগুলির অনেক বর্ণময় উপাখ্যান বলেছিলেন, যদিও এর মধ্যে কয়েকটি যেমন প্রত্যন্ত পূর্বাঞ্চলীয় কাশগরে তার ১২৩১ খ্রিষ্টাব্দে ভ্রমণের কথা, কাল্পনিকও হতে পারে। খোয়ারেজম ও ইরানের মঙ্গোল আগ্রাসনের পরে উদ্বেগহীন পরিস্থিতি ছিল। তিনি আনাতোলিয়ার মধ্য দিয়ে ত্রিশ বছর বিদেশে ঘুরে বেড়াতে (যেখানে তিনি আদানা বন্দরে গিয়েছিলেন এবং কোনিয়া কাছাকাছি গাজী জমিদারদের সাথে দেখা করেছিলেন), সিরিয়া (যেখানে তিনি দামেস্কে দুর্ভিক্ষের কথা উল্লেখ করেছেন), (যেখানে তিনি এর সংগীত, বাজার, আলেম ও অভিজাতদের বর্ণনা দিয়েছেন) , এবং ইরাক (যেখানে তিনি বসরা এবং টাইগ্রিস নদীর বন্দরটি ঘুরে দেখেন)। তার লেখায় তিনি আল-আজহারের কাদিস, মুফতি, গ্র্যান্ড বাজার, সংগীত ও শিল্পের উল্লেখ করেছেন। হালাব-এ সাদি এক সাথে সুফীদের সাথে যোগ দেয় যারা ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে কঠোর লড়াই করেছিল। সাদিকে একরে ক্রুসেডাররা বন্দী করেছিল যেখানে সে তার দুর্গের বাইরে খননকাজ করার জন্য দাস হিসাবে সাত বছর অতিবাহিত করেছিল। পরে ক্রুসেডার অন্ধকূপে বন্দি মুসলিম বন্দীদের মামলুকরা মুক্তিপণ দেওয়ার পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।সাদি জেরুজালেমে গিয়ে মক্কা ও মদীনা তীর্থযাত্রায় রওনা হন। ধারণা করা হয় যে তিনি আরব উপদ্বীপের দক্ষিণে ওমান এবং অন্যান্য ভূখণ্ডও পরিদর্শন করেছেন।
মঙ্গোল আগ্রাসনের কারণে তিনি নির্জন অঞ্চলে বাস করতে বাধ্য হন এবং এককালের প্রাণবন্ত রেশম বাণিজ্য পথে তাদের জীবনের ভয়ে কাফেলাদের সাথে দেখা করেছিলেন। সাদি বিচ্ছিন্ন শরণার্থী শিবিরগুলিতে বাস করতেন যেখানে তিনি দস্যু, ইমাম, পূর্বে প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক বা সেনাবাহিনী, বুদ্ধিজীবী এবং সাধারণ লোকদের সাথে দেখা করতেন। মঙ্গোল এবং ইউরোপীয় উত্সগুলি (যেমন মার্কো পোলো) ইলখানাতে শাসনের শক্তিশালী এবং ন্যায়বিচারের জীবনকে আকৃষ্ট করেছিল, সাদি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অঞ্চলের সাধারণ বেঁচে থাকা লোকদের সাথে মিশে গেছে। তিনি গভীর রাত পর্যন্ত প্রত্যন্ত চা বাড়িতে বসে ব্যবসায়ী এবং কৃষক, প্রচারক, পথচারী, চোর এবং সুফি বান্ধবীদের সাথে মতবিনিময় করেন। বিশ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে, তিনি তার লোকেদের জ্ঞান ও বোধগম্যতা প্রতিফলিত করার জন্য তার উপদেশগুলি সম্মান করে প্রচার, উপদেশ এবং শেখার একই শিডিয়াল অব্যাহত রেখেছিলেন। সাদির রচনাগুলি মঙ্গোল আগ্রাসনের উত্তাল সময়কালে বাস্তুচ্যুতি, যন্ত্রণা ও সংঘাতের শিকার সাধারণ ইরানীদের জীবনকে প্রতিফলিত করে।সাদী আজারবাইজানে মধু সংগ্রহকারীদের উল্লেখ করেছেন, মঙ্গোলের লুণ্ঠনের ভয়ে। অবশেষে তিনি পার্সিয়ায় ফিরে আসেন যেখানে তিনি ইসফাহান এবং অন্যান্য শহরগুলিতে তার শৈশব সঙ্গীদের সাথে সাক্ষাত করেন। খোরাসান সাদিতে তুঘরাল নামের তুর্কি আমিরের সাথে বন্ধুত্ব হয়। সাদি তার ও তার লোকদের সাথে সিন্ধু যাত্রার সাথে যোগ দিলেন যেখানে তিনি পারসী সুফি গ্র্যান্ড মাস্টার শায়খ উসমান মারভানদ্বীর (১১১৭–-১২৭৪) অনুসারী পীর পুত্তুরের সাথে দেখা করলেন।
তিনি সিন্ধুতে তুঘরাল নামে তুর্কি আমির (ভারত সিন্ধু ও থর জুড়ে পাকিস্তান), ভারত (বিশেষত সোমনাথ, যেখানে তিনি ব্রাহ্মণদের মুখোমুখি হন) এবং মধ্য এশিয়া (যেখানে তিনি মঙ্গোল আক্রমণে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করেছিলেন) নিয়ে তার ভ্রমণ সম্পর্কে তার লেখায় উল্লেখ করেছেন। খুভেরজমে)। তুঘরাল হিন্দু সেন্ডিনেল নিয়োগ দেয়। তুঘরাল পরে ধনী দিল্লি সুলতানিতে চাকরিতে প্রবেশ করেন এবং সাদিকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং পরে গুজরাটের ভিজারের সাথে দেখা হয়। গুজরাটে অবস্থানকালে সাদি হিন্দুদের সম্পর্কে আরও বেশি কিছু শিখেন এবং সোমনাথের বৃহত মন্দিরে গিয়েছিলেন, যেখান থেকে তিনি ব্রাহ্মণদের সাথে অপ্রীতিকর মুখোমুখি হওয়ার কারণে পালিয়ে এসেছিলেন। কাটোজিয়ান এই গল্পটিকে "প্রায় অবশ্যই কল্পিত" বলেছেন।
সাদি ১২৫৭ সিই / ৬৫৫ হিজরের আগে শিরাজে ফিরে আসেন (যে বছর তিনি তার বুস্তানের রচনা শেষ করেছিলেন)। সাদি তার কবিতায় ফেব্রুয়ারী ১২৫৮ সালে হুলাগুর নেতৃত্বে মঙ্গোল আক্রমণকারীদের দ্বারা আব্বাসীয় খিলাফতের পতন এবং বাগদাদের ধ্বংসের শোক প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি যখন তার নেটিভ শিরাজে ফিরে এসেছিলেন, তখন তিনি সম্ভবত তার চল্লিশের দশকের শেষের দিকে ছিলেন। শিরাজ আতাবাক আবুবকর ইবনে সা'দ ইবনে জাঙ্গির অধীনে (১২৩১-৬০), ফারসের সলঘুরিদ শাসক, আপেক্ষিক প্রশান্তির এক যুগ উপভোগ করছিলেন। সাদিকে কেবল শহরেই স্বাগত জানানো হয়নি তবে শাসক তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে দেখিয়েছিলেন এবং প্রদেশের গ্রেটদের মধ্যে ছিলেন কিছু পণ্ডিত বিশ্বাস করেন যে সাদি তার নাম দে প্লুম (ফার্সী টাকালোলো) আবুবকরের পুত্র স'দের নাম থেকে গ্রহণ করেছিলেন, যাকে তিনি গোলেস্তানকে উত্সর্গ করেছিলেন; তবে কাটোজিয়ান যুক্তি দেখান যে সম্ভবত আবুবকরের পিতা সাদ ইবনে জাঙ্গি (মৃত্যু ১২২৬) এর নাম সাদী ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছিলেন। সাদির বেশিরভাগ বিখ্যাত উপাখ্যানটি শাসক বাড়ির প্রশংসা করার জন্য কৃতজ্ঞতার ইঙ্গিত হিসাবে রচনা করেছিলেন এবং স্থাপন করেছিলেন তার বুস্তানের শুরুতে। সাদির বাকী অংশগুলি মনে হয় শিরাজায় কাটিয়েছে।
সাদির মৃত্যুর সনাতন তারিখটি ১২৯১ এবং ১২৯৪ এর মধ্যে
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:৫৬
ল বলেছেন: আপনার জন্য এই গল্প --- এত কষ্ট করে তথ্য দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা।।।
""" কোনো এক বাদশাহ এক অপরাধী কয়েদীকে হত্যা করার হুকুম দিলেন। মৃত্যু নিশ্চিত জেনে বেচারা কয়েদি বাদশাহকে গালি দিতে শুরু করল এবং অশ্লীল ভাষায় যাচ্ছেতাই বকতে লাগল। বাদশাহ তাঁর এক মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন: লোকটা কি বলছে? মন্ত্রীমহোদয় খুব দয়ালু ও মহানুভব ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বললেন: লোকটা বলছে- যারা রাগ দমন করে এবং লোকদেরকে ক্ষমা করে, সেইসব লোকদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন।
একথা শুনে বাদশাহর হৃদয়ে দয়া হলো এবং তার প্রাণদণ্ড মওকুফ করে দিলেন। এসময় হিংসুটে অপর এক মন্ত্রী প্রতিবাদ করে বললেন: 'আমাদের মতো উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীদের পক্ষে রাজদরবারে দাঁড়িয়ে সত্য বৈ মিথ্যা বলা ঠিক নয়। অপরাধী লোকটি বাদশাহ নামদারকে গালি দিচ্ছে এবং এমন সব অকথ্য কথা বলছে, যা কাউকে বলা যায় না।'
হিংসুটে মন্ত্রীর কথার কোনো জনাব দিলেন না ভালো মন্ত্রী। বাদশাহও তার কথায় কান দিলেন না। বরং বিরক্ত হয়ে বললেন: যে সত্য কথা তুমি বলেছ, তার চেয়ে ওর মিথ্যা কথা আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে, কেননা, ওর উদ্দেশ্য মহৎ। অর্থাৎ, একটা মূল্যবান জীবন রক্ষা করে তাকে সংশোধনের সুযোগ দেয়া।
শেখ সাদী এ গল্প থেকে আমরা জানতে পারি যে, অশান্তি সৃষ্টিকারী সত্য কথার চেয়ে শান্তিকামী মিথ্যা কথাও অনেক ভালো।
৬| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:৫৩
নীল আকাশ বলেছেন: সেম সাইড হয়ে গেল। ঊনার একটা লেখা নিয়ে আমিও শুরু করেছিলাম।
তবে একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। লেখক পরিচিতির জন্য এই পোস্ট লিংক বলে দেব।
এই ধরণীতে শেখ সাদীর চেয়ে বড় সাহিত্যিক খুব কমই আছে।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:০৫
ল বলেছেন: শেখ সাদী,
ইমাম গাজ্জালী
ওমর খৈয়াম
জালালুদ্দিন মুহাম্মদ রুমি
শাবজ তিরমিজি
আল্লামা ইকবাল
আল রাজী
আল ফারাবী
আল বাত্তানি
ইবনে খালেদুন
ইবনে রুশদ
ইবনে সিনা
আল কিন্দি
এপিজে আবুল কালাম।।
এইসব সৃষ্টিশীল মুসলিম দার্শনিকদের সশ্রদ্ধ সালাম।।।
আপ্নের লেখার অপেক্ষায় রইলুম।।
শুভ সকাল।।
৭| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:২৪
ঢাবিয়ান বলেছেন: পোস্টে +++++++++++++++++
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:০৯
ল বলেছেন: কাজের ফলঃ
আবদুল একজন কাঠের ব্যবসায়ী ।
সে ছিল খুব অত্যাচারী ও নিষ্ঠুর এক লোক | জোর করে সে অন্যের গাছ কেটে ফেলত । কাঠ কেটে নিয়ে আসত আর বিক্রির সময় দাম হাকাত অনেক বেশি । কেউ কেউ বলত : আবদুল, মানুষের মনে কষ্ট দিয়ে এভাবে ব্যবসা করো না। গুরুজনেরা উপদেশ দিত, নিন্দুকেরা নিন্দা করত । কিন্তু আবদুল কোনোকিছু গ্রাহ্যই করত না। একদিন একজন তাকে বলল : আবদুল, গরিবদের ওপরে অত্যাচার করো না।
গরিবদের চোখের অশ্রুতে যে অভিশাপ একদিন তার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে । আবদুল নির্বিকার । এসব কথা তার কানেই ঢোকে না । বরং সে বিরক্ত হয় ৷ একদিন ঘটলও
এক দুর্ঘটনা । আবদুলের কাঠের দোকানে আগুন লাগল । দাউ দাউ করে আগুনের শিখা ছড়িয়ে পড়ল নীল আকাশে । আবদুলের সমস্ত কাঠ পুড়ে ছাই হয়ে গেল। কিন্তু আবদুলের এই দুঃখে কেউ সমব্যথী হল না । কেউ এসে তার পাশে দাড়াল না। আবদুল বুক চাপড়ে হায় হায় করতে লাগল । হায় হায়, আমার কী হল!
আজ সেই লোকটি আবদুলের কাছে এসে বলল : আবদুল, মনে রেখো
তুমি এতদিন অত্যাচারের আগুন জ্বালিয়েছিলে লোকের মনে, সেই আগুনেই
সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল । অত্যাচারী ব্যক্তি কখনও সুখী হতে পারে না।
তাকে একদিন শাস্তি ভোগ করতেই হয় ।
*চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনীঃ
পাহাড়ি রুক্ষ ধু-ধু প্রান্তর | ছোট-বড় পাহাড় । এরই মধ্যে রাস্তা । একদল
বণিক চলেছে নিজেদের গন্তব্যে | কিন্তু তারা পথিমধ্যে আক্রান্ত হল ভয়ংকর
দস্যুদের কবলে । দস্যুরা প্রথমেই “হারে রে রে হারে রে রে' বলে ঝাঁপিয়ে পড়ল বণিকদলটির ওপর তারপরে শুরু করল নির্মমভাবে মারধোর। মালপত্র যা ছিল সব লুঠ করে নিল নিমেষের মধ্যে বণিকেরা অসহায় । তারা করুণভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগল । তারা
বলতে লাগল : তোমরা সব লুঠ করে নিলে আমরা এই পাহাড়ি পথে
না-খেয়ে মারা পড়ব । আমাদের এতবড় বিপদে তোমরা ফেলো না। কিন্তু দস্যুরা বড় ভয়ংকর । তারা খুব নির্মম ও নিষ্ঠুর । কোনো কথাই
তাদের কানে প্রবেশ করছে না।
বণিকদলের মধ্যে ছিলেন একজন জ্ঞানীব্যক্তি | তার নাম লোকমান হাকিম । বণিকরা তখন জ্ঞানীব্যক্তিকে বারবার অনুরোধ করতে
লাগল-আপনি দস্যুদের উদ্দেশে কিছু বলুন ৷ উপদেশবাণী দিন | যদি এতে
দস্যুদের মনে কোনো দয়ার উদ্রেক হয় । তারা যদি এতে শান্ত হয় । এই জঘন্য পাপকাজ থেকে তাদের মুক্ত হওয়া উচিত ৷ জ্ঞানীব্যক্তিটি তখন হেসে ফেললেন। নাহে, যারা পশুর মতো আচরণ করে তাদের উপদেশ দিয়ে কোনো লাভ নেই । তারা যুক্তি বিবেচনা করে না । তাদের সঙ্গে কথা বলা আর মরুভূমিতে দীড়িয়ে চিৎকার করা একই ব্যাপার । যে লোহায় মরচে পড়ে গেছে--সেটা হাঁজারবার ঘষলেও উজ্জ্বল হবে না কখনো। যাদের হৃদয়ে মরচে পড়েছে তাদের সঙ্গে কথা বলতে যাওয়াই বোকামি ।
৮| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: একজন গ্রেট লোক।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:১০
ল বলেছেন: ক্ষমাঃ
বিখ্যাত সম্রাট হারুন-অর-রশিদ। আরবভূমিতে তার নাম ছড়িয়ে আছে।
একজন সুশাসক ও প্রজাবৎসল সম্রাট হিসেবে। তিনি গরিবের উপকার করতেন। দুঃখী ও বিপদগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা করতেন। সবচেয়ে বড় কথা তিনি ছিলেন ভালাে মানুষদের পক্ষে। মন্দ মানুষদের বিপক্ষে।
একদিন।
সম্রাট হারুন-অর-রশিদ বসে আছেন সভাকক্ষে । মন্ত্রীদের সঙ্গে গভীর এক বিষয় নিয়ে শলাপরামর্শ করছেন। কী করে প্রজাদের উপকার করা যায়—এই ছিল তাঁর সারাক্ষণ কর্ম ও ধ্যান।
এমন সময় একটি লােক প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে প্রাসাদে প্রবেশ করল ।
প্রহরীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সােজা প্রবেশ করল সভাকক্ষে। সম্রাটের সামনে দাঁড়িয়ে উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপতে লাগল লােকটি। সম্রাট বললেন—কী হয়েছে তােমার?
-বাদশাহ নামদার, একজন আপনাকে ও আপনার মাকে নিয়ে যা-তা গালাগালি করছে রাস্তায়। এ আমি সহ্য করতে পারলাম না। তাই ছুটে এলাম। এই লােকের এখনই বিচার হওয়া উচিত।
সম্রাট মন দিয়ে সবটুকু শুনলেন।
মন্ত্রীদের দিকে তাকিয়ে বললেন-
লােকটিকে কী করা উচিত বলে আপনারা মনে করেন?
মন্ত্রীরা সকলেই ভয়ানক উত্তেজিত ।
এতবড় দুঃসাহস লােকটির!
ওকে ধরে এনে এক্ষুনি ফাঁসিতে চড়াও। একজন সম্রাটকে বললেন-লােকটিকে ধরে এনে সমুচিত সাজা দেয়া উচিত। ওকে শূলে চড়ানাে প্রয়ােজন।
আরেকজন বললেন—ওকে হত্যা করে ওর মাংস কুকুর-বেড়ালকে দিয়ে খাওয়ানাে দরকার।
-ওর জিভ কেটে, চুল ছেটে ওকে শহর থেকে বের করে দেয়া উচিত। কেউ-বা বলল-বেয়াদবটাকে মাটিতে পুঁতে পাথর ছুড়ে ছুড়ে হত্যা করতে হবে।
সম্রাট হারুন-অর-রশিদ সকলের বক্তব্যই শুনলেন।
তারপর নীরবে একটু হাসলেন।
মৃদু হাসি দিয়ে সকলের উদ্দেশে বললেন—না হে, লােকটিকে ক্ষমা করে দেয়াই উচিত আমাদের। নইলে প্রমাণ হয় না আমরা ঐ লােকটির
চেয়ে বড়।
লােকটি আমাকে গালাগালি দিয়েছে।
ও নীচুমনের পরিচয় দিয়েছে। আমি যদি ওকে গালি দিতে চাই তবে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ায়?
আমিও তাে তবে ওর মতাে হয়ে যাই । ওকে ক্ষমা করে দাও। ক্ষমাই মহত্ত্বের লক্ষণ।
৯| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:১৩
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: একজন বলিষ্ঠ ব্লগারেরঅনন্য এবং অনবদ্য পোস্ট।
প্রিয়তে।
মহাকবি শেখ সাদি কে স্মরণ করি।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪৫
ল বলেছেন: *বিচার নেইঃ
বাদশাহ'র কঠিন অসুখ । সারাদিন তিনি বিছানায় শুয়ে থাকেন। শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কণ্ঠস্বর ক্ষীণ হচ্ছে। মনে কোনাে সুখ নেই। কাজকর্ম করতে পারেন না। বেঁচে থাকার আর কোনাে আশা নেই তার। বাদশাহ বুঝলেন, মৃত্যু তাঁর দুয়ারে এসে হানা দিয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসকরা এল। নানারকমের ওষুধ দিল । কিন্তু কিছুতেই কোনাে উপকার হয় না।
সকলেই খুব চিন্তিত।
চিকিৎসক এলেন ইরান-তুরান থেকে । চিকিৎসক এলেন কাবুল-কান্দাহার থেকে। শেষে এক চিকিৎসক এলেন গ্রিস থেকে। গ্রিসের চিকিৎসক বেশ কয়েকদিন ধরে সবধরনের পরীক্ষা করলেন
বাদশাহকে। নাড়ি টিপে দেখলেন। শরীরের তাপ নিলেন।
তারপর তিনি বললেন, এ বড় কঠিন অসুখ। তবে এর চিকিৎসা আছে।
একজন অল্পবয়স্ক বালক প্রয়ােজন, যার হৃৎপিণ্ড থেকে ওষুধ তৈরি করতে হবে।
সেই ওষুধে বাদশাহ সুস্থ হয়ে উঠবেন।
বাদশাহ'র অসুখ ।
প্রয়ােজন অল্পবয়স্ক বালক । দিকে দিকে লােক ছড়িয়ে পড়ল। খুঁজতে খুঁজতে একটা ছেলেকে পাওয়াও গেল । ছেলের বাবা টাকার
বিনিময়ে খুব অনায়াসে ছেলেটিকে বিক্রি করে দিল বাদশাহ’র লােকদের কাছে। টাকাও পেল বিপুল পরিমাণ।
আর কাজি বিচারসভায় রায় দিলেন, এই ছেলের জীবন বধ করা অন্যায় কোনাে কাজ নয়। কারণ, এই ছেলের তুচ্ছ জীবনের বিনিময়ে বাদশাহ'র মূল্যবান জীবন রক্ষা পাবে। ছেলেটি এইসব ঘটনা দেখে সারাক্ষণ মিটিমিটি হাসে। জল্লাদ তাকে হত্যা করার জন্যে ধরে-বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে বধ্যভূমিতে । তার হৃৎপিণ্ড থেকে
তৈরি হবে ওষুধ। ছেলেটি তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে হাে হাে করে হাসতে লাগল।
বাদশাহ পেছনে ছিলেন। ছেলেটির হাসির শব্দ শুনে তিনি খুব বিচলিত হলেন।
একটু পরেই তার মৃত্যু হবে! মাটিতে লুটিয়ে পড়বে তার সুন্দর দেহ। তবে ছেলেটি প্রাণ খুলে হাসে কেন? বাদশাহ তাকে
ডেকে পাঠালেন।
—তুমি মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে এরকম ভাবে হাসছ কেন?
ছেলেটি হাসতে হাসতেই বলল-হায়, আমার জীবন! আমি হাসব-না
তাে কে হাসবে বলুন? পিতামাতার দায়িত্ব সন্তানদের রক্ষা করা। কিন্তু দেখুন, কিছু অর্থের বিনিময়ে আমার বাবা আমাকে বিক্রি করে দিয়েছেন ।
কাজির দরবারে মানুষ যায় কেন? সুবিচারের আশা নিয়ে।
কিন্তু, কাজি সাহেব অন্যায়ভাবে বাদশাহ’র পক্ষ নিলেন। আমাকে হত্যা করার
হুকুম দিলেন তিনি। আর বাদশাহ’র কর্তব্য কী? বাদশাহ তাে গরিব-দুঃখী, অত্যাচারিত, নিপীড়িত প্রজাদের রক্ষা করবেন। কিন্তু এখন
কী ঘটতে যাচ্ছে আমার জীবনে? বাদশাহ নিজের জীবন রক্ষা করার জন্য অন্যের জীবনকে তুচ্ছ করছেন। কিন্তু অপরের জীবনও যে তার নিজের কাছে অতি মূল্যবান—এই সামান্য কথা তিনি মনেই রাখলেন না।
হায়! একটু পরেই আমার মৃত্যু হবে। আমি হাসব-না তাে কে হাসবে!
জগৎ-সংসারের এইসব খেলা দেখে একমাত্র আমিই এখন প্রাণ খুলে হাসতে পারি।
বাদশাহ এই কথা শুনে অবাক হলেন। ছেলেটির প্রতি অসীম মমতায়
তিনি কাতর হয়ে উঠলেন। তিনি ছেলেটিকে মুক্ত করে দিলেন।
আর আশ্চর্যের ব্যাপার তার কিছুদিন পরেই বাদশাহ’র অসুখ সেরে গেল। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ
হয়ে উঠলেন।
১০| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:১০
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: চোখ বুলিয়ে গেলাম প্রিয় লতিফ ভাই। সয়য় নিয়ে আবার আসছি।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪৬
ল বলেছেন: যেমন ছিলামঃ
বাদশাহ'র মন ভালো নেই । বৃদ্ধ বয়স । যে-কোনোদিন তিনি মারা যাবেন।
তিনি মারা গেলে কে বাদশাহ হবেন? কারণ তার কোনো সন্তান নেই বাদশাহ ঘোষণা করে দিলেন : কাল ভোরবেলা এই রাজধানী শহরে প্রথম যে-ব্যক্তি প্রবেশ করবে তাকেই আমি পুত্র হিসেবে গ্রহণ করব । সেই হবে এই বিশাল সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী ।
পরদিন ভোরবেলা । সকলে উদগ্রীব । রাজকর্মচারীরা নগরদ্ধারে প্রস্তুত তাদের উৎসুক দৃষ্টি, কে হবে সেই ভাগ্যবান?
এমন সময় দেখা গেল একজন দীনহীন ভিক্ষুক, পরনে তার শতচ্ছিন্ন পোশাক, আপনমনে সে প্রবেশ করছে নগরে । রাজকর্মচারী প্রতিশ্রুতি
অনুযায়ী ভিক্ষুককে ধরে নিয়ে হাজির হল রাজদরবারে | একেবারে রাজার সামনে বাদশাহ তাকেই গ্রহণ করলেন । ভিক্ষুক হল তার পোষ্যপুত্র | সে হবে রাজ্যের উত্তরাধিকারী ।
ভিক্ষুকের আর আনন্দ ধরে না। দুবেলা ভাতের জন্যে তাকে ঘুরে বেড়াতে হত মানুষের দরজায় দরজায় । হঠাৎ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরে
গেছে । সে আজ অগাধ ধনসম্পদের মালিক ।
সমস্ত রাজ্য তার।
কোষাগারের সমস্ত অর্থ তার ।
এই সুখ! এই স্বাচ্ছন্দ্য! ভিক্ষুকের মাথা খারাপ হয়ে উঠল। সে ভোগবিলাসে, আনন্দ-উৎসবে জীবন কাটাতে লাগল ।
বাদশাহ একদিন মারা গেলেন ।
ভিক্ষুক বসল সিংহাসনে ।
সকলেই তাকে বাদশাহ বলে মেনে নিল ।
কিন্তু বাদশাহ হওয়ার পরেই রাজ্যজুড়ে দেখা দিল অশাস্তি । নতুন বাদশাহ'র কোনো জ্বানগম্যি নেই । রাজ্য পরিচালনার মতো বুদ্ধিও তার নেই । মন্ত্রীরা তাই এই নতুন বাদশাহকে খুব ভালোভাবে মেনে নিতে পারল না। তারা বাদশাহ'র হুকুম পালন করতে অপারগ ।
রাজ্যজুড়ে শুরু হল অরাজকতা ।
অন্যান্য দেশের বাদশাহরা ভাবলেন, এইতো সুযোগ । দখল করতে হবে রাজ্য ।
নতুন বাদশাহ পড়লেন মহাভাবনায় ।
দিনরাত তার দুশ্চস্তা । নাওয়া নেই, খাওয়া নেই, চোখে তার ঘুম নেই।
এমন সময় ভিক্ষুকের এক পুরনো বন্ধু এল তার সঙ্গে দেখা করতে । বন্ধু এখন বাদশাহ হয়েছে । এ আনন্দ তারও । বন্ধুকে সে বলল-তুমি বাদশাহ
হয়েছ। এর চেয়ে সুখ জীবনে আর কী হতে পারে! একদিন তুমি এই রাজ্যের পথে পথে ঘুরে বেড়াতে । আজ পুরো রাজ্যটাই তোমার। তোমার কোনো অভাব নেই । টাকা-পয়সার চিন্তা নেই । তোমার মতো সুখী আর কে আছে ভাই ।
নতুন বাদশাহ তখন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল : বন্ধু, তুমি যদি আমার মনের আসল অবস্থা বুঝতে পারতে তবে হয়তো এই কথা আর বলতে না । যখন পথে পথে ঘুরে বেড়াতাম, একবেলা খেতাম, আরেকবেলা খেতে পেতাম না__সেই
জীবনই আমার ভালো ছিল । খাবার চিন্তা আজ হয়তো আমার নেই । কিন্তু প্রতি মূহুর্তে , প্রতিক্ষণে নানা দুশ্চিন্তায় দিন কাটে আমার । রাজ্য চালানো যে কী কঠিন কাজ সে তোমাকে কীভাবে বোঝাই । এই বিত্তের চেয়ে নিঃস্ব জীবনই আমার ভালো । বন্ধু, আমি সেই পুরনো জীবনেই ফিরে যেতে চাই ।
১১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:০২
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: শেখ সাদীর বেগম সাহেবা মনে হয় কিছুটা চতুর ছিলেন।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৫৩
ল বলেছেন: সত্যিকার পালোয়নঃ
একজন পালােয়ান । ইয়া মােটা দশাসই চেহারা তার। বিশাল বপু । যেমন
মােটা তেমনই তাগড়া শরীর।
কিন্তু বেচারা খুব মনখারাপ করে বসে আছে রাস্তায়। কেউ একজন তাকে
খুব কটু কথা শুনিয়ে গেছে । রীতিমতাে অপমান। বলেছে, সে নাকি দেখতে
হাতির মতাে ।
পালােয়ানের মন খারাপ। বিমর্ষ বদনে সে বসে বসে ভাবছে,
এই অপমানের প্রতিশােধ নিতে হবে। সে মােটা, তাতে অন্যের কী আসে যায়!
একজন বুদ্ধিমান লােক যাচ্ছিল সেই পথ দিয়ে। গােমড়ামুখাে পালােয়ানকে দেখে সে সামনে এল, ও হে পালােয়ান ভাই, কী হয়েছে।
তােমার? মন-খারাপের কারণ কী?
পালােয়ান চুপ করে রইল। কী বলবে সে?
কী হে পালােয়ান ভাই—'
পালােয়ান তখন গালে হাত দিয়ে দুঃখী গলায় বলল, 'ভাইরে, কী আর
বলব! একজন আমাকে খুব অপমান করে গেছে। সেই অপমানের জ্বালায়
জ্বলে মরছি।'
এই-না শুনে হাে হাে করে হেসে ফেলল বুদ্ধিমান লােকটি।
“ওহে পালােয়ান ভাই, শুনে খুবই আশ্চর্য হলাম। দশ মণ, বিশ মণ।
বােঝার ভার তুমি অনায়াসে বইতে পারাে—সেই তুমি কিনা সামান্য একটু
অপমানের বােঝা বইতে পারছ না।
মনে রেখাে পালােয়ান, মানুষ মাটির তৈরি । মাটির মতােই সহনশীল
হওয়া উচিত আমাদের। প্রকৃত পালােয়ান কখনও শক্তির বাহাদুরি করে না ।
সে সকলকে ক্ষমা করে।
কারণ ক্ষমাই মানুষের মহত্তম গুণ।
১২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৫
মা.হাসান বলেছেন: খুব ভালো লাগলো ল ভাই, প্রিয়তে রাখছি। ২ নম্বর প্রতিমন্তব্য, ৫ নম্বর মন্তব্য ও প্রতি মন্তব্য এবং ৬ নম্বর প্রতি মন্তব্য খুব ভালো লাগলো। পোষাকের গল্প আমাদের সময়ে স্কুল পাঠ্যে ছিলো। এখনকার দিনের নেতারা চরিত্রের সুবাসে শেখ সাদি কে অতিক্রম করায় পাঠ্য পুস্তকে এখন শুধু নেতাদের জীবনীই পড়ানো হয়।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:০৯
ল বলেছেন: ভিক্ষা নয়ঃ
এক ছিল দরিদ্র ব্যক্তি।
এক বেলা খায় তাে আরেক বেলা খায় না। পরনে তার হাজার তালির পােশাক।
ক্ষুধার জ্বালায় কাতর থাকে সারাদিন। ঘর নেই, বাড়ি নেই।
পথে ঘােরে, পথেই ঘুমায় ।
মনে তার অসীম দুঃখ ।
গরিব হলে কী হবে? লােকটির আত্মসম্মানবােধ ছিল তীব্র।
খেতে পেত না । কিন্তু কারও কাছে হাত পাতত-না সে । কেউ যদি কিছু দিত তাকে
তবেই তার খাওয়া হত ।
নইলে উপােস।
তার এই গরিবি অবস্থা দেখে একজন বলল—ভাইরে, এত কেন কষ্ট
করছ? তার চেয়ে বরং যাও না এই শহরের সবচেয়ে ধনী লােকের কাছে।
তিনি খুব দয়ালু ও উপকারী। গরিবের দুঃখ তিনি দূর করতে চান। নিশ্চয়ই
তিনি তােমাকে সাহায্য করবেন।
এই শুনে গরিব লােকটি বললেন—না, না, তা হবে কেন? না-খেতে
পেয়ে মারা যাব তা-ও ভালাে—কিন্তু অন্যের সাহায্য নিয়ে বেঁচে থাকা খুব
কষ্টের।
কারও অনুগ্রহ আমি কামনা করি না। ভিক্ষা করে বেঁচে থাকার চেয়ে।
মরে যাওয়া অনেক ভালাে। আর যাই হােক, আমার মনে অপার শাস্তি
আছে । আমি মনে শান্তি নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই।
আপনার কথামতো বলতে হয়, আমাদের নেতা - ও দালালদের ভিক্ষুকের চেয়েও কম আত্মসম্মান।
চাটুকারিতায় সুখ পায় সব চামচারা।।
ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করুন।।।
১৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৭
নুরহোসেন নুর বলেছেন: পোষাকের গল্পটি ছোট বেলায় পড়তে পড়তে প্রায় এখনও মুখস্হ আছে।
শেখ সাদীর অনেক উপদেশ এবং তথ্য জানা হলো,
ধন্যবাদ জ্ঞানপুর্ন পোস্ট দেওয়ার জন্য।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:১২
ল বলেছেন: দুই বন্ধুঃ
দেশের নাম খােরাশান। ভারি সুন্দর এক দেশ।
সেই দেশে ছিল দুইজন সাধু ব্যক্তি।
একজন ছিল বেশ মােটাসােটা । খেতে খুব পছন্দ করত । দিনে দুইবার ভালাে ভালাে খাবার পেটপুরে না-খেলে তার শান্তি হত না।
অন্যজন ছিলেন সম্পূর্ণ আলাদা। শরীর ছিল লিকলিকে। হাড়-জিরজিরে
দেহ। খাওয়াদাওয়া একদম পছন্দ করত না। দুইদিন পরে একদিন খেত সে।
দুজনের আবার ভারি বন্ধুত্ব।
একবার তারা একসঙ্গে দেশভ্রমণে বের হল। পাহাড়-পর্বত ছাড়িয়ে,
বন-জঙ্গল পেরিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগল তারা। নতুন দেশ, নতুন মানুষ—নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা । খুব ভালাে লাগছে তাদের। আনন্দে আনন্দে
কেটে যাচ্ছিল দিনগুলাে।
এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন নতুন এক শহরে এল তারা।
শহরে ঢােকামাত্র গ্রেফতার করা হল তাদের । বাদশাহ'র সেপাইরা ধরে নিয়ে গেল
কাজির দরবারে।
বিচারে রায় দেয়া হল—এরা গুপ্তচর।
সাধু দুইজন বলতে থাকে : আমরা নিরপরাধ, আমাদের কোনাে দোষ।
নেই। আমরা দেশে দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমরা নিরীহ মানুষ ।
কিন্তু, কেউ তাদের কথা শুনল না।
তাদের দুজনকে বন্দি করে রাখা হল একটা চোর-কুঠুরিতে । দরজা বন্ধ করে দেয়া হল ।
না-খেতে পেয়ে ওরা যেন মারা যায়—এর চেয়ে ভয়ংকর শাস্তি আর কী হতে পারে!
কিছুদিন পরে অবশ্য প্রমাণ পাওয়া গেল, সেই দুজন আসলে গুপ্তচর নয়।
তারা সাধু ব্যক্তি। মনের আনন্দে বেরিয়েছে দেশ ঘুরতে।
বাদশাহ'র লােকেরা গেল বন্দিদের মুক্ত করতে । দরজা ভেঙে উদ্ধার
করতে হবে ওদের। কিন্তু এতদিন না-খেয়ে থাকলে মানুষ তাে বাঁচতে পারে।
নিশ্চয়ই ওরা বেঁচে নেই ।
দরজা খুলে অবাক হল সেপাইরা । একজন তখনও বেঁচে আছে ।
যে বেচারা হাড়-জিরজিরে, রােগা-পটকা দেহ সে-ই মারা যায়নি। মােটা-জন
পটল তুলেছে। সকলেই অবাক।
তখন একজন জ্ঞানীলােক বলল ; এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মােটা লােকটাই মারা যাবে।
কারণ, সে ছিল ভােজনরসিক। খাবার ছাড়া তার। একমুহুর্ত চলে না।
খাবার না-পেয়ে সে মারা গেছে। কিন্তু শুকনাে লােকটা খুব সংযমী।
না-খেয়ে থাকার অভ্যেস তার আছে।
সে বন্দি কারাগারে। অনশন পালন করেছে।
জ্ঞানীলােকটি তখন সকলের উদ্দেশে বলল : যারা অভাবের মধ্যে দিন কাটায় তারা অভাবকে সহ্য করতে পারে। কিন্তু যারা ভােগবিলাসে জীবন কাটায় তারা সামান্য বিপদেই কাতর হয়ে পড়ে। এমনকি মারাও যায় ।
ওদের দুজনের ভাগ্যে সেরকম ঘটনা ঘটেছে।
১৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫০
হাবিব বলেছেন: লতিফ ভাই, পোস্টে প্লাস। আমাকে কি শেখ সাদীর বিখ্যাত কবিতা যা শেখ হাবিবুর রহমান অনুবাদ করেছিলে "সৎসঙ্গ নামে" তা কি আমাকে দিতে পারবেন?
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:২২
ল বলেছেন: সৎসঙ্গ
একদা স্নানের আগাড়ে বসিয়া হেরিনু মাটির ঢেলা,
হাতে নিয়া তারে শুকিয়ে দেখিনু রয়েছে সুবাস মেলা।
কহিনু তাহারে কস্তুরি তুমি? তুমিকি আতরদান?
তোমার গায়েতো সুবাস ভরা, তুমিকি গুলিস্তান?
কহিল ওসব কিছু আমি নহি, আমি অতি নীচ মাটি,
ফুলের সহিত থাকিয়া তাহার সুবাসে হইনু খাঁটি।
১৫| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:২৯
ইসিয়াক বলেছেন: আরেকবার লাইক দেয়ার অপসন চাই ।
ইউ আর গ্রেট ।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৫৯
ল বলেছেন: ভালোবাসা ভায়া।।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:০১
ল বলেছেন: হাসিঠাট্টাঃ
একজন ব্যবসায়ী। খুব বুদ্ধিমান। কিন্তু বেচারা হঠাৎ করে ব্যবসায় বেশকিছু টাকা লােকসান করে ফেলল। কী আর করা! ব্যবসা করতে গেলে লাভ-লােকসান তাে থাকবেই। ব্যবসায়ীর একটি মাত্র পুত্র। সে বাবার সঙ্গে ব্যবসা করতো।
পিতা একদিন পুত্রকে ডেকে বললেন—লােকসান হয়েছে বলে ভেঙে পড়াে না । লােকসানের কথা লােকজনকে বলার কোনাে দরকার নেই। পুত্র তাে এই শুনে অবাক!
কেন বাবা?
বুদ্ধিমান ব্যবসায়ী-পিতা তখন বললেন—লােকসানের দুঃখেই আমরা।কাতর।
লােকে যদি জানতে পারে তবে দুঃখ হবে দ্বিগুণ। ক্ষতির দুঃখ তো আছেই, তার ওপরে লােকে জানলে আমাদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করবে,অহেতুক উপহাস করবে—সেই দুঃখ সহ্য করা আরাে কঠিন হবে। যদিও খুব অন্যায় তবু লােকে অন্যের বিপদ দেখলে আনন্দিত হয়।
১৬| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:০০
আহমেদ জী এস বলেছেন: ল,
শেখ সাদী সম্পর্কে বিস্তারিত জানলুম মূল লেখা ও আপনার প্রতিমন্তব্যের মধ্যে দিয়ে।
চমৎকার লেখা। ভালো লাগলো।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:০৩
ল বলেছেন: বিশ্বাসঃ
গজনীর সুলতান মাহমুদ। খুব বিখ্যাত একজন শাসক, যােদ্ধা এবং বীর। তাঁর একজন সভাসদ ছিলেন। খুবই বিশ্বস্ত । নাম তার হােসেন। প্রায় প্রতিদিনই সুলতানের সঙ্গে কোনাে-না-কোনাে বিষয় নিয়ে তাঁরশলাপরামর্শ হত । সেসব আলােচনা ছিল খুবই গােপনীয় । একদিন দীর্ঘক্ষণ ধরে আলােচনা চলছে সুলতান ও সভাসদ হােসেনের মধ্যে। আলােচনা শেষে হােসেন বেরিয়ে এলেন বাইরে। কয়েকজন লােক তাকে ঘিরে ঘরল—সুলতানের সঙ্গে আপনার এতক্ষণ কী কী বিষয়ে পরামর্শ হল
আমরা জানতে পারি কি? হােসেন একটুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন ওদের দিকে। তারপর বললেন—এই
বিষয়টা জানার জন্যে সুলতানের সঙ্গেই আপনাদের কথা বলাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয় কি? লােকগুলাে কিছুক্ষণের জন্যে থমকে গেল। পরে একজন বলল—বুঝতে পেরেছি, আপনি বিষয়টা গােপন রাখতে চাইছেন আমাদের কাছে।
হােসেন বললেন—এটা তাে পানির মতাে সহজ বিষয় । গােপন রাখব বলেই তাে সুলতানের আমি এত বিশ্বাসভাজন। আমাকে মেরে ফেললেও আমি সুলতানের বিশ্বাস ভঙ্গ করব না।
বিশ্বাস ভঙ্গ করা মহাপাপ।
১৭| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:০৩
ইসিয়াক বলেছেন: ছোট্ট শেখ সাদী আর্থিক অনটনে স্কুলে ভর্তি হতে পারেননি। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে এক ধনী ব্যক্তির সহায়তায় তিনি স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী এবং পরিশ্রমী। ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’ কথাটিতে ছিল তাঁর প্রগাঢ় বিশ্বাস। বাগদাদ নগরীতেই তিনি বেড়ে ওঠেন। ২১ বছর বয়সে শেখ সাদি একটি কবিতা লিখে বাগদাদের প্রধান বিদ্যালয়ের নিজামিয়া মাদ্রাসার একজন শিক্ষক আবুল ফাতাহ বিন জুজিকে দেন। সেই শিক্ষক তা পড়ে মুগ্ধ হয়ে শেখ সাদির মাসোয়ারার ব্যবস্থা করে দেন। ৩০ বছর বয়সে তিনি মাদ্রাসার শেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একই সঙ্গে ধর্ম, দর্শন আর নীতিশাস্ত্রে অসামান্য পাণ্ডিত্য অর্জন করে ‘মাওলানা’ উপাধি লাভ করেন। এরপর তিনি মক্কায় হজ করতে যান। তার আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য— তিনি ছিলেন ভ্রমণপিপাসু। সে সময়ের পারস্য ছাড়াও তুরস্ক, সিরিয়া, জেরুজালেম, আর্মেনিয়া, আরব, মিসর, আবিসিনিয়া, তুর্কিস্তান এবং ভারতের পশ্চিমাংশ ভ্রমণ করেন। তার বয়স যখন আশি বছর তখন বাগদাদ নগরী হালাকু খান দ্বারা আক্রান্ত হলে হালাকু খানের নৃশংসতায় তিনি মর্মান্তিক কষ্ট পান। ভিতরে ভিতরে এতই কষ্ট পান যে তাকে পীড়িত করতে থাকে। বাগদাদের সঙ্গে ছিল তার হৃদয়ের সম্পর্ক। প্রায় ৪ বছরের মাথায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শেখ সাদি আজও বিশ্বের সাহিত্যাঙ্গনে স্মরণীয় হয়ে আছেন এবং থাকবেন।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:০৮
ল বলেছেন: জীবন-মৃত্যু
বয়স তীর প্রায় একশো বছর । অতি বৃদ্ধ এক লোক । কঠিন তার অসুখ ৷ এই বুঝি তাঁর প্রাণ যায় _ এরকম অবস্থা । মৃত্যুশয্যায় সেই বুড়োলোকটা গোঙাতে লাগল ।
বিড়বিড় করে সে কথা বলছে ফারসিভাষায় । কিন্তু, বুড়োর মৃত্যুশষ্যায় যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদের কেউই অবশ্য একবর্ণ ফারসি বোঝে না। ভারি মুশকিল । মৃত্যুশয্যায় মানুষ অনেক প্রয়োজনীয় কথা বলে । এইসব কথা না-বুঝলে চলবে কী করে!
লোকজনেরা ছুটে গেল কবি শেখ সাদীর কাছে । কারণ শেখ সাদী একজন জ্ঞানী মানুষ । তিনি কবিতা লেখেন ।
একজন বলল,
-_কবি, শিগগির চলুন । এক বুড়ো মৃত্যুশয্যায় কী বলছেন তা কেউই বুঝতে পারছে না।
শেখ সাদী দ্রুত এসে উপস্থিত হলেন বুড়োর রোগশয্যায় |
বুড়ো তখন, কবিতা আবৃত্তি করছেন ।
সেই কবিতার অর্থ হল :
হায়রে জীবন!
এই জীবনে কত কিছু দেখার ছিল ।
কিছুই না-দেখে আমাকে মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে৷
বাগানে ঘুরে ঘুরে একটা গোলাপের পাশেই মরে গেলাম ।
পুরো বাগানটা আমার দেখা হল না।
বুড়োর বেঁচে থাকার আগ্রহ দেখে কবি শেখ সাদী ভারি অবাক হলেন । সকলে কবিতার অর্থ শুনে একেবারে চোখ কপালে তুলল
একশো বছর। বেঁচে থেকেও বুড়ো আরো বাচতে চাইছেন ।
কবি তাকে প্রশ্ন করলেন- আপনি কেমন আছেন? এখন কেমন লাগছে আপনার?
বুড়ো মৃদুস্বরে জবাব দিল--এই জীবনের চেয়ে প্রিয় আর কী আছে? একটা দাত তোলার ব্যথা সারাজীবনে ভোলা যায় না। কিন্তু আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্হে_-এই যন্ত্রণার কথা আমি কী করে বর্ণনা করি ।
শেখ সাদী তখন বললেন_-আপনি শান্ত হন। মানুষ কখনও চিরদিন বাচে না। একদিন-না-একদিন মানুষকে মরতে হবেই । শরীর থাকলে অসুখবিসুখ থাকবেই । আমরা চিকিৎসক ডেকে আনি ॥ তিনিই ব্যবস্থা করবেন। তখন বুড়ো বললেন-_-অনেক কথাই বলা যায় । কিন্তু, সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। যে বাড়ির দেয়ালের রং নষ্ট হয়ে গেছে,চুন-সুরকি খসে গেছে, সেই বাড়ির চুনকাম করার কোনো মানে হয় না। আজ আমি বুড়ো হয়েছি, জীবনের শেষপর্যায়ে এসেছি, চিকিৎসক এনে আর লাভ কী!
চিকিৎসক কি আমার যৌবন ফিরিয়ে দিতে পারবে? বলেই বুড়ো হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন।
শেখ মুখে সান্ত্বনার কোনো ভাষাই নেই । বুড়োর মৃত্যুশয্যায় তিনি স্থিরভাবে বসে রইলেন
এটাই জীবন, জীবন সুন্দর হোক।।।।
১৮| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৪৭
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: শেখ সাদী সম্পর্কে হৃদয়গ্রাহী পোস্ট। উপদেশ গুলোর প্রত্যেকটি অর্থবহ; খুবই ভালো লাগলো। বিষয়টা ভাবার, মধ্যযুগের ফার্সি সাহিত্য তাহলে কতটা উচ্চমার্গীয় ছিল। জামা কাপড় বা পোশাক পরিচ্ছেদের কল্যাণে বাড়তি আপ্পায়নের ঘটনাটা যে শেখ সাদীর জীবনে ঘটেছিল সেটা জানা ছিলনা। আমরা প্রচলিত বলে জানতাম। বিষয়টি তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভকামনা প্রিয় লতিফ ভাইকে।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:০৫
ল বলেছেন: গুণের আদরঃ
নাম তার আয়াজ। দেখতে-শুনতে খুব একটা সুন্দর নয়। যেমন বেঁটে তেমনই কালাে। চোখদুটো কুতকুতে। তােতলা। কথা বলতে গেলে জিভ জড়িয়ে আসে। কিন্তু, সুলতান মাহমুদ তাকে খুব ভালােবাসেন। সুলতানের অনুচরদের মধ্যে সে খুব প্রিয়।
অন্যরা তাই খুব হিংসা করত আয়াজকে। রূপবান এবং শক্তিমান এত অনুচর থাকতে আয়াজকে কেন এত পছন্দ করেন সুলতান?
এই প্রশ্ন সকলের। একদিন সুলতান মাহমুদের সভাসদ হােসেন এলেন অনুচরদের আস্তানায় । কয়েকজন অনুচর তাকে ঘিরে ধরল। তারা জিজ্ঞেস করল- এত শক্তিমান, রূপবান অনুচর থাকতে আমাদের প্রিয় সুলতান কেন
আয়াজকে বেশি ভালােবাসেন? প্রশ্ন শুনে হােসেন মিটিমিটি হাসলেন।
—রূপের চেয়ে গুণের মূল্য অনেক বেশি। রূপ দেখে আমরা মুগ্ধ হই। বটে কিন্তু মর্যাদা দিই গুণীব্যক্তিকে।
মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে গুণ দিয়ে, রূপে নয়। যে সকলকে ভালােবাসে, দেখতে অসুন্দর হলেও সে সকলের ভালােবাসা পাবে।
পৃথিবীর যারা বিখ্যাত মানুষ তাঁরা সকলেই গুণের কারণে বিখ্যাত হয়েছেন—রূপের কারণে নয়।
আমাদের আয়াজ তােমাদের সকলের মধ্যে সবচেয়ে গুণবান। সুলতান মাহমুদ গুণের সমাদর করতে জানেন। তাই তিনি আয়াজকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। তােমরাও রূপবান হওয়ার চেয়ে গুণবান হওয়ার চেষ্টা করাে।
তাহলেই জীবনে উন্নতি করতে পারবে ।
১৯| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৫৮
হাবিব বলেছেন: লতিফ ভাই, এই অনুবাদ না......... যেটা শেখ হবিবুর রহমান করেছিলো সেই অনুবাদ। মূলভাব এই রকমই। সেখানে একটা লাইন আছে: " সঙ্গীরগুণ পসিয়াছে মম মাঝে গো" ......... প্লীজ দেন
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৩৩
ল বলেছেন: সৎ সংগ
শেখ সাদী
(অনুবাদ:শেখ হবিবুর রহমান)
গন্ধ মধুর কর্দম মোরে একদা
দিলেন বন্ধু,ছিলাম যখন নাইতে।
কহিলাম তারে, কস্তরী কিবা কি তুমি?
সুবাসে তোমার পাগল এমন তাইতে
কহিল সে মোরে, তুচ্ছ কর্দম আমি গো,
ফুলসহ ছিনু কতকাল এক ঠাইতে;
সংগীর গুণ পশিয়াছে মম মাঝে গো,
নইলে কাদায় সুবাতাস কি এতো পাইতে?
২০| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:২৪
মলাসইলমুইনা বলেছেন: আমি ক্লাস সিক্স বা সেভেনে স্কুলের কালচারাল প্রোগ্রামে (ঈদ -ই -মিলাদ্দুন্নবীর অনুষ্ঠানেও হতে পারে) প্রাইজ পেয়েছিলাম ছোটদের জন্য লেখা শেখ সাদির জীবনী।ওই বইটার একটা বিশেষ ভালো লাগার ব্যাপার ছিল ওখানে শেখ সাদির গুলিস্তা আর বোস্তার ছোট ছোট অনেক উপদেশমূলক শের ছিল। বিশেষ করে শেষের দিকে একটানা অনেকগুলো পাতায় ।আপনি যে কোটগুলো করেছেন শেখ সাদির সে রকম কিন্তু সবই কবিতার আকারে । আমার খুব পছন্দের একটা বইছিলো ওটা সেই সময়ে । কিন্তু আপনার করা শেখ সাদির ২৪ নাম্বার উপদেশে 'অযোগ্য লোককে দায়িত্ব দেওয়া চরম দায়িত্বহীনতা' মনে হয় বাংলাদেশেএখন আর বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। আপনি রিভাইজ করতে বা বাদ দিতে পারেন সেটা চাইলে---হাহাহা। ধন্যবাদ লেখার জন্য।
১৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:০১
ল বলেছেন: আপ্নের স্মৃতিচারণ খুউব ভালো লাগলো।
ছোটবেলায় সাদীর জীবনী মায়ের কাছ থেকে শুনতাম
এখন অবশ্য চাঁদের মুখ দেখা গেছে আমাদের ছেলেমেয়েরা এগুলো শুনে।।
আপনার ব্লগ পাড়ায় গিয়েছিলাম - অনেক ভালো কিছু নিয়ে আসছি।।
ভালো থাকুন।।।
২১| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৩৯
ভুয়া মফিজ বলেছেন: শেখ সাদী এ'যুগে জন্মালে নিশ্চিত নোবেল প্রাইজ পেতেন। আপনি নোবেল কমিিটির কাছে মরনোত্তর প্রাইজের আবেদন করতে পারেন। মুসলিম নোবেল লরিয়েটের সংখ্যা যথেষ্ট না। ভবিষ্যতে মুসলমানরা আরো পিছিয়ে পরবে। কাজেই এভাবে সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া আমাদের আর কোন গতি নাই।
লেখা ভালো লেগেছে বলাই বাহুল্য। দু'একটা পয়েন্ট নিয়ে কিছু বলতে চেয়েছিলাম.....দেখলাম বলা হয়ে গেছে। অবশ্য সময়মতো হাজিরা দিতে না পরলে এই দূর্গতি মেনে নেয়া ছাড়া কোন উপায় নাই।
২২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:২৯
খায়রুল আহসান বলেছেন: মূল পোস্ট এবং অনেকগুলো প্রতিমন্তব্য থেকে শেখ সা'দি সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ।
ইসিয়াক এর মন্তব্য দুটোও যথেষ্ট তথ্যসমৃদ্ধ।
২৩| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৪২
আমি তুমি আমরা বলেছেন: ১১৭৫ থেকে ১২৯২ পর্যন্ত হয় ১১৭ বছর, ৩০ বছর করে পড়াশোনায়, দেশ ভ্রমণে, গ্রন্থ রচনায় আর আধ্যাতিক চিন্তায় ব্যয় করলে হয় ৪*৩০=১২০ বছর। ১২০-১১৭= ৩ বছরের হিসাব মেলে না।
পোস্টটা ভাল হয়েছে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৩৫
আরোগ্য বলেছেন: ১ম লাইক।
১ম প্রিয় তালিকা।
১ম মন্তব্য।