নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ইন্দোনেশিয়ার অষ্টম প্রেসিডেন্ট হিসাবে ২০ অক্টোবর শপথ গ্রহণ করলেন একসময়ের কুখ্যাত স্বৈরশাসক সুহার্তোর সহযোগী প্রাবোও সুবিয়ান্ত।২০২৪ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি ৫৬.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন।নিয়ম অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়ার নির্বাচনে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে পুনরায় জুন মাসে দ্বিতীয় দফায় শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোট হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ৫০ শতাংশের চেয়ে ভোট বেশি পাওয়ায় সুবিয়ান্ত কে দ্বিতীয় দফা ভোটের জন্য লড়তে হবে না। অপর দুইজন প্রার্থী গাঞ্জার প্রাণোয়া এবং আনিস বাসওয়েদান নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে আদালতে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় প্রাবোও সুবিয়ান্ত এই যাত্রায় পার পেয়ে যান। প্রাবোও সুবিয়ান্ত কিভাবে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট হলেন তার দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক:
। ১৯৭০ সালে প্রাবোও সুবিয়ান্ত ইন্দোনেশিয়ার সামরিক একাডেমিতে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালে প্রাবোও তৎকালীন স্বৈরশাসক সুহার্তো'র কন্যা কে বিয়ে করেন। ১৯৯০ দশকের শেষ দিকে স্বৈরশাসক সুহার্তো'র বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী ছাত্র-জনতা আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৯৮ সালে সুহার্তো ক্ষমতাচ্যুত হন। আন্দোলনের সময় সেনবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীর কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সুবিয়ান্ত। গণতন্ত্রকামী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কে দমানোর জন্য সুবিয়ান্ত'র সরাসরি নির্দেশে ২০ জন কে অপহরণ করা হয়। তাদের মধ্যে ১৩ জন শিক্ষার্থী কে আজো খুজে পাওয়া যায় নি। আন্দোলনকারী দের গুম করার অভিযোগে সেনাবাহিনী থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়। সুবিয়ান্ত বরাবর এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এছাড়া স্বৈরশাসক সুহার্তো'র সরাসরি নির্দেশে সুবিয়ান্ত'র বিরুদ্ধে পূর্ব তিমুরে সামরিক অভিযান চালানোর অভিযোগ আছে। এতসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকায় যুক্তরাষ্ট্র সুবিয়ান্ত কে একবার ভিসা দেয় নি।সুহার্তো'র পতনের পর সুবিয়ান্ত জর্ডানে পালিয়ে যান। ২০০৪ সালে পুনরায় দেশে ফিরে জাতীয়তাবাদী দল গেরিন্দ্রায় যোগ দেন।
৷ ২০১৪ সালে সুবিয়ান্ত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে প্রথম নির্বাচনে দাড়ান। তার প্রতিপক্ষ ছিলেন সেকুলার দল পিডিআই-পি দলের নেতা জোকো উইদিদো। জোকো উইদিদোর কাছে সুবিয়ান্ত পরাজিত হন। একইভাবে ২০১৯ সালেও সুবিয়ান্ত জোকো উইদিদোর কাছে পরাজিত হয়ে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ আনেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট জোকো উইদিদো ছিলেন চতুর এবং উচ্চাভিলাষী। ক্ষমতায় থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। অনেকে মনে করেন সাংবিধানিক কোর্টের চীফ জাস্টিস হিসাবে তার আত্নীয় আনোয়ার উসমান কে নিয়োগে তার প্রভাব ছিলো। জোকো উইদিদো ২০১৯ সাল থেকেই চিন্তা করতে লাগলেন কিভাবে তার পরিবার কে ক্ষমতার কেন্দ্রে রাখা যায়। তিনি প্রথমে তার চির প্রতিদ্বন্দী প্রাবোও সুবিয়ান্ত কে হাত করলেন। প্রাবোও সুবিয়ান্ত কে তিনি ডিফেন্স মিনিস্টার হিসাবে নিয়োগ দিলেন। এতে হাউস অব রিপ্রেজেন্ন্টেটিভে তার জনসমর্থন বেড়ে গেলো। দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না থাকায় তিনি আইন সংশোধনের চিন্তা করেন। জোকো উইদিদোর বড়ো ছেলে গিবরান(৩৬) ইন্দোনেশিয়ার একটি প্রদেশে মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালন করলেও প্রেসিডেন্ট অথবা ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করতে নূন্যতম বয়স ৪০ বাধা তার পক্ষে পার হওয়া সম্ভব ছিলো না। তখন জোকো উইদিদো সাংবিধানিক কোর্টে প্রভাব খাটিয়ে চীফ জাস্টিস আনোয়ার উসমানের সহযোগিতায় আইনে সংশোধন আনেন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী নূন্যতম বয়স ৪০ না হলেও যদি কোনো প্রার্থী অন্য কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত হন তবে তার জন্য বয়সসীমা শিথিল করা হবে। জোকো উইদিদো ক্ষমতা যাতে হাতছাড়া না হয় সে জন্য প্রাবো সুবিয়ান্ত কে ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রুপে পূর্ণ সমর্থন দেন। বিনিময়ে তার বড়ো ছেলে সুবিয়ান্ত'র রানিং মেট হিসাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে দাড়ান। এতে নিজ দল পিডিআই-পি'র ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন জোকো উইদিদো। নিজ দলের প্রার্থী গাঞ্জার প্রাণোয়া কে সাপোর্ট না করে তার বিরোধী দলের প্রার্থী সুবিয়ান্ত কে সাপোর্ট দেয়ার ফলে এবং জোর পূর্বক আইন সংশোধন করে নিজের ছেলে গিবরান কে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে দাঁড় করানোর ফলে জোকো এবং তার ছেলের সদস্য পদ স্থগিত করা হয়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা থেকে প্রাবোও সুবিয়ান্তকে সমর্থন দেয়ায় তীব্র সমালোচনা হয়। তবে কোনো কিছুই কাজে আসেনি। প্রাবোও সুবিয়ান্ত বিশাল ব্যবধানে জয় লাভ করেন। একই সাথে জোকো উইদিদোর ছেলে গিবরান ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সুবিয়ান্ত'র এই বিশাল জয়ের কারণ তার চমৎকার বক্তৃতা দানের ক্ষমতা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসাবে শক্তিশালী ব্যাক্তিত্বের প্রমাণ এবং জোকো উইদিদোর সমর্থন রয়েছে বলে মনে করা হয়।
। জাতীয়তাবাদী এই নেতা কট্টোর চীনের সমালোচক হিসাবে পরিচিত হলেও তার পূর্বসূরী প্রেসিডেন্ট জোকো উইদিদোর নীতি অনুসরণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিভিন্ন দ্বীপ সংক্রান্ত বিবাদ নিয়ে চীনের সাথে আলোচনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে ইন্দোনেশিয়া কে সামনে এগিয়ে নেয়ার কথা প্রাবোও সুবিয়ান্ত তার ভাষণে বারবার উল্লেখ করেছেন।
৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১২:০১
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: কারচুপির অভিযোগ তো আছেই।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮
শিশির খান ১৪ বলেছেন: দুই দলের দুই স্বৈরাচার এক হওয়া গেছে গণতন্ত্রের জন্য এর চে খারাপ আর কিছু হয় না। ইন্দোনেশিয়ার লোকজনের কপালে দুঃখ আছে। জিতলো কি ভাবে আমাদের মতো রাতের ভোট করছে নাকি ? আমাদের সাথে মিল আছে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ করতে গেলে মির্জা ফখরুল যেমন বলে মাইনাস টু ফর্মুলা আমরা আর দেখতে চাই না ওই রকম। এখন ইন্দোনেশিয়া গণতন্ত্র থেকে জমিদারি প্রথার দিকে রওনা হলো।