নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প : এক কথায় এত কিছু!

২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:১০


শ্বশুরবাড়ি গিয়ে জামাই কোনো কথা বলে না। শালীরা-শালারা কত ঠাট্টা-তামাসা করতে আসে; সে কোনো উচ্চবাচ্য করে না।তখন শ্বশুর গিয়ে জামাইয়ের বাপকে বলে, “দেখুন, আপনার ছেলে আমাদের বাড়ি এসে চুপ করে বসে থাকে। কোনো কথাবার্তা বলে না। এটা যেন কেমন কেমন লাগে। সবাই বলে জামাই বোকা।” বাপ বলল, “আমার ছেলে তো বাড়িতে বেশ ভালোমতোই কথাবার্তা বলে! আচ্ছা, তাকে আমি বেশ করে ধমকিয়ে দিব।”

বাড়ি এসে বাবা ছেলেকে ডেকে বলল, “কিরে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে কথাবার্তা বলিস না কেন? সেখানে গিয়ে সকলের সঙ্গে আলাপ-সালাপ করবি। শালা-শালীদের সঙ্গে হাসি-তামাসা করবি। তবেই না লোকে বলবে, বেশ ভালো জামাই!”ছেলে মাথা নত করে রইল। বাবা বুঝল, এবার ছেলে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে তার উপদেশ মতো কাজ করবে।ঈদের ছুটিতে জামাই শ্বশুরবাড়িতে এসেছে। এসে বৈঠক খানার এক কোণে চুপচাপ বসে আছে।

শ্বশুর এসে জিজ্ঞাসা করল, “কি বাবাজী! চুপ করে বসে আছ কেন? বাড়িতে সবাই ভালো আছে তো?” জামাই উত্তর করল, “ভালো আর আছে কই? কয়েকদিন হল, আমার বাবার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। হাতে একটা লাঠি নিয়ে যাকে দেখেন তাকেই মারতে আসেন।”শ্বশুর বলল, “তবে তো খুব খারাপ কথা! আমি কালই তোমার বাবাকে দেখতে যাব।”

জামাই বলল, “শ্বশুর সাহেব! যাবেন যে, খুব সাবধানে যাবেন। একখানা লাঠি হাতে নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে যাবেন। আমার বাবা যদি আপনাকে মারতে আসেন, লাঠি উঠিয়ে তাঁকে মারতে যাবেন! দুই একটা লাঠির ঘা মাথায় পড়লে বাবা শান্ত হয়ে যাবে। তারপর আর কিছু বলবেন না।” শ্বশুর বলল, “আচ্ছা, ঠিক আছে, তাই করব। কাল সকালেই তোমার বাবাকে দেখতে যাব।”

জামাই শ্বশুরবাড়ি হতে ফিরে আসল। বাপ জিজ্ঞাসা করল, “কি রে, শ্বশুর বাড়ি গিয়ে এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসলি যে?” ছেলে বলল, “ফিরে না এসে উপায় কি? আমার শ্বশুরের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। যাকে দেখেন তাকেই লাঠি ঘুরিয়ে মারতে আসেন।”বাপ বলল, “তবে তো খুব খারাপ খবর! কাল সকালে তোর শ্বশুরকে দেখতে যাব।”

ছেলে বলল, “আপনি যে যাবেন, খুব সাবধানে যাবেন। একখানা লাঠি ঘুরাতে ঘুরাতে যাবেন। আমার শ্বশুর যদি আপনাকে মারতে আসেন, লাঠির কায়েক ঘা তাঁহার গায়ে মারবেন, তিনি তখনই থেমে যাবেন। কিন্তু কয়েক ঘা না মারলে তিনি আপনাকে মারতেই থাকবেন। সাবধান! সঙ্গে লাঠি না নিয়ে যাবেন না।”

পরদিন সকালে দুই গ্রাম হতে বাপ আর শ্বশুর লাঠি ঘুরাতে ঘুরাতে বাহির হল। মাঝপথে এসে দুই বিয়াইয়ের সাথে দেখা হল।শ্বশুর লাঠি উঁচিয়ে বলল, “এই!” বাপ তেমনি লাঠি ঘুরিয়ে বলল, “এই!” তারপর দুই বিয়াইতে লাঠি পেটাপেটি আরম্ভ হল। সে কি যেমন তেমন মারামারি! পাড়ার লোকেরা ছুটে এসে দুই বিয়াইকে আলাদা করে ধরে রাখল।

তারপর বলল, “তোমাদের হল কি? দুই বিয়াইয়ের মধ্যে এমন ভাব-মহব্বত। আর এখন এইভাবে তোমাদের মারামারি করার কারণ কি?” শ্বশুর তখন বলল, “কাল জামাইয়ের মুখে শুনলাম বিয়াই নাকি পাগল হয়ে গেছে। যাকে দেখে তাকেই মারতে আসে। আর লাঠি দিয়ে দুই এক ঘা মারলেই নাকি নীরব হয়ে যায়।”বাপ বলল, “ওই শয়তান ছেলে বিয়াইয়ের বিষয়েও আমাকে এমন কথা বাড়ি এসে বলেছে।”

এখন এ-বিয়াই ও-বিয়াই একে অপরের সঙ্গে আলাপ করে সমস্ত জানতে পারল। বাপ বাড়ি ফিরে ছেলেকে ধমক দিয়ে বলল, “ওরে শয়তান, বেহায়া! তোর শ্বশুর সম্বন্ধে এমন মিথ্যা কথা আমাকে বলেছিলি কেন?” ছেলে বিনীতভাবে উত্তর করল, “আপনি আমাকে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে কথাবার্তা বলতে উপদেশ দিয়েছিলেন, আমি সেখানে গিয়ে একটি মাত্র কথা বলেছি, তাতেই এত! আর অনেক কথা বললে না জানি কি হত?”

-পল্লী কবি জসীমউদ্দীন।
বইঃ বাঙালির হাসির গল্প

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:৪০

শেরজা তপন বলেছেন: আপনার কি অবস্থা?

২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আলহামুদিল্লাহ! জনাব আপনি কেমন আছেন?

২| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:৫৯

শেরজা তপন বলেছেন: আমি আপনার শ্বশুরবাড়ির হাল হকিকত জিজ্ঞেস করেছি :)
আমি ভাল আছি বলেই ব্লগে আসতে পারছি।

২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আমি কোনো পুরাতন ব্লগার নই জনাব।

৩| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:০১

জুল ভার্ন বলেছেন: বহু বছর পর গল্পটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

৪| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৭

সোনাগাজী বলেছেন:



ব্লগে পল্লী কবির নাম কেহ আর মুখে আনে না আজকাল।

২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আমাদের সংস্কৃতি সংকটে আছে।

৫| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: শুরু থেকেই মনে মনে বলছিলাম, একটা প্রচলিত গল্পকে আপনি র-রাইট করেছেন মাত্র। নীচে এসে দেখি পল্লী-কবির নাম লিখেছেন। জানা ছিল না যে, এটা জসীমউদ্‌দীন ভাইয়ার লেখা।

খুব ছোটোবেলায় এ গল্প শুনেছিলাম। প্রচলিত গল্পে এর সাথে আরো কিছু যোগ আছে। যেমন, কাউকে দেখলেই উপুড় করে ফেলে দিয়ে রগ টেনে বের করে :) পুরাটা ভাবে বুঝে নেন :)

৬| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:৩৮

আজব লিংকন বলেছেন: প্রথম পাতায় আপনাকে স্বাগতম।
শুভ কামনা রইলো।

৭| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১১:০০

শায়মা বলেছেন: আমার অনেক অনেক প্রিয় বই বাঙ্গালীর হাসির গল্প!!

এই গল্পও অনেক ভালো লাগে। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.