নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Ahasan Sheikh

Ahasan Sheikh › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রসঙ্গ: বাংলাদেশে সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবী ও এর গুরুত্ব

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১২



প্রসঙ্গ: বাংলাদেশে সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবী ও এর গুরুত্ব :



আহসান শেখ (শিক্ষার্থী,বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বিআইইউ,ঢাকা)



বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক সংকট দুরাবস্থা দেখা যাচ্ছে। এটার জন্য অনেকেই দেশের বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি দায়ভার চাপাচ্ছেন সম্প্রতি দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তারা এ থেকে উত্তরণের জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবী জানাচ্ছেন। এনিয়ে অনেক আলোচনা চলছে অনলাইনে অফলাইনে তবে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবিষয়ে কোনো একটা বক্তব্যও দেয়নি। আজকের এ প্রবন্ধে এবিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।



বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এদেশে সর্বপ্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সাল। তারপর ১৯৭৯ ১৯৮৬, ১৯৮৮,১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৩ এর জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে ও তখন সংসদে বিরোধী দল হয়ে জাসদ ও ন্যাপ। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিহতের পরে দেশে প্রথম সামরিক শাসন শুরু হয়। এসবের পরে ১৯৭৯ সালের ২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করে ও তখন সংসদে বিরোধী দল হয় আওয়ামী লীগ ।



১৯৮১ সালের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পরে তৎকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় আসে তখন আবার বাংলাদেশে সামরিক শাসন শুরু হয় । এরশাদ জাতীয় পার্টি নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৬ সালের তৃতীয় নির্বাচনের এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জাপা) বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে এবং তখন আওয়ামী লীগ ও জামাতে ইসলামী,জাসদ,মুসলিম লীগ,কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি,ন্যাপ তারা সংসদের বিরোধী দল হয় তবে বিএনপি এ নির্বাচন বয়কট করেছিল।



১৯৮৮ সালে নির্বাচনে জাতীয় পার্টি একাই বিজয়ী হয় কিন্তু আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্যান্য সকল দল এ নির্বাচন বর্জন করে। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে এরশাদের বিদায়ের পরে ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে খালেদা যে নেতৃত্বে বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করে এবং তখন আওয়ামীলীগ, জামাতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দল হয়। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ষষ্ঠ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটা সবচেয়ে বিতর্কিত নির্বাচন ছিল যেখানে বিএনপি একচেটিয়াভাবে জয়লাভ করে। পরে সে সময় সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার অন্তর্ভুক্ত করা হয় । তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জুন ১৯৯৬ এ হওয়া নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে এবং তখন বিএনপি,জামাতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দল হয়। ২০০১ সালের অক্টোবরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অষ্টম জাতীয় নির্বাচন হয় যেখানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট জয়লাভ করে সরকার গঠন করে ও তখন আওয়ামী লীগ এর জোট এবং জাতীয় পার্টি নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যফ্রন্ট বিরোধী দল হয়। পরবর্তীতে ইসলামী ঐক্যফ্রন্ট ভেঙে যায়।

২০০৬ সালের খালেদা জিয়ার সরকারের বিদায়ের পরে তখন প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক ২০০৭ সালের জানুয়ারীতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করে কিন্তু ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াজুদ্দিন আহমেদ এর তত্বাবধায়ক সরকার বিলীন করে ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে সেনা-সমর্থিত নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে যে কারণে ২০০৭ সালের জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে তাদের অধীনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও তাদের ১৪ দলীয় মহাজোট জয়লাভ করে সরকার গঠন করে ও সংসদে বিরোধী দল হয় বিএনপি জোট। এটা ছিল তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে শেষ নির্বাচন। ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল হয়।


২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচন হয়। কিন্তু বিএনপির ১৮ দলীয় জোট ও সিপিবি সহ অনেক বড় বড় দল এই নির্বাচন বয়কট করে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোট জয়লাভ করে সরকার গঠন করে এবং সংসদে বিরোধী দল হয় জাতীয় পার্টি জাপা। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় যেখানে আওয়ামী লীগ,বিএনপি,জাতীয় পার্টি,ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। বিএনপি তখন ২০ দলীয় জোট ও ড: কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অধীনে নির্বাচনে অংশনে তবে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। জাতীয় পার্টি ও বিএনপি সংসদে বিরোধী দল হয় কিন্তু বিএনপি মাত্র ০৭ টি আসনে বিজয়ী হয়। বিএনপি,সিপিবি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সহ অনেক বিরোধী দল এতে ভোট কারচুপির অভিযোগ আনে।


এর মধ্যে ১৯৯০ এর পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেগুলো সব নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। আর ১৯৭৯,১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনসমূহ সামরিক শাসনের অধীনে হয়েছিল। ১৯৯৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারী,২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনসমূহ দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছিল। কিন্তু এই সকল নির্বাচন এগুলো মূলত এফপিটিপি বা ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট পদ্ধতি (ভোট প্রাপ্তির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নির্ধারণের নির্বাচন বা একক নির্বাচনী আসন’ ও সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার নির্বাচন পদ্ধতি) তে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত(শুধুমাত্র নিম্নকক্ষে),মালদ্বীপ,ভূটান,মিয়ানমার,আজারবাইজান,কাতার,ইরান,ইয়েমেন,উগান্ডা,কেনিয়া,ঘানা,গাম্বিয়া,ইথিওপিয়া,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন যুক্তরাজ্যেও এ পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রচলিত। এ পদ্ধতিতে প্রায়শই ভোট ডাকাতি,কারচুপির অভিযোগ শোনা যায়। ফলস্বরূপ বাংলাদেশে বিদ্যমান এফপিটিপি পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের একটা বড় দুর্বলতা হলো এ পদ্ধতিতে সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হওয়া। এ পদ্ধতিতে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া প্রার্থীই বিজয়ী হন এবং বাকিরা সবাই গৌণ। ফলে যেকোনো পন্থায় বিজয়ী হওয়ার জন্য চেষ্টা করেন প্রার্থীরা। এ কারণেই দেশের রাজনীতিও দ্বিদলীয় ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনে মানুষের ভাবনায় শুধুই নৌকা আর ধানের শীষ। যখন বিশেষ দল বা ব্যক্তির জয়ই মুখ্য হয়, তখন সমাজের পিছিয়ে পড়া বা প্রান্তিক মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয় না।

যেকারণে বাংলাদেশে ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেখা গিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ,সিপিবি,বাসদ,ইসলামী ঐক্যজোট,খেলাফত মজলিস,জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম,বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট,ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ,বিশ্ব সুন্নী আন্দোলন ইনসানিয়াত বিপ্লব,গণসংহতি আন্দোলন,জাকের পার্টি,এনডিএম ইত্যাদি রাজনৈতিক দল সমূহ যাদের বাংলাদেশে অনেক জনসমর্থন আছে তারা ১ লক্ষ বা ২ লক্ষ ভোট পেলেও বিজয় অর্জন করতে পারেন না যা খুবই খুবই দুঃখজনক। এসব কারণে বাংলাদেশে অনেক সময় রাজনৈতিক দুরাবস্থা সংকট দেখা যায়। এসব কারণে সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় পার্টি জাপা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিবি সহ অনেক রাজনৈতিক দল ও অনেক বুদ্ধিজীবী সাংবাদিকরা পিআর পদ্ধতি বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি তে নির্বাচনের দাবী জানিয়েছেন। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থায়’ কোনো দল সারা দেশে মোট প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন পাবে। বাংলাদেশের সংসদ ৩০০ আসনের। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট হলে প্রতি ১ শতাংশ ভোটের জন্য তিনটি আসন পাওয়া যাবে। যে দল ৫০ শতাংশ ভোট পাবে, তারা সংসদে আসন পাবে ১৫০টি।



এ ব্যবস্থায় ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দল প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী দলগুলো সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। জাতীয় সংসদ হয়ে উঠবে সর্বদলীয়। এতে দেশের রাজনীতি যে দ্বিদলীয় বৃত্তে আটকে গেছে সেখান থেকে যেমন বেরিয়ে আসবে, তেমনি নির্বাচন ঘিরে কালো টাকা ও পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য কমবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল,শ্রীলঙ্কা,ইন্দোনেশিয়া,থাইল্যান্ড,ইরাক,লেবানন,আলজেরিয়া,তিউনিসিয়া,তুরস্ক,আয়ারল্যান্ড,দক্ষিণ আফ্রিকা,স্পেন,নেদারল্যান্ডস ও নিউজিল্যান্ডসহ ৯৫ টি দেশে এ ব্যবস্থা চালু আছে। সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতি এবং প্রচলিত এফপিটিপি (ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট) পদ্ধতি উভয় পদ্ধতিতে বা মিশ্র পদ্ধতিতে পাকিস্তান,নেপাল,জাপান,কিরগিজস্তান,দক্ষিণ কোরিয়া,তাজিকিস্তান,ফিলিপাইন,তাইওয়ান,মরক্কো,তানজানিয়া ও জার্মানি সহ ৩৬ টি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে হিসাব করলে দেখা যায় যে বাংলাদেশে ৩০০ সংসদীয় আসনে একটা দল ও এর প্রতীকের ভোট হার যে যত পার্সেন্ট শতাংশ হবে সে ততটুকু তে সংসদীয় আসন পাবে। যেমন একটা দল ভোটের হার ১% পেলে সেই দল তারা তিনটি আসন পাবে, কোনো দল ৫% ভোট পেলে ১৫ টি আসন পাবে,৭%ভোট পেলে তারা ২১ টি পাবে, ১০% ভোট পেলে তারা ৩০ টি আসন পাবে,১৫% ভোট পেলে তারা ৪৫ টি আসন পাবে,কোনো দল ১৭% বা এর কাছাকাছি ভোট পেলে তারা ৫০ টি আসন পাবে,কোনো দল ২০% ভোট পেলে তারা ৬০ টি আসন পাবে, কোনো দল ৩০% ভোট পেলে তারা ৯০টি বা এর কাছাকাছি আসন পাবে,কোন দল ৪০% বা এর বেশী ভোট পেলে তারা ১২০–১৪০ টি আসন পাবে। এতে ছোট বড় সব রাজনৈতিক দল তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রউফ এর গুরুত্ব বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন।


তাই আমরা মনে করি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক দুরাবস্থা থেকে পরিত্রাণ ও নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্যা অভিযোগ থেকে বাঁচার জন্য মিশ্র পদ্ধতি তথা প্রচলিত পদ্ধতি ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি উভয় পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন হওয়া উচিৎ যেখানে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে দলগুলোকে সংসদীয় আসন বন্টন করা উচিৎ । এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৭

বিজন রয় বলেছেন: আপনার মতামত তেমন মানতে পারলাম না।

২| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৬

নাহল তরকারি বলেছেন: আপনার ব্লগ টি পড়লাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.