নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!
মাত্রাতিরিক্ত গরম! পাতলা টি শার্ট ভিজে গায়ের সাথে লেগে গেছে অন্যদিকে বাসে বের হওয়ার জায়গাও নেই! ঠাসাঠাসি! তার মধ্যে পাশের সিট থেকে একজন উঠে নেমে গেলে টাই টুই পরিহিত আরেকজন বসেছে!
.
গলার সাথে টাই এমন করে বেঁধেছে আল্লাহ না করুক কেউ লেঞ্জা ধরে জোরে টান দিলে গলায় ফাঁস পড়ে যাবে!
.
ভদ্রলোককে দেখে আরো গরম বেশী লাগছে আমার! বুঝতে পারলাম শীতের মতো গরমও সংক্রামক!
.
সকল প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে একমাত্র বাসে সেই লোক খোশ মেজাজে আছে! মাথার ঘাম টাই বেয়ে পড়ছে!
.
কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করলো ভাইকে কোথায় যেনো দেখছি মনে হচ্ছে! হারিয়ে যাওয়া নেতা ফিরে এলে আগের দিনে একটি স্লোগান দিতো কর্মীরা 'কে বলে ভাই কোথাও নাই, ভাই আছে বাংলায়' তেমনি স্লোগান শুনতে ইচ্ছে হলো হঠাৎ
.
তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে আরেকটু আরামছে বসে বললো, ভাই আপনি বিয়ে করেছেন? দুঃখের কথা আরো দুঃখের সহিত বললাম, না তো ভাই! তারপর 'আমি পাইলাম! আমি ইহাকে পাইলাম!' মর্মে বলতে থাকলো, 'এখন তো সময় সঞ্চয় করার! দুটি টাকা জমিয়ে ফেলার! তুমিও একা সে ও একা কি হবে পকেটে টাকা না থাকলে ভবিষ্যত প্রজন্মের!'
.
আমি মেট লাইফ ইন্সুরেন্সে আছি! মেট লাইফ ইন্সুরেন্সে একটা পলিসি করে নিতে পারেন! আপনার নাম্বারটা দেন! সময় করে একদিন আপনার সাথে কথা বলে সব বুঝিয়ে বলবো!
.
এই নেন আমার কার্ড! আল্লাহর রহমতে ফ্লাট কিনেছি একটা! আফমি প্লাজায় দুটো দোকান ভাড়া! ব্লা ব্লা ব্লা......! থামিয়ে বললাম ভাই আস্তে আশে পাশে দুদক কিংবা ইনকাম টেক্স কর্মকর্তা থাকলে আপনার খবর আছে!
.
সেদিন তাকে দেখলাম চট্টগ্রাম দুই নং গেইট পাবলিক টয়লেট থেকে বের হচ্ছে সেখানেও টাই পড়া!
.
হান্ড্রেড পার্সেন্ট প্রফেশনাল! তো ইন্সুরেন্স কোম্পানীর এক ভদ্রলোকের বউ বললো তুমি আমাকে কেমন ভালবাসো? সে বললো, টাইয়ের মতো! বউ বললো, ওটা আবার কেমন? সে বললো, 'একবার গলায় লাগাবো আর কখনো খুলবো না! কখনো হতাশ হলে সিলিং ফ্যানের সাথে ওটা গিট্টু দিয়ে.....!'
.
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে পড়তাম! অনার্সের রেজাল্ট দিলো! মাথায় চাকরি ঘুরছে! পার্ট টাইম চাকরি! হঠাৎ এক বড় ভাই ফোন দিয়ে বললো, তোমার জন্য ফুল টাইম জব একটা পেয়েছি! পার্ট টাইম করে কি হবে!
.
অফিসে ডাকলো! চেয়ারে বসে আছি অন্যদিকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে! সংবর্ধনা শেষে একটি ফাইল বের করলো! পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্সের এমডি থেকে শুরু করে তার টিমের কোন জন গত মাসে বিশ হাজার টাকা পুরস্কার পেয়েছে তার ছবিও দেখালো!
.
বুঝলাম পপুলার ইন্সুরেন্স নিউজের পত্রিকার কাটিংগুলো কেটে ফাইল করা ওনার কাজ!
.
তারপর বিভিন্ন মেয়াদী বীমা থেকে শুরু করে জীবনে বীমা যে কি প্রয়োজন তার উপর লেকচার দিয়ে বললো চাকরি হয়ে গেছে! তোমার কাজ হবে পাঁচজন ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করা বাকীটা আমি দেখবো!
.
আমার মতো অনেকে এসেছিলো ওখানে! ঐদিন সংবর্ধনা ছিলো ওনাদের! নাস্তা করে বের হওয়ার পর দেখি জুতো খুঁজে পাচ্ছি না! সাদা কেটস পড়ে গিয়েছিলাম! বের হওয়ার সময় লোকে এত দ্রুত বের হয়েছিলো যে জুতোগুলো সাদা থেকে কালো হয়ে গেছে! কাইন্দা বাঁচি অবস্থা!
.
বাসায় আসার পর আব্বু জিজ্ঞেস করে, জবের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দিছে? অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার আগামীকাল দেখাচ্ছি এখন টুল টেনে বসেন আপনাকে আজকে চার কিস্তি বীমার প্লানটা বুঝিয়ে দিই! মাথায় রাখবেন! :p
.
ইন্সুরেন্স চ্যাপ্টারের আগে এমএলএম চ্যাপ্টারে ছিলাম অনেক দিন! এগুলো ছাত্র জীবনের এক একটি শিক্ষা!
.
সবচেয়ে বড় কথা পকেটে টাকা না থাকলে জীবন আপনাকে অনেক কিছু করতে তাড়া দিবে!
.
রোদ ঝড় বৃষ্টি অপমান ক্লেশ কষ্ট সবকিছু ভুলে হয়তো কোন একদিন নিজেকে আবিষ্কার করবেন মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলছেন, 'কাইত অই খাইলে চিৎ হই মরে, লাফাইয়া খাইলে ঝাঁপাইয়া মরে, করিমের মার শান্তি নাই! আমাগো ঔষুধ ছাড়া উপায় নাই! আলমের এক নম্বর ইদুরের ঔষুধ!
.
এক সময় অনেক পেশাকে ঘৃণার চোখে দেখতাম! এখন সব পেশাকে সম্মান করি!
২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:০২
আবদুর রব শরীফ বলেছেন: বাস্তবতা আসলে নিদারুণ!
২| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৫২
মরুচারী বেদুঈন বলেছেন: এখন সব পেশাকে সম্মান করি!
আপনি বাস্তবতাকে বুঝে গেছেন বা কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে গিয়েছেন!☺☺
৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:০৮
ভাললাগে না বলেছেন: বাস্তবতা আমাদের অনেক কিছুই করতে বাধ্য করে যা আমরা কোন দিনই কল্পনাও করতে পারি না। তবে এ পি জে কালাম বলেছেন "কাজ কে স্যালুট করুন একদিন সবাই আপনাকে স্যালুট করবে নাইলে আপনি সবাইকে স্যালুট করবেন"
২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:২৭
আবদুর রব শরীফ বলেছেন: আমার জীবনে তিনদিনের জন্য হকার হয়েছিলাম, ভর্তি পরীক্ষার সময় সস্তা পঞ্চাশ টাকার টি-শার্ট আর বিশ টাকার সেন্টু গেঞ্জি চল্লিশ টাকা করে বাঁশের ফ্রেম বানিয়ে ঝুলিয়ে বিক্রয় করেছিলাম সেই দিনগুলিতে
.
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের এক বড় ভাই একটি বিজ্ঞাপন দিল দৈনিক ১৫০ টাকা করে ভর্তি পরীক্ষায় পার্ট টাইম কর্মসংস্থান করতে ইচ্ছুক হলে ******* এই নাম্বারে যোগাযোগ করুন !
.
সমাজতত্ত্ব বিভাগের বন্ধু ফোন দিলো ভাইকে, ভাই পরে বেপারটা বুজিয়ে দিলো ৷ টাকা দরকার টাকা, যেভাবে আসুক না কেন ! চঃবিঃ'র বিভিন্ন স্পটে দুইজন করে নিয়োগ দিলো ৷
.
সেটি ছিলো আমার জীবনের প্রথম ভাইবা, ভাইভাতে একটি শব্দ, কে কি মনে করলো সেটা বিষয় না আমরা একটি সুযোগ পেয়েছি কাজে লাগাচ্ছি, চুরি তো করছি না, তোমরা পারবে? 'হাম ভাই আপনি বড় হয়ে পারলে আমরা পারবো না কেনো? '
.
আমার সাইকেলটি উনি ধার নিয়ে বললো এর মাধ্যমে দৈনিক বিশ টাকা বেশী দিবে আমাকে, যায় হোক শুরু হলো দুই বস্তা টি-শার্ট সেন্টু গেঞ্জি কাঁধে নিয়ে আমার স্পটে হকারের প্রস্তুতি নেওয়া
.
আমার সাথে সমাজ বিজ্ঞানে আরেকটা ফ্রেন্ড...!
.
চঃবিঃতে এ.এফ.রহমান হলের সামনে প্রথম খদ্দের টি-শার্ট চয়েজ করছে পছন্দ হয়নি বলে চলে গিয়ে আবার এসে জিঙ্গেস করলো, 'ভাই আপনাকে হকারের মত লাগছে না কেনু ! সো স্মার্ট ! '
.
দ্বিতীয় খদ্দের, 'চঃবিঃর ছাত্রদের কথা কি বলবো হকারগুলো সেইই ! '
.
তৃতীয় খদ্দের, 'ভাই এটা এটা নিবো, কিন্তু একটা কথা ছিল ! না থাক বলবো না ৷'
.
চতুর্থ খদ্দের পাশে এসিস্ট করা বন্ধুটির বান্ধবী.... "খাইছেরে শরীফ ভাই, হেব্বি বাথরুম ধরছে ! আপনি একটু থাকেন আমি একটু পর আসতেছি পরে পাশে গিয়ে দেয়ালে লুকালো ! "
.
এভাবে সকাল টু সন্ধ্যা চলছিল আমাদের সস্তা হকার জীবন...শত অভিজ্ঞতা ! মাঝে মাঝে নিজেই নিজে আপসোস করে বলতাম, কেনু যে ভাইভা দিতে গেলাম ! ধেত্তুরি ছাই !
.
বেপার কঠিন হয়ে দাড়ালো, নিউ মার্কেটের সামনে যেভাবে হকার উচ্ছেদ করে পক্টর ও আমাদের সেভাবে উচ্ছেদ করতো স্পটে গিয়ে গিয়ে, উচ্ছেদ কষ্টটা বড়ই বর্ণনাতীত !
<দোস্ত পক্টর আইতাছে, দ্রুত সব বস্তায় ভর !
<শালা ! তাড়াতাড়ি কর এবার ধরা খেলে নিশ্চিত ছাত্রত্ত্ব যাবে !
< এই দোস্ত তোদের কি অবস্থা? পক্টর এই মাত্র এফ রহমান ক্রস করে রব হলের দিকে যাচ্ছে, সাবধানে থাকিস !
< তোরা কই? দ্রুত পালা ! আজকে পক্টর স্যার সিরিয়াস ! পুলিশ নিয়ে আইছে !
.
পরে পক্টর স্যার বুজিয়ে বললো, তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সবাই তোমরা যদি হকারি করো বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানের কি হবে তোমরাই বলো ?
.
তো হকারি জীবনের শেষ দিন, সব ক্লোজ করে দিবো, বাঁশের ফ্রেমগুলো সব ভেঙ্গে গেছে ! ইয়া মুচিবত !
.
গেঞ্জি দুই চারটা কাঁধে ঝুলাইলাম, দুইটা হাতে আরো কিছু পাশে একটা ছোট গাছের ডাল ছিল তাতে....!
.
শেষ খদ্দেরটি এসে বললো, ভাই এটা এটা নিবো, আরেকটি কথা ভাই, আপনাকে দেখতে হকারের মত লাগছে না ! ইয়ে মানে আপনি কি ছাত্র ! 'হ্যাঁ আমি অর্থনীতিতে পরি ! ' ছেলেটি নির্বাক নয়নে তাকিয়ে থাকলো ! কোন দামাদামি করছে না ! তারপর বললো আরো তিনটা দেন ! মোট পাঁচটা নিলো যেতে যেতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ! কি যেন বলতে চেয়ে বলতে পারলো না !
৪| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:২৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
সন্দ্বীপ ইনস্যুরেন্সের জন্য ভালো যায়গা, টাকা আছে, ঝড়ে মরার ভয়ও আছে
২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:২৮
আবদুর রব শরীফ বলেছেন: হাহা ঠিক বলেছেন!
৫| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৩৯
মাইনুল ইসলাম আলিফ বলেছেন: পকেটে টাকা না থাকলে জীবন আপনাকে অনেক কিছু করতে তাড়া দিবে!
ভাল লিখেছেন।
একটা সময় সবারই বাস্তবতাকে ছুঁয়ে দেখতে হয়।
শুভ কামনা রইলো।
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৫৭
আবদুর রব শরীফ বলেছেন: একদম ঠিক
৬| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:০৪
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: এম এল এম স্টাইলে আবার কেডিএস-এ বসকে জোরে 'ইয়েস' বলে বইসেননা...
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৫৮
আবদুর রব শরীফ বলেছেন: হাহা এম এল এম জোরসে বলো টাইপ মোটিবেশনগুলো অতো খারাপ ছিলো না!
৭| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪১
মরুচারী বেদুঈন বলেছেন: আমার জীবনে তিনদিনের জন্য হকার হয়েছিলাম, ভর্তি পরীক্ষার সময় সস্তা পঞ্চাশ টাকার টি-শার্ট আর বিশ টাকার সেন্টু গেঞ্জি চল্লিশ................!.............................................
,এখন কি করেন?
জানতে ইচ্ছা হচ্ছে!
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৫৯
আবদুর রব শরীফ বলেছেন: এখনও সেলস করি
৮| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:১২
মরুচারী বেদুঈন বলেছেন: কোথায় বলা যাবে?
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৫২
মরুচারী বেদুঈন বলেছেন: এখন সব পেশাকে সম্মান করি!
আপনি বাস্তবতাকে বুঝে গেছেন বা কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে গিয়েছেন!☺☺