নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন জেনারেল ব্লগারের নিজের সম্পর্কে বলার কিছু থাকে না ।

আবদুর রব শরীফ

যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!

আবদুর রব শরীফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একুশে বই মেলায় প্রকাশিত আমার গল্পগুলোর মধ্যে একটি গল্প !

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৪

লিমনের হৃদয় যেন এক টুকরো স্বদেশ!
(বইঃ রেডিওমুন্না ফিচারিং শব্দ ছুঁয়ে স্বপ্ন নিয়ে)
১.
ছোটবেলা থেকে লিমনের বুকে দেশপ্রেম দানা বাঁধে, কিছু একটা করতে হবে,এমন একটি তাগিদ অনুভব করতে লাগল হৃদয়ে! বাবার মুখ থেকে শুনত তখনকার ছেলেরা খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে নিয়মিত অংশগ্রহণ করত, কোন মুরুব্বি বাজারের ব্যাগ নিয়ে আসতে দেখলে, আগ বাড়িয়ে বাজারের ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলত,চাচা আপনি যান,আমি ব্যাগটি পৌছে দিয়ে আসি! চাচা না বললে ও মানত না, শেষমেষ মাথায় হাত বুলিয়ে বলত, অনেক বড় হও বাবা! সেই শিহরণ আনন্দে বুক ভরিয়ে দিত! এখনকার ছেলেরা দোকানে বসে তাস খেলে,আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করে, গুরুজনদের সামনে হাতে সিগারেট নিয়ে ঘুরে, লিমন ভাবতে থাকে, সেই তাগিদ থেকে এলাকার কিছু বন্ধুদের বুজিয়ে সুজিয়ে গঠন করে "হেলফ দি পুয়োর ফান্ড ৷" সে পড়েছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা, সুতরাং তার বন্ধুদের কোন একটি ভালো সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে, তাদের দেখে অন্যরাও শিখবে, ভালো এবং খারাপ কাজ দুটোই চোখের অশ্রু/আনন্দের মত সংক্রামক,সুতরাং একশ টাকা ফান্ড দিয়ে শুরু তার স্বপ্নের অগ্রযাত্রা, 'আপনি কি জানেন প্রতি বছর ক্ষুধায় মারা যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ ৷' সে এই শিরোনামে একটি কম্পিউটার ফ্রিন্ট লিফলেট তৈরী করে পনের টাকা দিয়ে, বাকী টাকা দিয়ে ফটোকপি করে সেগুলো ছড়িয়ে দেয় এলাকার আনাচে কানাচে.. খুব ক্ষুদ্র উদ্বেগ, এলাকায় হাঁসির রোল পড়ে যায়, টাকা বাঁচাতে গিয়ে লিফলেটগুলো এত ছোট হয়ে যায় যে মনে হচ্ছে বাসের টিকেট, চশমাওয়ালাদের চশমা মুচে আবার চোখে দিয়ে পড়তে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে এমন!
২.
কিছু কিছু বন্ধু হাসাহাসি করতে থাকে, একজন লিমনের বাবাকে বলে আপনার ছেলে দেয়ালে দেয়ালে লিফলেট লাগায়, সমাজে এমন একটি ধারণা হয়ে গেছে কোন ভাল কাজ করার তাগিদ পোস্টারিং করাটা হাস্যকর, পোস্টারে যেন ইয়া একজন মানুষের জনগনের উদ্দেশ্যে হাত থাকবে, একপাশে ভোট চাই লেখা থাকবে অথবা অমুক বাবার অশীর্বাদপুষ্ট কিছু লেখা থাকবে, লিফলেটে ও তা, ম্যাক্সিম গোর্কির 'মা' উপন্যাস থেকে সে এই কনসেপ্ট পেয়েছে যে ভালো কাজেও এসব পোস্টারিং/লিফলেট প্রচরণা দোষের কিছু না, এদিকে বাবা রাজনৈতিক লিফলেট লাগাচ্ছে মনে করে কষে একটা চড় মারে লিমনকে, দেশ প্রেম আপাতত শূন্যের কৌটায় নেমে এসেছে,ছোট্ট লিমনের একদিনে দেশ থেকে দরিদ্রতা ঝেটিয়ে দূর করার ফ্যান্টাসি কিছুদিনের জন্য আর রইল না!
৩.
ফান্ডে লিফলেটসহ অনেকে চাঁদাবাজী মনে করার সমূহ ঝামেলা থেকে এবার লিমনের মাথায় আসল সেই বার শীতে ঈদবস্ত্র কালেকশনের, যেই ভাবা সেই কাজ! এবার তার সাথে কাজ করবে তার গৃহ শিক্ষক, কোন প্লান মাথায় নিলে বাস্তবায়ন করার জন্য তার যেন অস্বস্তি কাজ করে, সারাক্ষণ মাথার মধ্যে পোকার মত কিছু একটা করতে হবে এই বিষয়টি যন্ত্রণা দিতে থাকে, বন্ধু মহলের তার একটি বিশেষ জনপ্রিয়তা থাকার কারণে বন্ধুরাও তার সব কথা মেনে নেয়, গুণে গুণে এক সপ্তাহে তিন বস্তা কাপড় জোগাড় করে ফেলল, পুরনো কাপড়ে ঘর ভর্তি দেখে একদিকে মায়ের বকা তার সাথে যোগ হলো সামনে বার্ষিক পরীক্ষার পড়া ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ, এদিকে ঈদ উপলক্ষে পুরনো কাপড় একটু ধুয়ে আয়রন না করে দিলে কি হয়! ভেবে এলাকার ছোট ভাই বন্ধুদের নিয়ে নেমে পড়ল তিন বস্তা পুরনো কাপড় ধৌত করতে, মসজিদের পুকুরে তিনটি কাপড় ধৌত করার জায়গায় তরুণ সমাজের একাধারে কাপড় ধৌত করা দেখে অনেকে যেন আজব চিড়িয়া দেখছে! যেসব ছেলেরা নিজেদের কাপড় নিজেরা ধৌত করে না তাদের এহেন অবস্থা দেখে মায়েরা মিটিমিটি হাসছে! আবার সে কাপড়গুলো শুকিয়ে আয়রন করে তিনদিন পর বিতরণ করতে গেল তারা, সাথে লিমনের স্যার, আপদ বিদায় হলো, অার ঘ্যানর ঘ্যানর শুনতে হবে না, লিমনে হৃদয়ে আলাদা একটি প্রশান্তি বয়ে গেল, এলাকার আবাল বৃদ্ধ বনিতা তাকে এখন অন্য রকম ভালো চোখে দেখে,
৪.
হঠাৎ একদিন লিমনের মাথায় এলো এলাকায় কোন লাইব্রেরী নেই একটি লাইব্রেরী দিবে, মিষ্টি মুখতো করা হয় নি পাঠক! এসএসসি পরীক্ষায় লিমন জিপিএ পাঁচ না পেলে ও কাছাকাছি পেয়েছে, এবারের উদ্যোগে তাই পরিবারের বাঁধা নেই, হাতে তিন মাস সময় এদিক ওদিক করে কয়েক শত বই জোগাড় করে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করে ফেলল,
এভাবে চলছিল বেশ! লিমনের মাথায় এলো পাড়ার দোকানের ছেলেরা সারাক্ষণ তাস খেলে আড্ডা দিয়ে দিন কাটায়, এবার সে কিছু বই জোগাড় করে চায়ের দোকানগুলোতে চার পাঁচটা করে এবং সেলুনে কিছু দিল, একদিন লিমন সেলুনে গিয়ে দেখে নরসুন্দর তার বইগুলো কেটে কেটে তথাকথিত বাংলা টিস্যু বানিয়ে তারে ঝুলিয়ে রেখেছে, শেষ হলো লিমনের আরেকটি স্বপ্নের সমাপ্তি,
৫.
এই ছোট্ট ছেলেটির দেশ নিয়ে চিন্তা ভাবনার সমাপ্তি হলো যখন তার বাবা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে জান্নাতবাসী হয়, এক ছেলে হওয়ায় পরিবারের দায়িত্ব এখন তার কাঁধে, চাচার নির্দেশে প্রবাসী হয়ে গেল লিমন, পিছনে পড়ে থাকল দেশ নিয়ে কিছু করার এক রাশ স্বপ্ন,
তবে রেমিটেন্সের টাকা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরে বেপারটা তার চাচা তাকে বুজিয়েছিল, এর পর থেকে মনটা একটু ভালো হলো লিমনের,দেশ নিয়ে কিছু একটা করতে হবে এই চিন্তা যেন তাকে রাতে ঘুমাতে দেয় না! তবে প্রবাসে না আসলে সে বুজতে পারত না দেশপ্রেম দেশ কি অমূল্য ধন,মায়ের মুখ কত মধুর, তখনি লিমনের পরিচয় হয় ইন্টারনেটের সাথে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে, যখনি সময় হাতে থাকে তখনি এসব সাইটগুলোতে যেন নেশা হয়ে গেছে লিমনের!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল তখন আভিজাত্য, যাদের অবস্থা ভালো দেশে তারাই শুধু ইন্টারনেট ব্যবহার করত, ইন্টারনেট ব্যবহারের ফ্যাশন হয়ে দাড়াল মুখশ্রী, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করত তাদের ভাবা হত এক্সট্রা রিয়েল লাইফের চেয়ে বেশী কিছু, ক্রমে যখন তা সাধারণের নাগালে চলে আসলে চোখের পলকে তা হয়ে গেল ভার্চুয়াল, কেমন যেন নাক চিটকানো ভাব, মাঝখানে নানা রকম থিওরি, রিয়েল ভার্চুয়াল লাইফের পার্থক্য আলোচনায় যোগ হলো দশ মার্কস! তবে একটা ব্যাপার অস্বীকার করার উপায় নেই, যুব সমাজ যেন অনেকটা খারাপ দিকটা বেছে নিয়েছে, সারাদিন উল্টো পাল্টা চ্যাট করে সময় পাড় করতে যেন অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে যুব সমাজ, এ যেন চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়ার নতুন সংস্করণ, ব্যাপারটা ভাবিয়ে তুলল লিমনকে! অতীত থেকে শিখেছে যে কোন বিষয়ের ভাল খারাপ দিক আছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভাল দিক খুঁজতে লাগলো লিমন, এভাবে দেশ থেকে অনেক দূরে থাকা ছেলেটির মাথায় আকাশ পাতাল চিন্তা ঘুরতে লাগলো,
তখনি লিমন এটার পজেটিভ সাইট খুঁজে বের করলো, তৈরী করতে লাগলো একটি ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম "হৃদয়ে এক টুকরো বাংলাদেশ ৷" আস্তে আস্তে পুরো বাংলাদেশ যেন সেই প্লাটফর্মের আওতায় চলে আসে ৷ সেই প্লাটফর্ম থেকে শুরু হয় দূর্নীতি বিরোধি প্রচরণা, সৃষ্টি হয় সুন্দর দেশ গড়ার কাজে দীপ্ত তরুণদের এক সাথে পথচলা, লক্ষ লক্ষ তরুণ ক্রমান্বয়ে সেই প্লাটফর্মে যোগ দিল, পুরাতন বন্ধুদের খুঁজে নিয়ে সেই বিশ্বস্ত বন্ধুদের পরিচালনার ভার দিল, একটি গ্রুপ খুলে তাদের কার কি কি কাজ হবে তা আলোচনা সমালোচনা করতে লাগলো,
৬.
এ যেন অন্য রকম তরুণ সমাজ, দুর্নীতির মুখোশ উন্মেচনে ছুটে চলছে প্রতিনিয়ত বিরামহীন এক ঝাঁক যুবক, সাথে বেড়ে চলছে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মটির জনপ্রিয়তা, ক্রমে এক হতে থাকল প্রত্যন্ত অঞ্চলের যুবকরা ও, একদিন দুর্নীতি বিরুদ্ধে শুরু হলো হাঙ্গার স্ট্রাইক, চ্যানেলে চ্যানেলে প্রচার হতে লাগল আপডেট, একদল সাংবাদিক প্রবাসী লিমনকে নিয়ে তৈরী করল প্রামাণ্যচিত্র, এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হলো, অদ্ভুতভাবে পাল্টে যাচ্ছে যুব সমাজ, ম্যাচের এতটি কাঠিতে আগুন লেগে যেন পুরো বক্স দাউদাউ করে জ্বলছে! চারদিকে পরিবর্তনের রব উঠেছে, এক হৃদয় থেকে অন্য হৃদয়ে জেগে উঠছে দেশপ্রেম! দুই একজন দুর্নীতিবাজ স্বামীকে ডিবোর্স দিলে তা থেকে শুরু হয়েছে হাঁসির রোল, ললনাদের মধ্যে শুরু হলো দুর্নীতিবাজ ছেলে বিয়ে না করার হিড়িক, পরিবর্তনেক হাওয়ায় ভাসছে দেশ! লিমনের টুইট যেন হট কেক! হাজার হাজার শেয়ার, হুহু করে ফলোয়ার বাড়ছে! লিমনের চোখে আনন্দ অশ্রু, সে কখনো ভাবতেই পারে নি, রাতারাতি এভাবে একটি বিপ্লব সূচিত হবে, ছোটবেলা থেকে কিছু একটা করার ব্যর্থ প্লানগুলো থেকে এভাবে একটি প্লান বেড়িয়ে আসবে তা ছিল তার কল্পনারও অতীত ৷
৭.
এদিকে একটি অসাধু মহল লিমনের বিরুদ্ধে লাগল, যেভাবে হোক এই আন্দোলন দমাতে হবে, শুরু হলো লিমনের বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্র, লিমনের দেশে আসার বিরুদ্ধে সমন জারি হলো, তবুও যুব সমাজকে দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেওয়া হলো, এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো খুলে দেওয়ার জন্য শুরু হলো জোর আন্দোলন, এক প্রকার তোপের মুখে পড়ে আবার খুলে দেওয়া হলো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো, এর কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন খবর এল আততায়ীর গুলিতে লিমন মুমূর্ষ, পুরো দেশ ক্ষোভে ফেটে পড়ল, হাসপাতালে ক্রমে ক্রমে বিলীন হতে থাকল সেই হেলপ দি পুয়র ফান্ড, ঈদ বস্ত্র, লাইব্রেরী, প্রবাস....অস্তমিত হতে থাকল এক টুকরো হৃদয় বাংলাদেশের, নিবে গেল কিছু করে দেখাও, করতে হবে আন্দোলনের স্বপ্নদ্রষ্টা আর ওদিকে পুষে উঠল পুরো ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল,
হাজারো লিমনের গর্জনে সেদিনের বর্ষা থেকে ধুয়ে মুচে যেতে থাকল একটি ভূখন্ড, ফিরে এল মাটির সোদা গন্ধ, নির্মল বাতাস বয়ে যেত লাগল চারদিক, এই বাতাসে বীষাক্ত সীসা নেই, সেখানে আজ লিমনও নেই, পুরো বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে লিমন, লিমনের হৃদয় যেন এক টুকরো স্বদেশ ৷

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.