নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন জেনারেল ব্লগারের নিজের সম্পর্কে বলার কিছু থাকে না ।

আবদুর রব শরীফ

যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!

আবদুর রব শরীফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ফেরদৈসের গল্প !

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৩৬

পাহাড় ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঠিক যেন পাহাড়ের মত মাথা উচু করে বাঁচতে চায় জীবনের সব প্রতিবন্ধকতা পিছু ঠেলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ ফেরদৈস হাসান, যেই ভাবা সেই কাজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এই ছাত্র বাবা মা'কে একটু প্রশান্তি দেওয়ার আশায় রাত দিন একটি টেবিল সাথে একটি চেয়ারে বসে বিকাশ/লোড করে কর্ম ব্যস্ত সময় পার করছেন ৷ ছোট বেলায় ঠিক পাঁচ বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হলে ফল বিক্রেতা বাবা হারিজ হাওলাদার সামর্থ্য অনুযায়ী পর্যাপ্ত চিকিৎসা করালে ও সুচিকিৎসার অভাবে দৃষ্টি হারিয়েছিলেন ফেরদৈস হাসান কিন্তু মনের দৃষ্টি তাকে হার মানাতে পারে নি, শুরু করেন অনন্য এক সংগ্রাম
.

মা লিলি বেগমের অনুপ্রেরণায় একে একে পাড়ি দিতে থাকেন জীবনের কঠিন অধ্যায়গুলো, একদিকে দরিদ্রতা অন্যদিকে অন্ধত্ব তার উপর পাঁচ ভাই তিন বোনের বিশাল এক পরিবারের দ্বিতীয় সন্তানটির যেন জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়ার উপক্রম ! সহজে হার মানার পাত্র সে নয়, রূঢ় বাস্তবতার মধ্যে ঢাকার ক্ষীলক্ষেতের জানি আলম সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে জিপিএ ৩.১৯ পেয়ে একটি স্বপ্নের ভীত রচনা করেছেন তারপর ছুটে চলা ! আরো ভাল করতে হবে সেই প্রত্যাশা এবং বুকে অদম্য বল নিয়ে অবশেষে পাবনা শহীদ এম মনসুর আলী কলেজ থেকে ২০১১ সালে জিপিএ ৪.১০ পেয়ে স্বপ্নের দ্বিতীয় যাত্রাটি সফলভাবে সম্পন্ন করেন ৷ তারপর ভর্তি হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৷
.

শাহাদাত, সঞ্জীব কুমারসহ অন্যান্য বন্ধুদের কৃতঙ্গতা প্রকাশ করতে করতে বলতে থাকেন অনার্স প্রথম বর্ষে সিজিপিএ ২.৮0, দ্বিতীয় বর্ষে ২.৭৮, তৃতীয় বর্ষে ইপ্রোভ সাপ্লি'র পর প্রত্যাশিত রেজাল্ট পাওয়ার সম্ভাবনাসহ কিছুদিন পর এপ্রিলের ২৪ তারিখ যে পরীক্ষা শুরু হবে বিকাশ করার পাশাপাশি কিভাবে আরো ভালো রেজাল্ট করা যায় তার পরিকল্পনা, এভাবে চলতে থাকে আড্ডা সোহরাওয়ার্দি হল ১৪৪ নং কক্ষের আবাসিক ছাত্রের সাথে, পাশাপাশি বিকাশ/ইজিলোডের ভয়েস মেসেজ সফটওয়ারের সাথে কর্মব্যস্ততাও
.

প্রতিদিন শত শত মানুষের মোবাইলে লোড সাথে বিকাশ করে যাচ্ছেন একটি ভয়েস সফটওয়ারের মাধ্যমে, যে বিকাশ করতে আসে সে নাম্বারটি লিখে দেয় এবং মুখে বলে, মোবাইল কানের কাছে নিয়ে মুখস্ত করা বাটন টিপে নির্ভুল ভাবে ভয়েস মেসেজের মাধ্যমে অবগত হয় কত টাকা আদান প্রদান হয়েছে এবং ডয়ারে থাকা টাকার নোট গুনে গুনে গ্রাহককে তার পাওনা বুজিয়ে দেয় সে এমন কি ভাংতি টাকা ও নির্ভুল ভাবে ভাংতি করে দিয়ে সাহায্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপদে পরা ছাত্র-ছাত্রীদের, উপস্থিত সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র পার্থ বলেই ফেললেন, 'ফেরদৈস হাসানের কাছে আমাদের অনেক কিছু শিখার আছে, আমরা চোখ থেকে ও যেন অন্ধ আর ওনি মনের আলোয় আলোকিত! '
.

পড়ালেখা শেষ করে বাবা মা'য়ের সেবার পাশাপাশি সমাজের জন্য কিছু করতে চায় সে, ক্লাশ নাইনে থাকাকালীন সমাজ সেবামূলক সংগঠন এমডিএফে'র (মোয়াখালি ডিজিবেল ফাউন্ডেশন) সাথে যুক্ত হয়, কিছু লোক নিয়ে নায়েমের ডিজি ইউনুস আলী দেওয়ানকে প্রদান করে নিবন্ধিত করে সংগঠনটি, কিন্তু পড়াশুনা এবং জীবন ব্যস্ততার কারণে বেশী দূর এগোতে পারে নি সে, সেই আক্ষেপ এখনো তাকে পীড়া দেয়
.

মদারীপুর জেলার রাজৌর থানার নিভৃত পল্লী দুর্গাবরদীকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন, একদিন সেখানে প্রকৃত শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিবে সে, মনের ইচ্ছের জোর থাকলে সবি সম্ভব এই মেসেজটি সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে সে আজীবন কাজ করবে বলে এমন দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে
.

সমাজের হতাশাগ্রস্থ যুবক যারা তাদের সবকিছু থাকা শর্তেও নিজেকে নেশাগ্রস্থ করে তুলে অন্যায় পথ বেঁচে নেই তাদের উদ্দেশ্যে ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাদের সুস্থ পথে আনয়ন করার জন্য একটি সংগঠন খুলে ক্যাম্পেইন করবে বলে তার দীর্ঘদিনের যে স্বপ্ন সেই স্বপ্নের যাত্রায় সে সফল হোক সে প্রত্যাশা আমাদেরও, ভালো থাকুক সোনার ছেলেরা, ভালো থাকুক বাংলাদেশ ৷

বিঃদ্রঃ দৈনিক দিন প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত আমার আজকের লেখা, এটি আমাদের গল্প, আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প !

http://dainikdinprotidin.com/?p=5364

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৮

মানবী বলেছেন: ফেরদৌস হাসানের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা। তার জীবন আনন্দ আর সাফল্যের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠুক এই প্রার্থনা।

চমৎকার পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ।

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০৬

আবদুর রব শরীফ বলেছেন: আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য আপনাকে ও ধন্যবাদ ৷

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.