নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!
দুই বন্ধু সায়েম এবং সৈকত, গলায় গলায় বন্ধুত্ত্ব, সায়েমের পাঁচ ভাই দুই বোন, সৈকত'রা দুই ভাই, সায়েমের বাবা ঠেলা গাড়ি চালায় মাঝে মাঝে দুই এক জায়গায় কামলা খাটে, সায়েমের বাবার স্বপ্ন একদিন সায়েম অনেক বড় হবে,
.
ঘরে ডুকেই পরিশ্রান্ত ক্লান্ত ক্লেশ রোদে পোড়া মানুষটি গামছা দিয়ে লুঙ্গির ধুলো মুচতে মুচতে একটি কমন ডায়লগ আওড়ায়, 'পড়ালেখা করে যে, গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে ৷'
এই একটি কথা সায়েম শুনে ও শুনে না, একদিন সায়েম বাবাকে বলল, 'বাবা একদিন তুমি ঠেলা গাড়িতে বসবে, আর আমি ঠেলে ঠেলে তোমাকে চড়াবো ৷' শুনে হো হো করে হেঁসে উঠলো বাবা!
.
অন্যদিকে সৈকতের বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছেলেকে আদর্শ মানুষ গড়বে বলে সব সময় চোখ থেকে চশমা খুলে পাঞ্জাবীর একটা অংশ দিয়ে চাশমার কাঁচ পরিস্কার করতে করতে কমন ডায়লগ বলবে, 'সুশিক্ষিত আর স্বশিক্ষিতের মধ্যে পার্থক্য আছে বাবা ৷‘
.
ঈদে সৈকত নতুন জামা কিনেছে, আমাকে ও একটা বক্স শার্ট কিনে দাও বলে বাবার কাছে বায়না ধরে সায়েম, বাবা বুজায় ওরা পয়সা-ওয়ালা মানুষ আমরা কি তা কিনতে পারবো? সায়েমের মন খারাপ হয়ে থাকে, প্রতিবার সৈকত কিভাবে তার মন খারাপটা যেন বুঝে যায়, ঠিক ঈদের আগের দিন সারপ্রাইজ, কমন ডায়লগ, 'এই সায়েম! এটা তোর জন্য গিফট ৷'
.
ঈদের ঠিক একদিন আগে সায়েমের বাবা হঠাৎ মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়, চারদিকে বৃষ্টি, পাশের বাসা থেকে 'রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ! ' গানের সুর ভেসে আসছে, সায়েম তার বাবাকে তার বাবার গাড়িতে লম্বা করে শুয়ে রেখে বাবাকে ঠেলা গাড়ি ঠেলে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে পাশে তার মা বাবার মাথার পাশে বসা,
.
সৈকতের দেওয়া বক্স শার্টটি পরের দিন ঈদে পড়া হয়নি, হাসপাতালের সামনে দিয়ে নতুন নতুন জামা পড়ে ছুটে চলছে দলছুট ছেলেরা, কেউ লাটি লজেন্স চুষছে, কেউ আতশবাজি ফুটিয়ে আনন্দ উল্লাস করছে, হঠাৎ ঈদের নামাজ পড়ে সৈকত ছুটে আসল! সায়েমের চোখে মুখে আনন্দ ভেসে উঠল, এ যেন ঈদের আনন্দ! মেঘ না চাইতে বৃষ্টি!
.
সৈকতকে কেন জনানো হয়নি বলে একটু ধমকে দিল সায়েমকে! তারপর প্যাকেট থেকে ঈদে গিফট দেওয়া বক্স শার্টটি বের করে বললো, দোস্ত এটা পড়ে নে, তোর ডয়ার খুঁজে বের করে এনেছি! দ্রুত পড়ে চল কোলাকুলি করে নি! তারপর সেমাই নুডলস খেতে হবে, মা নিজ হাতে রান্না করে দিয়েছে!
.
তাদের বাবার উপদেশ কাজে লেগেছে কিনা জানি না তবে সরকারি হাসপাতালে অন্যরকম একটি ঈদ উদযাপন করলো দুই বন্ধু, বেডে শুয়ে আড়চোখে কি যেন তাকিয়ে দেখছিল বাবা! সবার চোখে মুখে ঈদের আনন্দ..
©somewhere in net ltd.