নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন জেনারেল ব্লগারের নিজের সম্পর্কে বলার কিছু থাকে না ।

আবদুর রব শরীফ

যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!

আবদুর রব শরীফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেরা কবিতা গ্রন্থ 'সঞ্চিতা'র অন্যতম প্রধান কবিতাগুলোর সংকলন ৷

০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:০১

সঞ্চিতা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবি
কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য-সংকলন। এই গ্রন্থে
মোট ছিয়ানব্বইটি কবিতা আছে। এর মধ্যে -
‘বিদ্রোহী’, ‘সর্বহারা’, ‘সাম্যবাদী’, ‘মানুষ’, ‘জীবন
বন্দনা’, ‘খুকী ও কাঠবেরালী’, ‘চল্ চল্ চল্’প্ প্রভৃতি
প্রধান।(উইকিপিডিয়া), প্রধান কবিতাগুলো একত্র করার ক্ষুদ্র প্রয়াস,

বিদ্রোহী

বল বীর -
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি, নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল বীর -
বল মহা বিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’
ভূলোক দ্যুলোক গোলোক ভেদিয়া,
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির বিস্ময় আমি বিশ্ব বিধাত্রীর!
মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত
জয়শ্রীর!
বল বীর-
আমি চির উন্নত শির।
আমি চিরদুর্দ্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহা-প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি
ধ্বংস,
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর!
আমি দুর্বার,
আমি ভেঙ্গে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি মানি না কো কোন আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি
ভীম ভাসমান মাইন!
আমি ধুর্জ্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-
বৈশাখীর!
আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সূত বিশ্ব-
বিধাত্রীর!
বল বীর-
চির-উন্নত মম শির!

আমি বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি
ধন্যি!
আমি উন্মন মন উদাসীর,
আমি বিধবার বুকে ক্রন্দণ শ্বাস, হা-হুতাশ আমি
হুতাশীর!
আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির-গৃহহারা যত
পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয়-
লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের!
আমি অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা
সুনিবিড়,
চিত- চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ
কুমারীর!
আমি গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল ক’রে দেখা
অনুখণ,
আমি চপল মেয়ের ভালবাসা, তা’র কাঁকন চুড়ির কন্
কন্।
আমি চির-শিশু, চির-কিশোর
আমি যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচর কাঁচলি নিচোর!
আমি উত্তর-বায়ু, মলয়-অনিল, উদাস পূরবী হাওয়া,
আমি পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেনু-বীণে গান
গাওয়া।
আমি আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র-রুদ্র রবি,
আমি মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি।
আমি তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি এ কি উন্মাদ, আমি
উন্মাদ!
আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া
গিয়াছে সব বাঁধ!

আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
মহা- সিন্ধু উতলা ঘুম্-ঘুম্,
ঘুম্ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্ঝুম্
মম বাঁশরীর তানে পাশরি
আমি শ্যামের হাতের বাঁশরী।
আমি রুষে উঠে’ যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া,
ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায়
কাঁপিয়া!
আমি বিদ্রোহ-বাহী নিখিল অখিল ব্যাপিয়া!
আমি শ্রাবণ-প্লাবন-বন্যা,
কভু ধরণীরে করি বরণীয়া, কভু বিপুল-ধ্বংস-ধন্যা-
আমি ছিনিয়া আনিব বিষ্ঞু-বক্ষ হইতে যুগল কন্যা!
আমি অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি,
আমি ধূমকেতু-জ্বালা, বিষধর কলা-ফণী!
আমি ছিন্নমন্তা চণ্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের
হাসি!
আমি মৃন্ময়, আমি চিন্ময়,
আমি অজয় অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়!
আমি মানব দানব দেবতার ভয়,
বিশ্বের আমি চির-দুর্জয়,
জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য,
আমি তাথিয়া তাথিয়া মথিয়া ফিরি এ স্বর্গ
পাতাল-মর্ত্য!
আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!
আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া
গিয়াছে সব বাঁধা!!-
আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার,
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত
উদার!
আমি হল বলরাম-স্কন্ধে,
আমি উপাড়ি’ ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব
সৃষ্টির মহানন্দে,
মহা- বিদ্রোহী রণ-কাল্ত,
আমি সেইদিন সব শান্ত,
যবে উত্পীড়িতের ক্রন্দণ-রোল আকাশে বাতাসে
ধ্বনিবে না
অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত।
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন;
আমি স্রষ্টা-সুদন; শোক-তাপ হানা খেয়ালী বিধির
বক্ষ করিব ভিন্ন।
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-
চিহ্ন!
আমি খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন।
আমি চির-বিদ্রোহী-বীর-
আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির!



মানুষ
গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই নহে কিছু মহীয়ান
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে সব কালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের
জ্ঞাতি।
‘পূজারী, দুয়ার খোলো,
ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হল!’
স্বপন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়,
দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হয়ে যাবে নিশ্চয়!
জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুধায় কন্ঠ ক্ষীণ-
ডাকিল পান্থ ‘দ্বার খোল বাবা, খাইনি কো
সাতদিন!’
সহসা বন্ধ হল মন্দির; ভুখারী ফিরিয়া চলে,
তিমিররাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক জ্বলে!
ভুখারী ফুকারি কয়,
‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’
মসজিদে কাল র্শিনী আছিল, -অঢেল গোস্ত রুটি
বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটি
কুটি,
এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে আজারির চিন্
বলে ‘বাবা, আমি ভুখা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত
দিন!’
তেরিয়া হইয়া হাঁকিল মোল্লা- ‘ভ্যালা হল দেখি
লেঠা,
ভুখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস
বেটা?’
ভুখারী কহিল ‘না বাবা!’ মোল্লা হাঁকিল -‘তাহলে
শালা
সোজা পথ দেখ!’ গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল
তালা।
ভুখারী ফিরিয়া চলে,
চলিতে চলিতে বলে-
‘আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু,
আমার ক্ষুধার অন্ন তা বলে বন্ধ করনি প্রভু।
তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী।
মোল্লা পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী!’
কোথা চেঙ্গিস, গজনী মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?
ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া দ্বার!
খোদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে
তালা?
সব দ্বার এর খোলা র’বে, চালা হাতুড়ি-শাবল চালা!
হায়রে ভজনালয়,
তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয়!
মানুষেরে ঘৃণা করি
ও’ কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি!
ও’ মুখ হইতে কেতাব গ্রন্থ নাও জোর করে কেড়ে
যাহারা আনিল গ্রন্থ-কিতাব সেই মানুষেরে মেরে।
পূজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল! -মূর্খরা সব শোনো,
মানুষ এনেছে গ্রন্থ;- গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো ।
আদম দাউদ ঈসা মুসা ইব্রাহিম মোহাম্মদ
কৃষ্ণ বুদ্ধ নানক কবির,-বিশ্বের সম্পদ,
আমাদেরি এঁরা পিতা- পিতামহ, এই আমাদের মাঝে
তাঁদেরি রক্ত কম-বেশী করে প্রতি ধমনীতে বাজে।
আমরা তাদেরি সন্তান, জ্ঞাতি, তাঁদেরি মতন দেহ।
কে জানে কখন মোরাও অমনি হয়ে যেতে পারি কেহ
হেসো না বন্ধু! আমার আমি সে কত অতল অসীম,
আমিই কি জানি কে জানে কে আছে
আমাতে মহামহিম।
হয়তো আমাতে আসিছে কল্কি, তোমাতে মেহেদী
ঈশা,
কে জানে কাহার অন্ত ও আদি, কে পায় কাহার
দিশা,
কাহারে করিছ ঘৃণা তুমি ভাই, কাহারে মারিছ
লাথি?
হয়তো উহারই বুকে ভগবান জাগিছেন দিবা-রাতি।
অথবা হয়তো কিছুই নহে সে, মহান উচ্চ নহে,
আছে ক্লেদাক্ত ক্ষত-বিক্ষত পড়িয়া দুঃখ-দহে,
তবু জগতের যত পবিত্র গ্রন্থ ভজনালয়
ঐ একখানি ক্ষুদ্র দেহের সম পবিত্র নয়!
হয়ত উহারই ঔরসে ভাই উহারই কুটির-বাসে
জন্মিছে কেহ-জোড়া নাই যার জগতের ইতিহাসে!
যে বাণী আজিও শোনেনি জগৎ, যে মহাশক্তিধরে
আজিও বিশ্ব দেখেনি,-হয়তো আসিছে সে এরই ঘরে!
ও কে? চন্ডাল? চমকাও কেন? নহে ও ঘৃণ্য জীব!
ওই হতে পারে হরিশচন্দ্র, ওই শ্মশানের শিব!
আজ চন্ডাল, কাল হতে পারে মহাযোগী সম্রাট,
তুমি কাল তারে অর্ঘ্য দানিবে, করিবে নান্দী-পাঠ!
রাখাল বলিয়া কারে করো হেলা, ও-হেলা কাহারে
বাজে,
হয়তো গোপনে ব্রজের গোপাল এসেছে রাখাল
সাজে!
চাষা বলে করো ঘৃণা!
দেখো চাষা রূপে লুকায়ে জনক বলরাম এলো কিনা!
যত নবী ছিল মেষের রাখাল, তারাও ধরিল হাল,
তারাই আনিল অমর বাণী-যা আছে, রবে চিরকাল।
দ্বারে গালি খেয়ে ফিরে যায় নিতি ভিখারী ও
ভিখারিনী,
তারি মাঝে কবে এলো ভোলানাথ গিরিজায়া, তা
কি চিনি!
তোমার ভোগের হ্রাস হয় পাছে ভিক্ষা-মুষ্টি দিলে,
দ্বারী দিয়ে তাই মার দিয়ে তুমি দেবতারে
খেদাইলে।
সে মার রহিল জমা-
কে জানে তোমার লাঞ্ছিতা দেবী করিয়াছে
কিনা ক্ষমা!
বন্ধু, তোমার বুক-ভরা লোভ, দু’-চোখে স্বার্থ-ঠুলি,
নতুবা দেখিতে, তোমারে সেবিতে দেবতা হয়েছে
কুলি।
মানুষের বুকে যেটুকু দেবতা, বেদনা-মথিত সুধা,
তাই লুটে তুমি খাবে পশু? তুমি তা দিয়ে মিটাবে
ক্ষুধা?
তোমার ক্ষুধার আহার তোমার মন্দোদরীই জানে
তোমার মৃত্যুবাণ আছে তব প্রাসাদের কোনখানে!
তোমারি কামনা রাণী,
যুগে যুগে পশু, ফেলেছে তোমায় মৃত্যু-বিবরে টানি।


সর্বহারা

ব্যথার সাতার-পানি-ঘেরা
চোরাবালির চর,
ওরে পাগল! কে বেঁধেছিস
সেই চরে তোর ঘর?
শূন্যে তড়িৎ দেয় ইশারা,
হাট তুলে দে সর্বহারা,
মেঘ-জননীর অশ্রুধারা
ঝ’রছে মাথার’ পর,
দাঁড়িয়ে দূরে ডাকছে মাটি
দুলিয়ে তরু-কর।।
কন্যারা তোর বন্যাধারায়
কাঁদছে উতরোল,
ডাক দিয়েছে তাদের আজি
সাগর-মায়ের কোল।
নায়ের মাঝি! নায়ের মাঝি!
পাল তু’লে তুই দে রে আজি
তুরঙ্গ ঐ তুফান-তাজী
তরঙ্গে খায় দোল।
নায়ের মাঝি! আর কেন ভাই?
মায়ার নোঙর তোল্।
ভাঙন-ভরা ভাঙনে তোর
যায় রে বেলা যায়।
মাঝি রে! দেখ্ কুরঙ্গী তোর
কূলের পানে চায়।
যায় চ’লে ঐ সাথের সাথী
ঘনায় গহন শাঙন-রাতি
মাদুর-ভরা কাঁদন পাতি’
ঘুমুস্ নে আর, হায়!
ঐ কাঁদনের বাঁধন ছেঁড়া
এতই কি রে দায়?
হীরা-মানিক চাসনি ক’ তুই,
চাস্নি ত সাত ক্রোর,
একটি ক্ষুদ্র মৃৎপাত্র-
ভরা অভাব তোর,
চাইলি রে ঘুম শ্রানি–হরা
একটি ছিন্ন মাদুর-ভরা,
একটি প্রদীপ-আলো-করা
একটু-কুটীর-দোর।
আস্ল মৃত্যু আস্ল জরা,
আস্ল সিঁদেল-চোর।
মাঝি রে তোর নাও ভাসিয়ে
মাটির বুকে চল্!
শক্তমাটির ঘায়ে হউক
রক্ত পদতল।
প্রলয়-পথিক চ’ল্বি ফিরি
দ’লবি পাহাড়-কানন-গিরি!
হাঁকছে বাদল, ঘিরি’ ঘিরি’
নাচছে সিন্ধুজল।
চল্ রে জলের যাত্রী এবার
মাটির বুকে চল্ ।।


সাম্যবাদী

গাহি সাম্যের গান-
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান
যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্লিম-ক্রীশ্চান।
গাহি সাম্যের গান!
কে তুমি?- পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল,
গারো?
কন্ফুসিয়াস্? চার্বআখ চেলা? ব’লে যাও, বলো
আরো!
বন্ধু, যা-খুশি হও,
পেটে পিঠে কাঁধে মগজে যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব
বও,
কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত-বাইবেল-ত্রিপিটক-
জেন্দাবেস্তা-গ্রন্থসাহেব প’ড়ে যাও, য্ত সখ-
কিন্তু, কেন এ পন্ডশ্রম, মগজে হানিছ শূল?
দোকানে কেন এ দর কষাকষি? -পথে ফুটে তাজা ফুল!
তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান,
সকল শাস্র খুঁজে পাবে সখা, খুলে দেখ নিজ প্রাণ!
তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার,
তোমার হৃষয় বিশ্ব-দেউল সকল দেবতার।
কেন খুঁজে ফের’ দেবতা ঠাকুর মৃত পুঁথি -কঙ্কালে?
হাসিছেন তিনি অমৃত-হিয়ার নিভৃত অন্তরালে!
বন্ধু, বলিনি ঝুট,
এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট।
এই হৃদ্য়ই সে নীলাচল, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন,
বুদ্ধ-গয়া এ, জেরুজালেম্ এ, মদিনা, কাবা-ভবন,
মস্জিদ এই, মন্দির এই, গির্জা এই হৃদয়,
এইখানে ব’সে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয়।
এই রণ-ভূমে বাঁশীর কিশোর গাহিলেন মহা-গীতা,
এই মাঠে হ’ল মেষের রাখাল নবীরা খোদার
মিতা।
এই হৃদয়ের ধ্যান-গুহা-মাঝে বসিয়া শাক্যমুনি
ত্যজিল রাজ্য মানবের মহা-বেদনার ডাক শুনি’।
এই কন্দরে আরব-দুলাল শুনিতেন আহবান,
এইখানে বসি’ গাহিলেন তিনি কোরানের সাম-
গান!
মিথ্যা শুনিনি ভাই,
এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।


জীবন বন্দনা

গাহি তাহাদের গান
ধরণীর হাতে দিল যারা আনি ফসলের ফরমান
শ্রম কিনাঙ্ক কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি তলে
ত্রস্তা ধরনী নজরানা দেয় ডালি ভরে ফুলে
ফলে ।
বন্য শ্বাপদ সঙ্কুল জরা মৃত্যু ভীষণা ধরা
যাদের শাসনে হল সুন্দর কুসুমিতা মনোহরা ।
যারা র্ববর হেথা বাঁধে ঘর পরম অকুতোভয়ে
বনের ব্যাঘ্র ময়ূর সিংহ বিবরের ফনী লয়ে ।
এলো দুর্জয় গতি বেগ সম যারা যাযাবর শিশু
তারাই গাহিল নব প্রেম গান ধরনী মেরীর
যীশু
যাহাদের চলা লেগে
উল্কার মত ঘুরিছে ধরণী শূন্যে অমিত বেগে।
খেয়াল খুশিতে কাটি অরণ্য রচিয়া
অমরাবতী
যাহারা করিল ধ্বংস সাধন পুন চঞ্চলমতি
জীবন আবেগ রুধিতে না পারি যারা উদ্ধত
শির
লঙ্ঘিতে গেল হিমালয় গেল শুষিতে সিন্দু
নীর ।
নবীন জগৎ সন্ধানে যারা ছুটে মেরু
অভিযানে
পক্ষ বাঁধিয়া উড়িয়া চলেছে যাহারা
উদ্ধপানে।
তবুও থামে না যৌবন বেগ জীবনের উল্লাসে
চলেছে চন্দ্র মঙ্গল গ্রহে স্বর্গে
অসীমাকাশে ।
যারা জীবনের পসরা বহিয়া মৃত্যুর দ্বারে
দ্বারে
করিতেছে ফিরি ভীম রণভূমে প্রাণ বাজি
রেখে হারে ।
আমি মরু কবি গাহি সেই বেদে বেদুঈনদের
গান
যুগে যুগে যারা করে অকারণ বিপ্লব অভিযান।
জীবনে আতিশয্যে যাহারা দারুণ উগ্র সুখে
সাধ করে নিল গরল পিয়ালা বর্শা হানিল
বুকে ।
আষাঢ়ের গিরি নিঃস্রাব সম কোন বাধা
মানিল না
বর্বর বলি যাহাদের গালি পাড়িল ক্ষুদ্রমনা
কুপ মন্ডুক অসংযমীর আখ্যা দিয়াছে যারে
তারি তারে ভাই গান রচে যাই বন্দনা করি
তারে ।



খুকী ও কাঠবেড়ালি

কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি!
পেয়ারা তুমি খাও?
গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও?
বাতাবি নেবু? লাউ?
বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর-ছানা?
তাও?-
ডাইনি তুমি হোঁৎকা পেটুক,
খাও একা পাও যেথায় যেটুক!

বাতাবি-নেবু সকল্গুলো
একলা খেলে ডুবিয়ে নুলো!
তবে যে ভারি ল্যাজ উঁচিয়ে
পুটুস পাটুস চাও?
ছোঁচা তুমি! তোমার সঙ্গে আড়ি
আমার! যাও!
কাঠবেড়ালি! বাঁদরীমুখী!


চল্ চল্ চল্

চলৃ চলৃ চলৃ !
ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল
নিম্নে উতলা ধরণি তল,
অরুণ প্রাতের তরুণ দল
চল রে চল রে চল
চল চল চল।।

ঊষার দুয়ারে হানি' আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত,
আমরা টুটাব তিমির রাত,
বাধার বিন্ধ্যাচল।

নব নবীনের গাহিয়া গান
সজীব করিব মহাশ্মশান,
আমরা দানিব নতুন প্রাণ
বাহুতে নবীন বল!
চল রে নও-জোয়ান,
শোন রে পাতিয়া কান
মৃত্যু-তরণ-দুয়ারে দুয়ারে
জীবনের আহবান।
ভাঙ রে ভাঙ আগল,
চল রে চল রে চল
চল চল চল।।

কোরাসঃ
ঊর্ধ্ব আদেশ হানিছে বাজ,
শহীদী-ঈদের সেনারা সাজ,
দিকে দিকে চলে কুচ-কাওয়াজ—
খোল রে নিদ-মহল!
কবে সে খেয়ালী বাদশাহী,
সেই সে অতীতে আজো চাহি'
যাস মুসাফির গান গাহি'
ফেলিস অশ্রুজল।
যাক রে তখত-তাউস
জাগ রে জাগ বেহুঁশ।
ডুবিল রে দেখ কত পারস্য
কত রোম গ্রীক রুশ,
জাগিল তা'রা সকল,
জেগে ওঠ হীনবল!
আমরা গড়িব নতুন করিয়া
ধুলায় তাজমহল!
চল্ চল্ চল্।।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:৪৩

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
চমৎকার কাজ।

০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:৫৪

আবদুর রব শরীফ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয় ৷

২| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:২০

সুমন কর বলেছেন: নাইস শেয়ার।

০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:২২

আবদুর রব শরীফ বলেছেন: ধন্যবাদ ব্রো...

৩| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৯

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, নজরুলের আদর্শে অনুপ্রাণিত হউক নবযৌবন।

০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৭

আবদুর রব শরীফ বলেছেন: আপনাকে ও ধন্যবাদ ৷

৪| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৪৭

সোহেল মাহমুদ বলেছেন:
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় কবির কবিতা শেয়ার করার জন্য।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮

আবদুর রব শরীফ বলেছেন: আপনাকে ও ধন্যবাদ ৷

৫| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫

আনাস মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৪২

আবদুর রব শরীফ বলেছেন: ধন্যবাদ পেয়ে খুশি লাগলো ৷ :#)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.