নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯) ৭।শহরনামা (উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২), ৮। মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ, ২০২৩), ৯। নির্বাচিত দেবদূত(গল্পগ্রন্থ, ২০২৪), ১০। দেওয়ানেগির চল্লিশ কানুন/ফরটি রুলস অফ লাভ (অনুবাদ, ঐতিহ্য, ২০২৪)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

সূতির খালের হাওয়া ২২ঃ প্রেমের সম্পর্ক, দিনের শেষে আসলে মায়ের হাতের রান্নার মতোই

০২ রা জুলাই, ২০২১ রাত ৮:৫৯

১।
বাসার খাবার একদম না খেয়ে টেকআউটের বার্গার, পিজা হাটের পিজা, সুলতান'স ডাইনের কাচ্চি, বা আলফ্রেস্কোর পাস্তা - সকাল দুপুর বিকেল রাত, বাঙ্গালীর সন্তান টানা কতোদিন খেতে পারবে?
.
অন্যের কথা জানি না, আমার শরীর খুব অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাসার ভাত - ডাল - মাছ - মুরগি - পালং আর ডাটা শাকের অভাবে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, যতই বার্গার - ফ্রায়েড রাইস - পিজা - পাস্তা - কাচ্চি অফার করা হোক না কেন।
.
মায়ের হাতের রান্না, বা বাসার খাবারের সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক, তা আবেগের, অভ্যাসের, ভালোবাসার।
.
প্রশ্ন হচ্ছে, মায়ের হাতের রান্না ব্যাপারটা কি শুধুই রান্নার স্বাদের সঙ্গে জড়িত?
.
শুধুমাত্র স্বাদের জন্যেই এতটা স্পেশাল, বাসার খাবার, আমাদের কাছে?
.
মনে হয় না।
.
এখানে আসলে অভ্যস্ততার ব্যাপারটাই মুখ্য।
.
প্রথমত, এই খাবার খেয়েই আমরা ছোট থেকে বড় হয়েছি। দ্বিতীয়ত, শুধু খাবার নয়, বাসায় পরিচিত মুখগুলির সঙ্গে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে মিলিত হওয়া, একসাথে এক টেবিলে বসে খাওয়া, নিজের জন্যে আলাদা একটি প্লেট, একটি গ্লাস। পরিচিত - নিরাপদ পরিবেশে সারাদিনের গল্প হাসি আনন্দে একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করা। এই সব মিলিয়েই মায়ের হাতের রান্না, বা বাসার খাবার।
.
প্রেমের সম্পর্কটাও ঠিক অমন।
.
একজন সুনির্দিষ্ট মানুষের প্রতি - ই নিজের ভালোবাসা অনুরাগ, বিশেষ অধিকার, দাবী খাটানো, পজেসিভনেস। তাকেই স্পর্শ করা, জড়িয়ে ধরা।
.
একই মানুষের সঙ্গে সকালবেলা গুডমর্নিং আর রাতে গুডনাইট টেক্সট শেয়ার করা। মধ্যে নিয়মিত বিরতিতে সারাদিনের কর্মকাণ্ড শেয়ার করা। ঐ মানুষটার সুখে সুখী আর দুখে দুঃখী হওয়া।
.
এতোগুলো গুরুত্বপূর্ণ আবেগ, একটি নির্দিষ্ট মানুষের প্রতি দিনের পর দিন হৃদয় থেকে প্রবাহিত হতে থাকলে তার প্রতি আমাদের এক বিশেষ নির্ভরশীলতা গড়ে ওঠে।
.
দুঃখের বিষয় হল, এরকম ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও ভেঙ্গে যায়। ব্রেকআপ হয়, যেমনটা আমরা বলি আজকের ভাষায়।
.
যে মানুষটির সঙ্গে এতো এতো গুরুত্বপূর্ণ সব ইমোশন জড়িত তাকে হুট করে হারিয়ে ফেলে দিশেহারা লাগে।
.
২।
ব্যাপারটা আমরা ভিজুয়ালাইজ করতে পারি।
.
ধরুন আপনার হৃদপিণ্ড থেকে বের হয়ে আসা বেশকিছু তার থেকে তরল প্রবাহিত হচ্ছে।
.
পারস্পারিক বিশ্বাসের তার - তা থেকে প্রবাহিত তরলের রঙ অফ হোয়াইট।
ভালোবাসার তার - তা থেকে প্রবাহিত তরলের রঙ লাল।
পজেসিভনেসের তার - তা থেকে প্রবাহিত তরলের রঙ সবুজ।
ছেলেমানুষি দুষ্টামির তার - তা থেকে প্রবাহিত তরলের রঙ নীল।
শারীরিক আকর্ষনের তার - তা থেকে প্রবাহিত তরলের রঙ সোনালী।
.
এরকম ছোট বড়, জানা অজানা আরও অনেক তার আপনার হৃদপিণ্ড থেকে নির্গত হয়ে জুড়ে আছে আপনার ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে। এই সংযুক্ত তারগুলোর মাধ্যমে আপনাদের অভিন্ন অনুভূতিগুলো ট্রান্সফার হত একজন থেকে আরেকজনের শরীরে।

.
একদিন ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ করে খেয়াল করলেন, আপনার হৃদয়ের সঙ্গে জড়িত তারগুলোর অপরপ্রান্ত ছেঁড়া। যার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল, সে নিজের দিক থেকে কেটে সে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। আপনি তাকে খুঁজে পাচ্ছেন না আর।
.
এদিকে আপনার হৃদয় থেকে নির্গত যে অনুভূতি তারগুলো থেকে তরলাকারে প্রবাহিত হত, তার প্রবাহ বন্ধ হচ্ছে না। কারণ আপনি এখনও মানুষটিকে বিশ্বাস করেন, ভালোবাসেন, তাকে অন্যকারো সঙ্গে দেখলে আপনার শরীরে আগুণ ধরে যায়, তারসঙ্গেই কেবল আপনি আপনার চরিত্রের ছেলেমানুষি দিকটি মেলে ধরতে পারেন, অন্যসবার সঙ্গে আপনার খুব সিরিয়াস একটা ফেইস মেনটেইন করা লাগে, আপনার শরীরের ভাষাও তার শরীরের চে' ভালো কেউ আর বোঝে না।
.
আপনার হৃদয়ের ছেঁড়া গ্রন্থি থেকে প্রবাহিত হচ্ছে সমস্ত রঙের তরল, আর আপনি বসে আছেন একা। অফ হোয়াইট - লাল - নীল - সবুজ - সোনালী রঙে একাকার চারিদিক।
.
৩।
এই বিচ্ছেদের কষ্ট সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চলে যাবে - যেভাবে করে সবাই মায়ের হাতের রান্নার অভাব ভুলে যায় একদিন।
.
মায়ের হাতের রান্না চিরদিনের বস্তু তো নয়। হৃদয়ের যত কাছের, যত গভীরের সে বস্তু হোক কারো মা চিরদিন থাকে না। থাকে না মায়ের হাতের রান্নাও। থাকে না ছোটবেলার সে নিরাপদ পারিবারিক পরিবেশ। খাবার টেবিলে চেনা মুখগুলো বদলে যায়। নতুন মুখ এসে সংযুক্ত হয়। তখন তাদের আমরা আমাদের পরিবার বলি। নতুনভাবে গড়ে ওঠে আমাদের ভালোবাসার সম্পর্ক। তখন হয়তো আমরা আর আগের মানুষটা থাকি না। আগে কারো সন্তান ছিলাম আমরা। সময়ের পালাবদলে আমরা গিয়ে বসি বাবা-মায়ের চেয়ারে। আগে আমরা ইনসিকিওর ফিল করতাম, খাবার টেবিলে বাবা-মা, বড় ভাই বা বোনকে না দেখলে। পরবর্তীতে আমরা নিজেরা পজেসিভ ফিল করি খাবার টেবিলে উপস্থিত নিজের সন্তানকে/দের নিয়ে / ব্যাপারে।
.
ব্রেকআপের ঠিক পর পর আমাদের অন্য আরেকজন মানুষের প্রতি নিজের খুব ঘনিষ্ঠ, আপন, এবং স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের নল পুনরায় সক্রিয় করতে অস্বস্তি বোধ হয়। মনে হয়, আবারো হৃদগ্রন্থির তার ছিঁড়ে নতুন মানুষটিও উধাও হয়ে যাবে। আমরা দিনের পর দিন বিশ্বাসের, ভালোবাসার, ছেলেমানুষির নল বন্ধ করে রেখে দিই। ভয়ে। অথবা আগেরজনের প্রতি ভালোবাসা এখনও শুকিয়ে যায় নি বলে।

.
সময় লাগবে। কিন্তু আবার ঠিক হয়ে যাবে সব। যেমন আস্তে আস্তে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে ওঠে মায়ের হাতের রান্না ছাড়া। যেমন আস্তে আস্তে মানুষ বাসার খাবারের সংজ্ঞা বদলে ফেলে। তেমনি আবারো মনের ছেঁড়া তার জোড়া লাগানোর মতো মন পাওয়া যাবে। আবারো আগের গতিতে, বা তারচেয়েও অনেক ভালোভাবে হবে প্রেম ও বিশ্বাসের সম্পর্কের পুনঃস্থাপন।
.
প্রেমের সম্পর্ক, দিনের শেষে আসলে মায়ের হাতের রান্নার মতোই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.