নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯) ৭।শহরনামা (উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২), ৮। মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ, ২০২৩), ৯। নির্বাচিত দেবদূত(গল্পগ্রন্থ, ২০২৪), ১০। দেওয়ানেগির চল্লিশ কানুন/ফরটি রুলস অফ লাভ (অনুবাদ, ঐতিহ্য, ২০২৪)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ কার্তিকের ঘ্রাণ

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১০

সামান্য বৃষ্টি হয়েছে মাত্র। যেন আকাশের পীঠ কার্তিকের মিঠে রোদে খানিকটা তেঁতে ঘেমে উঠেছিল। বৃষ্টিরূপে আকাশ সেই ঘাম যেন গা ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিল। আবার রোদ উঠেছে, আরও বেশী হলুদ, আরও বেশী নরম, আরও অনেক বেশী মিঠে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে লোকালয় থেকে অনেক দূরের কোন ধানক্ষেতে নুয়ে থাকা হেমন্তের ফসলও তার মিঠে ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে এই শেষ বিকেলে। হয়ে উঠেছে আরও আবেদনময়ী। মুদ্রার ওপীঠে যাদের বসবাস, শহরনিবাসী সেই প্রেমিকদের মন আরও আনচান হয়ে উঠবে এই শেষ বিকেলের এই ঝিকিমিকি আলোয়, নিজের হারানো প্রেম আর অবিস্মরণীয় কোন এক প্রেমিকার সাথে কাটানো সোনাঝরা মুহূর্তগুলির স্মরণে। শত শত মাইল দূরের কোন ফসলের ক্ষেতের সে মোহময় নেশাধরা ঘ্রাণ যেন চারশ' বছরের পুরাতন নগরী ঢাকার বাতাসে ভেসে আমার কক্ষের দক্ষিণ পাশের জানালা দিয়ে প্রবেশ করে। আমার সামনে দীর্ঘক্ষণ ঘরের ছাতের দিকে আনমনা হয়ে তাকিয়ে থাকা শওকত সাহেব অবশেষে মুখ খোলেন -

-"হ্যাভ ইউ এভার ফলেন ইন লাভ, মিঃ কাওসার? হ্যাভ ইউ এভার?"

শওকত সাহেবের চোখের মণি থেকে আলো ঠিকরে পরে। সে আলোর উৎস কোথায়, মনে হয় আমি সেটা জানি। অনেক দূরের একটা পথ হেঁটে পাড়ি দিয়ে গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছে খানিকটা দূরে থাকা অভীষ্ট লক্ষ্যের ওপর নজর পড়লে যে অনুভূতি সৃষ্টি হয় ক্লান্ত-শ্রান্ত এক পথিকের মনে, তার চোখেমুখে যে আনন্দের দ্যুতি খেলা করে, এ অনেকটা সেরকম দ্যুতি। অথবা কোনকিছু একদম মনপ্রান দিয়ে চাওয়ার পর তা পেলেন আপনি, এরপর যদি হঠাৎ সেটা হারানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, তবে যে শঙ্কা চোখেমুখে ফুটে উঠবে, শওকত সাহেবের চেহারা এখন অনেকটা সেরকম। জীবনে প্রথম প্রেমে পড়লে কারও চোখেমুখে যে আনন্দ এবং উৎকণ্ঠার আলো-আঁধার খেলা করে - শওকত সাহেবের চোখেমুখে এখন সে আলো খেলা করছে।

শওকত সাহেব কথা বলতে থাকেন, আমি শুনতে থাকি-
" ইফ ইউ হ্যাভ এভার ফলেন ইন লাভ, শুধুমাত্র তাহলেই আপনি বুঝবেন প্রেমে পড়ার সমস্যাটা কোথায়। ধরুন একটা মেয়ে, যার সাথে সর্বক্ষণ আপনার দেখাসাক্ষাৎ হচ্ছে, এক সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন,খাচ্ছেন, আড্ডা দিচ্ছেন, এসবকিছুর ফাঁকেই আপনি আবিষ্কার করলেন যে এই মেয়েটিকে ছাড়া আপনার চলবে না, আপনি থাকতে পারবেন না বা পারছেন না এক মুহূর্তও, তখনই সমস্যার শুরু হবে। সমস্যাটা আমার জন্যে দাঁড়িয়েছে এক সর্বগ্রাসী ভয় হয়ে। ওকে হারানোর ভয়।"

বলতে বলতে শওকত সাহেব আবারো আনমনা হয়ে যান, তাকিয়ে থাকেন জানালা দিয়ে বাইরে। এই দালানের পাশেই, একটু দূরে রবীন্দ্র সরোবর। এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায় দলবেঁধে ছেলেমেয়েদের আড্ডা, শোনা যায় গিটারের টুংটাং, হেঁড়ে গলার গান। শওকত সাহেব তাকিয়ে আছেন সেদিকেই। কিন্তু আমি স্পষ্ট বলতে পারি, তার মন সেখানে সেই গানের আড্ডায় নেই। কিছুক্ষনের মধ্যেই তিনি তার হাতদুটো চিবুকের নীচে জড় করে আবার কথা বলতে আরম্ভ করলেন। তার দৃষ্টি এখন মেঝেতে, যেন ওখানে তাকিয়ে তিনি তার প্রেমিকার মুখ দেখতে পাচ্ছেন স্পষ্ট।

"ভেতরে সারাদিন, সারাক্ষণ হতাশা কাজ করে, বুঝলেন? প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আমার আশেপাশের সবগুলো ছেলের সাথে নিজের তুলনা টেনে আনি। রাস্তায় হাঁটলে মনে হয়, রিকশায় চড়ি না কেন? এতই গরীব আমি? আবার রিকশায় বসে থাকা অবস্থায় পেছনে বা পাশের প্রাইভেট কার হর্ন বাজালে একবার মনে হয় নেমে একটা চড় দেই ড্রাইভারটাকে, আরেকবার মনে হয় - নিজের একটা প্রাইভেট কার থাকলে কতই না ভালো হত। দেখুন আমি এটা বলছি না, যে মেয়েটার প্রেমে আমি পড়েছি ওর টাকা-পয়সার ব্যাপারে খুব কনসার্ন । ওকে দেখে কখনোই আমার সেটা মনে হয় নি। আমি শুধু বলতে চাইছি যে, হতাশা কাটে না। আপনার পাশে বসে সে যদি কোন হ্যান্ডসাম ছেলের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকায়, আপনার পক্ষে সেটা সহ্য করা সম্ভব হবে না। আপনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত চেহারা সচেতন হয়ে উঠবেন। রাস্তায় চলার পথে আশেপাশের যতগুলো আয়না পড়বে, আপনি সবগুলোতেই বারবার বারবার করে নিজের চেহারা দেখবেন। মাথার তালুর দিকে চুল পড়ে খানিকটা যে খালি হয়ে গিয়েছে, আপনি বারবার চেষ্টা করবেন আশেপাশের চুল টেনে এনে তা ঢেকেঢুকে রাখার। শার্টের কাপড় টেনে গন্ধ শুঁকে বারবার বোঝার চেষ্টা করবেন সকালে বাসা থেকে বের হবার সময় শরীরে পারফিউমের বোতল প্রায় খালি করে দিয়ে পারফিউম লাগিয়েছিলেন, সেটা এখনও কাজ করছে কিনা। মনে মনে কসম কাটবেন, আজ বাসায় ফিরেই একটা বডি স্প্রে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখবো। জুতো পালিশ করা না থাকলে, বা পালিশ করা জুতোর ওপর ধুলো জমলে সে নিয়ে আপনার আফসোসের সীমা থাকবে না। কাছেধারে ওয়াশরুম থাকলে বারবার বারবার আপনি ছুটে যাবেন বেসিনের সামনে। ভালো করে মুখ ধুয়ে চেহারায় পুনরায় একটা ফ্রেশ লুক এনে মেয়েটির পাশে গিয়ে বসার চেষ্টা করবেন। ঠারেঠোরে কথাবার্তায় বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করবেন যে, সে যে ছেলেটির দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে ছিল, হয়তো এক মুহূর্তের জন্যই, ছেলেটা আসলে কত বাজে এবং ওর কি কি ব্যাড রেপুটেশন আছে।"

একটু থামলেন তিনি। টেবিলের ওপর পানির গ্লাস হাতে তুলে নিলেন পানি পান করতে।কিছু মুহূর্ত পুনরায় নীরবতার দখলে চলে গেল। শওকত সাহেব তার বিরতিটুকু নিয়ে আবার শুরু করেন,

-" দেখুন মিঃ কায়সার, নোরার মত একটি মেয়ে যে আমাকে ভালবাসবে, সেটা আসলে আমি কখনও আশা করি নি, এখনও করি না। সমস্যা হয়েছে কি, ওকে আমি প্রথম যেবার দেখেছিলাম ডিপার্টমেন্টের করিডোরে - সে দৃশ্যটা এমনভাবে আমার মাথায় গেঁথে গিয়েছে যে আমি বহু চেষ্টা করেও সেটা ভুলতে পারছি না। এক মুহূর্তের জন্যেও না। ওকে প্রথম দেখি যখন ও ডিপার্টমেন্টের করিডোরে দাঁড়িয়ে ছিল। চশমা তো চোখে পড়ার জিনিস, তাই না? কিন্তু ওর চশমা ছিল মাথায় গোঁজা। করিডোরের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে শেক্সপিয়রের হ্যামলেটের পাতা উল্টাচ্ছিল তখন। এটা, এটা একটা ডিভাইন দৃশ্য বুঝলেন... পৃথিবীতে এক শ্রেণীর মানুষ আছে, যাদের বৈশিষ্ট্য হল যে তারা পড়ুয়া, মেধাবী মানুষের প্রেমে পড়ে। আমার হিস্টোরিও অনেকটা ওরকম। নোরার মত সুন্দরী একটা মেয়ে, তারপরে আবার দাঁড়িয়ে আছে শেক্সপিয়রের একটি বই হাতে - জাস্ট চিন্তা করুন একবার! তারপর... তারপর কি হল জানেন? বারান্দা দিয়ে ভেসে আসা দমকা হাওয়ায় ওর কিছু চুল এসে পড়লো চোখে মুখে। হাত দিয়ে সরাবার বদলে ও করলো কি - ফুঁ দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে নিলো কপালের ওপর থেকে! এই দৃশ্যটা... এই দৃশ্যটা আমার মনে এমনভাবে আঘাত করেছে যে আমি এখন পর্যন্ত যতবার চোখ বন্ধ করি, দৃশ্যটা আমার চোখে ভেসে আসে। এ গার্ল লাইক হার, দ্যাটস অল আই এভার ওয়ান্টেড ইন মাই লাইফ...

হাউএভার, ইট ওয়াজ এ গ্যাম্বল... জুয়া ছিল... মানুষের চেহারা দেখে কি কিছু বোঝা যায়? যায় না। বাট আই ফল ফর হার জাস্ট বাই লুকিং অ্যাট হার ফর এ সিঙ্গেল গ্লান্স। ঠিক ওর চেহারা দেখে না বা ওর বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে না। ওর দাঁড়ানোর ভঙ্গী, ওর বইটা ধরার স্টাইল, বইয়ের পাতায় ওর মনোযোগ, ওর একাগ্রতা, ওর পোশাক পরিচ্ছদের রুচিশীলতা - সব মিলিয়ে সে যে কি একটা দৃশ্য!
যাই হোক, আমি বুঝতে পারলাম, ওর প্রতি আমার এ অনুভূতির কথা জানাতে হবে ওকে, যেভাবেই হোক। কোনকিছু চিন্তা ভাবনা না করেই আই রোট এ লেটার ফর হার। আমি ওকে খুলে বললাম বিস্তারিত। চিঠিতে ওকে এটাও বলেছিলাম যে ওর সাথে ঠিকঠাক পরিচয়ের আগেই যে ওকে প্রপোজ করে বসলাম, এটা হয়তো ছ্যাবলামো মনে হতে পারে। এটাও হতে পারে যে এমন চিঠি ওকে আমার আগেও অনেক ছেলে লিখেছে। এও হতে পারে যে ও বাড়ি গিয়ে হয়তো এ চিঠি একদম না পড়েই ছিঁড়ে ফেলে দেবে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল যে ওকে আমার মনের কথাগুলো না খুলে বলার ফলাফল হয়তো তার থেকেও ভয়াবহ হবে। হয়তো আমার আগেই ওকে কেউ প্রপোজ করে ফেলবে। হয়তো ও আর কারো হয়ে যাবে। আমি ওকে হারাবো আর আমার সামনে দিয়ে ও অন্য আর একটা ছেলের হাত ধরে হাঁটবে - এ দৃশ্য আমি সহ্য করতে পারতাম না।

তেমন কোন ভাবনাচিন্তা ছাড়াই চিঠি দিলাম ওর হাতে। নিজেই দিলাম, সাহস করে। বললাম যে আমার কিছু কথা জানানো দরকার, মুখে বলার থেকে লিখে জানাতেই আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছি। ও চিঠিটা নিলো আমার হাত থেকে। নিলো খুব অবাক হয়ে। সেই মুহূর্তটাতে আমার দিকে যে ওর চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকা, কাওসার সাহেব! বিশ্বাস করুন! জীবনে কম নারীর সংস্পর্শে আসিনি আমি, কিন্তু সেই যে চোখ, সেই যে চোখের দৃষ্টি - অমনটা একজোড়া চোখ আমি আমার জীবনে আর কখনোই দেখি নি। আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়েই চিঠিটা পুরো পড়লো সে। পড়া শেষ হলে চিঠিটা আমাকে ফেরত না দিয়ে ভাঁজ করে নিজের ব্যাগের ভেতর ঢুকিয়ে রাখল। আমার চোখে চোখ রেখে ও বলল যে সে কৃতজ্ঞ আমার কাছে চিঠিটার জন্যে। এত সুন্দর করে ওকে কেউ কোনদিন মনের কথা বলে নি। সে জানালো, আমার অনুভূতিকে সে সম্মান করে, কিন্তু এই মুহূর্তে তার কিছুই করার নেই। সে আর একটা ছেলের সাথে সম্পর্কে আছে। ছেলেটাকে সে তার মনের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসে।"

শওকত সাহেব একদম শুন্য দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন, গভীর হতাশায় পরিপূর্ণ একজোড়া চোখ আমাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিল। একজোড়া চোখ, যাতে জীবন নিয়ে কোনরকম চাওয়া-পাওয়া বা চাহিদা অবশিষ্ট নেই আর।
"কায়সার সাহেব, একটা মনের আয়তন কতটুকু? কত একর? কত মাইল? জানেন আপনি? আমি জানি না। আমার মনে হয় নোরাও জানত না। কথাটা বলছি এই কারণে যে - আমার তো ওর পুরো মনের দখল নেবার ইচ্ছে ছিল না, হয়তো সে যোগ্যতাও আমার নেই। কিন্তু, ও আমাকে ওরকম সরাসরি - না, না বললেও হয়তো পারত। ওর মনে ছোট্ট একটুখানিক জায়গা, এতেই আমার বেশ চলে যেত কিন্তু!"

শওকত সাহেব কাশা শুরু করলেন। বেদম কাশি। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। চেয়ার থেকে উঠে জলদি আমার টেবিলে থাকা খালি গ্লাসটি পানিতে ভরে তার হাতে তুলে দিয়ে তার পীঠে হাত বুলাতে লাগলাম। তিনি কাশির দমক চেপে কোনক্রমে পানিটুকু খেয়ে শেষ করলেন।

"কাওসার সাহেব, জুয়াড়ি জুয়া খেলতে নামে সবচে' খারাপ পরিণতি কি হতে পারে সেটা মাথায় রেখে। সে জানে, খোয়ালে সে সর্বোচ্চ তার টাকা খোয়াবে, সম্পত্তি খোয়াবে। কিন্তু আমি জুয়া খেলতে নেমেছিলাম কোন পরিনতির কথা চিন্তা না করেই।"

শওকত সাহেব আবার বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন মেঝের দিকেতে।

"ওর সাথে এই কথোপকথনটুকু হবার পর আমি শুন্য মস্তিষ্কে কোনক্রমে হেঁটে ওর সামনে থেকে চলে আসি। মনে ছিল ভোঁতা এক অনুভূতি। ঠিক বুঝতে পারছিলাম না- কি হতে কি হয়ে উঠলো অথবা এই যে ও আমাকে রিফিউজ করে দিলো, এর পরিণতি কি হতে পারে। পরিণতি যেটা হল আমার, তার জন্যে আমি বিন্দুমাত্রও প্রস্তুত ছিলাম না। আমাকে ভয়াবহ বিষণ্ণতা গ্রাস করে নিতে আরম্ভ করে ধীরে ধীরে। ক্লিনিক্যাল ল্যাঙ্গুয়েজে সেটাকে বলে ডিপ্রেশন। জীবনের প্রতি আমার সমস্ত আগ্রহ, সমস্ত স্পৃহা আস্তে আস্তে উঠে যেতে আরম্ভ করলো। আমি আর কিছুই ঠিকভাবে করতে পারছিলাম না। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, কাউকেই আমার সহ্য হচ্ছিল না। অবশ্য ওদেরও তো দোষ দিতে পারি না! ওরাই বা কি করবে আমার এই অবস্থায়?"

গালে হাত বুলিয়ে তিনি বলেন -

"এই যে দেখেছেন মাসখানেকের শেভ না করা দাঁড়ি? বন্ধুবান্ধবরা সব দেবদাস বলে এখন আমাকে। বলে বলুক, কি আসে যায়? ওদের কথা একদমই গায়ে লাগাই না আমি।"

এইসব হতাশার কথা বলতে বলতেই আবার তার চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে -

"তবে এখানেই শেষ নয় মিঃ কায়সার। নোরার খুব ঘনিষ্ঠ এক বান্ধবীর কাছ থেকে খবর পেয়েছি, নোরার সাথে এখন আর ওর সে বয়ফ্রেন্ডের রিলেশন নেই! রিলেশন নেই আসলে আগে থেকেই। আমি যখন ওকে চিঠিটা দিয়েছিলাম, তখনই ওদের সম্পর্কে নানা টানাপোড়েন চলছিল। কিন্তু তারপরেও সে রিলেশনটিকে সম্মান দেখিয়ে, নিজের আত্মসম্মান বজায় রেখেই ও আমাকে রিফিউজ করে দেয়। এরই মাঝে ওদের ব্রেকআপ হয়ে ছ' ছ'টি মাসও কেটে গেছে। নোরা আমাকে একবারও জানায় নি, আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টাও করে নি।"

শওকত সাহেব কিছুক্ষণ থেমে ভরাট গলায় বললেন -

"মিঃ কায়সার, নোরা আমার সাথে আগামীকাল দেখা করতে চেয়েছে!"

কথার মাঝেই হাসিতে উদ্বেল হয়ে উঠলো তার চেহারা। শিশুর মত খুশীতে উদ্ভাসিত এই লোকটির আনন্দ আমাকেও স্পর্শ করলো। আমি তার হাতে হাত মিলিয়ে বললাম -

" বাহ! কংগ্রাচুলেশন শওকত সাহেব! কংগ্রাচুলেশন! অনেক খুশী হলাম শুনে।"

শওকত সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বললেন -

"আপনার কি মনে হয় মিঃ কায়সার, কি হবে আগামীকাল? নোরা কেন দেখা করতে চেয়েছে আমার সাথে? ও কি আমাকে কিছু বলতে চায়? অথবা, আমার কাছ থেকে কিছু শুনতে চায় ও? কি করবো... আই মিন... কি বলবো ওকে আমি, কাল দেখা হলে? "

আমি শওকত সাহেবের প্রশ্ন শুনি, প্রতিবারের মতই হুট করে কোন উত্তর আমার মাথায় আসে না। একবার মনে হয়, লোকটাকে আমার অনেকগুলো কথা বলার আছে। কথাগুলো একে একে বলি তাকে। তারপর আবার মনে হয় - বলে কোন লাভ নেই। কারন কথাগুলো তার জন্যে কোন অর্থবহন করে না। ফলশ্রুতিতে কষ্ট করে পুনরায় মুখে হাসি ছড়িয়ে তাকে বলি -

"ভরসা রাখুন শওকত সাহেব, অবশ্যই ভালো কিছু হবে! বেশী চিন্তাভাবনা করে লাভ নেই। বেশী চিন্তা ভাবনা করা তাই উচিৎ ও নয়। দেখা করুন মিস নোরার সাথে আগামীকাল। শুনুন উনি কি বলেন। দেখবেন, সব ঠিক হয়ে যাবে।"

"বলছেন আপনি?" - হাসিমুখে প্রশ্ন করেন শওকত সাহেব, "নোরাকে ছাড়া আমি অনেক কষ্টে আছি মিঃ কায়সার। আশা করি নোরা ওর জন্যে আমার এই অনুভূতি বুঝবে। ও একটা সুযোগ দেবে আমাকে।"

আমি মুচকি হেসে হৃদ্যতার সাথে করমর্দন করি শওকত সাহেবের সাথে। শওকত সাহেব হাসি হাসি মুখে উঠে দাঁড়ান। এগিয়ে যান দরজার দিকে। দরজার কাছে হাত ধোয়ার বেসিনের ওপর যে বড় কাঁচের আয়না, তাতে তার চেহারার প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয়। মসৃণভাবে শেভ করা শওকত সাহেবের বৃদ্ধ কিন্তু পৌরুষদীপ্ত চেহারা ভেসে ওঠে। দরজার ওপাশে তার জন্যে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি তাকে নিয়ে লিফটের দিকে এগিয়ে যায়। মিনিটখানেকের মধ্যে আমি আমার চেম্বারের বিল্ডিং এর নীচ থেকে শব্দ করে একটা টয়োটা গাড়ি চলে যাবার আওয়াজ পাই। আমি আমার টেবিলের ওপর রাখা প্যাডে কিছু নোট নিয়ে ফাইলটা ক্লোজ করে রাখি। চেয়ারে বসে আমার আর কিছু করবার থাকে না, একটা ফোনকলের অপেক্ষা করা ছাড়া।

প্রতিবারের মতই মিনিটপাঁচেকের মধ্যে আমার ফোনে রিং হয়। আমি ফোন ধরি। দু' পাশ থেকেই প্রায় এক মিনিটের নিরবতার পর ফোনের ঐ পাশ থেকে আওয়াজ আসে।

- "শওকত চলে গিয়েছে?"
আমার কথা গুছিয়ে উঠতে সমস্যা হয়। ছোট করে বলি-
- "হ্যাঁ"
- "নতুন কিছু দেখলে? কোন পরিবর্তন?"
- "আগের মতই আছে। ভালো আছে।"
আবার একটা লম্বা সময় ধরে ফোনের ঐ পাশে নীরবতা।
- "এটাকে ভালো থাকা বলে কায়সার?"
এবার আমি চুপ করে থাকি। অধৈর্য লাগে। কষ্ট হয়।
- "নোরা, এভাবে আর কয়দিন নিজেকে কষ্ট দেবে তুমি?"

ফোনের ঐ পাশ থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসে। বিষণ্ণতা মাখা হাসি। সবার পক্ষে সে বিষণ্ণতার পাঠ নেয়া সম্ভব না। আমি সবসময়ই পারতাম । হয়তো শওকত সাহেবও পারতেন, কোন একসময়।

- "যতদিন পারি..."
আমি আর কথা খুঁজে পাই না। কিছুক্ষণ পর নোরা নিজেই বলে -
- "নেক্সট কবে আবার সময় দিতে পারবে কায়সার?"
- "সামনের সপ্তাহে। শুক্রবার বিকেলে একটা ফোন দিয়ে কনফার্ম করো।"
- "ভালো থেকো কায়সার"
আমি সামান্য হাসি। এরপর ফোন রেখে দিই।

কার্তিকের বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে আমার ক্লিনিকের জানালা জুড়ে। আমি চেয়ার টেনে নিয়ে জানালার পাশে গিয়ে বসি। গিটার বাজিয়ে গান গাইতে থাকা ছেলেমেয়েগুলো এরমধ্যেই চলে গেছে। চেয়ারটা টেনে নিয়ে আমি জানালার পাশে বসি। জানালা দিয়ে বাইরে পৃথিবীর যতটুকু দেখা যায় দু'চোখ ভরে দেখি আর ভাবি এই যে পৃথিবীর একটা সৌম্যশান্ত- স্নিগ্ধ রূপ দেখছি, এর আড়ালে যে কত অমীমাংসিত রহস্য রয়ে গেল! এর এই সাজানো গোছানো পরিপাটি রূপের আড়ালে কত অব্যক্ত যন্ত্রণা চাপা পড়ে রইল!

শওকত সাহেব, অথবা আমাদের শওকত ভাই, সপ্তাহে একদিন করে আসেন আমার চেম্বারে আমার সাথে দেখা করতে। নোরাকে নিয়ে তার ভালোবাসার গল্প শোনান। নোরাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ের কথা বলেন। শওকত ভাইয়ের সাথে তার স্মৃতি প্রতারণা করেছে আজ বছর দশেক। তার মনে নেই, নোরার সাথে তার বিয়ে হয়েছে আজ প্রায় বিশ বছর হল। শওকত ভাই যখন ভার্সিটি জীবন শেষ করছেন প্রায় তখন নোরা প্রথম বর্ষে একই ডিপার্টমেন্টে ছাত্রী হিসেবে ভর্তি হয়। আমিও নোরার সাথে একই বছর ভর্তি হই ভিন্ন একটি সাবজেক্টে, সাইকোলজিতে। দু'জনের প্রেম কাহিনী সকলের মুখে মুখে ফিরতো। ক্যাম্পাসের সেলিব্রেটি কাপল ছিলেন তারা। পাশ করে বের হবার পর শওকত ভাই সে ডিপার্টমেন্টেই শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন, নোরা পাশ করে বের হবার পর তারা বিয়েও করে ফেলেন।

মধ্য ত্রিশে এসে শওকত ভাইয়ের সাথে প্রকৃতি নিষ্ঠুরতম খেলাটি খেলে। তিনি তার স্মৃতি হারাতে আরম্ভ করেন। একসময় সব ভুলে যান, রহস্যময় পৃথিবীর রহস্যের ভাণ্ডারে আরও নূতন একটি রহস্যের সংযোজন করে তার স্মৃতির ভাণ্ডারে জমা থেকে যায় কেবল নোরার সাথে তার পরিচয় ও প্রণয়ের প্রথম কিছুদিনের স্মৃতি। এমনিতে কিছুই বলেন না তিনি, সারাদিন শিশুর মত চুপচাপ বসে থাকেন। কিন্তু যাদের চেহারা কোনভাবে তার মাথায় গেঁথে গেছে, তাদের দেখলেই তিনি স্রেফ নোরার সাথে তার প্রথমবার দেখা হওয়ার স্মৃতিগুলোর কথাই বারবার বারবার বলেন।

নোরার প্রতি আমার দুর্বলতা ভার্সিটির একদম শুরুর দিনগুলো থেকেই। কোনদিন বলতে পারি নি, কারন শুরু থেকেই শওকত ভাই একটার পর একটা পাগলামো করে ক্যাম্পাসে নোরার প্রতি তার ভালোবাসার কথা সবাইকে জানিয়ে রেখেছিলেন। শওকত ভাইয়ের অনুভূতি এতই গভীর এবং সর্বগ্রাসী ছিল যে, নোরার তাতে আত্মসমর্পণ না করে উপায় ছিল না। একসাথে এদুজনকে যত দিন দেখেছি, পৃথিবীর সবচে' সুখি দম্পতি মনে হয়েছে তাদের।

আমার আপত্তি শওকত ভাইয়ের অসুস্থতার দীর্ঘদিন পরেও নোরার এই ঋষির মত ব্রত নিয়ে জীবন কাটানোতে। শওকত ভাইয়ের সুস্থতার জন্যে যতভাবে সম্ভব, যতকিছু করা সম্ভব - নোরা, নোরার পরিবার করেছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় নি। এভাবে কেটে গেছে দশটি বছর। বহুজাতিক একটি কোম্পানিতে উচ্চপদে চাকরী করা নোরা এখনও নিঃসন্তান। সময়ে সময়ে বহুবার আমি নোরাকে বলেছি, নতুন একটা জীবন আরম্ভ করতে। ওর কথা ভেবে, হয়তো খানিকটা নিজের কথা ভেবেও। তবে নোরা প্রত্যেকবারই হেসে উড়িয়ে দেয়। কখনও কখনও আমায় বলে - তাকে প্রতিদিন সকালে যেভাবে শওকত ভাই ওর প্রেমে পড়ার গল্প বলে, সে গল্প শোনার সুখটুকু নিয়েই নোরা বাকি জীবন পার করে দিতে পারবে। আমি যখন জিজ্ঞেস করি - তোমার প্রেমে পড়ার গল্প যখন তিনি তোমাকে বলেন , তিনি কি তোমাকে চিনতে পারেন নোরা? নোরার চেহারায় গাঢ় বিষাদের ছায়া পড়ে। আমি আর কথা বাড়াই না।

এভাবেই সন্ধ্যার রক্তিম আকাশের দিকে তাকিয়ে হেমন্তের আর একটি দিনকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি নিই আমি। কার্তিকের ঘ্রাণ ছড়িয়ে থাকে মাঠে ময়দানে। ফসল পরিপক্ক হয়ে নুয়ে থাকে দিগন্তজুড়ে। কেবল অপূর্ণতার আক্ষেপ ঘিরে থাকে আমাদের, পৃথিবীর কতিপয় ভালোবাসাবুভুক্ষ মানব-মানবীর জীবনে।




মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১৪

বিজন রয় বলেছেন: বহুদিন পার লিখলেন?
তা এই চৈত্র মাসে কার্ত্তিক?

গল্প পরে পড়বো।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৩৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ। পড়ে মন্তব্য করলে খুশী হব। আর সময় ওটা গল্পের কনটেক্সের প্রয়োজনে আনা।

২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৫৪

এরিস বলেছেন: শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা মানুষ অনবরত কথা বলে গেছে অথচ বিন্দুমাত্র একঘেয়ে লাগেনি। একটা অনুভূতির সাথে আরেকটা অনুভূতির এই ছোট ছোট যোগসুত্রগুলো বুঝতে পারার জন্যে গল্পটা দু'বার পড়তে হয়নি; এতোটাই স্বতঃস্ফুর্ত ছিলো ব্যাপারগুলো যে ডেভেলপমেন্ট এর সাথে সাথে ওগুলো আপনা থেকেই জোড়া লেগে গেছে।
একজন মানুষের কথোপকথনে তিনজনের গল্প পেলাম এবঙ কায়সার কিংবা নোরা, কাওকেই শওকত সাহেবের চেয়ে ভিন্ন মনে হয়নি। শওকত সাহেব আনকনশাসলি ভুগছেন, আর বাকি দুজনের সেল্ফ-মেইড সাফারিংস।
বহুদিন পর গল্প পড়লাম। ফেসবুকে শুরুটা পড়েই প্রচন্ড ইচ্ছে হচ্ছিল শেষটা পড়ি, মনে হচ্ছিল এই শওকত সাহেব আলাদা, অন্যদের চেয়ে।
অনেক কিছু মাথায় ঘুরছে এই লেখাটা নিয়ে। কিন্তু গুছিয়ে বলতে পারছিনা।
এই দুঃসহ নীরব কষ্টগুলো কারো জন্যে না আসুক; এগুলো গল্পের খাতিরে গল্প হয়েই থাকুক।
আপনার ফিরে আসায় শুভকামনা আবির।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:২৪

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: প্রিয় ব্লগার এরিস, আমার গল্পটির প্রথম পাঠক আপনি। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। গল্পটির মুখ্য চরিত্র তিনটির ক্রাইসিসের জায়গাগুলি আপনি আপনার মন্তব্যে যে আনুপুঙ্খিকভাবে এবং মমতার সাথে তুলে ধরেছেন, তা গল্পটির লেখক হিসেবে আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে। অনলাইনে আজকাল মমতা নিয়ে একটা লেখার আদ্যোপান্ত পড়বে, এমন পাঠক পাওয়া যায় না। আমাদের নিরভর করতে হয় আমাদের পুরাতন বন্ধুবান্ধবদের ওপরই, যাদের সাথে একই সাথে, একই সময়ে আমাদের লেখালিখির হাতেখড়ি হয়েছিল। আজও লিখে যাচ্ছি আপনার মত কয়েকজন বন্ধুবান্ধব পাশে আছেন বলেই।

এবং লিখে যাবো ভবিষ্যতেও। এপথেই আমার খ্যাতি বা অখ্যাতি, এমনটা আমি ধরেই নিয়েছি।
ভালো থাকবেন আপনি, সবসময়।

৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:১৪

বৈশাখের আমরণ নিদাঘ বলেছেন: ডুবে গিয়ে একটা গল্প পড়লাম। সব মিলিয়ে অসাধারণ! জীবনের ছোটখাট সাধারণ কিন্তু অবিচ্ছেদ্র বোধগুলো নিয়ে আপনার বাস্তবের উপলব্ধিগুলোও সম্ভবত খুব পরিণত। অনেক ভালোলাগা রইলো। :)

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:২৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: পাঠ ও মন্তব্যের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ। সামুতে স্বাগতম। আমার ব্লগেও স্বাগতম। আপনার উপস্থিতি সামুকে ঋদ্ধ করুক।

৪| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৫৬

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: নোরার চরিত্রটা এমনভাবে এঁকেছেন যে তার এই সহিষ্ণুতাটাই যেন স্বাভাবিক। শওকতের মতো আমারও বলতে ইচ্ছা হয়, এ গার্ল লাইক হার, দ্যাটস অল আই এভার ওয়ান্টেড ইন মাই লাইফ...

চমৎকার লিখেছেন।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:০৮

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনার মনের ইচ্ছা পূর্ণ হোক - এই প্রার্থনা করি প্রিয় ব্লগার। গল্প পাঠে শুকরিয়া।
ভালো থাকবেন।

৫| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:০৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: শুরুর বর্ণনাটা খুব সুন্দর। একটা টানটান ব্যাপার আছে লেখাটিতে, ধরে রাখে। মানুষের বিচিত্র মনস্তত্ব নিয়ে পড়তে বরাবরই ভালোবাসি। ভালো লাগলো লেখাটা। শেষটা অবশ্য একটু মেলোড্রামাটিক হয়েছে। তা হোক...

শুভেচ্ছা।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:১২

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: গল্পটা আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশী হলাম হাসান ভাই। গল্পটার শেষ অংশটা আমার নিজের কাছেই দুর্বল মনে হয়েছে। পাঠে ধন্যবাদ।

৬| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:১৬

রাজসোহান বলেছেন: চমৎকার চমৎকার। কমপ্লিকেটেড একটা গল্প, কিন্তু আপনার লেখনীতে সেটা ঝরঝরে হয়ে গেছে! প্লাস!

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:১৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: পাঠে, মন্তব্যে, প্লাসে ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন।

৭| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:১৮

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: বর্ণনার ভঙ্গীটা খুব ভালো লেগেছে বিশেষ করে শওকত সাহেব যখন নোরাকে দেখেছিলেন করিডোরের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে শেক্সপিয়রের হ্যামলেটের পাতা উল্টাচ্ছিল তখন। হাল্কা হাল্কা করে চুল উড়ে আসা, হাতে হ্যামলেট এই দৃশ্যটা কল্পনা করতে ভালো লাগছিলো।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৩৫

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: অনেকটাই সিনেমেটিক হয়ে গেছে যদিও আপু। পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

৮| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৭

নিরীহ_প্রাণী বলেছেন: এক কথায় প্রকাশ "অসাধারণ"

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:০৫

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। জেনে খুশী হলাম যে আপনার গল্পটা ভালো লেগেছে।

৯| ১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:৩৫

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: গল্পে অভিনব চরিত্র এবং তাঁদের, বিশেষ করে শওকতের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রাধান্য পেয়েছে বলেই অন্যরকম মনে হল। লেখক কি বলেন, তাঁরচে কিভাবে বলেন সেটা এগিয়ে এসেছে এখানে এবং প্লটের মাঝে মেকানিজমের যান্ত্রিকতা ধরা পড়ে নি তাই।

শুভেচ্ছা।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২৬

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: প্রিয় প্রফেসর, প্রেমের গল্পে হাত পাকানোর একটি প্রয়াস ছিল এটি। মস্তিষ্কের জটিল থেকে জটিলতর প্রকোষ্ঠের অলিগলিতে ঘুরতে ঘুরতে জীবনের সহজ সুন্দর রূপ ভুলতে বসেছি প্রায়। সেটি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা যান্ত্রিক হওয়া সম্ভব কি?

ধন্যবাদ জানবেন।

১০| ১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:০৯

মুসাফির নামা বলেছেন: বর্ণনা খুবই ভালো লেগেছে।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ মুসাফির।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.