নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।

খায়রুল আহসান

অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।

খায়রুল আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়ের কাছে প্রথম চিঠি

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৪

Ex-Cadets Literary Society নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে, আমি যার সদস্য। এই গ্রুপে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বনামধন্য লেখক ও এক্স-ক্যাডেট শাকুর মজিদ একটি পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে ক্যাডেট কলেজ ক্লাব লিঃ এবারের ‘মা দিবস’ উপলক্ষ্যে একটি ব্যতিক্রমী প্রকাশনার উদ্যোগ নিয়েছে। ‘মায়ের কাছে প্রথম চিঠি’ শীর্ষক এই সংকলনে ১৯৫৮ সাল থেকে শুরু করে চলতি সময় পর্যন্ত সকল স্তরের প্রতিনিধিত্বমূলক ক্যাডেটদের লেখা ‘মায়ের কাছে প্রথম চিঠি’ এ সংকলনে প্রকাশ হবে। তবে চিঠিটি সবাই লিখবে বর্তমান সময়ে, তাঁর স্মৃতি থেকে যে চিঠিটি লেখা হয়েছিল, বা লেখাই হয়নি, কিন্তু লেখা হতে পারতো, তা নিয়ে। প্রতিটি চিঠিতেই প্রত্যেক ক্যাডেট তাঁর পরিপ্রেক্ষিত থেকে প্রথম দিন কলেজে এসে তাঁর কী অনুভূতি হয়েছিলো, কিরূপ পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলো এবং তাঁর ফেলে আসা গ্রাম বা শহরের পারিপার্শিকতা নিয়ে সে কী ভেবেছিলো তা প্রকাশ করবে।

উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। ইচ্ছে হলো, আমিও একটি চিঠি লিখে পাঠিয়ে দেই। সে ইচ্ছে থেকেই আয়োজকদের সকল নিয়ম মেনে এ চিঠিটি লিখলাম।



মায়ের কাছে প্রথম চিঠি

০৮ জুলাই ১৯৬৭
রাত নয়টা
ফজলুল হক হাউস
এমসিসি

শ্রদ্ধেয়া আম্মা,

আমার সালাম নিবেন। আশাকরি আব্বা গতকাল আমাকে এখানে পৌঁছে দিয়ে ভালোভাবে বাসায় পৌঁছেছেন। আব্বা যখন গতকাল পড়ন্ত বিকেলে আমাদের কলেজ অডিটোরিয়ামে আমাকে রেখে ঢাকা ফিরে যাবার জন্য ধীর পদক্ষেপে কলেজের মেইন গেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন, তখন পেছন থেকে ওনাকে দেখে আমার কান্না পাচ্ছিল। এমনিতেই আপনাদের সবাইকে রেখে এখানে আসার সময় অনেক কষ্টে কান্না চেপে রেখেছিলাম। কারণ তখন আমার সামনে আপনারা সবাই ছিলেন। কিন্তু গতকাল আব্বা যখন ফিরে যান, তখন আমার আশে পাশে চেনা পরিচিত কেউ ছিল না, যারা ছিল তারা সবাই অপরিচিত। তাই কান্না রোধ করার কোন চেষ্টাই করিনি।

একটু আগে ডিনার করে আসলাম। এখানে খাওয়া দাওয়া খুব ভালো, এ নিয়ে আপনি মোটেই চিন্তা করবেন না। একটু পরেই, দশটার সময় “লাইটস আউট” হবে। তখন সব লাইট নিভিয়ে দিয়ে সবাইকে ঘুমিয়ে পড়তে হবে। আমি আমাদের হাউসের দোতলায় একটি রুম পেয়েছি। এখানে আমরা এক রুমে মোট দশ জন থাকি। তার মধ্যে আটজন আমরা নতুন ক্যাডেট, আর দু’জন আমাদের দু’বছরের বড়, সিনিয়র ক্যাডেট। ওনাদের মধ্যে একজন রুম ক্যাপ্টেন, অপরজন এসিস্ট্যান্ট রুম ক্যাপ্টেন। ওনারা দু’জনই খুব ভালো, দু’জনের বাড়িই সিলেট জেলায়। গতকাল ওনারা আমাদেরকে এখানকার অনেক নিয়ম কানুন শিখিয়ে দিয়েছেন।

নতুন আটজনের মধ্যে পাঁচজন আমরা বাংলা মিডিয়াম থেকে এসেছি, তিনজন ইংলিশ মিডিয়ামে পড়তো। ঐ তিনজন অনেক বড়লোক, ওদের সবার গাড়ি আছে। ওরা যখন নিজেদের মধ্যে কথা বলে, তখন অনর্গল ইংরেজিতে বলে, যা আমি পারি না। তবে ওদের সব কথা আমি বুঝি। আশাকরি আমিও কিছুদিনের মধ্যেই ওদের মত ইংরেজিতে কথা বলতে পারবো, কারণ এখানে ক্লাসে পাঠদান হবে ইংরেজি ভাষায়। ইতোমধ্যে পাঠ্যবই পেয়ে গেছি, বাংলা ছাড়া সব বই ইংরেজিতে লেখা। কয়েকটা বই এর কিছু পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখেছি, আমার বুঝতে কোন অসুবিধা হয় নাই। ইংরেজি পড়ুয়া আমার বন্ধুরাও খুব ভালো। ওদেরই একজন গতকাল আমাকে টাই এর নট বাঁধা শিখিয়েছে, যা আমি আগে পারতাম না। আজ টেইলর এসে আমাদেরকে খাকি ইউনিফর্ম এবং অন্যান্য কিছু পোশাক দিয়ে গেছে, যা আগামিকাল থেকে আমাদের পরতে হবে।

গতকাল দুপুরে আপনি আমার জন্য পোলাও কোর্মা রেঁধেছিলেন। আমার আর যা যা প্রিয় খাবার, তার অধিকাংশই মেন্যুতে ছিল। টেবিলে খাবারগুলো দেখে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু খেতে বসে দেখি, আমার সে পছন্দের খাবারগুলো কিছুতেই গলা দিয়ে নামছে না। ঢোক গিলে গিলে আর পানি খেয়ে খেয়ে কোনরকমে খাওয়া শেষ করেছিলাম। আমার খুব খারাপ লাগছিল আপনাদের জন্য। এখন আষাঢ় মাস, এখানে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। একটু আগে আমার জানালার খুব কাছে একটা শিয়াল এসে ‘হুক্কাহুয়া’ ডাকছিল। এখানে রাত হলেই অনেক শিয়াল ডাকাডাকি করে। একটু পরেই সব লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়তে হবে। তাই আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন। আব্বাকে আমার সালাম জানাবেন।


ইতি,
আপনার স্নেহের, …..
(পুনর্লিখিত, ১৩ এপ্রিল ২০২৫)

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +১৫/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:



এমসিসি দিয়ে কি মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজকে বুঝানো হয়েছে?

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: জ্বী।

২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৫

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:



আপনাকে র‌্যাগ করে ডলা দেয়া হয়নি?

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৫০

খায়রুল আহসান বলেছেন: ওটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, অসুবিধা হয়নি। তখন র‍্যাগিংটা অনেকটাই শিক্ষামূলক ছিল, অমানবিক পর্যায়ে যায়নি।

৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩১

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
দারুণ স্মৃতিচারণমূলক লিখা। +++

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্য এবং পোস্ট 'লাইক' করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৫

জুল ভার্ন বলেছেন: চমৎকার! ❤️

১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:০৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্য এবং পোস্ট 'লাইক' করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

৫| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৪৩

ঢাবিয়ান বলেছেন: খুব ভাল লাগল চিঠি পড়ে। আমার মায়ের কাছে আমার প্রথম চিঠি লেখা বিদেশে এসে। যে সময়ে এসেছিলাম তখন ইন্টারনেটের যুগ ছিল না।দশ ডলারের কলিং কার্ডে কয়েক মিনিট কথা বলা যেত। কেমন আছে বা আমি কেমন আছি এসব জিজ্ঞাশা করতেই সময় ফুরিয়ে যেত। তাই চিঠি লিখতাম। আপনার চিঠি পড়ে সেই সময়ের কথা মনে পড়ে গেল।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:২২

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমি এ যুগেও মনে করি, চিঠিই হচ্ছে বেস্ট কমিউনিকেশন মাধ্যম। মনের কথা একটি চিঠিতে যেভাবে মেলে ধরা যায়, আর কোন মাধ্যমে তেমন নয়। আর হাতে লেখা চিঠি হলে তো কোন কথাই নেই। পরিচিত হাতের লেখার সাথে পরিচিতজনের অদৃশ্য মুখাবয়ব ভেসে ওঠে।
মন্তব্য এবং পোস্ট 'লাইক' করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৬| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:৪৬

নীল-দর্পণ বলেছেন: খুব সুন্দর চিঠি। একটা বোকা বোকা প্রশ্ন করতে চাই (আশা করি কেউ দেখবে না :P ) , এই চিঠিটা কি সত্যিই ক্যাডেট কলেজে যাবার পরদিন লিখেছিলেন নাকি সেইদিনের স্মৃতি মনে করে লিখেছেন ?

নতুন বছরের শুভেচ্ছা । :)

১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৪৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার উল্থাপিত প্রশ্নটি মোটেই "বোকা বোকা প্রশ্ন" নয়। অন্যত্র প্রকাশিত আমার এ পোস্টটা পড়ে অনেকেই মৌখিকভাবে আপনার মত আমাকে একই প্রশ্ন করেছেন। তার মানে এই যে প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক এবং স্বাভাবিক। তবে এর উত্তর হচ্ছেঃ

না, এই চিঠিটা সত্যি সত্যিই ক্যাডেট কলেজে যাবার পরদিনই লিখি নাই, তবে ছয়/সাতদিন পরে (প্রথম সপ্তাহান্তে) লিখেছিলাম। চিঠির কনটেন্ট এখানে যা যা উল্লেখিত হয়েছে, তার সবই ছিল। উপরন্তু আরও কিছু বিষয় ছিল, যেমন ভাইবোনদের খবর জানতে চেয়েছিলাম। পড়াশুনা সম্পর্কে আরও কিছু কথা উল্লেখ করেছিলাম, যেমন ক্লাসগুলো খুব এনজয় করছিলাম, সে কথা লিখেছিলাম। আয়োজকগণ যেহেতু কিছু কিছু নিয়ম বা শর্ত বেঁধে দিয়েছেন, সেগুলো মেনেই পোস্টটা লিখেছি এবং তা পোস্টে উল্লেখও করেছি। আয়োজকদের নির্দেশ ছিল, চিঠিটা আসলে যেদিনই লিখা হোক না কেন, তারিখটা যেন যোগদানের পরেরদিনেরটা হয়। হয়তো প্রথম দু'দিনের অনুভূতি অভিজ্ঞতাগুলো যেন মৌলিকভাবে ফুটে ওঠে, সেটাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল। তাই আমিও এখানে প্রথম দুই/তিনদিনের স্মৃতি স্মরণ করেই পোস্টটা লিখেছি। তাছাড়া আয়োজকদের আরও নির্দেশ ছিল যে চিঠিটা এ-৪ সাইজের এক পৃষ্ঠায় স্বহস্তে লিখিত হতে হবে। কাজেই, পুরো মৌ্লিক কন্টেন্ট স্বাভাবিকভাবেই এ চিঠিতে স্থান পায় নাই।
আপনার প্রশ্নটির জন্য ধন্যবাদ। কারণ, আপনার এ প্রশ্নের কারণেই হয়তো আরও কিছু জিজ্ঞাসু পাঠক তাদের মনে জেগে ওঠা প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন।

৭| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: সেদিন ক্যাডেট কলেজ ক্লাবে গিয়েছিলাম।
দুপুরবেলা। দারুন খানাপিনার আয়োজন ছিলো।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:৩১

খায়রুল আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৮| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৯

সোনালি কাবিন বলেছেন: বাহ! কী মায়াময় চিঠি।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:১০

খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্য এবং পোস্ট 'লাইক' করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। মন্তব্যে প্রীত ও প্রাণিত।

৯| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

নতুন নকিব বলেছেন:



এই চিঠিটা শুধু একটা লেখা নয়, এটা সময়ের ভিতর দিয়ে হেঁটে আসা এক কিশোর হৃদয়ের কান্নাভেজা স্মৃতিচিহ্ন।
চোখ বুজলেই যেন দেখতে পাই—আধো আলোয় ডুবে থাকা কলেজ ভবনের বারান্দা, দূরে চলে যাওয়া বাবার ধীরে ধীরে হারিয়ে যাওয়া অবয়ব, আর একাকীত্বে মায়ের কথা মনে পড়ে যাওয়া সেই প্রথম রাত। আপনার শব্দচয়ন এতটা আন্তরিক ও জীবন্ত যে, মনে হয় যেন আমরাও সেই ফজলুল হক হাউসের রুমে ঢুকে পড়েছি।

বাংলা মিডিয়াম আর ইংরেজি মিডিয়ামের মাঝে দূরত্ব, টিফিন টেবিলে বসেও না খেতে পারা, টাই বাঁধতে না জানা ছোট ছোট অসহায় মুহূর্তগুলো এমনভাবে উঠে এসেছে, যা হয়তো প্রত্যেক বোর্ডিং স্কুলে পড়া সন্তানের হৃদয়ে আলোড়ন তোলে। তবু সবকিছুর মধ্যেও ফুটে উঠেছে শেখা, মানিয়ে নেওয়া, বড় হয়ে ওঠার যাত্রার সূচনাবিন্দু।

এই লেখা ‘মা’ শব্দটির সঙ্গে যুক্ত আত্মিক সংযোগের এক অনন্য দলিল। ক্যাডেট কলেজ ক্লাবের এই প্রয়াস শুধু ব্যতিক্রমী নয়, সংরক্ষণযোগ্যও। আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই এমন একটি হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া চিঠি আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: "এই চিঠিটা শুধু একটা লেখা নয়, এটা সময়ের ভিতর দিয়ে হেঁটে আসা এক কিশোর হৃদয়ের কান্নাভেজা স্মৃতিচিহ্ন" - চমৎকার এ উপলব্ধিটুকু এবং এর কাব্যিক প্রকাশের জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। একটা লেখা পুরোটা হৃগয় দিয়া পাঠ না করলে এমন উপলব্ধি আসে না।

"ছোট ছোট অসহায় মুহূর্তগুলো এমনভাবে উঠে এসেছে, যা হয়তো প্রত্যেক বোর্ডিং স্কুলে পড়া সন্তানের হৃদয়ে আলোড়ন তোলে। তবু সবকিছুর মধ্যেও ফুটে উঠেছে শেখা, মানিয়ে নেওয়া, বড় হয়ে ওঠার যাত্রার সূচনাবিন্দু" - এমন হৃদয়গ্রাহী পর্যবেক্ষণে সত্যিই অভিভূত হ'লাম।

"ক্যাডেট কলেজ ক্লাবের এই প্রয়াস শুধু ব্যতিক্রমী নয়, সংরক্ষণযোগ্যও" - জ্বী, তাদের ঘোষণা অনুযায়ী যারা যারা তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে এ-৪ সাইজে স্বহস্তে লিখিত এই চিঠিগুলো তাদের কাছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঠাবে, সেগুলো সংকলন করে শীঘ্রই তারা একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করবে, যেন ১৯৫৮ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ক্যাডেট কলেজে যোগদানকারী ছাত্রদের এবং তাদের পরিবারগুলোর মন মানসিকতার একটা কথাচিত্র সেখানে পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, ম্যাগাজিনটির আকৃতিও হবে এ-৪ সাইজের, কেননা চিঠিগুলোর স্ক্যানড কপি দিয়ে স্বহস্তে লিখিত চিঠির একটি হুবহু নকল হবে ম্যাগাজিনটির প্রতিটি পৃষ্ঠা। অভিনব ভাবনা বটে!

১০| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:০৯

মনিরা সুলতানা বলেছেন: কী আকুলতা লেখায় !!!
একটা সদ্য কৈশোর পেরুনো ছেলে যে কিনা পরিবারের সবাইকে ছেড়ে অন্য রকম নতুন এক পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে যাচ্ছে। তার যে পরিবারের সবার কে ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে সেটুকু উঠে এসছে।

চমৎকার ++

১৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:১৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমার বয়স তখন ছিল ১২/১৩ এর মাঝামাঝি। এই বয়সটা ছেলেদের জন্য এমনিতেই অনেক কষ্টের। কতটা কষ্টের তা কবিগুরু, দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত এতটা স্পষ্ট করে কেউ বুঝিয়ে বলে যেতে পারেন নি। তার উপর ঐ বয়সে পরিবারের সবাইকে ছেড়ে একটা অচেনা জায়গায়, অজানা পরিবেশে গিয়ে খাপ খাওয়ানো সহজ কথা ছিল না। তবে ভাগ্য আমার প্রতি সুপ্রসন্ন ছিল। আমি ফ্যাকাল্টি, প্রশাসনিক ও প্রশিক্ষক স্টাফ, সিনিয়র ক্যাডেটস- সকলের সদয় ও সুনজর পেয়েছিলাম, যার ফলে কখনো নিজেকে অসহায় মনে হয়নি।
ধন্যবাদ, আপনার সহৃদয় সহমর্মিতা ও উপলব্ধির জন্য।

১১| ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৩

করুণাধারা বলেছেন: চমৎকার চিঠি। জানিনা এমন চিঠি পাবার পর মায়ের মন কেমন করে উঠেছিল...

চিঠিটা পড়ার পরপরই মনে হয়েছিল সত্যি এমন চিঠি লিখেছিলেন, কারণ ক্যাডেট কলেজে যাবার আগের যে স্পেশাল খাবারের বর্ণনা দিয়েছেন সেটা একেবারে যেন দেখতে পাচ্ছিলাম! আমাদের অনেক কিছু বদলে গেছে, কিন্তু বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার সময় সন্তানের প্রিয় খাবার রান্না এখনো এদেশের প্রায় সব মায়েরাই করে থাকেন। অবাক হলাম দেখে, প্রায় ষাট বছর পরেও আপনার মনে আছে মা কী কী রান্না করেছিলেন! হয়তো ক্যাডেট কলেজে পরিবেশিত সুখাদ্যের মাঝে কিশোর আপনার মন মায়ের হাতের এই খাবারগুলো পেতে চাইতো...

সেই চিঠিটা কী এমন চলিত ভাষায় লিখেছিলেন নাকি সাধু ভাষায় লিখেছিলেন?

২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:০৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: এমন মন্তব্য পেলে আমি খুবই আনন্দিত এবং একই সাথে অনুপ্রাণিত হই, যখন বুঝতে পারি যে পাঠক আমার পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন; পোস্টের কিছুটা অংশ হয়তো তাকে স্পর্শ করেছে এবং তার মনে কিছু প্রশ্নেরও উদ্রেক করেছে।

চিঠিটার কন্টেন্ট শতভাগ সত্য, যদিও তারিখটা বদলে দেয়া হয়েছে, এবং যেহেতু চিঠিটা স্মৃতি থেকে লেখা হয়েছে, ভাষারও হয়তো একটু এদিক ওদিক হয়ে থাকতে পারে। তবে আমার স্মরণশক্তি শৈশব থেকেই খুবই প্রখর, এবং এ যাবত প্রখরই ছিল, কিন্তু ২০২১ সালে প্রথম এবং এর পরে আরও দুইবার কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হবার পর থেকে আমার স্মৃতিশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং শ্রবনশক্তির অনেকটা অবনতি ঘটেছে এবং ক্রমশঃ তা নিম্নমুখি। আমি ৭/৮ বছর বয়সের অনেক ছোট ছোট ঘটনাও ক্ষুদ্র ডিটেইলসসহ হুবহু স্মরণ করতে পারি। আমার মুখে সেসব কথা শুনে আমার আম্মাও প্রায়ই অবাক হয়ে যেতেন।

"অবাক হলাম দেখে, প্রায় ষাট বছর পরেও আপনার মনে আছে মা কী কী রান্না করেছিলেন!"- আমি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছি। তখনকার মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এখনকার মধ্যবিত্তদের মত এতটা স্বচ্ছল ছিল না। এখনকার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের মাঝামাঝি পর্যায়ে সেগুলো পড়তো। আটান্ন বছর আগের সেই খাবারের কথাগুলো এখনও মনে আছে কারণঃ (১) সে খাবারের সাথে মায়া মিশ্রিত ছিল।
(২) উভয়দিক থেকে অত্যধিক মায়া এবং ভালোবাসার কারণে আবেগাভিভূত ছিলাম, তাই খাওয়া গলা দিয়ে নামছিল না।
(৩) সাত ভাই-বোনের মধ্যবিত্ত পরিবার হবার কারণে আমাদের পরিবারে পোলাও কোর্মা যে মাঝে মাঝেই রান্না হতো, তা নয়; কেবল অতিথি আপ্যায়নের ওসিলাতেই এবং দুই ঈদ পর্বে সেরকম আয়োজন করা হতো।
(৪) সেদিনের সেই আয়োজনের মধ্যমণি ছিলাম আমি, এটা আমাকে অতি মাত্রায় অভিভূত করেছিল। সেজন্য মনে রেখেছি।

"সেই চিঠিটা কী এমন চলিত ভাষায় লিখেছিলেন নাকি সাধু ভাষায় লিখেছিলেন?" - আমি চলিত ভাষায়ই লিখতাম, যদিও আমার সাধু ভাষা ভালো লাগতো এবং সাধু ভাষায় লিখার একটা প্রবণতা আমার মাঝে ছিল। কিন্তু আমার আপি (ইমিডিয়েট বড় বোন, প্রয়াত) একজন আধুনিক মনস্কা মহিলা ছিলেন। তিনি আমাকে সাধু ভাষায় লিখতে বারণ করতেন। তার প্রভাবের কারণেই আমি চলিত ভাষায় লিখতাম। তাছাড়া আমি জানতাম যে চিঠিটা আম্মাকে লিখলেও, বাসার সবাই মিলে সব চিঠি পড়বে। তাই আপির ভয়েও চলিত ভাষায় লিখতাম। কিন্তু সাধু ভাষা আমি শৈশব কৈশোরেও পছন্দ করতাম, এখনো করি।

তবে আমার আম্মা আমাকে সাধু ভাষায় চিঠি লিখতেন। যেমনঃ "তোমার পড়াশুনা কেমন চলিতেছে, জানিতে বাসনা রাখি । তিনি নিজে স্বল্পশিক্ষিতা ছিলেন, কিন্তু ব্যাপক শিক্ষানুরাগী ছিলেন। অর্থের জন্য কারও পড়াশুনা আটকে গেছে, এমনটি জানতে পারলে তিনি গোপনে দান করতেন। বেঁচে থাকলে আজ তাঁর বয়স ৯৪/৯৫ হতো। আমার আম্মারা চার বোন, এক ভাই ছিলেন, ভাইটি সবার ছোট ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন তিনি আট বছরের বালিকা। এই বিশ্বযুদ্ধ তখন took its toll on her, her sisters and all other girls and women of that time. যুদ্ধের ডামাডোলে বারবার বসতবাটি স্থানান্তর করতে করতে নানা-নানী হিম শিম খাচ্ছিলেন। তাদের সকল জমাজমি ব্রিটিশ মিলিটারি অ্যাকোয়ার করে নেয়। সেই যে তার প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা বন্ধ হয়েছিল, আর তিনি সে সুযোগ পান নি। বাড়ন্ত মেয়েদেরকে একে একে পাত্রস্থ করে নানা নিজের মান সম্মান রক্ষা করেছিলেন। এর পরে যেটুকু শিখেছিলেন, ঘরে বসে নিজের চেষ্টা ও আগ্রহের দ্বারা তিনি তা শিখেছিলেন।

উল্লেখ্য যে আমাদেরকে তখন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে প্রতি রবিবারে বাধ্যতামূলকভাবে বাসায় চিঠি লিখতে হতো। এর দুই সপ্তাহ পরের চিঠিতে আম্মা জেনে খুশি হবেন, এমন একটি সুসংবাদ দিতে পেরেছিলাম। আমি বাংলা মিডিয়াম থেকে এসেও, ইংরেজি মিডিয়াম থেকে আসা ক্যাডেটদের সাথে প্রতিযোগিতা করে ইংরেজি ভাষায় লিখিত প্রথম ফোরটনাইটলি টেস্ট এ ম্যাথস পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর (৪৮/৫০) পেয়েছিলাম। এ সাফল্য চিরকালের ইন্ট্রোভার্ট আমাকে ছাত্র শিক্ষক সকলের কাছে এক অনন্য সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছিল। এবং এ সাফল্যের কারণে প্রথম ত্রৈমাসিক ছুটিতে যাবার পর আম্মা আমাকে পুনরায় "পোলাও-কোর্মা" দ্বারা আপ্যায়িত করেছিলেন। তখনকার দিনে আমাকে দেয়ার মত তার ওটুকুই ছিল।

আম্মার চিঠিগুলো খুব সংক্ষিপ্ত থাকতো; বলা যায় চিরকুটের চেয়ে একটু বড়। সাত ভাইবোনের সংসার সামলিয়ে তার হাতে খুবই কিঞ্চিৎ সময় থাকতো আমাকে চিঠি লিখার মত। তবে তিনি আমার কাছ থেকে দীর্ঘ চিঠি কামনা করতেন। আমি তার এই ইচ্ছেটা অনেক ডিটেইলসসহ পূরণ করতাম বলে আমার চিঠি পেয়ে তিনি খুবই খুশি হতেন।



১২| ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২৬

আমি সাজিদ বলেছেন: আমি বরং অন্য অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। ভর্তি করা হয় ক্যাডেট কোচিং এ। হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা। আমি তো ঘরের ডাল আলু ভর্তা ও আঁচলে মুখ লুকানোর জন্য কেঁদে কেঁদে একশেষ। আমার এমন মানসিক পরিস্থিতিতে,
আমি জীবনের প্রথম চিঠি পাই। মা লেখেন, বাবা তোমাকে বাইরে মানিয়ে চলতে হবে। চিঠি পেয়ে আমার কি কান্না !

আপনার লেখা আমাকে ছুঁয়ে যায়। আমি তো সেই কবে থেকেই আপনার মুগ্ধ পাঠক। ল্যাবে প্রোটোকলের শিখতে শিখতে অন্য কিছুতে সময় দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভালো থাকবেন। যত্ন নিবেন।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৩৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: "বাবা তোমাকে বাইরে মানিয়ে চলতে হবে" - ঠিক ঠিক এ কথাটি না হলেও, আমার আম্মাও আমাকে এ ধরণের কথা বলেই মানসিকভাবে শক্তি ও সাহস যোগাতেন।
ব্যস্ত জীবনের কর্মসূচী থেকে আপনি যেটুকু সময় ব্লগের জন্য বরাদ্দ রেখেছেন, তাতেই আমরা ব্লগবাসীগণ সন্তুষ্ট। যে মহান পেশায় আপনি নিয়োজিত আছেন, সেটাই আপনার মনোযোগের সর্বোচ্চ দাবীদার। তার পরেও আপনি যেটুকু সময় নিয়ে ব্লগারদের লেখা পড়ে আলোচনায় অংশী হন এবং তাদেরকে উৎসাহিত করেন, এর জন্য আপনি ধন্যবাদ প্রাপ্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.