
নববর্ষ বলতে বোঝায় নতুন বছর বা বছরাম্ভকে। পৃথিবীর সব দেশে এবং সব জাতির মাঝেই নববর্ষ পালন রীতি বিদ্যমান। তেমনি ইউরোপ – আমেরিকায় বিশেষত খ্রিষ্টান দেশসমূহে পালিত নববর্ষের নাম ‘নিউ ইয়ার্স ডে’ ইংরেজী নববর্ষ এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশেই উদযাপন করা হয় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২ টা এক মিনিটে ইংরেজী নববর্ষ বরণ করা হয়। খ্রিষ্টান বিশ্বে এ দিন সরকারি ছুটি পালিত হয়। আবিরাম গতিতে ছুটে চলা সময়ের চাকা ঘুরে ঘুরে আবারো আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে ইংরেজী নববর্ষকে। তাই এই সিন্ডিকেট ক্যাচালের মাঝে নববর্ষের সাত-সতেরো নিয়ে কিছুক্ষন “পেক পেক পেক” করতে এলাম।
খ্রিষ্টাব্দের জন্মকথা
বর্তমান বিশ্বে যতগুলো অব্দ বিদ্যমান তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেশে প্রচলিত হলো খ্রিষ্টাব্দ। ৫৩০ খ্রিষ্টাব্দে দিওনিসউথ প্রথম এ অব্দের প্রচলন করেন। তখন ২৫ ডিসেম্বর থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত (খ্রিষ্টাব্দের) বছরের প্রথম দিনটি পড়ত। বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশে জানুয়ারি ১ তারিখকে নববর্ষ হিসেবে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে।
জানুয়ারি থেকে বছর গননা
৪৫১ অব্দে রোমের শাসনকার্য চালাতো ১০ জন ম্যাজিষ্ট্রেটের একটি পরিষদ, যা ‘দিসেসভিরস’ নামে প্রচলিত ছিল। এ পরিষদই প্রথম মার্চের পরিবর্তে জানুয়ারি থেকে বছর গননা শুরু করার নির্দেশ দেন। এ পদ্বতিটি চালু হতে সময় লাগলেও পৃথিবীর সব দেশই পরিবর্তিতে এ পদ্বতি গ্রহন করে।
ইংরেজী ১২ মাস
পন্ডিত পন্ডিফোরাই ৭৫৬ অব্দে ক্যালেন্ডার আবিষ্কার করেন। চাষাবাদের উপর ভিত্তি করে এ ক্যালেন্ডার প্রস্তুত করা হয় বলে এতে মাসের সংখ্যা ছিল ১০। ১০ মাসের ক্যালেন্ডারে দিনের সংখ্যা ছিল ৩০৪ এবং বছর শুরু হতো মার্চ মাস থেকে। রোমান রাজা নুমাপাম পিলিয়াস ৭০০ অব্দে ঐ ক্যালেন্ডারে জানুরায়িয়াস এবং ফেব্রুয়ারিয়াস দুটি মাস সংযুক্ত করেন এবং কিছু কিছু মাসের দিনের সংখ্যাও পরিবর্তন করেন। ফলে মাসের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২।
মাসের নামকরণ
প্রাচীন রোমানদের হাতে ক্যালেন্ডারের জন্ম এবং বিকাশ লাভ করেছে। ফলে বারটি মাসের বেশির ভাগই রোমান দেবতা বা সম্রাটদের নামে নামকরণ করা হয়েছে। যেমন-
• জানুয়ারিঃ রোমান দেবতা জানো’স এর নামানুসারে। জানোস অর্থ দু’টি মুখ। জুলিয়াস সিজারের সংস্কারের পুর্ব পর্যন্ত জানুয়ারি মাস ছিল ২০ দিন (বর্তমানে ৩১ দিন)।
• ফেব্রুয়ারিঃ ল্যাটিন শব্দ ফেব্রুয়া থেকে নামকরন করা হয়েছে। ফেব্রুয়া অর্থ হলো পবিত্র।
• মার্চঃ রোমান দেবতা মার্স-এর নামানুসারে। মার্স হলো রোমানদের যুদ্বের দেবতা। মার্চ ছিল রোমানদের বর্ষ শুরুর মাস।
• এপ্রিলঃ ল্যাটিন এপ্রিলিস থেকে এর নামকরন করা হয়েছে।
• মেঃ বসন্তের দেবী মায়া’স এর নামানুসারে নামকরন করা হয়েছে।
• জুনঃ বিবাহ এবং নারীদের কল্যানের দেবী জুনোর নামানুসারে।
• জুলাইঃ এটি জুলিয়াস সিজার’স মাস। জুলিয়াস সিজার ৪৬ অব্দে রোমান ক্যালেন্ডার সংস্কার করেন এবং তার নামানুসারে জুলাই মাসের নামকরন করা হয়।
• আগষ্টঃ জুলিয়াস সিজারের পুত্র অগাস্টাস সিজারের নামানুসারে।
• সেপ্টেম্বরঃ ল্যাটিন সংখ্যা সপ্তম থেকে এর নামকরন করা হয়েছে।
• অক্টোবরঃ ল্যাটিন সংখ্যা অষ্টম থেকে এর নামকরন করা হয়েছে।
• নভেম্বরঃ ল্যাটিন সংখ্যা নবম (নভেম্ব্রিস) থেকে এর নামকরন করা হয়েছে।
• ডিসেম্বরঃ ল্যাটিন সংখ্যা দশম থেকে এর নামকরন করা হয়েছে।
লিপিয়ার- এর প্রচলন
‘লিপইয়ার’- এর প্রচলন হয় রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের শাসনামল থেকে। জুলিয়াস সিজার আলেকজান্দ্রিয়া থেকে গ্রিক জোতির্বিদ মোসাজিনিসকে নিয়ে আসেন ক্যালেন্ডার সংস্কারের জন্য। মসাজিনিস দেখতে পান পৃথিবী সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিনে সময় নেয় ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা। ৩৬৫ দিনে বছর হিসাব করা হলে এবং প্রতি চতুর্থ বছরে ৩৬৬ দিনে বছর হিসাব করলে কোনো গরমিল থাকে না। মোসাজিনিস অতিরিক্ত এক দিন যুক্ত এ বছরটির নামকরন করেন ‘লিপইয়ার’
পরের পর্বে থাকবে বর্ষ গণনার একাল-সেকাল
সবাই ভালো থাকবেন
পেক পেক পেক