somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্রোহের প্রতিশব্দ (শেষ পর্ব)

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্বের সার সংক্ষেপঃ

সময়টা ২০৭১ সাল। সমুদ্রের পানির স্তর বেড়ে যাওয়ায় উপমহাদেশের তিন ভাগের এক ভাগ তলিয়ে গেছে। চরম অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ব্ল্যাক আর্মি নামের এক সংগঠন ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কীভাবে অনন্তকাল ক্ষমতা আঁকড়ে পড়ে থাকা যায় সেই চক্রান্ত করছে তারা। এই সময় তাদের প্রেসিডেন্ট খুন হল মাইডাস এক্স নামের এক কমান্ডোর হাতে। এদিকে গড়ে উঠেছে লিবারেশন ফ্রন্ট নামের এক বিদ্রোহী দল, যারা দেশে গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এদিকে দেশের পার্বত্য অঞ্চলে আযহার নামের এক যুবক এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে যায়। সেখানে জ্ঞান ফেরার পর থেকে সে জানতে পারল তার সমস্ত অতীত জীবনের স্মৃতি মিথ্যা। তার আসল অতীত, আসল চেহারা সব সে নিজেই বদলে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করেছে। তার এই জীবনের সঙ্গী হল জুলি নামের একটি মেয়ে। এভাবে কেটে গেছে তিনটি বছর। অচেনা নেতা দা রেবেলের নেতৃত্বে লিবারেশন ফ্রন্ট গড়ে তুলেছে এক শক্তিশালী বিদ্রোহী দল। দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে তাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা আবার ফিরে আসবে। এখান থেকেই শুরু হল আমাদের গল্পের পরবর্তী অংশ...

প্রথম পর্বের লিংকঃ দ্রোহের প্রতিশব্দ (প্রথম অংশ)
***

সকালে সাইট দেখতে এসে খবরটা পেল আযহার। ব্যাপারটা জানার পর থেকে আর বাইরে থাকাটা নিরাপদ মনে হচ্ছে না। খবরটা তাকে প্রচণ্ড এক অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। কে বা কারা গতকাল রাতে মেঘলা রি-জেনারেটর হসপিটাল ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। প্রধান ডাক্তার রাহুল দেবনাথকে খুন করেছে। আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা না এলেও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনা এটা বিদ্রোহী লিবারেশন ফ্রন্টের কাজ। শপথ অনুযায়ী তারা সকল অবৈধ প্রতিষ্ঠান সমূহ একে একে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

আযহারের চিন্তা হচ্ছে, বিদ্রোহী ফ্রন্ট কি তবে জানত রি-জেনারেটর হসপিটালে গোপনে কি এক্সপেরিমেন্ট চালানো হত? যদি জানা থেকে তাহলে নিশ্চয়ই আযহারের মত যারা পূর্বের জীবন থেকে পালিয়ে এসে আত্মগোপন করে আছে তাদের তালিকা এখন ওদের হাতে চলে গেছে! ওদের দ্বিতীয় শপথ ছিল সকল অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনবে!

কলিং বেল চাপতে যা দেরি, প্রায় সাথে সাথেই দরজা খুলে দিল আযহারের স্ত্রী জুলি। তার চোখে মুখে খুশির আমেজ। আযহারও একটু হাসলাম, “তুমি প্রতিবার আমি আসছি সেটা কীভাবে টের পেয়ে যাও বলতো?”
জুলি হাসি মুখে বলল, “জানিনা তো!”
আযহার ভেতরে ঢুকছে, জুলি পাশ থেকে বলল, “তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে”।
“কি?”
“লিভিং রুমে ঢুকে দেখ আমাদের বাড়িতে কে এসেছে?”
“কে এসেছে?” আযহার প্রায় আঁতকে উঠল।
“শ... শ...শ চুপ!” ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে বলল জুলি।
আযহারের শিরদাঁড়া বেয়ে প্রচণ্ড এক আতংকের ঢেউ নামল। তবে কি সে যা ভেবেছে তাই? বিদ্রোহী ফ্রন্ট তার খোঁজ পেয়ে গেছে। সে আস্তে করে জিজ্ঞেস করল, “কে এসেছে জুলি?”
“সেটা দেখলেই বুঝবে! আগে থেকে বলে দিলে কি সারপ্রাইজ থাকল?”

আযহার ভয়ে ভয়ে এক পা দু পা করে লিভিং রুমে গিয়ে ঢুকল। একজন পুরুষ মানুষ বসে আছে সোফায়। গায়ে একটা ওভার কোট, মাথায় হ্যাট, দুহাতে দস্তানা। লোকটির চেহারা খুব বেশি পরিচিত লাগছে। লোকটা মুখ তুলে তার দিকে তাকাতেই চমকে উঠল আযহার। এতো সাবেক প্রেসিডেন্ট হায়দার মালিকের খুনি মাইডাস এক্স! এই তাহলে জুলির সারপ্রাইজ!

জুলি পিছন থেকে বলল, “তুমি আমাকে একবারও কেন বলনি দা রেবেল তোমার ছোট বেলার বন্ধু? এক সাথে তোমরা স্কুলে পড়েছ”।
তারমানে মাইডাসএক্সই হচ্ছে দা রেবেল, লিবারেশন ফ্রন্টের প্রধান! আযহার আমতা আমতা করে বলল, “ব... বলতে চেয়েছি... আসলে... বলা হয়ে ওঠেনি”!
দা রেবেল জুলির দিকে ফিরে আন্তরিক সুরে বলল, “ভাবী আমাদের জন্য কফি নিয়ে আসেন দেখি। দুই বন্ধু মিলে কফি খেতে খেতে গল্প করব”।
“কি কফি খাবেন ভাই?আমার সংগ্রহে ভু মধ্য সাগরীয় অঞ্চলে তৈরি বিশেষ কফি আছে। খাবেন? এক কাঁপ খেলে জীবনের তার স্বাদ ভুলতে পারবেন না”।
“অবশ্যই ভাবী। ওটাই নিয়ে আসুন”।

জুলি প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে গেল। আযহার এক পা দু পা করে এগিয়ে গিয়ে রেবেলের মুখোমুখি বসল। রেবেল ঠোঁটে হাসি ধরে রেখে বলল, “তোমাকে খুঁজে পেতে আমার পাঁচটি বছর সময় লেগেছে”!
আযহার কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “আ... আমি জানি আপনি রি-জেনারেটর হসপিটাল থেকে আমাকে খুঁজে বের করেছেন। তাহলে আপনি নিশ্চয়ই জানেন আমার অতীত আমার কাছে বিরাট এক রহস্য। আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা জীবন যাপন করছি। আমার স্ত্রী আছে, একটা বিজনেস করছি। এখন আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ”।
“তুমি একটা কাপুরুষ”!
“কি করেছি আমি?আমি কি আপনার দলের লোক ছিলাম? কোন কারণে পালিয়ে এসেছি?”
“হা হা হা!" হঠাৎ উচ্চশব্দে হেসে উঠল দা রেবেল, আবার থেমেও গেল আচমকা। "হ্যা, তুমি পালিয়ে এসেছ! তুমি একটা কাজ অসম্পূর্ণ রেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে এসেছ, যার জন্য দুর্ভোগ নেমে এসেছে অন্য কারো ভাগ্যে”!
“আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আসলে”!

দা রেবেল হয়ত আরও কিছু বলত কিন্তু জুলি তার ভু-মধ্য সাগরীয় বিশেষ কফি নিয়ে হাজির হয়েছে। সাথে আছে নানান মুখরোচক খাবার।

আযহার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল জুলির মুখের দিকে। আশ্চর্য সুন্দর করে হাসছে আজ। বিদ্রোহী লিবারেশন ফ্রন্ট আর দা রেবেলের বিরাট ভক্ত সে। এই মেয়েটি সত্যিই অন্য রকম! বিয়ের তিনটি বছর পেড়িয়ে গেছে অথচ আজও তাকে চিনতে পারেনি আযহার! জুলির মধ্যে আছে এক বিদ্রোহী সত্ত্বা, সে সংগ্রাম ভালবাসে। রান্না ঘরে হাড়ি ঘুরানোর জন্য ওর জন্ম হয়নি।

***

প্রথমবার যেদিন জুলিকে দেখে আযহার, তার মনে হয়েছিল মেয়েটির জীবন জুড়ে বিষণ্ণতা ছাড়া আর কিছু নেই। জুলির এই বিষণ্ণতার কারণ আযহার জানেনা। হয়ত চোখের সামনে খুব কাছের মানুষের মৃত্যু দেখেছে, হয়ত তিল তিল করে গড়ে ওঠা কোন স্বপ্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ভেঙে গেছে, হয়ত পরম বিশ্বাসী একজন মানুষ তাকে ধোঁকা দিয়েছে অথবা কোন কারণ ছাড়াই বিষণ্ণতা নামের অদ্ভুত রোগটি তাকে পেয়ে বসেছে। কখনও আযহার জানতে চাইনি তার এই বিষণ্ণতার কারণ। শুধু বিশ্বাস করত সে আর জুলি একই পথের পথিক।

নিজের ফেলে আসা অতীত জীবন যখন বিরাট এক রহস্য হয়ে দেখা দেয় তখন বেঁচে থাকার মুহূর্তগুলো খুব বেশি কষ্ট দেয়। আজহারের স্মৃতিতে যা কিছু আছে তার সবই মিথ্যা, ল্যাবরেটরিতে সৃষ্টি! এই চিন্তা জখনই মাথায় আসে, প্রচণ্ড এক বিষাদে ঢেকে যায় তার স্বাভাবিক চিন্তাগুলো। আত্মঘাতী হতে খুব ইচ্ছে করে, ব্যথার মাঝে সুখ খুঁজে পেতে ইচ্ছে করে। ঠিক এমনই এক সময়ে সে জুলির দেখা পায়। তাকে দেখে আজহারের মনে হয়েছিল এই মেয়েটি তার মতই একা। হয়ত দুজনে মিলে চেষ্টা করলে পরস্পরের অসম্পূর্ণতাটুকু তারা ঢেকে দিতে পারবে। কিন্তু ওরা কি বাস্তবিক অর্থে সফল হয়েছে?

জুলিকে স্ত্রী রূপে পাওয়ার পর আযহার নিজের জীবনের কষ্টটুকু ভুলে যায়। রহস্যময় অতীত পিছনে ফেলে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুর করে। কিন্তু জুলিকে খুঁজে পায়নি কাঙ্ক্ষিত সুখ। তার বিষণ্ণতা ময় জীবনে আসেনি কোন পরিবর্তন। সাংসারিক জীবনে হাসি আনন্দে কাটে মুহূর্ত গুলো কিন্তু দিন শেষে রাতে পাশাপাশি শুয়ে আযহার ঠিকই জুলির একাকীত্বটুকু টের পায়। কিন্তু ইদানীং মনে হচ্ছে জুলির সেই বিষণ্ণতা অবশেষে কেটে গেছে। সে খুঁজে পেয়েছে বেঁচে থাকার অর্থটুকু।

দা রেবেল এখন আজহারের বাসায়ই থাকে। তাকে দোতালার একটা সুসজ্জিত রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। জুলি তাকে আপন ভাইয়ের মত শ্রদ্ধা করা শুরু করেছে।

প্রথম দিন রেবেল যখন আযহারের বাসায় আসার পর জুলি তার প্রচুর আদর যত্ন করেছে। তারপর রেবেল যখন চলে যেতে চাইল, জুলি বাঁধা দেয়। “আপনি কেন চলে যাবেন ভাইজান? বাইরে আপনার সাংঘাতিক বিপদ। সরকার আপনাকে জীবিত বা মৃত ধরিয়ে দিতে পারলে কটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে”।
রেবেল আপত্তি করেছিল, “কিন্তু ভাবী, এখানে থেকে ধরা খেলে আমার সাথে সাথে আপনাদেরও বিপদ হবে”।
“আমার বাড়িতে থাকলে আপনার ধরা পড়ার সম্ভাবনা খুব কম। আমার স্বামী সরকারের সাথে স্পন্সরে একটা বিজনেস করে। সরকারকে অনেক টাকা ট্যাক্স দেয় বলে তাকে সরকারী বাহিনীর লোকজন সমীহ করে। ওরা সব যায়গাতে খুঁজলেও আমাদের বাড়িতে আপনাকে খুঁজবে না”।

এর পর আর রেবেল আপত্তি করেনি।

ব্যাপারটা মন থেকে মেনে নিতে না পারলেও আযহার চুপ করে থাকে। জুলির যে কাজে আনন্দ তাতে বাঁধা দেওয়ার কোন ইচ্ছে আযহারের নেই।

কিন্তু ইদানীং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। লিবারেশন আর্মির বিশেষ মিটিং, সভা, আলোচনা- সব কিছু আযহারের বাড়িতেই হচ্ছে। প্রতিদিন অল্পবয়সী বেশ কিছু তরুণ তরুণী আসে, তারা রেবেলের রুমে বসে অনেকক্ষণ নানান বিষয়ে আলাপ করে। তাছাড়া নতুন গজিয়ে ওঠা আরও একটি বিদ্রোহী গ্রুপ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফাইটারস, বামপন্থী দলগুলো এমনকি আর কিছু ছোট ছোট বিচ্ছিন্নতাকামি দলের নেতাদেরও তার বাড়িতে আনাগোনা শুরু হয়েছে। এই সময়টা সারাক্ষণ চায়ের ট্রে হাতে রেবেলের ঘর আর কিচেনে দৌড়াদৌড়ি চলে জুলির। এই বিদ্রোহী গ্রুপের সেবা করার মাঝে অজানা কোন এক সুখ খুঁজে পেয়েছে সে।

আযহার মাঝে মধ্যে জুলিকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, “ব্যাপারটা আমার পছন্দ না জুলি। ধরা খেলে আমরা সবাই মারা পড়ব”।

কিন্তু জুলি আযহারের কথা আমলে নেয়নি। "এই লোকগুলো দেশটাকে স্বাধীন করার জন্য নিজদের জীবন বাজি রেখেছে। আর আমরা এদেরকে শুধু একটু আশ্রয়, একটু খাবার দিয়ে সাহায্য করতে পারব না? এত স্বার্থপরের মত কথা কীভাবে বল?"

এর পর আর কিছু বলেনি আযহার। জুলির সুখের কথা ভেবে সে গুটিয়ে নিয়েছে নিজেকে।

***

খবরটা ছড়িয়ে পড়ল খুব দ্রুত। এক অদ্ভুত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত দেশ জুড়ে। ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার কিছুক্ষণের মাঝেই মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। দেশের মানুষ প্রতি মুহূর্তে প্রচণ্ড আতংকের প্রহর গুনছে! সরকারী এক বিবৃতিতে ভাইরাসটির নাম বলা হল “ভাইপার”।

এদিকে বিদ্রোহী লিবারেশন ফ্রন্টের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে বার বার সাবধান করে দেওয়া হচ্ছে। তাদের ভাষ্যমতে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার পিছনে সরকারী বাহিনীর হাত আছে। তারা মানুষকে সরকারী সাপ্লাইয়ের পানি ও বোতল-জাত মিনারেল ওয়াটার খেতে নিষেধ করছে। বাইরে বেরনোর সময় মাস্ক ব্যবহার করতে বলছে। লিবারেশন ফ্রন্টের ধারনা ব্ল্যাক আর্মি দেশের পানি ও বাতাসের সাহায্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করছে।

সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এসময় সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা এলো, সরকারী ল্যাবে ভাইপার ভাইরাসের এক বিশেষ প্রতিরোধক আবিষ্কার হয়েছে। যারা এখনও ভাইপার ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি তারা এই প্রতিরোধক গ্রহণ করলে ভবিষ্যতে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

বিদ্রোহী লিবারেশন ফ্রন্ট খুব চেষ্টা করল মানুষকে প্রতিরোধক গহনে নিবৃত করার জন্য। লিবারেশন ফ্রন্টের ধারনা এই প্রতিরোধক আবিষ্কারের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভুয়া। পুরোটাই সরকারী এক কুটিল চক্রান্তের অংশ বিশেষ।

প্রথমদিকে মানুষ লিবারেশন ফ্রন্টের নিষেধ শুনলেও আশে পাশে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু দেখে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হল এই সরকারী প্রতিরোধক গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিতে। দা রেবেল বুঝতে পারল হাতে আর খুব বেশি সময় নেই। এখনি সময় চূড়ান্ত আক্রমণে যাওয়ার।

***

ইদানীং আযহার লিবারেশন ফ্রন্টের সদস্যদের চোখে মুখে অন্য রকম কিছু একটা দেখতে পাচ্ছে। ব্যাপারটা ঠিক বলে বোঝানো সম্ভব নয়। এমনকি জুলির চোখে মুখেও চাপা উত্তেজনা। তবে কি লিবারেশন ফ্রন্ট চূড়ান্ত আক্রমণে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে? এখন কি শুধু দিনক্ষণ গোনা?

আগ্রহটুকু চেপে রাখতে পারল না আযহার। জুলিকে জিজ্ঞেস করে বসল, “কি হচ্ছে বলতো? ওদের মধ্যে একটা পরিবর্তন টের পাচ্ছি”!
“তার আমি কি জানি?”
“নিজের স্বামীর কাছেও লুকচ্ছ জুলি?”
জুলি এক মুহূর্ত কিছু ভাবল। তারপর বলল, “তোমাকে আমি চিনতে পারিনা আযহার। আমি তোমাকে একজন প্রতিবাদী পুরুষরুপে চিনি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে তুমি কখনও মাথা নত করোনা। কিন্তু দেশের প্রশ্নে এমন নিশ্চুপ কেন? তোমার বন্ধু যেখানে নিজের জীবন বিপন্ন করে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়ছে, তুমি সেখানে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছ কেন?”
“কারণ সে একা, তার পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব। কিন্তু আমি চাইলেই সব করতে পারিনা। আমার তো তুমি আছ। তোমার কথা ভাবতে হয় আমার”।
“আমি তো তোমার বোঝা হতে চাইনি আযহার! আমি তোমার পথের সঙ্গী হতে চেয়েছিলাম”।
আযহার তাকিয়ে থাকল জুলির চোখের দিকে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।
“তুমি জানতে চাও ওরা কি করতে যাচ্ছে?”
উপর নিচে মাথা ঝাঁকাল আযহার।
“আস আমার সাথে”।

জুলির পেছন পেছন রান্না গেল আযহার। জুলি তাকে একটা গেস্ট রুমে নিয়ে গেল। এই গেস্ট রুমটা আজহারের জানা মতে অনেক দিন ব্যাবহার হয়না। ভেতরে ধুঁকে অবাক হয়ে গেল আযহার। অন্ধকার রুমের দেয়ালে একটা ত্রিমাতৃক মনিটর! রেবেলের রুমের ভেতর একটা ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছে জুলি, এই মনিটরে সব কিছু ধরা পড়ছে।

আযহার প্রশ্ন বোধক চোখে জুলি দিকে তাকিয়ে থাকল।
জুলি মৃদু হাসল। বলল, “আসলে গুরুত্বপূর্ণ মিটিংগুলোর সময় রেবেল আমাকে থাকতে দেন না। কিন্তু ওনাদের আলোচনা শুনতে আমার খুব ভাল লাগে। তাই অজান্তে একটা মাইক্রো ক্যাম লাগিয়ে রেখে এসেছি ঐ রুমে”।

আযহার দৃষ্টি দিল মনিটরে।

সবাই গোল হয়ে বসে আছে। মাঝখানে বসে আছে দা রেবেল। তার দুপাশে বসে আছে লিবারেশন ফ্রন্টের দুই প্রধান সদস্য নাতাশা আর জয়দেব। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফাইটারস গ্রুপের প্রধান জায়েদ ইকবালকেও দেখা যাচ্ছে। এছাড়া আছে বেশ কিছু বামপন্থী ও বিচ্ছিন্নতাকামি দলের লিডাররা। রেবেল সবাইকে এক নাগাড়ে নির্দেশ দিয়ে চলেছে। কেউ বলে না দিলেও আযহার নিশ্চিত, চূড়ান্ত আক্রমণের নকশা আঁকছে দা রেবেল!

***

কিছুদিন যাবত রাতে ঘুম কম হচ্ছে আযহারের। ঘুম আসলেও সাথে আসে দুঃস্বপ্ন। মাঝে মাঝেই স্বপ্নে দেখে সে মারা যাচ্ছে বা মারা গেছে। শুয়ে আছে কবরে, কাফনে গা ঢেকে। হাত- পা নাড়তে পারছে না কিছুতেই, কথা বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না। জুলিকে ডাকতে চাচ্ছে, কিন্তু গলা থেকে কোন স্বর বেরোয় না। আবার কখনো প্রচণ্ড জোরে চেঁচিয়ে ওঠে, “জুলিইইইই...” গলা থেকে স্বর বেরুনো মাত্র ঘুম ভেঙে যায়, বিছানায় বসে থরথর করে কাঁপতে থাকে। গলা শুকিয়ে কাঠ। জুলি ঘুম ভেঙে উঠে তাকে জড়িয়ে ধরে। গ্লাসে করে পানি এনে তার ঠোঁটের সামনে ধরে, ঢোক ঢোক করে গ্লাসের পর গ্লাস পানি খেলেও তৃষ্ণা মেটেনা।

আবার এমনও হয়, হঠাৎ করে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে মনে হয় কেউ যেন জানালা দিয়ে ঘরে এসে ঢুকেছে। বিছানার পাশে এসে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে তার মুখের দিকেই। আযহার যেন তার গায়ে আগন্তুকের নিঃশ্বাসের ছোঁয়া পায়। এমন অনুভূতির কারণ আযহার জানেনা। তার ভীষণ ভয় করে, ভীষণ ভয়! স্বপ্নেরা অনবরত ভয় দেখায় তাকে।

তাই মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যেতে সামনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে দেখে সে অবাক হলনা। ভাবল বুঝি অন্যান্য দিনের মত আজও দুঃস্বপ্ন দেখছে। কিন্তু কিছু সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও যখন দেখল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি সরছে না তখন বুঝল এটা স্বপ্ন নয়, বাস্তব। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি দা রেবেল। তার হাতে একটা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। আযহারের কপাল বরাবর লক্ষস্থির করা।

আযহার ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে উঠল, “তু... তুমি আমার ঘরে! এত রাতে”!

রেবেল চাঁপা স্বরে বলল, “আস্তে কথা বল। জুলি জেগে যাবে”।

ঠিক সেই মুহূর্তে আযহার টের পেল জুলি জেগেই আছে। শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক ভাবেই চলছে কিন্তু আযহার জানে জুলি ঘুমাচ্ছে না। সে বলল, “তুমি এই রুমে কেন এসেছ?”

“যে প্রশ্নটা এই কয়দিন বার বার করেছি কিন্তু জবাব পাইনি, সেই প্রশ্নটা আবার করতে এসেছি। তুমি এমন কিছু একটা জান যা আমি জানিনা, এবং আমার জানা খুবই জরুরী। বল কি সেটা?”

“এমন কিছুই নেই! অতীত জীবনের কিচ্ছু মনে নেই আমার”।

“আযহার! নিশ্চয়ই দেখেছ তোমার কপালে অস্ত্রের নিশানা করে রেখেছি! প্রয়োজনে গুলি করে দিতে একটুও দ্বিধা করব না। তুমি আর সব ভুলে যেতে পার কিন্তু এটা ভুলে গেছ একথা আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না”।

"বিশ্বাস কর আমার কিচ্ছু মনে নেই"!

"কি করে মনে থাকেনা আযহার? তোমার তো মনে রাখার কথা! অন্তত তোমার যায়গায় আমি থাকলে তো মনে রাখতাম"। রেবেল হতাশ হয়ে পিস্তল নামিয়ে নিল। "আযহার, আগামী ভোরে আমরা স্বৈরাচারী সরকারের উপর চূড়ান্ত আক্রমণ করতে যাচ্ছি! তোমার জানা এই সামান্য তথ্যটুকুর উপর নির্ভর করছে আমাদের সাফল্য"!

রেবেল ঘর ছেড়ে যখন বেরিয়ে যাচ্ছে তখনই বিদ্যুৎ চমকের মত ব্যাপারটা মনে পড়ল আযহারের! “চার দুই পাঁচ আট ছয় শূন্য নয়”! অতীত জীবনের এই তথ্যটা সে মনে রাখতে চেয়েছিল মেমোরি রিজেনারেশনের সময়! সে ডাকল, “রেবেল দাঁড়াও!”

রেবেল দাঁড়িয়ে পড়ল। ঘুরে তাকাল তার দিকে। আযহার বলল, “আমার অতীত জীবনের একটা তথ্যই কেবল জানি আমি। কিছু সংখ্যা! এর অর্থ আমার জানা নেই। সংখ্যাগুলো হল, চার দুই পাঁচ আট ছয় শূন্য নয়! তুমি কি জান এর অর্থ কি?”

রেবেলের মুখে এই প্রথম হাসি দেখল আযহার।

***

১৫ই ডিসেম্বর ভোরের সূর্য ওঠার ঠিক সাথে সাথে লিবারেশন ফ্রন্টের নেতৃত্বে অতর্কিত আক্রমণ চালান সম্মিলিত বিদ্রোহী বাহিনী। ব্ল্যাক আর্মি শাসিত সরকারের মূলভিত্তি রাজধানীকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ল উপমহাদেশের উত্তর পশ্চিমদিকের সমভূমি থেকে শুরু করে দক্ষিণ পূর্বদিকের পার্বত্য অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে শুরু হল প্রচণ্ড যুদ্ধ।

প্রায় ৫০,০০০ জন সৈনিক এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করল। তবে এখানে শুধু লিবারেশন ফ্রন্ট এর সদস্য, বিরোধী ইনডিপেন্ডেন্ট ফাইটারস গ্রুপ আর কিছু বামপন্থী বাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্টদেরকেই হিসাবের আওতায় আনা হল। কিন্তু ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে যাওয়া বিচ্ছিন্নতা কামী বিদ্রোহী গ্রুপ, কিছু অনিয়মিত বাহিনীর সৈনিক আর সাধারণ জনগণ যারা স্বেচ্ছায় যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাদের সংখ্যা হিসেব করা প্রায় অসম্ভব।

প্রাথমিক অবস্থায় অনেকটা বিক্ষিপ্তভাবে বিদ্রোহ শুরু হল। সরকারী বাহিনী এই আক্রমণের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। তাই সামান্য প্রচেষ্টাতেই অভিযানে অগ্রগতি দেখা গেল, সুযোগটা কাজে লাগিয়ে লিবারেশন ফ্রন্ট নিজেদের সংগঠিত করে নেয়ার সময় পেয়ে গেল। প্রায় ২০ হাজার সৈনিককে নিয়ে দা রেবেল নিজে অগ্রসর হল রাজধানীর দিকে। সেকেন্ড ইন কমান্ড নাতাশার উপর দায়িত্ব ছিল অস্ত্রাগারগুলোতে হামলা চালিয়ে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার।

নাতাশার জন্য কাজটা খুব একটা সহজ ছিলনা। উপমহাদেশের দক্ষিণ প্রান্তের উপকূলবর্তী নগরে ছিল ব্ল্যাক আর্মির মুল অস্ত্রাগার। এখানে কড়া সামরিক পাহারা বিদ্যমান ছিল। প্রায় দশহাজার সেনা সদস্যের একটা দল আক্রমণ করল লিবারেশন ফ্রন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড নাতাশার নেতৃত্বে।

দা রেবেলের কাছ থেকে ফাইটারস গ্রুপের প্রতি নির্দেশ ছিল তারা যেন ব্ল্যাক আর্মির সামরিক স্থাপনা গুলোতে আঘাত হানে। যদিও লিবারেশন ফ্রন্ট আর ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফাইটারস দুর্বল মিত্রতায় আবদ্ধ ছিল কিন্তু গোত্রীয় আনুগত্যের চেয়ে দেশ প্রেম তাদের কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ইনডিপেন্ডেন্ট ফাইটারস গ্রুপ মূলত দুইটি অংশ নিয়ে গঠিত ছিল। বেশির ভাগ সদস্য হল নিয়মিত সৈন্য । এরা ফাইটারস গ্রুপের প্রধান জায়েদির নেতৃত্বে যারা ব্ল্যাক আর্মির সামরিক স্থাপনাগুলোতে গেরিলা আক্রমণ করল। এদিকে ব্ল্যাক আর্মির কিছু কিছু ব্যারাকে সৈন্যরা স্বর্ণমুদ্রায় অগ্রিম বেতন পাওয়ায় ধর্মঘট ডেকেছিল। ব্যাপারটা সুরাহা না হওয়ায় তারা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বর্গের উপর অসন্তুষ্ট ছিল। ঐ সব ব্যারাকগুলোতে বিদ্রোহীদের আক্রমণ হওয়ার পর তারা কোনরূপ লড়াইয়ে অংশ নিতে রাজি হলনা। এসময় অল্প কিছু পক্ষ ত্যাগী সৈনিক ফাইটারস গ্রুপের সাথে যোগ দেয়। জায়েদি বাহিনী প্রথমদিকে দুর্বলভাবে সজ্জিত ছিল। কিন্তু পক্ষ ত্যাগী ব্ল্যাক আর্মি আর লিবারেশন ফ্রন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড নাতাশার কাছ থেকে স্বয়ংক্রিয় মেশিনগানের মত কিছু প্রয়োজনীয় অস্ত্রের সরবরাহ পেয়ে তারা বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করতে থাকে।

ফাইটারস গ্রুপের অপর দলটি মূলত প্রথম জীবনে অপরাধের সাথে জড়িত ছিল। এদের অধিকাংশই ব্ল্যাক আর্মির সামরিক অভ্যুত্থানের সময় বন্দি হয়। পরবর্তীতে অনেকে ছাড়া পেয়েছে, অনেকে পালিয়ে এসেছে। সরাসরি দেশ প্রেম এদের মধ্যে কাজ না করলেও এরা ব্ল্যাক আর্মির পতন চাইত। এদের হামলার মুল লক্ষ ছিল দেশের সমস্ত কারাগারগুলো। এসব যায়গায় হামালা করে কয়েদীদের বের করে এনে তাদেরকে নিজদের দলে ভিড়িয়ে দলীয় সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চলছিল।

সমুদ্রপথে বাম পন্থী গ্রুপ গুলো আর সাথে লিবারেশন ফ্রন্টের জয়দেবের অধীন সদস্যরা ব্ল্যাক আর্মির বিরুদ্ধে তুমুল যুদ্ধ করল। কিন্তু ব্ল্যাক আর্মির অধিকতর শক্তিশালী রণতরীর সামনে তারা ছিল খুবই অসহায়। দা রেবেল বলেছিল একেবারে মৃত্যু নিশ্চিত আর কোন পথ নেই এমন অবস্থা হলেই কেবল জীবাণু অস্ত্র প্রয়োগ করতে। কিন্তু জয়দেব মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাইল না। সে তার অনুগত বাহিনীকে নির্দেশ দিল জীবাণু অস্ত্র চালাতে। বলা বাহুল্য অল্প সময়ের মধ্যেই ব্ল্যাক আমির সমস্ত যুদ্ধজাহাজ ও সিপ্লেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হল। জয়দেব আর অন্য কিছু নেতৃস্থানীয় সদস্য কয়েকটা সিপ্লেন দখল করে নিয়ে সমুদ্র উপকুল হয়ে নদী পথে রাজধানীর দিকে যাত্রা করল।

কর্নেল আহাদের নেতৃত্বে বিচ্ছিন্নতাকামি গ্রুপ গুলো একত্র হয়ে তিন ব্রিগেড সৈন্য নিয়ে রাজধানীর বাইরে ব্ল্যাক আর্মির ডিসট্রিক্ট ইলেভেনের বিমানঘাঁটিগুলোতে আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হয়। ব্ল্যাক আর্মির বিমান বাহিনীর সদস্যরা খুব সহজেই তাদের এই আক্রমণ প্রতিহত করতে সমর্থ হল। আহাদের অনুগত সৈনিকরা পরাজয় মেনে নেওয়ার দ্বারপ্রান্তে হঠাৎ অদ্ভুত দর্শন কিছু অস্ত্র বের করে এলোপাথাড়ি ফায়ারিং শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। ব্ল্যাক আর্মির একটা অংশ স্রেফ বাতাসে মিলিয়ে যায়। ঠিক একই সময়ে নাতাশা তার বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হয় আহাদের সাহায্যে। ব্ল্যাক আর্মির বিমান বাহিনীর প্রধান কাইজার খুব বুঝতে পারলেন বিদ্রোহী গ্রুপের হাতে জীবাণু অস্ত্র আছে, এই অস্ত্রের সম্মুখে তারা কখনোই পারবে না। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতিসহ অবশেষে তারা পরাজিত হয়। আহাদ ডিসট্রিক্ট ইলেভেনের নবগঠিত উড্ডয়ন কেন্দ্রটি দখল করে কিছু প্লেন নিয়ে আকাশ পথে উড়ে যায় রাজধানীর দিকে। এদিকে নাতাশা সড়ক পথে অগ্রসর হয় দা রেবেলকে সাহায্য করার জন্য।

পার্বত্য শহর মেঘলাতে সরকারী বাহিনীর আনাগোনা একটু কম। শুধু দুইটা অস্থায়ী ব্যারাক ছিল। তাই নদীপথ জয় করে এসে পূর্ব দিক থেকে জয়দেবের বাহিনীর আক্রমণ ৩ ঘণ্টার মধ্যে ব্ল্যাক আর্মির কিছু সদস্য আত্মসমর্পণ করে এবং অন্যরা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পালিয়ে যায়। এদিকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফাইটারস গ্রুপের নিয়মিত বাহিনীর সৈনিকরা এসে জয়দেবের সাথে মিলিত হয়। তারা একত্র হয়ে অনিয়মিত বাহিনীর যারা কারাগারগুলোতে হামলা চালাচ্ছিল তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে চলে।

রাজধানীতে প্রায় এক লক্ষ ব্ল্যাক আর্মির সৈন্য ছিল। বিদ্রোহীরা রাজধানীর দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করায় ব্ল্যাক আর্মির ৭ম কর্পস লেফটেন্যান্ট কর্নেল বাজিদ খানের অধীন কয়েকটি পদাতিক ডিভিশন, জেনারেল জামাল পাশার অধীন ১ম প্রাদেশিক বাহিনীর সাথে মিলিত হয়ে বিশাল এই বাহিনী সুসংগঠিত করল। এই বাহিনীর কাজ ছিল রাজধানীর রেলওয়ে ও প্রেসিডেন্টের অধীন বিশেষ কমান্ডো বাহিনীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা। বাম পন্থীদের একটা অংশ রেলওয়ের উপর অব্যাহত হামলার চালালেও এক সময় তারা ব্যর্থ হয়ে পিছু হটল।

রাজধানীর প্রতিরক্ষায় থাকা ব্ল্যাক আর্মির সদস্যরা প্রেসিডেন্টের প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত সৈনিক ছিল। তারা সমস্ত শক্তি দিয়ে লিবারেশন ফ্রন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত। আধুনিক সমস্ত অস্ত্র দ্বারা সুসজ্জিত হওয়ায় তারা লিবারেশন আর্মির প্রথম আক্রমণটি খুব সহজেই থামিয়ে দিল। সারাদেশে যুদ্ধ চলতে থাকায় লিবারেশন ফ্রন্টের লোকবল ক্রমশ কমে এসেছিল। মাত্র ১৫০০০ সেনা নিয়ে দা রেবেলের পক্ষে সম্ভব ছিলনা ব্ল্যাক আর্মির বিশাল বাহিনীর উপর হামলা করে। এদিকে ব্ল্যাক আর্মির বিমান বাহিনী আকাশ পথে হামলা চালাল তাতের উপরে। সম্পূর্ণ অরক্ষিত থাকার কারণে কয়েক হাজার সৈনিক কয়েক মুহূর্তের মধ্যে মারা গেল। লিবারেশন ফ্রন্টের আমুনিশনও তখন ফুরাবার পথে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় দা রেবেল চরম সিদ্ধান্তটি নিতে বাধ্য হলেন। তিনি অগ্রসরমান বাহিনীকে জীবাণু অস্ত্র প্রয়োগ করার নির্দেশ দিলেন। কেউ জানেনা কোত্থেকে দা রেবেল এই অস্ত্র যোগাড় করেছে। অস্ত্র গুলো এক নাগাড়ে মৃত্যুবীজ বর্ষণ করে গেল। ব্ল্যাক আর্মির সদস্য সংখ্যায় অতি দ্রুত অর্ধেকে পরিণত হল। অস্ত্রের প্রয়োগে আকাশ পথে ধেয়ে আসা জঙ্গি বিমানগুলো খুব সহজেই ধূলিসাৎ হল।

অবশেষে জীবাণু অস্ত্রের আঘাতে ব্ল্যাক আর্মি পিছু হটতে বাধ্য হল। বিদ্রোহী লিবারেশন ফ্রন্টের অল্প কিছু সৈনিক নিয়ে দা রেবেল রাজধানীতে প্রবেশ করল। বাকি সৈনিকরা শহরের বাইরে শত্রুপক্ষের ব্যাকআপ দলের আগমনের অপেক্ষা দা রেবেল রাজধানীতে প্রবেশ করার পর দেখতে পায় যে শহরের সমস্ত জাতীয়তাবাদী অধিবাসীরা আরব স্বাধীন দেশের পতাকা উত্তোলন করেছে। ব্ল্যাক আর্মির ব্যাকআপ সৈনিকদের আর সাহস হয়নি রাজধানীতে হামলা চালানোর। এদিকে নাতাশার নেতৃত্বে লিবারেশন ফ্রন্টের সৈনিকরা রাজধানীতে চলে এলো। দা রেবেলের অনুগত সৈনিকদের সাথে রাজধানীর ভেতরে প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত কমান্ডো দলের প্রচণ্ড এক যুদ্ধ হল। দা রেবেলের পক্ষে হয়ত সম্ভব হতোনা প্রেসিডেন্টের বাস ভবনের ভেতরে প্রবেশের পথ বের করা কিন্তু পেছন থেকে নাতাশার আক্রমণে কমান্ডো বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ল। এদিকে জায়েদির সাথে একদল ফাইটারস গ্রুপের সেনারাও চলে আসায় কমান্ডো বাহিনীর পতন হল। দা রেবেল নিজ হাতে গ্রেফতার করল প্রেসিডেন্ট ইয়াকুব খানকে। ১৬ই ডিসেম্বর বিকেলের দিকে চূড়ান্ত বিজয়ের ঘোষণা দেওয়া হল!

***

এদিকে যুদ্ধজয়ের খবর ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। দলে দলে মানুষ বেরিয়ে এলো রাস্তায়। উৎসব- আনন্দে মেতে উঠল সবাই। রঙ্গে রঙ্গে সেজেছে যেন সমগ্র উপমহাদেশ। রং-বেরংয়ের পোশাকে হাজারো হুল্লোড়বাজ মানুষের নাচ আর গানে মেতে উঠল রাজধানীর আর তার বাইরের শহরগুলোর অলি গলি। রাজধানীর প্রধান সড়কটি ঢেকে গেল ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হাজারো মানুষের পথ প্রদর্শনীতে। নাচ আর গানে মেতে উঠল এই আনন্দ মিছিলে যোগদানকারী লাখ লাখ সাধারণ মানুষ। বর্ণিল পোশাক আর ব্যতিক্রমী আয়োজনে সাজানো এই পথ উৎসবের আরও জমকালো হয়ে উঠল একদল সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গিতায়জনে। অবশ্য লিবারেশন ফ্রন্ট ও অন্যান্য বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্যরা বিপুল সংখ্যক এই মানুষের কথা মাথায় রেখে তাদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিল। নাচ-গান হুল্লোড়ের মাঝে অংশগ্রহণকারীরা অনেক দিন পর কিছু সত্যিকারের আনন্দের উপলক্ষ খুঁজে পেল যেন!

প্রেসিডেন্টের বাস ভবন থেকে ঘোষণা দেওয়া হল কিছুক্ষণ বাদেই প্রেসিডেন্টের বাসভবনের দোতালার বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবে দা রেবেল। দলে দলে মানুষেরা বাস ভবনের আশে পাশে এসে সমবেত হল। তারা সবাই এক নজর দেখতে যায় তাদের প্রিয় নেতাকে।

দা রেবেল বারান্দায় দাঁড়িয়ে শত শত মানুষের ঢল দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ল। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে সে শুরু করল।

“বন্ধুরা,

আজ আমরা আরও একবার প্রমাণ করলাম আমরা বীরের জাতি। আজ আমরা স্বাধীনতার প্রথম মুহূর্ত উদযাপন করছি একটি স্বপ্ন শুরুর প্রতীক রূপে। আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রায় এক শতাব্দী আগে যে পবিত্র অঙ্গীকারে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল, আজ আমরাও সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সমক্ষে সেই একই অঙ্গীকারে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি।

আজকের বিশ্ব এক পরিবর্তিত বিশ্ব। আজ আমরা জ্ঞান বিজ্ঞানের চূড়ান্ত উন্নতির উপকণ্ঠে দাঁড়িয়ে রয়েছি। এটা একই সাথে আনন্দ ও অস্বস্তির অনুভূতি ছড়িয়ে দেয়। আজ মানুষের নশ্বর হাতে যেমন সকল প্রকারের অসুখ-দারিদ্র্য-অশান্তি দূরীকরণের মহা-ঔষধ আছে ঠিক তেমনি আছে মানব জীবন মুহূর্তের মাঝে বিনষ্ট করার শক্তি। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলি রাষ্ট্রের উদারতার থেকে নয় বরং ঈশ্বরের হাত থেকে উদ্ভূত। মানুষের কোন অধিকার নেই এই অধিকার ছিনিয়ে নেয়। আমাদের কাছে অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের চাইতেও অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হল স্বাধীনতা। এই অধিকার যারা ছিনিয়ে নিতে চায় আমরা অতিতে তাদের প্রতিরোধ করে এসেছি, ভবিষ্যতেও করব।

আজ আমাদের এটা ভুলে যাওয়ার স্পর্ধা করা উচিত নয় যে আমরা নয় মাসের এক রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের উত্তরাধিকারী। আজ এই মুহূর্তে এই স্থান থেকে সমগ্র বিশ্বে আমাদের সকল বন্ধু ও শত্রু উভয়ের নিকটেই এই বার্তা সমানভাবে পৌঁছে যাক যে, এক শতাব্দী পূর্বে যে মশাল আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা জ্বালিয়েছিলেন, সেই মশাল আজ এমন এক নতুন প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরিত হয়েছে যারা এই শতাব্দীতে জন্মেছে, যুদ্ধের আগুনে দগ্ধ হয়ে দৃঢ় হয়েছে এবং একটি রক্তক্ষয়ী বিপ্লব দ্বারা শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়েছে। এই রাষ্ট্র সবসময় যে মানবাধিকারগুলির প্রতি দায়বদ্ধ ছিল সেগুলিকে যারা ধীরে ধীরে হনন করার যে অপচেষ্টা করে চলছে, এই প্রজন্ম তাদের কর্মকাণ্ড কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে ইচ্ছুক নয়। ওরা প্রস্তুত সহস্র মরণে, জীবন দিয়ে হলেও অধিকার আদায়ের লক্ষে সর্বদা একতাবদ্ধ থাকবে।

জলবায়ুগত পরিবর্তনের ফলে আমাদের ভৌগলিক সীমানা পুরবের মত নেই, তথাপি আমরা পুরাতন মিত্ররা সবাই একই সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক মূলের ভাগীদার, আমরা প্রত্যেকে পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত বন্ধুর আনুগত্য স্বীকার করছি। এমন কাজ খুবই কম আছে যা আমাদের মিলিত সহযোগিতাপূর্ণ উদ্যোগের মাধ্যমে সম্পন্ন কড়া সম্ভব নয়। বিভাজিত থাকলে আমরা বেশি কিছু করতে সক্ষম হব না কারণ একে অপরের সাথে সম্মত না হলে আমরা শক্তিশালী প্রত্যাহ্বানের মোকাবিলা করতে পারব না এবং পাশাপাশি থাকা সত্ত্বেও ক্রমশ দূরদূরান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরব।

আমরা অঙ্গীকার করছি যে আমদের পূর্ব পুরুষেরা যে গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করেছিল এই এখানে, একনায়কতন্ত্র তার স্থান কোনদিন নিতে পারবে না। আমরা সবসময় এই প্রত্যাশা করব যে ভবিষ্যতে যারা এ দেশে স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করার ইচ্ছা পোষণ করে তারা যেন এই চিন্তা স্মরণে রাখে যে অতীতে যারা বাঘের পিঠে চড়ে ক্ষমতা অর্জন করার বোকামি করেছিল তারা শেষে বাঘের পেটেই গিয়েছিল, ভবিষ্যতেও তার ব্যতিক্রম হবে না।

লিবারেশন ফ্রন্টের নেতৃত্বে স্বাধীনতাকামী যৌথ বাহিনী স্বৈরাচারী ব্ল্যাক আর্মিকে পরাজিত করে দেশকে আরও একবার সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বাদ দিয়েছে। বিশ্বের দীর্ঘ ইতিহাসে কেবলমাত্র অল্প কয়েকটি প্রজন্মকেই জাতির সর্বাধিক বিপদের সময়কালে স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত রাখার ভূমিকা অর্পণ করা হয়েছে। আমি এই দায়িত্বের কারণে সঙ্কুচিত হই না বরং একে স্বাগত জানাই। আজ প্রতিটি জাতি জানুক যে, তারা আমাদের মঙ্গল কামনা করুক বা না করুক, আমরা স্বাধীনতার স্থায়িত্ব ও সাফল্যকে সুনিশ্চিত করার জন্য যে কোনও মূল্য দেব, যে কোনও ভার ওঠাব, যে কোনও সমস্যার সম্মুখীন হব, যে কোনও বন্ধুকে সমর্থন দেব কিংবা যে কোনও শত্রুর বিরোধিতা করব। এই অঙ্গীকার আমার পূর্ব পুরুষ করেছিল, এই অঙ্গিকার আমারও।

বন্ধুরা মনে রাখবেন, আমাদের পথের চূড়ান্ত সাফল্য বা ব্যর্থতা আমার চেয়েও অনেক বেশি মাত্রায় আপনাদের উপরে নির্ভর করবে। লিবারেশন ফ্রন্ট ক্ষমতা চায়না, তারা চায় এই দেশে শান্তিপূর্ণ শাসন ব্যবস্থা বিরাজমান থাকুক। আমরা যদি এই স্বাধীনতার পর ক্ষমতা নিজেদের কুক্ষিগত করে রাখি তাহলে সেই স্বৈরাচারী ব্ল্যাক আর্মি আর আমাদের মাঝে পার্থক্য থাকল কোথায়?
আমরা অঙ্গিকার করছি, আগামী ১ বছরের মধ্যে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেওয়া হবে। আমি আপনাদের কাছে আহবান করছি, আপানদের মাঝে যারা দেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী, তারা এগিয়ে আসুন, রাজনৈতিক জোট গড়ে তুলুন, দেশের সেবার ব্রত গ্রহণ করুন। আমি, দা রেবেল, আপনাদের মাঝ থেকে উঠে আসা খুব সাধারণ একজন, আবার আপনাদের সাথেই মিশে যেতে চাই। আমি বিপ্লব ভালবাসি, রাষ্ট্রপতি সেজে দেশ শাসনের কাজ আমার নয়। দেশ আপনাদের, কীভাবে চালাবেন সেই ভাবনাও আপনাদের, আমি শুধু আপনাদেরকে সেই ভাবনা ভাবার সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলাম। আমার দায়িত্ব শেষ হয়েছে, এবার আমি বিদায় নেব।

সব শেষে সবার প্রতি একটা অনুরোধ রাখব, আপনার দেশ আপনার জন্য কী করতে পারে সেটা জানতে চাইবেন না বরং ভেবে দেখুন যে আপনি দেশের জন্য কী করতে পারেন। আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হল একটি সৎ বিবেক, ইতিহাসই হল আমাদের কীর্তির চূড়ান্ত বিচারক, ঈশ্বরের আশীর্বাদ ও সাহায্য প্রার্থনা করে এগুলিকে নিয়ে চলুন আমাদের ভালবাসার দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাই। একটা কথা চিরদিন মনে রাখবেন, এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ঈশ্বর, পৃথিবীতে শান্তি রক্ষাও ঈশ্বরের কাজ। কিন্তু ঈশ্বর তার এই মহান কাজের দায়িত্ব আমাদের হাতে দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আমরা যেন আমাদের দায়িত্ব পালনে কখনও নিরুৎসাহিত না হই।

ভাল থাকবেন সবাই।

বিদায়”।


উপস্থিত জনতার মধ্যে সাড়া পড়ে গেল। সবাই চিৎকার করছে। সবার কণ্ঠেই একই জিজ্ঞাসা। তারা জানতে চায় দা রেবেলের আসল আসল নাম- পরিচয়। যে মানুষটা তাদেরকে আরও একবার স্বাধীনতার স্বাদ এনে দিতে জীবন বাজি রেখে লড়েছে তার পরিচয়টুকু না জানতে পারলে খুব বড় একটা আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ রয়ে যাবে। দা রেবেল সকলের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ল। তার আর কিছু বলার নেই, এখন বিদায় নেয়াই শ্রেয়। কিন্তু দা রেবেলের জানা নেই, এই পৃথিবীতে যুগে যুগে যারা জাতিকে অন্ধকারের শৃঙ্খল থেকে রক্ষা করে এনে আলোর পথ প্রদর্শন করিয়েছে, তাদেরকে জাতি কখনও খুব বেশিদিন নিজেদের মাঝে ধরে রাখার সুযোগ পায়নি।

সাধারণের ভিড়ের মধ্যে ওভার কোট গায়ে দেওয়া এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। লোকটির চোখে মুখে এক ধরনের কাঠিন্য ফুটে উঠেছে। এই লোকের আসল নাম কারো জানা নেই, একটা কোড নেম অবশ্য আছে, লুকাস এক্স। প্রেসিডেন্টের অনুগত বিশেষ কমান্ডো বাহিনীর সদস্য সে। তার এক হাত ওভার কোটের ভেতর আড়াল কড়া ছিল। উপস্থিত জনতার মাঝে একটা বিশৃঙ্খলার অপেক্ষায় ছিল সে। সুযোগ বুঝে হাতটা বের করে আনল। হাতে অদ্ভুতদর্শন এক আগ্নেয়াস্ত্র। দা রেবেলের কপাল লক্ষ করে গুলি করে দিল সে। প্রায় সাথে সাথেই ছিটকে পড়ল রেবেল। উপস্থিত জনতা পিন পতন নীরবতা। তারা চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা বিশ্বাস করতে পারছে না। মুহূর্তের মধ্যে মারা গেছেন দা রেবেল! জাতিকে তার সত্যিকার পরিচয় ফিরিয়ে দেওয়া এই মানুষটির পরিচয় অজানাই রয়ে গেল।

***

বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাস্তার লোকদের দেখছে আযহার। দলে দলে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, সবার চোখে মুখে একধরনের চাপা কষ্ট। কিছুক্ষণ আগেও তারা ছিল হাসি আনন্দে উচ্ছল। কিন্তু দা রেবেলের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই জাতির বুকে নেমে এসেছে গভীর শোক।

পায়ের শব্দে পেছন ফিরে তাকাল আযহার। জুলি এসে দাঁড়িয়েছে। তার চোখ দুটো ভীষণ লাল, মুখটা ফোলা ফোলা দেখাচ্ছে। নিশ্চয়ই অনেকক্ষণ কেঁদেছে। জুলির হাতে একটা প্যাকেট দেখে আযহার জিজ্ঞেস করল, “কিসের প্যাকেট?”
ধরা গলায় জুলি বলল, “এটা দা রেবেল বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে আমার হাতে দিয়েছিল। বলেছিল যদি তার মৃত্যুর সংবাদ পাই তবে যেন তোমাকে প্যাকেটটা দেই”।
“কি আছে এতে?”
“তুমিই দেখ। আমাকে দেখতে নিষেধ করেছে সে”। বলেই জুলি চলে গেল ব্যালকনি থেকে।

আযহার প্যাকেটটা ছিঁড়েতেই ভেতর থেকে একটা সিডি আর একটা খাম বেরিয়ে এলো। খামটা দেখে মনে হচ্ছে ভেতরে একটা কাগজ আছে, সম্ভবত চিঠি। দেখা নিষেধ আছে বললেও আযহার জানে জুলি ইতিমধ্যেই এই সিডিতে কি আছে আর চিঠিতে কি লেখা আছে তা দেখে নিয়েছে।

বেডরুমে এসে ল্যাপটপ বের করল আযহার। সিডিটা ল্যাপটপে প্রবেশ করাল। সিডির ভেতরে বেশ কিছু ডকুমেন্ট, ছবি আর ম্যাপ ভরা। এর ভেতরে আবার একটা ভিডিও ফাইল নজরে এলো। আযহার ভিডিওটি প্লে করল সে।

ভিডিও শুরু হতেই একজন হাসি খুশি মাঝবয়সী লোককে দেখা গেল। ভদ্রলোকের মাথায় কাঁচা পাকা চুল, চোখে চশমা, নাকের নিচে মোটা গোঁফ। একটা প্রোফেসর প্রোফেসর ভাব আছে চেহারায়, এ ধরনের মানুষকে দেখলেই সমীহ করতে ইচ্ছে করে। লোকটা কি বলছে শোনার জন্য ভলিউম একটু বাড়িয়ে দিল আযহার।

ভদ্রলোক একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে নিলেন। তারপর শুরু করলেন,
“এই সিডিটা যদি এই মুহূর্তে প্লে হয়ে থাকে তবে আমি নিশ্চিত এই মুহূর্তে আমার সামনে বসে আছে মাইডাস এক্স। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মাইডাস, আমার কথার উপর আস্থা রাখার জন্য। তুমি জেনে রাখ মৃত ব্যক্তিদের যদি আশীর্বাদ করার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে এই অধম বিজ্ঞানী জামশেদ আলমের আশীর্বাদ তোমার সাথেই আছে!

ইতিমধ্যে আমি তোমাকে সরকারী ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সম্পূর্ণ জানিয়েছি। কি করে এই ষড়যন্ত্র থেকে দেশকে রক্ষা কড়া যেতে পারে তার একটা পরিকল্পনা আমি করে রেখেছি। আশাকরি তুমি ইতিমধ্যে সিডির ভেতর সংরক্ষিত সরকারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নামের তালিকা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর অবস্থান সহ যাবতীয় সকল তথ্য খুঁজে পেয়েছ। এবার কিছু মৌখিক পরামর্শ দিতে চাচ্ছি।

তোমাকে প্রোজেক্ট মাইডাস, ভাইপার আর ওয়াইপারের মুল গবেষণা কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করে দিতে হবে। এই গবেষণা কেন্দ্র গুলো সবই রাজধানীর কাছাকাছি অবস্থিত। সিডির ভেতরে এদের অবস্থান সম্পর্কিত ম্যাপ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অন্যান্য যাবতীয় তথ্য দেওয়া আছে। কিন্তু শক্তিশালী এই স্থাপনা গুলো ধ্বংস করে দেওয়া সহজ হবেনা। এজন্য চাই জীবাণু বোমা। হ্যা, জীবাণু বোমা তেজস্ক্রিয়তায় অনেক মানুষের প্রাণহানি হতে পারে, কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে একটু কঠোর তোমাকে হতেই হবে।

নিশ্চয়ই ভাবছ কীভাবে জীবাণু বোমা যোগাড় করবে তাইনা? তোমার জন্য সে ব্যবস্থা আমি করেই রেখেছি। প্রোজেক্ট মাইডাসের বেসমেন্ট থেকে সমস্ত জীবাণু অস্ত্র অনেক আগেই অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সহায়তায় আমরা সরিয়ে এনেছি। এখন এদের অবস্থান হচ্ছে আমার গবেষণাগারের নিচে। সর্বোচ্চ পুরুত্ত সম্পন্ন মেটাল দ্বারা তৈরি গোপন কুঠুরিতে অস্ত্র সমূহ জমিয়ে রাখা আছে। কেউ যদি এই কুঠুরি ভেঙে প্রবেশ করতে চায় তাহলে মুহূর্তেই জীবাণু বোমাগুলি বিস্ফোরিত হয়ে সবাই মারা পড়বে। এই কুঠুরিতে এক্সেস পাওয়ার জন্য দরকার হবে একটি বিশেষ কোড নম্বর। এই কোড কারো পক্ষে ব্রেক করা সম্ভব নয়। কারণ এই চেষ্টা করতে গিয়ে কেউ যদি ভুল কোড নম্বর প্রবেশ করায় তাহলে চিরতরে কোড গোপন কুঠুরিটি এক্সেস সুবিধা হারাবে। অর্থাৎ কোন কিছুর বিনিময়েই কেউ আর জীবিত অবস্থায় জীবাণু অস্ত্রের সন্ধান পাবেনা। সুতরাং খুব সাবধান থাকবে।

কোড নম্বরটি নিরাপত্তার জন্য সিডিতে দেইনি। ওটাও আমার ল্যাবের ভেতর কোথাও লুকিয়ে রেখেছি। এর সন্ধান তোমাকে বুদ্ধি খাটিয়ে বের করে নিতে হবে। তবে ছোট একটা সূত্র দিচ্ছি- নির্দিষ্ট একটা কাজ করলে কোডটি একবার মাত্র দেখতে পাবে তুমি, তারপর আর কখনও দেখা সম্ভব হবেনা!

তিনটি গোপন প্রোজেক্ট ধংসের পর আরও একটি কাজ তোমাকে করতে হবে মাইডাস! স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট হায়দার মালিককে খুন করতে হবে। হায়দার মালিকের মত কুচক্রী ব্যক্তি বেঁচে থাকলে কিছুতেই মানব অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবেনা। ও না থাকলে ব্ল্যাক আর্মি সঠিক নেতৃত্বের অভাবে অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়বে। এবং এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে ওদের অনেক দিন সময় লেগে যাবে! প্রেসিডেন্ট হায়দার মালিক খুব বুদ্ধিমান লোক। সে তিনটি স্থাপনা ধংসের পর পড়ি বুঝে ফেলবে কাজটা তুমি করেছ। তখন সে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে তোমাকে খুঁজে বের করার জন্য। তাকে যদি তুমি মেরেও ফেল, তারপরেও ব্ল্যাক আর্মি তোমার পিছু ছাড়বে না। অর্থাৎ হায়দার মালিককে মেরে ফেলা মানেই নিচের মৃত্যুর পরোয়ানা নিজেই জারি করা!

তবে এর থেকে বাঁচার একটা উপায় তোমার জন্য ভেবে রেখেছি আমি। পালিয়ে যেতে হবে তোমাকে। অনেক অনেক দূরে, দেশের একে বারে দক্ষিণ-পূর্ব পাশে অবস্থিত মেঘলা পার্বত্য অঞ্চলে চলে যাবে। সেখানে মেঘলা রি জেনারেটর হসপিটাল নামে একটা হাসপাতাল চালায় আমার বন্ধু রাহুল দেব নাথ। ঐ হাসপাতালে গোপন এক ধরনের প্রক্রিয়া চালু আছে। যেসব ব্যক্তি তাদের অতীত জীবন ভুলে গিয়ে নতুন করে বাঁচতে চায় তাদের সেখানে সাহায্য করা হয়! সেখানে তোমার চেহারা ও গলার স্বর বদলে দেওয়ার পাশাপাশি তোমার মস্তিষ্ক থেকে সমস্ত স্মৃতি মুছে দিয়ে নতুন স্মৃতি ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। তুমি হয়ে উঠবে সম্পূর্ণ নতুন একজন মানুষ! অ্যাসাসিনের এই নষ্ট জীবন থেকে তুমি মুক্তি পাবে।

কিন্তু ব্ল্যাক আর্মির হাত থেকে বাঁচতে এইটুকু যথেষ্ট হবেনা। ওদের হাত থেকে বাঁচার জন্য তোমার বদলে অন্য কাউকে ওদের হাতে ধরিয়ে দিতে হবে মাইডাস! আশা করি বুঝতে পারছ আমি কি বলতে চাচ্ছি? তোমার বদলে তোমার নিজের কোন এক ক্লোনকে ওদের হাতে ধরিয়ে দিতে হবে। এই জন্য আমি আমার ল্যাবে সমস্ত ব্যবস্থা করে রেখেছি। প্রোজেক্ট মাইডাস থেকে তোমার একটা ক্লোন গোপনে এনে রেখে দিয়েছি ল্যাবে। ক্লোনটি সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। তুমি তোমার মস্তিষ্ক ম্যাপিং করে ক্লোনটির মস্তিষ্কে প্রবেশ করিয়ে দিলে সেটি চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তোমার সমস্ত স্মৃতি নিয়ে জেগে উঠবে। এই চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তিনটি স্থাপনা ধ্বংস ও প্রেসিডেন্ট হায়দার মালিককে খুন করে রাজধানী ছেড়ে পালাতে হবে তোমাকে। এদিকে ব্ল্যাক আর্মি যখন তোমার খোঁজে বেরিয়ে পড়বে তাদের হাতে ধরা খাবে তোমার ক্লোন। তারা তোমার প্রাপ্য শাস্তিটুকু তোমার ক্লোনকে দেবে এবং তুমি মুক্তি পাবে অভিযোগ থেকে। এটা কোন অন্যায় নয় মাইডাস, কারণ ক্লোনদেরকে কখনও সত্যিকারের মানুষ হিসেবে মেনে নেওয়া হয়না।

তোমার জন্য শুভকামনা থাকল মাইডাস! তবে একটা কথা মনে রেখ, শুধুমাত্র কিছু স্থাপনা ধ্বংস করলে এবং হায়দার মালিককে খুন করলেই দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে না! সরকারের চূড়ান্ত পতন না হলে এ দেশ কখনো মুক্তি পাবেনা। এই জন্য প্রয়োজন তরুণদের সমন্বয়ে তৈরি একটি বিদ্রোহী দিল যারা জীবন বাজি রেখে হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনবে। যদি তোমার কখনও একটি বিদ্রোহী দল সৃষ্টি করে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ইচ্ছে হয় সেজন্য যা যা করা লাগবে তার সমস্ত তথ্য আমি এই সিডিতে দিয়ে রেখেছি। আশাকরি তুমি সঠিক পথটি বেছে নেবে মাইডাস এক্স!

বিদায়।

ভিডিও স্ক্রিনটি অন্ধকার হয়ে যেতেই আযহার কাঁপছে। তিনটি বছর যাবত যে সত্য সে খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই সত্যের মুখোমুখি হতেই এত ভয় পেয়ে যাবে সেই ধারনা তার ছিলনা!

কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠিটি খুলল আজহার, দা রেবেলের হাতের লেখা! অবাক হওয়ার বিষয় হল লেখাটা হুবহু আযহারের হাতের লেখার মতই। ছোট ছোট কয়েকটা লাইনে একটা মেসেজ-

আযহার,

তুমি বা আমি ভিন্ন কিছু নই, ছিলাম না কখনও। আমি তোমারই এক প্রতিরূপ। তুমি যেভাবে ভাব, আমিও সেভাবেই ভাবি। তুমি যেপথে চলতে পছন্দ কর, আমিও সেই পথেই চলতে ভালবাসি। পার্থক্য শুধু এই যে তুমি আসল আর আমি নকল।

তুমি যে কাজ করেছ তার জন্য লজ্জিত হওয়ার কিছুই নেই। আমি একটা ক্লোন মানুষ। পৃথিবীতে ক্লোনদেরকে মানুষের সমান স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তাই তুমি চাইলেই নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমাকে স্যাক্রিফাইস করে দিতে পার।

যে মুহূর্তে আমি আবিষ্কার করলাম আমি তোমার ক্লোন সে মুহূর্ত থেকে আমার একটাই চিন্তা ছিল- যে কাজ তুমি অর্ধেক করে চলে গেছ সেই কাজ আমাকে সম্পূর্ণ করতে হবে। আমি জানি তুমি আগে থেকেই ধারনা করতে পেরেছিলে যে, আমি সরকারি বাহিনীর হাত থেকে পালাতে সক্ষম হব। কারণ যে ক্ষমতা তোমার আছে সে ক্ষমতা তো আমারও, তুমি যা পার আমিও তাই করতে পারি। সে জন্যই তুমি এই সিডিটি এমন যায়গায় রেখে এসেছিলে যেন আমি এটা খুঁজে পাই সহজেই এবং যে পথ তুমি বেছে নাওনি সে পথ যেন আমি বেছে নেই! তুমি এটাও জানতে যে আমি একদিন ঠিকই তোমাকে খুঁজে বের করব, তাই তুমি অতীত জীবনের সব ভুলে গেলেও সেই জীবাণু অস্ত্রের কুঠুরির গোপন কোড নম্বরটি মনে রেখেছ। ঐ জীবাণু অস্ত্র ছাড়া এই বিপ্লবে সফল হওয়া আমাদের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব ছিলনা।

বিন্দুমাত্র আফসোস করোনা আযহার। একজন “তুমি”র পক্ষে এই দেশকে স্বৈরাচারী শাসনের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব ছিলনা, কিন্তু দুইজন “তুমি”র পক্ষে অবশ্যই সম্ভব। তাই তোমার এক প্রতিরূপ হয়ে আমি জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি মানুষের স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামকে সফল করার। আমার কাজ আমি করেছি, এবার বাকি দায়িত্ব তোমার। এই দেশের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখতে এখন তোমার মত একজন কাণ্ডারির প্রয়োজন। তোমার অসম্পূর্ণ কাজ আমি পূর্ণ করেছি, আশাকরি আমার অসম্পূর্ণ কাজটুকু তুমি পূরণ করতে দ্বিধা করবে না।

ইতি,

মাইডাস এক্স/ দা রেবেল/ আযহার- যে নামেই ডাক!


আযহার অনুভব করল তার দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে। তার নিজের যে পথ টি বেছে নেওয়া উচিত ছিল তা বেছে নিয়েছে তারই প্রতিরূপ যাকে সে নিজের বদলে যাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে এসেছিল! দা রেবেল ঠিকই বলেছিল সেদিন! সে আসলেই একটা কাপুরুষ!

কখন যে জুলি পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা তের পায়নি আযহার। জুলি তার কাঁধে হাত রাখতেই সম্বিত ফিরে পেল। জুলি হাত বাড়িয়ে আযহারের গাল থেকে অশ্রু মুছে দিল। বলল, "কেদনা আযহার। বীরের মৃত্যুতে কাঁদতে হয়না"।

আযহার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না।

জুলির প্রশ্ন করল, এখন তুমি কি করবে আযহার?

“না! আর পালিয়ে বেড়াতে পারব না আমি!” আযহারের কণ্ঠে দৃঢ়টা। এই দৃঢ় কণ্ঠস্বর আগেও শুনেছে জুলি। এটা তার চিরচেনা সেই দা রেবেলের কণ্ঠ! “নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে তুলব। ভেঙে পড়া এই দেশটাকে গড়ে তোলার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেব!”

“আমিও তোমার পাশে থাকতে চাই আযহার”। জুলির কণ্ঠে অনুনয়। “রাখবে আমাকে সাথে?”

জুলির একটা হাত নিজের হাতে তুলে নিল আযহার। বলল, “অবশ্যই রাখব জুলি! আমি একা পারব না, এই কাজে তোমাকেও আমার পাশে দরকার”!

জুলি হাসি মুখে বলল, “আমি জানি আযহার! তুমি পারবে, সে বিশ্বাস তোমার উপর আছে আমার”।

“না জুলি! একজন আযহারের পক্ষে এ কাজ সম্ভব নয়। ভুলে যাও যে আমি কখনও আযহার ছিলাম, আজ থেকে আমি আবার সেই মাইডাস এক্স”!

(সমাপ্ত)


উৎসর্গঃ প্রিয় সাইফাই লেখক শান্তির দেবদূত

রেফারেন্সঃ
গল্পটি সুন্দর করে সাজাতে গিয়ে কিছু আর্টিকেলের সাহায্য নিতে হয়েছে আমাকে।

১। আরব বিদ্রোহ

২। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ

৩। বিষণ্ণতার লক্ষন ও প্রতিক্রিয়া

৪। জীবাণু যুদ্ধ

৫। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দশটি ভাষণ
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৫৬
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×