বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে নানা জনের নানা মত আছে। নানা লেখকের নানা লেখা আছে। আমি লেখকের পর্যায়ে পরিনা, আমি হলাম অলেখক। অলেখকের বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে তেমন লেখা নাই তাই এবারের বেকায়দা শুরু হল নেপাল ভ্রমণ নিয়ে। নেপাল ভ্রমণ নিয়ে এত উচ্ছ্বাসিত হওয়ার অবশ্য কিছু নাই। ধনীদের কাছে আমেরিকা , কানাডা, ইউরোপ ভ্রমণ বিদেশ ভ্রমণ। আমার মত গরীব অলেখকের কাছে নেপাল ভ্রমণই বিদেশ ভ্রমণ।
তা শুরু করি বাংলাদেশ বিমান নিয়ে। যে কোন ভ্রমণের ক্ষেত্রেই আমার যেটা হয় সেটা হলো বাথরুম সম্পর্কিত সমস্যা। মুরুব্বি শ্রেণির লোকজন বলেন, বাথরুম না করে বাসে উঠবি না। বাথরুম না চাপলে বাথরুম করার যন্ত্রনা অনেক। প্রকৃত স্বাদ মেলেনা! আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়, যানবাহনে উঠলেই বাথরুম চাপে। এই অবস্থায় অনেকে বোতল কিংবা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম অনুসরণ করে আমার ক্ষেত্রে এইসবে আমি রাজী না। রাস্তার ধারে করে ফেলাতেও আমার আপত্তি।
ফিরে আসি বাংলাদেশ বিমানে। বাথরুমে অনেক রকম সমস্যা থাকতে পারে, হয়তো পানি নাই, হয়তো হাই কমোড নাই, হয়তো কমোড শাওয়ার নাই, হয়তো বদনা নাই, বাংলাদেশ বিমানের বাথরুমের সমস্যা- সেখানে অক্সিজেন নাই। এই জিনিশ নাই কেন তা নিয়া আমি চিন্তিত। পানির বিকল্প টিস্যু হতে পারে অক্সিজেনের বিকল্প কী? বিমানে উঠার আগে ডানদিকের সিট চেয়ে নেওয়া হয়েছে। ফেলুদার "যত কান্ড কাঠমুন্ডুতে" বইয়ে পাওয়া ইনফরমেশন- নেপালে বিমানে গেলে ডানদিকে জানালায় বসতে হয়, এতে এভারেস্ট দেখা যায়। তা দেখবনে এভারেস্ট। আগে জুস খেয়ে নেই। প্লেনে ১ ঘন্টা ২০ মিনিট মাত্র। তেমন কিছু খেতে দেওয়ার কথা না। যা দেয় তাই লাভ। তবে সাবধানে। বাথরুম যাওয়া যাবেনা। বায়ুতে অক্সিজেন ২০% হলেও বিমানের বাথরুমে নাই। যাত্রা পথে অবশ্য আরো খাবার দাবার ভাগে মিলল। নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডু নামলাম। বেকায়দা সবে শুরু। ভিসা নিয়ে আসি নাই এখন অন-এরাইভাল ভিসা লাগাও। বিশাল লাইনে দাঁড়াবার পর জানতে পারলাম ভুল লাইনে চলে এসেছি। সার্কের সদস্য (ভারত বাদে) রাষ্ট্রের পাসপোর্টধারীদের ভিন্ন লাইন। সেখানে দাড়ালাম। এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার ফর্ম। কত টাকা নিয়ে তাদের দেশে ঢুকতেছি এই ধরনের তথ্য। অনেক বুদ্ধি করে কিছু একটা সংখ্যা বসানোর ফল হলো সেটা দেখার ব্যাপারে কারো কোনো আগ্রহ নাই। ঢুকলাম কাঠমুন্ডু শহরে।
বাথরুম সমস্যা প্রবল আকার ধারন করেছে। বিমানে বসে পেপসি খাওয়ার ফল। এখন বাথরুম খোঁজো। নেপালের ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট যদি সমগ্র বাংলাদেশ তুলনা করা হয় তাহলে বাথরুমটা হলো কুড়িগ্রামে। এত দূর বাথরুম কেন কে জানে। বাথরুম করে সুখে শান্তিতে বের হওয়ার পর খেয়াল করলাম ভুলে লেডিস বাথরুম হয়ে এসেছি। আল্লাহ বাঁচাইছে, আমাদের মত বিগ পপুলেশনের দেশ না। মানুষের গিজগিজ নাই, তেমন কেউ খেয়াল করে নাই।
যে কোন দেশ সম্পর্কে লিখলে তাদের সম্পর্কে ইতিহাস আনতে হয়। প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ স্যার এ ব্যাপারে বিশেষ ফর্মুলা দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর “পায়ের তলায় খড়ম” বইয়ে। ভ্রমণ কাহিনীতে ইতিহাস ঢুকাতে হয় যাতে করে পাঠক যেন মনে করে লেখক অত্যন্ত পরিশ্রমী ও জ্ঞানী। ভ্রমন কাহিনী মজার হতে হয় এবং বিতং করে দূর্ঘটনার কথা লিখতে হয়। নেপাল সম্পর্কে জ্ঞানী হতে গিয়ে শুরুতেই বিপদে পড়লাম। আমি জ্ঞানী কখনই ছিলাম না এ ক্ষেত্রে সাধারন ধারুনাও খুব কম। দীপেন্দ্রকে চিনতাম (ব্যক্তিগত পরিচয় নাই,নাম শুনছিলাম, রাজার ছেলে) তা সে ঘটনা খুব সুখকর না। এই রাজপুত্র কোন এক মেয়েকে বিয়ে করার জন্য তার পরিবারের সকলকে মেরে ফেলে। রাজা-প্রজার ব্যাপার অবশ্য নেপালে এখন নাই। সে দেশেও গনতন্ত্র ঘুরপাক খাচ্ছে। ও আচ্ছা একজনের কথা বলা যাতে পারে। অধ্যাবসায় রচনায় রবার্ট ব্রুসের বদলে এর কথা লেখা যেতে পারে তিনি হচ্ছেন ঝালানাথ থানাল। ১৭ বারের চেষ্টায় তিনি প্রধান মন্ত্রী হন অবশ্য খুব তাড়াতাড়ি ক্ষমতা চ্যূতও হন। সাফ গেমসে বাংলাদেশ ফুটবলে প্রথম সোনা জিতে এই কাঠমুন্ডুতেই নেপালকে হারিয়ে। ফাইনালের একমাত্র গোলদাতা ছিলেন আলফাজ, সেদিন দেননি তিনি কোনো ভুল পাস।
বাথরুম করে চলে গেলাম দি এভারেস্ট হোটেলে। নেপালের হোটেলের নাম এভারেস্ট খারাপ না, ঠিকই আছে। হোটেলের সাথেই ক্যাসিনো, রাতে ডিনার নাকি সেখানে। ভাল কথা, নেপাল আমি এক আসিনাই, সস্ত্রীক। ক্রমাগত ধমকের উপর আছি। সাথে আছেন আরেক ভাই, তিনিও সস্ত্রীক এবং তিনিও ক্রমাগত ধমকের উপর আছেন। বিবাহিত ছেলেরা ধমকের উপরই থাকে। এই ভাইকে আগে চিনিতাম না। এয়ারপোর্টেই পরিচয়। তিনিও আমার মত ঘুরতে এসেছেন। আমরা উঠিছি একই হোটেলে। আরও একজন এরকম সস্ত্রীকের আসার কথা ছিল কিন্তু তারা কোন কারনে নাই। না থাকলেও বলা যায়, সেখানেও একজন ধমকের উপরেই থাকতেন। আসলে ছিলেনও। পরেরদিনই তাদের সাথে দেখা হয়। আর্মি পার্সন, মেজর ভাই। তার বউ লেফটেনেন্ট কর্নেল। আপা আর্মিতে নাই তিনি আসলে ইঞ্জিনিয়ার। তবে আর্মিতে পুরুষরা যেই র্যাংকে থাকে তাদের বউদের এক ধাপ উপরেই বলতে হয় সবসময়। সে প্রমান পরবর্তি সময়ে মেজর ভাই আর আপা দিয়েই গেলেন। যাই হোক এভারেস্ট হোটেলের ডিনারে ফেরত আসি। ক্যাসিনোতে গেলেও খেলার কুপন জোগাড় করিনাই, খেলবও না। অন্য ভাইদের অনেক গুতাগুতিতেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন নাই। লটারী নামক কোনকিছুতে আমি নাই। লটারী প্রাইজবন্ড অনেক পরের ব্যাপার, শীতের সময় গাজীপুর টাইপ পিকনিকে যে সাবান শ্যাম্পু দেওয়া হয় সেগুলাও কখনো পাইনাই। একবার টোকেন নম্বর ছিল চুয়ান্ন, দেখা গেল তিপ্পান্ন আর বায়ান্ন টোকেন নম্বর যাদের তারাও পুরষ্কার পাচ্ছে কিন্তু আমি নাই। ক্যাসিনো এড়ানো যাচ্ছে কিন্তু ক্যাসিনোতে আরেকটা জিনিস এড়ানো যাচ্ছে না। অর্ধনগ্ন নৃত্য চলছে হিন্দি গানের সাথে। দুঃখজনক ব্যাপার অন্য জায়গায়। ছেলে-মেয়ে নৃত্য চলছে মেয়েদের অবস্থা সমতল ভূমি। বরং মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের কিছু পাহাড়ি অঞ্চল আছে। এই অর্ধনগ্ন নৃত্য দেখতে আমি আগ্রহী না! খাওয়াটাও সুখকর না। বুফে খাবার, অনেক আইটেম কিন্তু যাই মুখে দেই ভাল লাগেনা। সব কিছুতেই বিশ্রি ভাবে মাখন দেওয়া। একমাত্র টকদইটাই মুখে দেওয়া গেল, তাও চিনি মিশানোর পর।
পরদিন ভোরে দীর্ঘ বাস ভ্রমণ। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের মত কাঠমুন্ডু থেকে পোখরা। প্লেনে যেতে লাগে ২৫ মিনিট, বাসে ৭ ঘন্টা। পাহাড়ি রাস্তা। প্লেনে যাওয়ার সামর্থ্য আপাতত নাই তাই বাসেই রওনা হওয়া গেল। সকালের নাস্তাটা রাতের ডিনারের থেকে ভাল। আমার বউয়ের দেখা গেল সসেজ বেশ মনে ধরেছে। সাথে আমারো। শুরুতে সামান্য পাউরুটির সাথে সসেজ। তারপর জুস খেলাম, জুসের সাথে সসেজ। তারপর ডিম খেলাম ডিমের সাথে সসেজ। সবশেষে কি জানি খেলাম সেটার সাথেও সসেজ। তারপর টিস্যু পেপাড়ে মুড়িয়ে গোটা ৪ খানা সসেজ নিয়ে রওনা দিলাম বাস স্টেশন। বাসে উঠলাম গন্তব্য পোখরা। বাসওয়ালা দেখতে তামিল সিনেমার নায়ক অরবিন্দ সোয়ামী’র মত। অরবিন্দ সোয়ামী সিট বুঝিয়ে দিয়ে খাওয়ার কুপন ধরিয়ে দিল। বাসে উঠার আগে বাথরুম হয়ে আসলাম কোন লাভ হবেনা জানি। বাস চলার পরেও তাই হলো। প্রবল বেগেতে বাধার গতি সঞ্চার করলাম। ঢিলা দেওয়ার সুযোগ নাই। মাঝখানে কই যেন থামল। আহা কোক পাওয়া যাচ্ছে। কতক্ষণ এই জিনিস ছাড়া ছিলাম। কোক কিনে বেকুব হয়ে গেলা। ২৫০ মিলি’র দাম নেপালী টাকায় ৫০ টাকা। নেপালী আর বাংলাদেশের টাকায় খুব বেশি পার্থক্য নাই। আমাদের দেশে এই জিনিসের দাম ১৫ টাকা। পথিমধ্যে বাথরুম সেড়ে নিলাম। ডায়াবেটিস হয়ে গেল নাকি কে জানে! আল্লাহ মাফ করো।
পোখরায় হোটেলে পৌছে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল!! ছবির মত সুন্দর এক জায়গায় হোটেলটা। হোটেলের নাম ফুলবাড়ি রিসোর্ট। ১০০ একর জমির উপর হোটেল। সামনে এনিমেটেড মুভি “আপ” সিনেমার প্যারাডাইস ফলের মত জায়গা। রুমের বারান্দা দিয়ে অন্নপূর্না পাহাড়ের অংশ দেখা যায়। একটা ঘুম দিয়ে উঠে বারান্দায় গিয়ে তাক লেগে গেল। আকাশে বিশাল এক চাঁদ। সেই চাঁদের জোৎস্না বারান্দার সামনে। প্রয়াত হূমায়ুন আহমেদ স্যার সম্ভবত এই জোৎস্নার সৌন্দর্যকে পাশে রেখে মরতে চেয়েছিলেন। এই সৌন্দর্য্য ব্যাখ্যা করা আমার মত অলেখকের পক্ষে সম্ভব না। ভোড় ৫ টার সময় বের হয়েছি। গাড়ির ব্যবস্থা করাই ছিল। গন্তব্য সারাংকোট। সেখানে পাহাড়ে সূর্যোদয় দেখা যায়। চাঁদটা এখনো আছে। খুশিমনে ড্রাইভারকে বললাম, এই যে চাঁদের জোৎস্নার সৌন্দর্য, আমাদের দেশে এর কদর অনেক। আমাদের দেশের প্রায় সকল মানুষের একজন প্রিয় লেখক ছিলেন তার নাম হুমায়ূন আহমেদ। তিনি আমাদের সবাইকে জোৎস্না দেখার কথা বলে গেছেন। এই জোৎস্নার সন্ধান পেলে তিনি খুব খুশি হতেন। ড্রাইভার বলল, উনি আপনাকে বলে গেছেন? আমি বললাম, আরে না না তার সাথে আমার জীবনে মাত্র একবার দেখা হয়েছিল তাও কখনো কথা হয়নি। কিন্তু তিনি যাই লিখতেন তাই খুব আপন আপন লাগত। তাই সবসময় মনে হয় তিনি আমাদের আপনজন। তিনি যেদিন মারা যান, আমার মত বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ সেদিন গভীর কষ্ট পেয়েছিল। আমরা জোৎস্না দেখলে তার কথা স্মরণ করি। জোৎস্না নিয়ে আমাদের দেশের গায়করাও গান গায়। বেসবাবা সুমন নামে একজন আছেন তিনি এক ছেলের কথা বলেন, যে জোৎস্নায় অজানা পথে যায়, সেখানে সেই ছেলের ভালবাসা থাকে।
সারাংকোট পৌছলাম। দেখলাম অন্নপূর্না আর ফিসটেল চূড়া। দুই পাহাড়ের মধ্যে থেকে বেড়িয়ে আসা সূর্যোদয়। ফিসটেল মানে মাছের লেজ। পাহাড়ের চূড়া মাছের লেজের মত। এই পাহাড়ে চড়ার অনুমতি নেপাল সরকার দেয়না। তাদের ধর্মীয় কোন ব্যাপার আছে। হোটেলে পৌছে নাস্তা করলাম। ফুলবাড়ি হোটেলের খাবারের মান বেশ ভাল। সব কিছু মুখে দেওয়া যায়। তারপরেও সব কিছুর সাথে সসেজ খাই। তবে কোথাও কোক নাই। এই দুঃখ রাখি কোথায়?
পোখরা শহরের লেকে গেলাম। গাড়ির ড্রাইভার পরিবর্তন হয়েছে। আগেরজনের নাম ছিল বসন্ত থাপা। এবারের জনের নাম সুরেশ থাপা। বেশ এক খান থাপার চক্করে পড়া গেল। প্রথম যখন কেউ একজন ফোন করে বলল, স্যার আই এম থাপা অন্যমনস্ক বাংলা জবাব মুখে বের হয়ে গিয়েছিল, কারে থাপা? কোনরকম সামলে ভাষা পরিবর্তন। বসন্ত থাপার সাথে হিন্দিতে কথা বলা লাগত। সুরেশ থাপা ইঙ্গরেজী ভাল জানেন। এই লোকটাকে আমার বেশ পছন্দ হলো। এই সুরেশ থাপা বড় হয়েছেন ভারতে। মাঝখানে সৌদী আরব ছিলেন ১৩ বছর। সৌদী আরব যাওয়ার আগে বাংলাদেশে এসে ৩ দিন ছিলেন। ১৯৯৫ সালে। সৌদীতে থাকা বাংলাদেশিদের আচরণ তাকে আহত করে ছিল। কিন্তু বাংলাদেশিদের সম্পর্কে তার ধারনা পাল্টেছে পোখরা শহরে পর্যটনের সাথে যুক্ত হয়ে। ঘুরতে আসা ট্যুরিস্ট বাংলাদেশিরা খুব ভাল। সুরেশের ধারনা শিক্ষা এখানে একটা বড় ব্যাপার। আমি বললাম, শুধু শিক্ষাটাই আসল ব্যাপার না। আমরা এখানে আসি ঘুরতে। কিন্তু যারা সৌদীতে যায় তারা অমানবিক কষ্ট করে সেখানে। পরিবার থাকে দেশে। তাদের মেজাজ আর আমাদের মেজাজ এক না হওয়ারই কথা। তবে তাদের প্রতি আমাদের সম্মান কম নেই। তারা প্রচুর বৈদেশিক রেমিটেন্স পাঠায় যা আমাদের অর্থনীতি’র জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন। তোমাদের মাত্র ৩ কোটি জনগন আমাদের তা না। ছোট একটা দেশে ১৬ কোটি পালতে হয় আমাদের। মানুষ গিজগিজ করে। সুরেশ মাথা নাড়ল। পোখরা শহরের লেক ঘুরলাম। এমন কিছুনা। আমাদের রাঙ্গামাটি’র লেকের মতই। ডেভিস ফল দেখেও তেমন কিছু লাগলনা। আমাদের দেশে এর থেকে অনেক ভাল কিছু আছে। তবে ডেভিস ফলের নামকরনের ইতিহাস আছে। এর আগে এটার নাম ভিন্ন ছিল। ৩০-৪০ বছর আগে ডেভিস নামে এক দম্পতি গোসল করতে এই ফলে নামেন। ঝরণার তেড়ে আসা পানিকে নিয়ন্ত্রন করে এক গেট। সেটা যখন খুলে তখন সাইরেন বেজে উঠার কথা। সেবার বাজেনি। ডেভিস দম্পত্তির মহিলা যিনি ছিলেন তিনি ভেসে যান পানির স্রোতের সাথে। তাঁকে আর পাওয়া যায়নি। তারপর থেকে এর নাম ডেভিস ফল। মাউন্টেন যাদুঘর গেলাম। যাদুঘর কার কাছে কেমন লাগে জানিনা আমার কাছে ভাল লাগে। পাহাড় গুলার ইতিহাস লেখা আছে। মাউন্ট এভারেস্ট নিয়ে বেশ খানিক্ষন গবেষনা করলাম। আমাদের মুসা ইব্রাহিম এটাতে চড়ে এসেছে, তারপরে আরও ৩ জন চড়েছেন। দুইজন মেয়ে ছিলেন। ইতিহাসে প্রথম চড়েছিলেন ১৯৫৩ সালে এডমন্ড হিলারী আর তেনজিং নোরগে। তেনজিং নোরগে ৭ টি ভাষায় কথা বলতে পারতেন কিন্তু কোন ভাষাতেই লিখতে বা পড়তে জানতেন না। সেটা জানলে তার লেখা বই থাকতো, নাকি উনি অন্য কাউকে দিয়ে লিখিয়েছেন তাও জানিনা। ভাল কথা নেপালী অনেক শেরপারা মানেন, এডমন্ড হিলারীর আগে তাদের অনেকেই চড়েছেন কিন্তু সেটা কখনো মিডিয়াতে আসেনি। তারা দাবী করে এডমন্ড হিলারীকে তারাই পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। ইয়েতি নিয়ে একটা ঝামেলা আছে। কেউ এটা মানে কেউ মানেনা তবে কেউ দেখেনি। অনেকে বলে পায়ের ছাপ দেখেছে। তিব্বতে টিনিটিন কমিক্সে অবশ্য ইয়েতিকে পাওয়া যায়। ইয়েতিকে বলা হয় এভারেস্টের কিংকং। তবে যাদুঘরে যেই নমুনা ইয়তেই রাখা হয়েছে তা আমার থেকেও দুর্বল।
উপরের ছবিটা ফেইসবুকে দেবার পর Tanvir Khan Emu নামের বন্ধু কমেন্ট করেছিলেনঃ "কোক না খাইয়া শুকায়া গেসে।বেচারা ইয়েতি"
হোটেলে ফিরে বেশ কিছু জাপানী’র সাথে পরিচয় হল। সবার চেহারা একরকম। আমার কথা বাদ দিলাম এদের মায়েরাও কোনটা কে আলাদা করতে পারবে বলে মনে হয়না।
কাঠমুন্ডু ফিরে এলাম। সেই বাস হয়েই ফিরা। একটা ঘটনা উল্লেখ না করলেই না। মাঝপথে এক জায়গায় থামা হয়েছিল যেখানে আর্মি পার্সন মেজর ভাইয়ের বউ তার ব্যাগটা ফেলে গেলেন। ডলার টাকা মিলিয়ে বাংলাদেশি টাকায় ত্রিশ হাজার হবে। হঠাৎ খেয়াল হল ব্যাগ সাথে নাই বাস ততক্ষনে অনেক দূর। বাংলাদেশ হলে এই আশা ছেড়ে দেওয়াই ভাল ছিল নেপাল হলেও কেমন জানি ভরসা পাচ্ছিনা আমরা। খুবই অবাক করা ব্যাপার- পরের বাসে করে সেই ব্যাগটা ফেরত এল!! চায়ের দোকানের মত জায়গা থেকেও ব্যাগটা ফেরত এল। অথচ বছর তিনেক আগে ঢাবিতেই একটা প্রোগ্রামে এক জাপানীজ বিজ্ঞানীর ল্যাপটপ সিনেট ভবন থেকে চুরি গিয়েছিল। সেটা এমন এক জায়গায় যেখানে বাইরের কারও আসার সুযোগই নেই। তাও সেই ল্যাপটপ আর পাওয়া যায় নি। বাংলাদেশ নেপাল থেকে কম সুন্দর না। খালি এভারেস্টটাই যা। কিন্তু এগুলা কিছু ব্যাপার আছে যার কারনে অন্য দেশের সাথে পর্যটনে আমরা পেরে উঠিনা। এমনও অবশ্য মনে হয়না চোর বাটপার অন্য দেশে নাই। ভারত এবং থাইল্যান্ড ভ্রমনে অনেক চোর বাটপারের কাহিনী শোনা যায়। ভারতে তো সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের এক মহিলা সম্ভ্রম হারিয়েছেন। যেসব অমানুষ এই কাজ করে তারা পুরাটা সময় ঐ মহিলার জামাইকে বেঁধে রেখেছিল।
ঢাকার ফিরার আগে মাউন্ট এভারেস্ট দেখতে গেলাম। সূর্যোদয় দেখা হবে সেখানেও। অপূর্ব সুন্দর সেই দৃশ্যের বর্ণনা নাই দিলাম। সেটা দেওয়ার মত ভাষার দখল আসলে আমার নাই। সব সৌন্দর্য যদি লেখাতে আসতই তাহলে মানুষ এত কষ্ট করে ভ্রমণে যেতনা। হুমায়ূন আহমেদ স্যার অবশ্য পারতেন। জোৎস্নার সৌন্দর্য তার থেকে ভাল আর কেউ বা লিখত।
ঢাকা চলে আসলাম। যেই দেশে ৫০০ মিলি ঝাঝ উঠানো কোকের দাম ১০০ টাকা সেই দেশে আমি থাকিনা।
প্রথম ছবিঃ প্লেন থেকে এভারেস্ট।
দ্বিতীয় ছবিঃ নাগোরকোট থেকে এভারেস্টের গায়ে সূর্যের প্রথম আলো দেখা
তৃতীয় ছবিঃ প্রমান নেপালের ইয়োতি আমার চেয়ে দূর্বল।