somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাঝপথের বিশ্বকাপ।

০৭ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের বাংলাদেশিদের কনভিন্স করা খুব সোজা। ১৭৫৭ সালে ইংরেজরা এসে এক বাংগালীকে কনভিন্স করল যে তাকে সিংহাসন দেওয়া হবে। সেই মহান বাংলাদেশির নাম মীর জাফর। সে এটা বুঝতেই পারলনা যে ইংরেজদের আসল অভিপ্রায় কি। যা হওয়ার তাই হল। ইংরেজরা এসে আমাদের ধন সম্পত্তি নেওয়া শুরু করল।

সাধারনত বিতর্ক উঠতে পারে এমন বিষয় নিয়ে আমি লিখিনা। আমার লেখার বিষয় বস্তু হয় হালকা। জীবনকে আমি যে চোখে দেখি সেটা খুবই হালকা মেজাজ। ক্রিকেট বিশ্বকাপের কারনে ঠিক করেছিলাম ক্রিকেট ছাড়া আর কিছু নিয়ে লিখবনা। গেলারীতে বসে বাংলাদেশের খেলা দেখি।

বাংলাদেশ দলের ৫৮ রানের অলআউট নিয়ে প্রতিটা বাংলাদেশির সাথে আমি নিজেও মর্মাহত। ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানী, শ্রীলঙ্কান, ইংরেজ সবার সাথে কথা বলতে হয়। বাংলাদেশকে এমনিতেই তুলোধনা করতে তারা থামেনা। তবে আমার অধিক শোকে পাথর হয়ে যাওয়ার পর তারা আমাকে ঘাটানো ছেড়ে দিয়েছে। ঠিক তখন একজন খুব ভাল কথা বলল, তারা বলল আমাদের মিডিয়া সব সময় এমন কাজ করে যাতে বিপক্ষ দল প্রেশারে থাকে। বাংলাদেশের মিডিয়া কি সেই কাজ করে? আমার কাছে কথাটা গেঁথে গেল।

বাংলাদেশ যখন নিউজিল্যান্ডকে ৪-০ তে হারায় আমি খুঁজে খুঁজে নিউজিল্যান্ডের পেপার গুলা পরা শুরু করলাম। বাংলাদেশের কাছে ৪-০ তে হারার পর তারাও তাদের ক্রিকেট নিয়ে অনেক কিছু লিখেছে। সব থেকে ভাল লেগেছে যেই কথাটা, বাংলাদেশ অবশ্যই সারাজীবন ৯ নম্বর দল থাকবেনা। আসতে আসতে তারা উপরের দিকেই যাবে।

বাংলাদেশ যখন ইংল্যান্ডকে হারায়। স্ট্রাউস বলেছিলেন, " আমি জানতাম কখনও না কখনও আমরা তাদের কাছে হারবো। খালি চাচ্ছিলাম ব্যাপারটা যত দেরী করে হয়।"

সাকিবের মধ্য আঙ্গুলি প্রদর্শনের ছবি দেখলাম। এটা দেখে আমার প্রথম রিএকশন খুব সহজ। ছবিতে কোন সময়কাল উল্লেখ নেই। তার মানে এটা যে কখন তোলা হয়েছে কেউ জানেনা। আর দর্শক গ্যালারী থেকে এইভাবে পিছন দিক দিয়ে কেউ আঙ্গুল দেখালেও বোঝা যাবেনা। আমার ধারনা এটা টিমমেইটদের সাথে ফাজলামী করার সময় তোলা। সারাক্ষন ক্যামেরা তাক করা থাকলে এমন অনেক ছবিই তোলা যাবে। পৃথিবীর প্রায় সব পুরুষের বিশাল বক্ষা নারীর বক্ষের দিকে তাকানোর ছবিও তোলা যাবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে অনেক কিছু ব্লগে পড়েছিলাম। সব নাকি ভারতীয়রা করবে। তেমন কিছু আসলে হয়নি।


সাকিবের ইচ্ছা করে আউট হয়েছি এমন ভিডিও দেখলাম ইউটিউবে। আজকের ডেইলি স্টারে পড়ে জানলাম সেটা আসলে বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ড ম্যাচের পরের কথা। সব কিছু মিডিয়াতে আসতে হয়না। কবে জানি শুনেছিলাম এক ব্যক্তি বলেছিল, " নাপাক অবস্থায় নামাজ পরা হারাম"। কেউ একজন সেটা ছাপিয়ে দিয়েছিল কিন্তু " নাপাক" শব্দটা বাদ দিয়ে। বুঝতেই পারছেন কি ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে।

সাকিব মানুষ কেমন আমি জানিনা। কিন্তু সে একজন ব্রেভ ক্যাপ্টেন এবং ভাল ক্যাপ্টেন। তার কারনে বাংলাদেশ অনেক ক্লোজ ম্যাচ জিতেছে। এর আগের কোন ক্যাপ্টেনই কনভেনশনের বাইরে নতুন কিছু করার চেষ্টা করতনা। সাকিব সেটা করে। ব্যাটসম্যানকে রিড করে ফিল্ডিং সাজায়। নতুন কিছু করার সমস্যা হল সেটা সব সময় ক্লিক করেনা। মার্টিন ক্রো এর শুরুতে স্পিন আর পিঞ্চ হিটার হিট করেছিল। জন বুকাননের ৪ অধিনায়ক তত্ত্ব করেনায়।

সাকিব প্রথম আলোতে কলাম লেখাটা বাদ দিলে পারত। এমনকি মিডিয়াতে আসাটা বন্ধ করে দিলে আরও ভাল হত। প্রথম আলোর সাথে মনে হয় চুক্তিবদ্ধ।

সিনিয়র প্লেয়ারদের নিয়ে তার লেখাটা নিয়ে আলাদা ভাবে বলার কিছু নেই। সম্ভবত সে খুব বিরক্ত। এটা হতে পারে। সমলোচনার দরকার আছে কিন্তু সাবেক প্লেয়াররা কিছু কিছু জায়গায় বেশিই করে ফেলেছেন। সাবেক প্লেয়াররা সম্মান এনেছিলেন। কিন্তু তারাও ৫৮ রানের মত লজ্জা দিয়েছেন। ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ ৫ বছর কোন ম্যাচ জিতেনায় বাংলাদেশ। তখন অবশ্য অন্যরকম ধারাবাহিকতা ছিল। দেখা যেত ৫০ রানে ৫ উইকেট পরার পর অলক কাপালি আর খালেদ মাসুদ মিলে ১০০ পার করত। আমাদের বর্তমান দলে একজন খালেদ মাসুদের দরকার ছিল। যে টেকনিকালি খুব সাউন্ড না। কিন্তু নিজের উইকেটটাকে ততটাই গুরুত্ব দিত যতটা একজন মেয়ে তার সম্ভ্রমকে দেয়।

১৯৯৮ সালে বাঙ্গালদেশের ক্রিকেত এত আগানো ছিলোনা। কিন্তু আয়ারলযান্ডের সাথে জিতার মত অবস্থা সব সময় ছিল। কমনওয়েলথ ক্রিকেটে আয়ারল্যান্ডের ১৭৭ রানের টার্গেট তারা করতে গিয়ে বাংলাদেশ ৬৩ রানে অলআউট হয়। দলে আকরাম, বুলবুল, বিদ্যুৎ, ফারুক, সুজন সবাই ছিল। বাংলাদেশ ৫৮ রানে অলআউট হওয়ার পর তাদের কলাম পড়লাম। একটা কথা কারো বলা উচিত ছিল যে ক্রিকেটে মাঝে মাঝে এরকম হতে পারে। তা না হলে তাদের সময়েও এমন হতনা। ২০০৩ বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ নামিবিয়ার সাথেও ১ টা ম্যাচ হেরে যায়। সেটাও কিন্তু লজ্জার ব্যাপার ছিল। যেগুলো জিতে তার মধ্যে একটা ছিল ৯ রানে। ১ টা ছিল ১ উইকেটে ( কান্ডারী খালেদ মাসুদের কল্যানে জিতে)। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কেনিয়া কানাডার কাছে হারে।

ইংল্যান্ড আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরেছে। আবার ফিরে এসে দক্ষিন আফ্রিকাকে হারিয়েছে। ক্রিকেটে এই মজা গুলা হবেই। আমরা দর্শকরা ক্রিকেট দেখি এই কারনেই। প্রতিটা ম্যাচ কখনও কেউ জিতবেনা। সেটা চাওয়াটাও স্বার্থপরতা। তাই বলে ৫৮ রানে অলআউট!! মাঝে মাঝে এমন কিছু হবে যেটার ব্যাখ্যা দাড় করানোর থেকে ভুলে যাওয়া ভাল। জীবন যাপন করতেও সুবিধা হবে। আপনি আপনার জীবনে বহুত মানুষকে ভালবেসে উপকার করবেন। কেউ প্রতিদান দিবে। কেউ কৃতজ্ঞ থাকবে। কেউ অকৃতজ্ঞ হবে। কেউ কৃতঘ্ন হবে। এগুলা থেকে শিক্ষা নিবেন কিন্তু এগুলা নিয়ে পড়ে থাকা যাবেনা।

যেহেতু বিশ্বকাপ এখনও শেষ হয়ে যায়নি খেলোয়ার থেকে শুরু করে দর্শক, মিডিয়া সবারই কিছু কিছু দ্বায়িত্ব আছে। সাকিব বাংলাদেশের প্রথম মেজর কাউন্টি খেলোয়ার। আইপিএলে একমাত্র প্রতিনিধিকারী। বাংলাদেশে কেউ যখন খুব এগিয়ে যায় অন্যরা তাকে টেনে ধরতে চায়। এই কারনে আমাদের নিয়ে কৌতুক আছে যে স্বর্গ নরকের মাঝামাঝি বাংলাদেশিদের জন্য পাহারাদার লাগেনা। নাতো জাফর ইকবালকে আমরা শান্তিতে থাকতে দেই। নাতো মুহম্মদ ইউনুসকে। নাতো সাকিব আল হাসানকে। যেভাবেই হোক মানুষের চোখে তাদেরকে নামানোই লাগবে। আমিও নিশ্চিত কেউ কেউ আমার এই লেখা পড়ে কমেন্ট করবে আপনি সাকিব আল হাসানের কি লাগেন??

একটা কথা বলি। আমি খুব সাধারন একজন বাংলাদেশি যে ব্লগ লিখে নিজের আনন্দে। যার লেখার জন্য কেউ তাকে টাকা দেয়না। আমার লেখা কোন পেপারের কলাম হিসেবে যাবেনা। কিন্তু এমন একজন বাংলাদেশি ক্রিকেট ভক্ত যে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উঠে আসাটা পুরাই দেখেছে। বাংলাদেশ বনাম হংকং খেলার মুহুর্তও যার মনে আছে। আমি সেই সাধারন ক্রিকেট পাগল দর্শক।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১১ সকাল ১০:০৫
৬৪টি মন্তব্য ৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×