প্রত্যেক জাহান্নামী দল পূর্ববর্তী দলকে দোষ দেবে
... যখন এক একটি জনগোষ্ঠী (জাহান্নামে) দাখিল হতে থাকবে, তখন তারা তাদের (আদর্শগত ভাই) বোনদের ওপর লানত দিতে থাকবে, এভাবে (লানত দিতে দিতে) যখন সবাই সেখানে গিয়ে একত্র হবে, তখন তাদের শেষের দলটি পূর্ববর্তী দলের ব্যাপারে বলবে, হে আমাদের মালিক, এরাই হচ্ছে সেসব লোক যারা আমাদের গোমরাহ করেছিলো, তুমি এদের জাহান্নামের শাস্তি দ্বিগুণ করে দাও; আল্লাহ তায়ালা বলবেন, (আজ) তোমাদের প্রত্যেককেই দ্বিগুণ (শাস্তি) দেয়া হবে, কিন্ত তোমরা তো অনুধাবনই করতে না। (সূরা আল আ’রাফঃ আয়াত ৩৮)
সকলের জন্যই দ্বিগুণ আযাব একথার তাৎপর্য হচ্ছে, অপরাধীরা সর্বদাই নিজে অপকর্ম করে এবং অন্যদের করতে উৎসাহ দেয়। যেহেতু প্রতিটি অপকর্মই বাহ্যিক চাকচিক্যময় তাই তার উৎসাহে বিপুল সংখ্যক লোক সাড়া দেয়। আবার তাদের দেখাদেখি পরবর্তীতে আরেক দল অপরাধপ্রবণ হয়ে যায়। এমনি করে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক অপরাধীদের দল কিয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকে। সত্যি কথা বলতে কি, প্রত্যেকটি দলই পূর্ববর্তী দলকে অনুসরণ করেই অপরাধ প্রবণতায় জড়িয়ে পড়ে এবং অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়। তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রত্যেক দলকেই দ্বিগুণ শাস্তি দেবেন। কারণ একদিকে যেমন তারা পূর্ববর্তী দলের অনুসারী অপরদিকে তারা তাদের পরবর্তী দলের পথ প্রদর্শক।
এ কথাগুলোই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামে অন্যভাবে বলেছেন,
যারা (আল্লাহর ওপর) ঈমান আনে, আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন তাদের সাহায্যকারী (বন্ধু), তিনি (জাহেলিয়াতের) অন্ধকার থেকে তাদের (ঈমানের) আলোতে বের করে নিয়ে আসেন, (অপরদিকে) যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে, বাতিল (শক্তিসমূহ)-ই হয়ে থাকে তাদের সাহায্যকারী, তা তাদের (দ্বীনের) আলোক থেকে (কুফরীর) অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়; ...(সূরা আল বাকারাঃ আয়াত ২৫৭)
অনুসারীগণ নেতাদের শাস্তি দাবী করবে
তারা (সেদিন) বলবে, হে আমাদের মালিক, (দুনিয়ার জীবনে) আমরা আমাদের নেতা ও বড়োদের কথাই মেনে চলেছি, তারাই আমাদের তোমার পথ থেকে গোমরাহ করেছে। হে আমাদের মালিক, ওদের তুমি (আজ) দ্বিগুণ পরিমাণ শাস্তি দাও এবং তাদের ওপর বড়ো রকমের অভিশাপ পাঠাও। (সূরা আল আহযাবঃ আয়াত ৬৭-৬৮)
জাহান্নামীরা জাহান্নামে জ্বলতে জ্বলতে অসহ্য হয়ে যাবে। তখন চিৎকার করে বলতে থাকবে,
... হে আমাদের মালিক, যেসব জ্বিন ও মানুষ (দুনিয়ায়) আমাদের গোমরাহ করেছিলো, আজ তুমি তাদের (এক নযর) আমাদের দেখিয়ে দাও, আমরা তাদের আমাদের পায়ের নীচে রাখবো, যাতে করে তারা (আরো বেশী) লাঞ্ছিত হয়। (সূরা হা-মীম আস সাজদাহঃ আয়াত ২৯)
জাহান্নামীদের অনুভূতি তীব্র হবে। তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে এবং সেদিন বুঝবে অন্ধভাবে নেতাদের অনুসরণ করা কতো বড়ো ভ্রান্তনীতি ছিলো। তারা যা বলবে তা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন সূরা আশ শোয়ারাতে,
আল্লাহ তায়ালার কসম, আমরা (দুনিয়াতে) সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিলাম, (বিশেষ করে) যখন আমরা সৃষ্টিকূলের মালিক আল্লাহ তায়ালার সাথে তোমাদেরও (তাঁর) সমকক্ষ মনে করতাম। (সূরা আশ শোয়ারাঃ আয়াত ৯৭-৯৮)
সূরা আল বাকারায় বলা হয়েছে,
(সেদিন) ভয়াবহ শাস্তি দেখে (হতভাগ্য) লোকেরা (দুনিয়ায়) যাদের তারা মেনে চলতো, তাদের অনুসারীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথা বলবে (বলবে, আমরা তো এদের চিনিই না), এদের উভয়ের মধ্যকার (ভঙ্গুর) সব সম্পর্ক সেদিন ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এ (হতাশাগ্রস্ত) অনুসারীরা সেদিন বলবে, আবার যদি একবার আমাদের জন্যে (পৃথিবীতে) ফিরে যাবার (সুযোগ) থাকতো, তাহলে আজ যেমনি করে (তারা) আমাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে, আমরা (সেখানে গিয়ে) তাদের সাথে (যাবতীয়) সম্পর্কচ্ছেদ করে আসতাম, এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তাদের সমগ্র জীবনের কর্মকান্ডগুলো তাদের সামনে একরাশ (লজ্জা ও) আক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরবেন; তাদের জন্যে যে জাহান্নাম নির্ধারিত হয়ে আছে, এরা (কখনো সেই) জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। (সূরা আল বাকারাঃ আয়াত ১৬৬-১৬৭)
জাহান্নামীদের প্রতি শয়তানদের ভাষণ
মজার ব্যাপার হচ্ছে, জাহান্নামীরা তাদের জাহান্নামে যাবার ব্যাপারে নিজেদের নেতা, বাপ-দাদা এবং শয়তানের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করবে। নিজেদের কৃতকর্মের ব্যাপারে ধৃত হলেও তারা অপরের কাঁধে দোষ চাপানোর চেষ্টা করবে। উদ্দেশ্য একটিই। তা হচ্ছে সামান্য হলেও আলাহর করুণা দৃষ্টি লাভ করা। তখন শয়তান নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য নিম্নোক্ত ভাষণটি জাহান্নামীদের উদ্দেশ্যে প্রদান করবে। সে ভাষণটি আল্লাহ সূরা ইবরাহীমে হুবুহু তুলে ধরেছেন। বলা হচ্ছে,
যখন বিচার ফয়সালা হয়ে যাবে তখন শয়তান জাহান্নামীদের বলবে, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সাথে (যে) ওয়াদা করেছেন তা (ছিলো) সত্য ওয়াদা, আমিও তোমাদের সাথে (একটি) ওয়াদা করেছিলাম, কিন্ত আমি তোমাদের সাথে ওয়াদার বরখেলাপ করেছি; (আসলে) তোমাদের ওপর আমার তো কোনো আধিপত্য ছিলো না, আমি তো শুধু এটুকুই করেছি, তোমাদের (আমার দিকে) ডেকেছি, অতঃপর আমার ডাকে তোমরা সাড়া দিয়েছো, তাই (আজ) আমার প্রতি তোমরা (কোনো রকম) দোষারোপ করো না, বরং তোমরা তোমাদের নিজেদের ওপরই দোষারোপ করো; আজ আমি (যেমন) তোমাদের উদ্ধারে (কোনো রকম) সাহায্য করতে পারবো না, (তেমনি) তোমরাও আমার উদ্ধারে কোনো রকম সাহায্য করতে পারবে না; তোমরা যে (আগে) আমাকে আল্লাহর শরীক বানিয়েছো, আমি তাও আজ অস্বীকার করছি (এমন সময় আল্লাহর ঘোষণা আসবে); অবশ্যই যালেমদের জন্যে রয়েছে কঠিন আযাব। (সূরা ইব্রাহীমঃ আয়াত ২২)
যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহ তায়ালার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে একটি শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই (সর্বক্ষণ) তার সাথী হয়ে থাকে। (সূরা আয যোখরুফঃ আয়াত ৩৬)
তারাই অতঃপর তাদের (আল্লাহ তায়ালার) পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে, অথচ তারা নিজেরা মনে করে তারা বুঝি সঠিক পথের ওপরই রয়েছে। (সূরা আয যোখরুফঃ আয়াত ৩৭)
যখন (এ) ব্যক্তি (কেয়ামতের দিন) আমার সামনে হাযির হবে, তখন (তার সাথী শয়তানকে দেখে) সে বলবে, হায় (কতো ভালো হতো) যদি (আজ) আমার ও তোমার মাঝে দুই উদয়াচলের ব্যবধান থাকতো, (তুমি) কতো নিকৃষ্ট সাথী (ছিলে আমার) ! (সূরা আয যোখরুফঃ আয়াত ৩৮)
(বলা হবে,) যখন তোমরা (শয়তানকে সাথীরূপে গ্রহণ করে নিজেদের ওপর) যুলুম করেছিলে, তখন (আজও) তোমরা (এই) আযাবে একজন আরেকজনের অংশীদার হয়ে থাকো (হে নবী), তুমি বলো, আজ এগুলো তোমাদের কোনো রকম উপকারই দেবে না। (সূরা আয যোখরুফঃ আয়াত ৩৯)
এদের (আরেকটি) তুলনা হচ্ছে শয়তানের মতো, শয়তান এসে যখন বলে, (প্রথমে) আল্লাহকে অস্বীকার করো, অতঃপর (সত্যিই) যখন সে (আল্লাহকে) অস্বীকার করে তখন (মূহুর্তেই) সে (বোল পাল্টে ফেলে এবং) বলে, আমার সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই, আমি (নিজে) সৃষ্টিলোকের মালিক আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করি। (সূরা আল হাশরঃ আয়াত ১৬)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:০৮