জাহান্নামীরা ছায়ার মধ্যে থাকবে
(যাদের অবস্থান হবে জাহান্নামের) উত্তপ্ত ও ফুটন্ত পানিতে, এবং (ঘন) কালো রঙের ধোঁয়ার ছায়ায়, (সে ছায়া যেমন) শীতল নয়, (তেমনি তা কোনো রকম) আরামদায়কও হবে না। (সূরা আল ওয়াক্বেয়াঃ আয়াত ৪২-৪৪)
আগেই বলা হয়েছে যে, কালো বর্ণের আগুনে জাহান্নামীদেরকে নিক্ষেপ করা হবে। তাই যখন তারা সেখানে প্রবেশ করবে তখন চারদিকে অসহ্য তাপ ও ধুঁয়ার মতো ঘোলাটে অন্ধকার থাকবে। এ অবস্থার কথাই উপরোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে।
জাহান্নামীদের খাদ্য ও পানীয়
অবশ্যই (জাহান্নামে) যাক্কুম (নামের একটি) গাছ থাকবে, (তা হবে) গুনাহগারদের (জন্যে সেখানকার) খাদ্য, তা গলিত তামার মতো পেটের ভেতর ফুটতে থাকবে, যেন তা ফুটন- গরম পানি ! (সূরা আদ দোখানঃ আয়াত ৪৩-৪৬)
অতঃপর তার ওপর ফুটন্ত পানি (ও পুঁজ) মিলিয়ে তাদের (পান করার জন্যে) দেয়া হবে, (সূরা আছ ছাফফাতঃ আয়াত ৬৭)
অন্যত্র বলা হয়েছে,
(দুনিয়ায় যা অর্জন করেছো তার বিনিময়ে আজ) তোমরা ভক্ষণ করবে 'যাককুম' (নামক একটি) গাছের অংশ, অতঃপর তা দিয়েই তোমরা (তোমাদের) পেট ভরবে, তার ওপর তোমরা পান করবে (জাহান্নামের) ফুটন্ত পানি, তাও আবার পান করতে থাকবে (মরুভূমির) তৃষ্ণার্ত উটের মতো করে; (সূরা আল ওয়াক্বেয়াঃ আয়াত ৫২-৫৩)
যাক্কুম, Cactus জাতীয় গাছ। আরবের তিহামা অঞ্চলে এ গাছ জন্মে। এর স্বাদ তিক্ত এবং গন্ধ অসহ্য। ঐ গাছ ভাঙ্গলে দুধের মতো সাদা কস বের হয়, যা গায়ে লাগলে সাথে সাথে ফোস্কা পড়ে ঘা হয় এবং গা ফুলে উঠে। আগেই বলা হয়েছে পৃথিবীর সাথে আখিরাতের কোন বস্তুর নামের মিল থাকলেও মূলত ঐ দুই বস্তু এক নয়। পৃথিবীর যাক্কুম গাছের তুলনায় আখিরাতের যাক্কুম গাছ আরও নিকৃষ্ট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি যাক্কুমের এক বিন্দু পৃথিবীতে পড়ে তবে তা সারা বিশের প্রাণীকুলের আহার্য্য বস্তুকে বিকৃত করে ফেলবে। (তিরমিযি)
কুরআনে হাকিমে বলা হয়েছে, আল্লাহর কসম ! যদি এক ফোটা যাক্কুম পৃথিবীর নদ নদীতে ফেলা হয়, তবে তা পৃথিবী বাসীর সমস্ত খাদ্য দ্রব্যকে পয়মাল করে দেবে।
যাক্কুম গাছের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আলাহ বলেনঃ
তা এমন একটি গাছ - যা জাহান্নামের তলদেশ হতে বের হয়। তার ছড়াগুলি এমন, যেনো শয়তানগুলোর মাথা
'শয়তানগুলোর মাথা' এ কথাটা রূপক দৃষ্টান্ত। যেমন আমরা কারো চেহারা খুব ফর্সা দেখলে বলি একেবারে পেত্মীর মতো দেখতে। ঠিক এমনি একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে শয়তানের মাথার দৃষ্টান্ত। এ যে অত্যন্ত অরুচিকর, অখাদ্য, কুখাদ্য তা বুঝানোই হচ্ছে উক্ত আয়াতের উদ্দেশ্য।
সূরা আল গাশিয়ায় বলা হয়েছে,
ফুটন্ত পানির (কুয়া) থেকে এদের পানি পান করানো হবে; খাবার হিসেবে কাঁটাবিশিষ্ট গাছ ছাড়া কিছুই তাদের জন্যে থাকবে না, এ (খাবার)-টি (যেমন) তাদের পুষ্ট করবে না, তেমনি (তা দ্বারা) তাদের ক্ষুধাও মিটবে না; (সূরা আল গাশিয়াঃ আয়াত ৫-৭)
সে পানি শুধুমাত্র গরম ও ফুটন্তই হবে না বরং তা তামা বা কঠিন কোন ধাতুকে তাপ প্রয়োগে তরল করা হলে যেমন, তেমন উত্তপ্ত তরলের মতো হবে। বলা হচ্ছে,
... যখন তারা (পানির জন্যে) ফরিয়াদ করতে থাকবে তখন এমন এক গলিত ধাতুর মতো পানীয় দ্বারা তাদের (ফরিয়াদের) জবাব দেয়া হবে, যা তাদের সমগ্র মুখমন্ডল জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবে, কী ভীষণ (হবে সে) পানীয়; আর কী নিকৃষ্ট হবে তাদের আশ্রয়ের স্থানটি ! (সূরা আল কাহাফঃ আয়াত ২৯)
... সেখানে তাদের এমন ধরনের ফুটন্ত পানি পান করানো হবে, যা তাদের পেটের নাড়িভুঁড়ি কেটে (ছিন্ন বিছিন্ন করে) দেবে। (সূরা মোহাম্মদঃ আয়াত ১৫)
আরো বলা হয়েছে,
সেখানে তারা কোনো ঠান্ডা ও পানীয় (জাতের) কিছুর স্বাদ ভোগ করবে না, (সেখানে) ফুটন্ত পানি, পুঁজ, দুর্গন্ধময় রক্ত, ক্ষত ছাড়া (ভিন্ন) কিছুই থাকবে না, (সূরা আন-নাবাঃ আয়াত ২৪-২৫)
সূরা ইব্রাহীমে বলা হয়েছে,
... (সেখানে) তাকে গলিত পুঁজ (জাতীয় পানি) পান করানো হবে, সে অতি কষ্টে তা গলধঃকরণ করতে চাইবে, কিন্তু গলধঃকরণ করা তার পক্ষে কোনোমতেই সম্ভব হবে না, (উপরন্তু) চারদিক থেকেই তার ওপর মৃত্যু আসবে, কিন্তু সে কোনোভাবেই মরবে না; বরং তার পেছনে থাকবে কঠোর আযাব। (সূরা ইবরাহীমঃ আয়াত ১৬-১৭)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি সেই দুর্গন্ধময় পুঁজ এক বালতি পৃথিবীতে ফেলে দেয়া হতো তবে তা গোটা পৃথিবীকে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ করে তুলতো। (তিরমিযি)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, জাহান্নামীদের ভীষণ ক্ষুধা পাবে তাই তারা খাদ্যের জন্য ফরিয়াদ করবে। তখন তাদেরকে 'দরী' জাতীয় খানা পরিবেশন করা হবে। যা তাদের ক্ষুধাকে নিবৃত্ত করবে না এবং তাদের পুষ্টিও বাড়াবে না। তারা পুনরায় খাদ্যের জন্য ফরিয়াদ করবে। অতঃপর তাদেরকে এমন খাদ্য দেয়া হবে। যা তাদের গলায় আটকে যাবে। তারা সেগুলো বের করার চেষ্টা করবে। তখন মনে হবে পৃথিবীতে এমতাবস্থায় পানীয় দ্রব্য দ্বারা আটকে যাওয়া বস্তু বের করা যেতো। কাজেই তখন তারা পানি চাইবে। ফুটন্ত পানি লৌহনির্মিত পায়খানার পাত্রে রেখে তাদের সামনে পেশ করা হবে। যখন তা তাদের মুখের কাছাকাছি নেয়া হবে তখন তাদের মুখমন্ডল ঝলসে যাবে। আর যখন সে পানি পাকস্থলীতে প্রবেশ করবে তখন পেটের সমস্ত নাড়িভূড়ি ছিন্নভিন্ন করে দেবে। (মিশকাত)
জাহান্নামীরা জান্নাতীদের নিকট খাদ্য ও পানীয় চাইবে
... জাহান্নামের অধিবাসীরা জান্নাতের লোকদের ডেকে বলবে, আমাদের ওপর সামান্য কিছু পানি (অন্তত) ঢেলে দাও, অথবা আল্লাহ তায়ালা তোমাদের যে খাবার দান করেছেন তার কিয়দংশ (আমাদের দাও); তারা বলবে, আল্লাহ তায়ালা (আজ) এ দুটি জিনিস কাফেরদের জন্যে হারাম করেছেন। (সূরা আল আ'রাফঃ আয়াত ৫০)
উল্লেখিত আয়াত হতে প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবী যেমন স্থান কাল ও পাত্রের দ্বারা সীমাবদ্ধ কিন্তু আখিরাত স্থান-কালের সীমাবদ্ধতার উর্দ্ধে। কেননা জান্নাতের পরিধি যেমন বিশাল ঠিক তেমনিভাবে জাহান্নামের পরিধিও বিশাল। তবুও এ দু'প্রান্ত থেকে একজন অপরজনের অবস্থা অবলোকন করতে পারবে এবং পরস্পর কথাও বলবে, তাতে তাদের দৃষ্টিপাত কণ্ঠস্বরে কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে না।