somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফতোয়া ২৫ - প্রসঙ্গ - অনুমতি ছাড়া কারো জমিতে কবর বা মসজিদ তৈরী করা

২২ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রশ্ন : মিসরীয় সংবাদপত্র 'আল আখবারে' একটি বিস্ময়কর খবর দৃষ্টিগোচর হলো। খবরে বলা হয়েছে যে, শেখ মোহাম্মদ আল জামাল তার মৃত্যুর আগে এই ওসিয়ত করেছিলেন যে, তাকে তার এলাকার কবরস্থান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে একটি ক্ষেতে যেন দাফন করা হয়। ক্ষেতটি ছিলো অন্যের মালিকানাভুক্ত। এ কারণে গ্রামের লোকেরা ওসিয়ত বাস্তবায়ন করতে অস্বীকার করলো। তারা গ্রামেই তার কবর খুঁড়ে কবর দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। কিন্তু কফিন কবরস্থানের দিকে নেয়ার সময় কফিনবাহকেরা অনুভব করছিলো যে, এক অদৃশ্য শক্তি যেন তাদেরকে সেই কবরস্থানের পরিবর্তে ওসিয়ত করা ক্ষেতের দিকেই যেতে টানা হেঁচরা করছে। এ খবর পুলিশকে জানানো হলো। পুলিশের লোকেরাও কফিন কবরস্থানের দিকে নেয়ার চেষ্টা করলো, কিন্তু সক্ষম হলো না। অবশেষে শেখ-এর অসিয়ত অনুযায়ী উল্লেখিত ক্ষেতেই লাশ দাফন করা হলো।

প্রশ্ন হচ্ছে দ্বীনী দৃষ্টিভঙ্গিতে এই ঘটনার সত্যতা কতোটুকু? জমির মালিকের অনুমতি ব্যতীত কি তার জমিতে কবর বা মসজিদ তৈরী করা যায়? কবর বা মসজিদ তৈরী করা হলে ফসলের যে ক্ষতি হবে তার প্রতিকার কে করবে?

উত্তর : গ্রামের লোকেরা ওসিয়তের ওপর আমল করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে যথাযথ কাজই করেছে। কারণ এ রকম ওসিয়ত শরীয়তের দৃষ্টিতে ভ্রান্ত এবং বিভিন্ন কারণে শরীয়ত এবং সুন্নতের পরিপন্থী। যেমন -

১. শেখ তাকে এমন জমিতে দাফন করার জন্যে ওসিয়ত করেছেন, যে জমি তার মালিকানাধীন ছিলো না। সে জমি কবরস্থানও ছিলো না। শেখ যদি শরীয়ত সম্পর্কে জ্ঞানও রাখতেন তবে কিছুতেই এ রকম ওসিয়ত করতেন না।

২. দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, এ রকম ওসিয়ত করার মাধ্যমে শেখ নিজেকে অন্যদের তুলনায় একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তির মর্যাদা দিতে চেয়েছেন। সকল মৃত ব্যক্তিকে যে কবরস্থানে দাফন করা হয় সেই কবরস্থানে দাফন না করার মাধ্যমে শেখ অন্যদের চেয়ে নিজেকে আলাদা মর্যাদা দিতে সচেষ্ট হয়েছেন, যা পরবর্তীতে শেরেক-এর কারণ হতে পারে।

৩. কোনো প্রকার উপকারিতা এবং বৈধতা ছাড়াই অহেতুক মানুষকে এমন কাজের জন্যে বাধ্য করা হয়েছে, যে কাজ করতে তারা বাধ্য ছিলো না।

যে অদৃশ্য শক্তি কফিনকে কবরস্থানের পরিবর্তে সেই ওসিয়তকৃত ক্ষেতের দিকে টেনে নিচ্ছিলো, সে সম্পর্কে কথা থেকে যায়। এ রকম ঘটনার খবর গ্রামের দুর্বল ঈমানের লোক এবং অল্প শিক্ষিত লোকদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে তা যদি এমন কোনো শেখের হয় যে শেখকে লোকেরা জীবদ্দশায় আল্লাহর ওলী মনে করে নিয়েছিলো। এ রকম ঘটনা সাহাবায়ে কেরামের যুগে বা তাবেয়ীদের ক্ষেত্রে ঘটেছে, এ রকম কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে কি এই শেখ সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীদের চেয়েও উত্তম ছিলেন? বিবেকের দৃষ্টিতে এ ঘটনার ব্যাখ্যা এ রকম হতে পারে।

১. এ রকম হতে পারে যে, জানাযা বহনকারীরা জেনে শুনেই এ রকম গল্প তৈরী করেছিলো। তারপর সেই গল্প জনগণের মধ্যে এ উদ্দেশ্যে প্রচার করেছিলো, যাতে করে শেখের কেরামত এবং আল্লাহর ওলী হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।

২. আবার এমনও হতে পারে যে, শব বাহকরা জেনে বুঝে এ রকম করেনি বরং কোনো মানসিক চাপের কারণে তাদের ওরকম মনে হয়েছিলো। শিক্ষার্থীরা এ কথা ভালো করেই জানে যে, মানসিক চাপের কারণে মানুষ এমন সব কাজ করে বসে, যে কাজ করার ইচ্ছা তাদের ছিলো না।

৩. এটাও অসম্ভব নয় যে, বদমাশ শ্রেণীর মনবিদ্যা এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে। যাতে করে মানুষ মৃত শেখের প্রতি অতিমাত্রায় শ্রদ্ধার ভাব প্রমাণ করে লোকদেরকে শেরক-এর প্রতি আকৃষ্ট করা যাবে। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া এ রকম বেশ কিছু ঘটনা উল্লেখ করেছেন।

বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে এ রকমের ঘটনা সাধারণত সেসব গ্রামেই ঘটে, যেখানের মানুষ স্বল্প শিক্ষিত এবং যেখানে দুর্বল ঈমানের লোকেরা বসবাস করে। সউদী আরব, কাতার বা এ রকম দেশে ওই ধরনের ঘটনা কেন ঘটে না?

শেখকে কবর দেয়ার কারণে ক্ষেতের মালিকের যে ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতি পূরণের দাবী করার অধিকার ক্ষেতের মালিকের রয়েছে। একই সাথে ক্ষেতের মালিক তার জায়গা থেকে উল্লেখিত শেখের কবর সরিয়ে নেয়ারও দাবী জানাতে পারে। কারণ এই কবর দেয়ার কারণে তার ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া কবরটি অন্য একটি কারণেও সরিয়ে ফেলা দরকার। সে কারণ হচ্ছে সেই কবরের কারণে দুর্বল ঈমানের লোকেরা খুব শীঘ্রই হয়তো কবর পূজার প্রতি আকৃষ্ট হবে। এতে তারা শেরেকে জড়িয়ে পড়বে।

জমির মালিকের অনুমতি ছাড়া তার জমিতে যে মসজিদ তৈরী করা হয়, সে মসজিদে নামায আদায় করা হারাম। কেননা -

১. সকল ফকীহ এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, জোর করে অধিগ্রহণ করা জমিতে নামায আদায় করা জায়েয নয়।

২. বিভিন্ন হাদীসে রসূল (স.) কবরের ওপর মসজিদ তৈরী করতে নিষেধ করেছেন। এ রকম মসজিদ তৈরীর কারণে তিনি ইহুদী খৃষ্টানদের প্রতি অভিশাপ দিয়েছেন।

এ কারণে ফকীহদের অভিমত হচ্ছে যে, মসজিদ বা কবর যেটি পরে তৈরী করা হয়েছে সেটি ভেঙ্গে ফেলতে হবে। কবর থাকলে সরিয়ে অন্যত্র কবরের ব্যবস্থা করতে হবে। 'মাসজিদে যেরার' এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সেই মসজিদ তাকওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ বিশৃংখলা সৃষ্টিই ছিলো সে মসজিদ তৈরীর উদ্দেশ্য। তাবুক যুদ্ধ থেকে ফেরার পর আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীকে সে মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার আদেশ দিয়েছিলেন। 'মাসজিদে যেরার' এর ঘটনা থেকে দুটি বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণ করা যায়।

১. সেই সকল ইমারত এবং ঘর জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেয়া জায়েয যেখানে আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজ হয়ে থাকে।

২. ওয়াকফের জমিতে এমন প্রতিষ্ঠান তৈরী করা জায়েয নয়, যেখানে আল্লাহর নাফরমানী বা অবাধ্যতার কাজ হবে। ^


তথ্যসূত্রঃ
^ যাদুল মায়াদ, ইবনুল কাইয়েম, তৃতীয় খন্ড, পৃঃ ৩৫-৩৬



*** জবাব দিয়েছেন শায়খ ইউসুফ আল কারদাওয়ী ***
*** অনুবাদ করেছেনঃ হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ ***
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×