উত্তর : বহু লোক ওযুর সময় এ রকম কিছু দোয়া পড়াকে ওয়াজেব মনে করেন। তারা বিশ্বাস করেন যে, ওইসব দোয়া ব্যতীত ওযু হয় না। আমি এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি নামায আদায় করেন না কেন? সেই ব্যক্তি বললেন, আমি ওযু করতে পারি না। আমি একথা শুনে অবাক হলাম। এ রকম কোন মানুষ কি আছে যে হাত মুখ ধোবে, মাথা মসেহ করবে, পা ধোবে, এসব জানে না? লোকটি বললো ওসব তো পারি কিন্তু ওযু করার দোয়া মনে রাখতে পারি না। এই লোকটি এটাই বুঝাতে চেয়েছে যে, দোয়া ব্যতীত ওযু হবে না।
প্রকৃতপক্ষে রসূল (স.) থেকে এ রকম দোয়ার কোনো বর্ণনাই পাওয়া যায় না। তবে একটি দোয়া তিনি পড়তেন। কারো মতে এই দোয়া তিনি ওযু করার সময় পড়তেন কারো মতে ওযু করার পরে পড়তেন। দোয়াটি হচ্ছে, 'আল্লাহুম্মাগফেরলি যামবি ওয়া ওয়াসে লী ফী দারী ওয়া বারেক লী ফী রেযকী'। অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমার পাপ মাফ করে দাও, আমার ঘরে প্রশস্ততা দাও, আমার রেযেকে বরকত দাও। (নাসাঈ)
ওযু শেষ করার পর এই দোয়া পাঠ করতে হবে, 'আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মোহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু'। অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তাঁর কোনো শরিক নেই। মোহাম্মদ (স.) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল।
এইসব দোয়া পাঠ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে স্রেফ সুন্নত। এমন কোন দোয়া নেই যা পাঠ করা আবশ্যক। ওযুর মধ্যে যেসব দোয়া সাধারণত পাঠ করা হয় এসব দোয়া পাঠের প্রচলন শুরু হয়েছিলো রসূল (স.)-এর ওফাতের পর। ওযু একটি এবাদাত। এই এবাদাতে রসূল (স.) থেকে প্রমাণিত হয়নি এ রকম কোনো আমল সংযুক্ত করা সুস্পষ্ট বেদয়াত। মহানবী (স.)-এর হাদীসে রয়েছে, নতুন নতুন আবিস্কার করা আমল সম্পর্কে তোমরা সাবধান থাকবে। কারণ নতুন আবিস্কার করা প্রতিটি আমলই হচ্ছে বেদয়াত, আর বেদয়াতই হচ্ছে গোমরাহী। (আবু দাউদ, তিরমিযী)
প্রতিটি এবাদাতের ক্ষেত্রে দু'টি কথা মনে রাখা আবশ্যক। সেই এবাদাত কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে এ দু'টি হচ্ছে শর্ত।
১. সেই এবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্যেই হতে হবে। সেই এবাদাতে কাউকে শরিক করা যাবে না।
২. সেই নিয়মেই এবাদাত করতে হবে যে নিয়ম শরীয়ত আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছে। সেই এবাদাতে নিজের পক্ষ থেকে কম বা বেশী করা এবাদাতের প্রাণশক্তির পরিপন্থী।
*** জবাব দিয়েছেন শায়খ ইউসুফ আল কারদাওয়ী ***
*** অনুবাদ করেছেনঃ হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ ***
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১০:২৩