এলার্মের শব্দে চোখ খুলে উপরে ঝুলে থাকা সিলিংটাকে খুব অপরিচিত মনে হল আফসানা রশীদের। ঘুমের ক্রমবর্ধমান সান্দ্রতা তাকে টেনে বিছানায় ফেরৎ নেবার অপচেষ্টায় মত্ত তখন। আফসানার মনে একটি লোভনীয় আশা উঁকি ঝুঁকি মারার চেষ্টা করল। কোনদিন যদি এলার্মের শব্দটাকে পিছমোড়া বেধে ফেলে দেয়া যেত প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরতম খাতে। কি যেন নাম খাতটার, মিন্দানাও খাত সম্ভবত। যে শিডিউল গুলো ব্ল্যাকবেরীর ভেতরে অঘোরে ঘুমাচ্ছে একটি সদ্যজাতের তারস্বর চিৎকারের অপেক্ষায়, সবগুলোকে একসাথে মেরে ফেলা যেত ফায়ারিং স্কোয়াডে। তারপর আফসানা ঘুমিয়ে পড়তেন, যেভাবে কামরান রশীদকে তিনি একসময় মেডুসা মায়াবিনীর মত জাপটে ধরতেন ঠিক সেইভাবে বিছানা বালিশের এলোমেলো সঙ্গমস্থান কে। কেন যেন হঠাৎ বিছানা বালিশে ডুবে যাওয়ার অনুভুতিটাকে দীর্ঘ মৈথুনের পরে আসা বাধভাঙ্গা পুলকের মত মনে হতে লাগল। তার সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল।
তবে তিনি উঠে বসলেন। ব্ল্যাকবেরীর ভেতরে ঘুমানো শিডিউল গুলো শক্তি আশাতীত বেশী। তাদের ক্রমবর্ধায়মান ব্যাসার্ধ থেকে পালানো মুশকিল। ধীর পায়ে এই মাতৃজঠরের মত নিরাপদ শোবার ঘর ছেড়ে বাথরুমে ঢুকলেন তিনি।
শাওয়ারের জন্যে রাতের কাপড় ছেড়ে শাওয়ারের নীচে দাড়ানোর আগে তিনি বাথরুমের বিশাল আয়নাটার সামনে থেমে গেলেন। এই পৃথিবীর সম্পর্কগুলো এবং কাগুজে বাস্তবতার ভীড়ে নিজেকে খুজে পাওয়া কঠিন। হঠাৎ আজ তার নিজেকে দেখতে ইচ্ছা করল।
আয়নায় নিজের নগ্ন প্রতিবিম্বের দিকে মনোযোগ দিলেন। নিয়মমাফিক খাবার নিয়ন্ত্রণ আর ব্যায়ামের ফলে বয়সের ছাপ পড়তে দেন নি তিনি শরীরের উপর। এখনও তরুনীদের মত আঁটোসাঁটো দেহের গাথুনী। নিঁখুতভাবে শরীরটা কোমরের কাছে সরু হয়ে আবার কাব্যিকভাবে স্ফীত হয়েছে। হার্বাল ব্যবহারে টান টান আছে স্তন। সরু কটির মাঝখানে একটা লম্বাটে নাভী ফুলের মত ফুটে আছে। তিনি জানেন আজও তার অফিসের কমবয়সীদের স্বমেহনের কল্পনা তিনি। আজও শরীরসর্বস্ব চিন্তার সমাহার পুরুষকূল তার পারফিউম শুকেই বাথরুমে দৌড়ায়। সিংগাপুর থেকে আনা ক্রীমটা ভালো কাজ দিয়েছে। বোটাগুলোর রং ফ্যাকাসে গোলাপী। তার মন হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল। কামরান বিয়ের আগে পাগল ছিল তার শরীরের জন্যে। কত সন্ধ্যা শুধুমাত্র তার স্তনে মুখ ডুবিয়ে পার করেছে কামরান। অনেক সমস্যা হলেও প্রতি সপ্তাহে কামরানের একবার হলেও আফসানাকে চাই ই চাই এমন একটা বিষয় ছিল।
সেই কামরান এখন দেশ উদ্ধার করে বেড়ায়। তার সেমিনার, মিটিং ইত্যাদি ইত্যাদি সম্প্রদান কারক মার্কা কাজে আফসানার ফ্যাকাশে গোলাপী বোটায় চুমু দেয়ার সময় কই? পুরুষের যখন শরীর ঘুমিয়ে পরে তখনই হয়তো জেগে উঠে দেশপ্রেম। আফসানা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মেনোপজ টাও এখন দৃষ্টিসীমার ব্যাসার্ধে। নারীর শরীরি পরিচয় ঝাপসা হয়ে গেলে এইসব কোম্পানীর উচ্চপদ, ব্ল্যাকবেরী, ম্যাকবুক, এসেট ডেভেলপমেন্টের ফ্ল্যাট সবকিছুকেই বড় অর্থহীন লাগলো তার কাছে। পার্থিব সফলতাকে যদি ব্যাক্তিগত সম্পত্তির মালিকানার সাথে ক্যালিব্রেট করা যায় তাহলে অনেক আগেই কামরান কে পেছনে ফেলে এসেছে আফসানা। পদার্থবিজ্ঞান ভালোবাসা মানুষটা কখোনোই পৃথিবীকে বুঝে উঠতে পারে নাই। আফসানার বান্ধবীরা একবার বলেছিল তার সাফল্য যাতে বেশী চোখে না লাগে কামরানের কাছে। নারীর কাছে দৌড়ে পরাজয়ে পুরুষরা ভেঙ্গে পরে বেশী। হয়ত তাই হয়েছে। তাই ক্রমাগত যখন আফসানার জীবনে একে একে নতুন মাইলফলক স্থাপিত হয়েছে তখন কামরান আরো বেশী গুটিয়ে গেছে নিজের মধ্যে। আফসানা মনে করতে পারলেন না কামরান কবে শেষ তার শরীরে কামার্ত হাত দিয়েছে।
এইসব ভাবনাচিন্তা ঝেড়ে ফেলে আফসানা শাওয়ার সেড়ে নিলেন। শরীরে পারফিউম দিলেন। প্যারিসের সুগন্ধে তার নগ্ন শরীরে পালতুলল যেন ইন্দ্রীয়গুলোর নৌকা। বেছে বেছে কালো রং এর ছোট আটোঁসাটোঁ অন্তর্বাসের সেট পরলেন। নাভীর অনেক নীচে শাড়িটা গুজলেন। বিশেষ লিপ স্টিকে ঠোটকে স্থায়ী আদ্রতায় ডুবালেন। তৈরী হওয়া শেষে আয়নায় আবার তাকালেন, অস্ফুট স্বরে বলে উঠলেন
"ইউ আর এনাফ........"
অফিসে নিজের কামড়ায় বসে পার্ফর্ম্যান্স ইভালুয়েশনের টেবিল দেখছিলেন। যদিও প্রটোকল অনুসারে এটা তার দেখার দরকার নেই, তারপরও তিনি তার সকল অধস্থনদের হাতের মুঠোয় রাখতে পছন্দ করেন। ছোকরা একটা ছেলের ডেটা দেখে তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। এইসব ফ্রেশম্যানদের আন্ডারগ্র্যাড ক্যাম্পাসের গন্ধ বছর খানেক লাগিয়ে ঘুরে। সিনসিয়ারিটির এত অভাব। ডাবল ডিজিটে বেতন পেয়েই নিজেকে এত সফল মনে করে যে এম্বিশান খুজে পাওয়া যায় না। অথচ এদের থাকে সবচেয়ে প্রাণশক্তি। নিজের কথা মনে পরল। তিনি এইসব ফ্যান্টাসীতে গা ভাসান নি বলেই উঠে এসেছেন অনেকদুর। কোনও খুটির জোড় ছাড়া কেবল নিজের চেষ্টায় এতদুর আসতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। এজিএমের পোস্ট টা পাওয়ার সময়ের কথা মনে পড়ল তার। তৎকালীন এমডি স্যারের কুৎসিৎ রোমশ নগ্ন শরীরটা চোখের সামনে ভেসে উঠল তার। বিশাল শরীরের চাপে চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। পশুর মত আফজাল হাসান তাকে স্পর্শ করছিল। অথচ তাকে খুশি রাখার জন্যে একটু পরপর জোর করে শীৎকার দিতে হচ্ছিল। আফসানার শরীর ঘুলিয়ে বমি আসল। আজকে এই ছোকরাটাকে দেখে নিবেন তিনি। কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে থাকতে পেরে নিজেকে বেশী প্রিভিলেজড ভাবাটা আজ ভেঙ্গে দিতে হবে।
সামিন যখন "মে আই কাম ইন" বলল তখন আফসানা অন্যমনস্ক ছিলেন। সবিবৎ ফিরে পেয়ে বললেন
"কাম ইন"
সামিন দীর্ঘদেহী যুবক। সম্ভবত নিয়মিত জীম করে। কারন ফুলহাতা শার্টের ভেতরেও বাইসেপ গুলো গর্জন করে আত্নপ্রকাশ করতে চাইছে। সামিনের পুরো কাঠামোটায় একটা হিংস্রতা আছে। কোঁকড়া কোঁকড়া ছোট চুলের নীচে শক্ত এবং সাধারন বিচারে অসুন্দর একটি চেহারা। কিন্তু তার অনন্যতা সেই অসুন্দরের মাঝেই।
"ইওর পার্ফর্ম্যান্স ইজ নট এনিহোয়ার নিয়ার দ্যা স্ট্যান্ডার্ড উই মেইন্টেইন হিয়ার"
"ম্যাডাম আমি নতুন..........।"
"কোম্পানীর সাথে একবছর হলো আছো, দিস ইজ নট এন এক্সকিউজ"
"আই উইল ট্রাই........।"
"উইশিং ইজ হোপলেস থিং আনলেস ইউ এক্ট, শোনো ছেলে আমি তো তোমার মতই ছিলাম তাই না। এই সেলারী রেইজ মিস করলে হয়তো তোমার কিছু যাবে আসবে না, বাট ইউ উইল বি আ ব্যাড এক্সামপল ফরইউরসেলফ। এখন থেকেই ইনিশিয়েটিভ নেয়া শুরু না করলে ইউ উইল স্টার্ট মিসিং এভরি রেইজ। অল অফ এ সাডেন ইওর কলিগস উইল প্রোমোটেড টু এ পোস্ট ইউ ক্যান্ট ইভেন ইমাজিন"
"ম্যাডাম আমি সত্যি ট্রাই করব ইমপ্রুভ করতে"
আফসানা সামিনের আফটার শেভ লোশনের গন্ধ পেলেন। বেশ মিস্টি তো গন্ধটা। গন্ধটাকে ধরে শরীরে সাথে মেখে দিতে ইচ্ছা করে। আফসানা মুখের কঠিন ভাবটা ধরে রেখে সাবধানে ঢোক গিললেন।
"ওকে আই হ্যাভ আ স্মল পার্টি ইন মাই হাউজ টু ডে। আই হ্যাভ ইনভাইটেড সাম আদার নিউ কামারস। তুমিও এসো। আমি একদম তোমাদের মত অবস্থা থেকে এখানে এসেছি আমার নিজের পরিশ্রমে। তাই যখন নিউকামার্স রা ম্যালফাংশন করে আমার দু:খ হয়। বিকজ তোমাদের সম্ভাবনা তোমরা নিজেরাই বুঝতে পারো না। এজন্যেই ভাবছি আমার কিছু গল্প তোমাদের শোনাবো। যাতে তোমরা মোটিভেটেড হও। প্লাস এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে আমি এমপ্লয়ীদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করি। "
"অনেক ধন্যবাদ ম্যাডাম"
কলিংবেল দিয়ে সামিন ঘামতে লাগল। আসার আগে নিজের পোশাকটা বার বার পাল্টেছে সে। এই মহিলা তাদের কোম্পানীতে কিংবদ্বন্তির মত। তার আশ্চর্য চিরসবুজ যৌবন আর কঠোর পেশাদারী মনোভাব দুই ই কোম্পানীতে খুবই আলোচিত বিষয়। তার গুড লিস্টে থাকা মানে যেমন দ্রুত প্রমোশন তেমনি ব্যাড লিস্টে থাকা মানেও চাকরীর ডেড এন্ড। সামিন তাই কোম্পানীর বর্তমান অবস্থান, স্টকমার্কেটে পারফরম্যান্স ইত্যাদি নিয়ে হালকা পড়াশোনা করে এসেছে। উদ্দেশ্য কয়েকটা বুদ্ধিদীপ্ত মন্তব্য করে যদি ব্যাড লিস্ট থেকে নাম কাটানো যায়।
দরজা খুলে গেল। পৌঢ়া একজন মহিলা ভাবলেশহীন চোখে সামিনের দিকে তাকিয়ে থাকল। পরিচারিকা হবে হয়ত। ড্রয়িং রুমে বসে ছিলেন ম্যাডাম। তাকে দেখে তার কোন মুখের ভাবের পরিবর্তন হল না।
"এসেছো, আচ্ছা বস, গেট ইওরসেলফ কমফর্টেবল"
"আমি কি একটু আগে চলে এসেছি? অন্যদের দেখছি না"
আফসানা অন্যমনস্কভাবে জবাব দিলেন
"পসিবলি, তবে চলে আসবে, আচ্ছা আপাতত কি খাবে"
"না ম্যাডাম কিছু লাগবে না"
আফসানা জবাব না দিয়ে উঠে গেলেন। কিছুক্ষন পর ফিরে এলেন একটা ট্রেতে জুস, সফট ড্রিংকস ইত্যাদি নিয়ে। আফসানা এলকোহল খান না। মুটিয়ে যাবার ভয়ে।
"সো সামিন কোম্পানী সম্পর্কে তোমার চিন্তাভাবনা কি?"
হোমওয়ার্ক করে আসা বিষয় গুলো বলতে পারবে ভেবে খুশি হয়ে উঠল সামিন।
"এই কোয়ার্টারে আমাদের রেভিনিউ...............।"
আফসানা বাধা দিয়ে বললেন
"তোমাকে তো আমার কোম্পানীতে সাকসেসের লেসন দেবার কথা"
"জ্বী ম্যাডাম"
আফসানার মুখ থেকে কঠিন ভাবটা হঠাৎ চলে গেল। সামিন আবিস্কার করল মহিলা আসলেই অসাধারন সুন্দরী।
"ওকে, আই উইল বি অন টপ, ইফ ইউ ক্যান্ট গিভ মি থ্রি অর্গাজমস ইন আ রো ইউ উইল নেভার গেট এনি রেইজ হোয়াটসোএভার"
এসেট ডেভেলপমেন্টসর হাইরেজের গায়ে বাতাস আছড়ে পরে ভেঙ্গে যায়। এই ইটের গাথুনিতে মানুষ এবং মানুষের মনের রক্ত সুড়কির মত এটে থাকে। বাতাস তার অহংকার ছেড়ে কুর্ণিশ করে এই আকাশছোয়া কাঠামো কে, আর এই কাঠামোর ক্ষুধাকে। আকাশের কাছাকাছি একটি জানালার পাশের বাতাস কেঁপে উঠে একটি তীব্র শীৎকারে
"ইয়েস কামরান ইয়েস"