১।
ইদানিং সকালটা কড়া রোদে জ্বলজ্বল করে,সকালের রোদটা আজকে একটু বেশি মনে হচ্ছে রেজা সাহেবের,কাঠের হাতলের ছাতাটার কাল কাপড়ের ছানিতে বেশ বড়সড় একটা ফুটো দিয়ে রোদ মাথার তালু ছুঁয়ে দিচ্ছে । ছাতার ফুটোটা জাহানারা বেগমকে সেলাই করতে বলেছিলেন রেজা সাহেব,কিন্তু তিনি তা করেন নি ।উল্টো বলেছেন-“এসব ছেঁড়া ফাটা জিনিস পত্তর ব্যবহারের দিন শেষ,ছেলে এখন ভাল চাকরি করে,এবার চিঠি পাঠালে নতুন একটা কেনার টাকা দিতে বলব।এ-জমানায় কেউ চিঠি লেখে?স্কাইপে দুনিয়াদারী সব দেখা যায়,পাশের বাড়ির ফারজানা খাতুনের ছেলে বিদেশ থেকে ল্যাপ্টপ পাঠিয়েছে,ইন্টারনেট কানেকশান আছে ।কত সুন্দর দেখা হয় ছেলেটার সাথে,আর আমাদের ছেলেটা লেখে চিঠি,এবার চিঠির জবাবই দিবো না।” জাহানারা বেগমের কথাগুলো ভাবতে ভাবতে রেজা সাহেব হেঁটে চলেন ডাকঘরের দিকে,ছেলের চিঠি আনতে ।
২।
-চিঠি এনেছেন?-হুম।-কই?দেনতো পড়ি ।-নাও।
আম্মা,কেমন আছেন?ভাল থাকতেই হবে,খারাপ থাকা চলবে না।এই যে এখন হাসছেন,এভাবেই হাসবেন।আমি এখন এমন জায়গায় চাকরি পেয়েছি যেখানে ছুটিই দেয় না,কোন ভাবেই যোগাযোগের সুযোগ নেই।তবুও চুরি করে চিঠি লিখি।আশা করি রাগ করবেন না,দোয়া করবেন ।আস-সালামু-আলাইকুম।।
-এই ৩-৪ লাইন চিঠির জন্যেই একমাস অপেক্ষা করি! এবার আর জবাব দিবো না।আর শুনেন,এবার থেকে আপনি আর চিঠি আনতেও যাবেন না ।
রেজা সাহেব একটু হাসেন ।সেই হাসির অর্থ আবিষ্কার করা আর সদ্য নিখোঁজ হওয়া মালেশিয়ান বিমানের ঠিকানা আবিষ্কার করা একই পর্যায়ে বললে অত্যুক্তি হবে না ।জাহানারা বেগম যদিও বলেছেন আর চিঠির জবাব দেবেন না তারপরও তিনি ঝটপট চিঠির জবাব লিখে ফেললেন।এবং সাথে সাথেই রেজা সাহেবকে পাঠালেন চিঠি পাঠিয়ে দিতে।
৩।
রাত ৩টা ,জাহানার বেগম তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করছেন । রেজা সাহেব তাঁর ছেলের টেবিলের পাশে চেয়ারে বসে কি যেন লিখছেন,তাঁর চোখ বেয়ে অশ্রু নামছে । অশ্রু আর সমুদ্রের জল নোনা,আর এজলের কোন শেষ কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ পাক নির্ধারণ করে রাখেন নি হয়ত।নোনা জলের কি দারুন মিল!কি লিখছেন রেজা সাহেব?
আম্মা,একমাস ধরে আমার চিঠির অপেক্ষায় থাকেন আমি জানি,আমি কম লখি তাই কষ্ট পান তাও জানি,কিন্তু কী করবো বলেন?আগেও অনেকবার বলেছি-আমি এখন এমন জায়গায় চাকরি পেয়েছি যেখানে ছুটিই দেয় না,কোন ভাবেই যোগাযোগের সুযোগ নেই।তবুও চুরি করে চিঠি লিখি। প্লিজ,রাগ করবেন না ।
মুয়াজ্জিনের সুরেলী কন্ঠ কানে আলতো আঘাত করছে রেজা সাহেবকে,তিনি চিঠিটা পাঞ্জাবীর পকেটে নিয়ে মসজিদের দিকে পা বাড়ালেন ।নামাজ পড়ে আবার যে ডাক ঘর তাঁর গন্তব্য,নিজের ঠিকানায় পোষ্ট করবেন তিনি শেষরাতে লেখা সেই চিঠি ।
ইকরাম
-উৎসর্গঃমুন্না ভাইয়াকে