(১ম পর্বের পর)
বাসা থেকে বের হয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম আজ তাকে গোলাপ দিব। পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করে একবার দেখে নিলাম। ২০০ টাকার মত আছে। হয়ে যাবে ফুল কেনা। খোঁজ করতেই বাসার আশেপাশেই একটা ফুলের দোকান পেয়ে গেলাম। দেখে দেখে পাঁচটা গোলাপ পছন্দ করলাম। বললাম সুন্দর করে বেঁধে দিতে। দোকানদার বলল,
-"মামা, খালি গোলাপ লইবেন? লগে কয়েকটা জিপ্সি বাইন্দা দেই? সুন্দর লাগব।"
-"জিপ্সি ওটা আবার কি? উহু! দরকার নেই।"
-"আরে মামা লইয়া যান। আপনার লিগা ফ্রিই দিতাছি।"
শালা! কি ভাবে কি আমাকে? কিপটামি স্বভাব আছে আমার সেটা আমিও মানি। তাই বলে কপালে তো বড় করে 'কিপটা' শব্দটি লেখা নেই, তাই না? তবে যাই হোক, ফ্রি যেহেতু দিতে চাচ্ছে নিয়ে নিই।
-"ওকে। দাও।"
সুন্দর করে গোলাপগুলো বেধে দিয়ে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-"মামা লন। ১৫০ টাকা হইছে।"
-"উহ!!"
না চাইতেও শব্দটা বের হয়ে গেল মুখ থেকে। দাম শুনে আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা আমার।
-"৫টা গোলাপ ১৫০ টাকা?"
-"জ্বি মামা। এমনিতে একেকটা ৪০ টাকা করে বেচি। আপনার লিগা ৩০ টাকাই রাখছি।"
কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলাম না। একটা গোলাপ ৩০ টাকা! ফুল দেয়ার চাইতে তো মোবাইলের স্ক্র্যাচ কার্ড দেয়াই ভাল।
তবে কি আর করা। কিনে ফেলেছি। টাকা তো দিতেই হবে। বিরক্তির সাথেই টাকাটা দিলাম।
ফুলের দোকান থেকে বের হয়ে আসতেই মনে পড়ল আজ তো ও আমায় একবারও ফোন দেয়নি। ফোনটা বের করে নিজেই কল করলাম। সেখানেও বিরক্তি। সুন্দর এক মেয়েলি গলায় কেউ একজন বলে চলেছেন, "আপনার সিমটি বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন না করে থাকলে......"
ধুর! সকাল থেকেই খালি একের পর এক ঝামেলা। মিষ্টি সুরের পনপন শব্দ শেষ হতেই ট্রিং ট্রিং রিং হবার শব্দ পেলাম। অনেক্ষণ রিং হল। কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ ধরল না। আবার দিলাম। এবারেও ধরল না। বুঝাই যাচ্ছে সে কতটা রাগ করেছে। রাগ ভাঙানো দরকার।
আজিব! কি উলটা পালটা ভাবছি। রাগ ভাঙানোর জন্যই তো ফুল কিনলাম। কিন্তু এখন ফোন না ধরলে জানব কি করে সে কথায়? ফুলগুলোই বা দিব কি করে?
ওর ক্যাম্পাসে চলে যাব কি? মিরপুর থেকে ঢাকা ভার্সিটি। দুরত্ব কম নয়। কিন্তু কি আর করা? ফুলগুলো দিবই বা কিভাবে যদি তার সাথে দেখা না হয়।
কাল ক্ষেপণ না করে উঠে গেলাম একটা বাসে। জ্যাম ঠেলে ভার্সিটি ক্যাম্পাসে পৌছতে পৌছতে বেলা একটা। ওর এখন ক্লাস চলছে। শেষ হবে পৌনে দুইটার দিকে। হাতে এখনও প্রায় ৪৫ মিনিট সময় আছে। কি করব এখন? এই কাঠ ফাটা রোদে দাঁড়িয়ে থাকব কোথায়? তাও আবার হাতে গোলাপ নিয়ে। একটু এগিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে ঢুকলাম। ছায়া দেখে বসে পড়লাম এক জায়গায়। নাহ! মন্দ না জায়গাটা। হাল্কা বাতাসও আছে। ভালই কেটে যাবে সময়টা। হাতের গোলাপটা পাশে রেখে ফোনটা একটু ঘাটাঘাটি করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ এভাবেই কাটল। হঠাত পাশে খসখস একটা আওয়াজ পেতেই ফিরে তাকালাম।
ওমা! একি! আমার গোলাপগুলো একটা কুকুর মুখে তুলে নিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে। ঘটনা দ্রুততায় আমি হতবিহবল হয়ে পড়লাম। ঠিক কি করব বুঝতে পারছিলাম না। কুকুরের পেছনে দৌড়াব? নাহ। সেটা ঠিক হবে না। লোকে হাসবে। তাছাড়া কুকুরের মুখের গোলাপ হাতে তুলে নিবই বা কি করে।
ধুর শালা! দিনটাই কুফা আজকে। না জানি একটু পর ওর সাথে দেখা হলে কি হবে? এমনিতেই রেগে বোম হয়ে আছে। আবার যদি উলটা পালটা কিছু হয় তাহলে আমার ১ম প্রেমের এখানেই ইতি। এখন আল্লাহ আল্লাহ করা ছাড়া কোন উপায় নেই। তাই করতে লাগলাম।
সময় ১ বেজে ২৫ মিনিট। আরোও প্রায় ২০ মিনিটের অপেক্ষা।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৫৪