ব্যাক্তিগতভাবে আমি এই জিনিষটির চরম বিরোধিতা করি। তিক্ত অভিজ্ঞতাও রয়েছে ব্যাপারটি ঘিরে এবং এজন্যই এই পোস্ট।।
এই ব্যাপারটির সাথে অনেকেই বুঝে, না- বুঝে জড়িয়ে পড়ে। তবে যারাই জড়ায়, তারা কিন্তু খুব সহজে বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলাফল- 'সময়ের আগে মৃত্যু'
আমি সিগারট তথা ধূমপানের কথা বলছি। আসুন প্রথমে যেনে নেয়া যাক ধূমপান সংক্রান্ত কিছু ব্যাপার স্যাপার-
ধূমপানের কিছু ভয়াবহ তথ্য-
* বিশ্বে প্রায় ১.১ বিলিয়ন ধূমপায়ী। যদি বর্তমান এই প্রবণতা বজায় থাকে তবে ২০২৫ এর মধ্যে এর সংখ্যা ১.৬ বিলিয়নে পৌঁছে যাবে।
* চীন, ৩০০ মিলিয়ন ধূমপায়ীদের দেশ যারা ১ বছরে ১.৭ ট্রিলিয়ন সিগারেট খেয়ে থাকে যা প্রতি ১ মিনিটে ৩ মিলিয়ন সিগারেট খাওয়ার সমান।
* সারা বিশ্বে প্রায় প্রতি ১ মিনিটে ১০ বিলিয়ন সিগারেট বিক্রি হয়ে থাকে।
*৪/৫ টা সিগারেটে যে পরিমান নিকোটিন থাকে, তা একজন প্রাপ্ত বয়স্ককে মেরে ফেলার পক্ষে যথেষ্ট।
* সিগারেটের ধোঁয়ায় 'হাইড্রোজেন- সায়ানাইড' নামক বিষাক্ত একটি বায়ো- প্রোডাক্ট রয়েছে যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গণহত্যার রাসায়নিক প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছিলো।
* সারা বিশ্বের প্রায় ৮০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ শিশু প্রতিদিন জড়িয়ে পড়ছে সিগারেটের নেশায়।
* ধূমপানের কারনে সারা বিশ্বে, প্রতি ৮ সেকেন্ডে একজন লোক মারা যায়।
* ধূমপায়ীর দিক থেকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান ১৬ তম।
তথ্যগুলো অবাক করার মতো। তবে চরম সত্য।
ধূমপানে জড়িয়ে পড়ার পেছনে বেশীরভাগ মানুষেরই কোন না কোন কারন থাকে। এসব কারনগুলো পরবর্তীতে ভুলে গেলেও ধূমপানের নেশা থেকে কিন্তু পরবর্তীতে তারা আর বেরিয়ে আসতে পারে না। অনেকেই চেষ্টা করে বেরিয়ে আসতে। তবে একবার ধূমপানের নেশায় জড়িয়ে পরলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন একটা কাজ। তারা হাল ছেড়ে দেয়। একসময় অপেক্ষা করতে থাকে তার নিজেরই ক্রয়কৃত মৃত্যুর জন্য।
তবে হ্যা, আজকের এই পোস্ট হতাশা বা হাল ছেড়ে দেয়ার পোস্ট নয়। এই পোস্টে আলোচনা করা হবে, নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে কিভাবে বেঁচে আসা যায়। আমি জানি, অনেক ধূমপায়ী আছেন যারা এই ধূমপানের অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে চান। তারা বুঝতে পারেন, তাদের জীবনের মূল্য। সঠিক কিছু নিয়ম না জানার কারনে তারা হয়তো সম্পূর্ণরূপে ধূমপান ছাড়তে পারেন না। মনে রাখবেন, এখনও সময় আছে- ঘুরে দাঁড়ান। আপনি যদি একজন ধূমপায়ী হয়ে থাকেন যিনি আজ, এই মুহূর্ত থেকে ধূমপান ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। এখানে এরকম কিছু পদ্ধতির কথা আলোচনা করা হয়েছে যা সত্যি সত্যি আপনাকে একজন 'স্মোকার' থেকে 'নন- স্মোকার' বানিয়ে ছাড়বে। তাহলে আর দেরি না করে চলুন যেনে নেয়া যাক জীবন বদলে দেবার সেই ধাপগুলো-
১) Deep Breathing বা গভীরভাবে শ্বাস নেয়ার প্রক্রিয়া-
সবচেয়ে শক্তিশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি টেকনিক। প্রতিবার যখন আপনার সিগারেট খাওয়ার প্রয়োজন পড়বে, নিম্নোক্ত কাজটি তিনবার করবেন-
* গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে ফুসফুসকে যতটুক সম্ভব বায়ু দ্বারা পূর্ণ করুন। তারপর ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। ঠোঁট কিছুটা বন্ধ রেখেই শ্বাস ছাড়ুন যাতে তা আস্তে আস্তে বের হতে পারে। যখন আপনি নিঃশ্বাস ছাড়বেন, চোখগুলো বন্ধ রাখুন এবং আপনার চিবুক বা থুতনিকে ক্রমশ বুকের দিকে নামিয়ে আনুন।
দৃঢ় সংকল্পের সাথে ভাবুন, সিগারেট খাওয়ার উত্তেজনা ধীরে ধীরে আপনার দেহ থেকে সরে যাচ্ছে।
এতি একটি প্রাচীন 'yoga' টেকনিক। খুবই শক্তিশালী এবং আচ্ছন্নকারী। এই পদ্ধতি ব্যাবহার করে আপনি যেকোনো ধরনের মানসিক চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন। সিগারেট থেকে মুক্তি পাবার জন্য প্রথম কয়েকদিন, এই পদ্ধতিটা আপনার সবচেয়ে মূল্যবান অস্ত্র হিসেবে কাজ করবে।
২) Taking Fluids বা তরল গ্রহন-
প্রথম কয়েকদিন মাত্রাতিরিক্তভাবে পানি পান করুন। অতিরিক্ত পানি পানের কারনে আপনার শরীরের ভেতর হতে 'নিকোটিন' এবং অন্যান্য যাবতীয় বিষাক্ত বস্তু তরলাকারে বেরিয়ে আসবে।
৩) Stay away from Coffe,Sugar, Alcohol বা মদ, চিনি এবং কফি থেকে দূরে থাকুন-
প্রথম সপ্তাহে যতটুক সম্ভব চিনি, কফি, চা অথবা মদ- এ জাতীয় জিনিসগুলো থেকে দূরে থাকুন। চর্বি জাতীয় খাবারগুলো থেকেও দূরে থাকার চেষ্টা করুন। আপেল, গাজর এ জাতীয় ফলগুলো বেশী করে খেতে পারেন।
৪) Taking An Oral Substitute বা মৌখিক বিকল্প গ্রহন-
মুখকে ব্যাস্ত রাখার জন্য সাবস্টিটিউট হিসেবে চুইং-গাম, দারুচিনি বা আর্টিফিশিয়াল সিগারেট ব্যাবহার করতে পারেন। একটি জরিপে দেখা গেছে, ২৫ ভাগ ধূমপায়ী লোক এই আইডিয়াটিকে সমর্থন করেছে। প্রথম সপ্তাহ কষ্ট করে এভাবে চালাতে থাকলে পরের সপ্তাহেই আপনি নিজে বুঝতে পারবেন, ধূমপান- খুব জরুরী কিছু না।
৫) Get Exercising বা ব্যায়াম-
জিম জয়েন করুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। স্টিম বাথ নিন। বেশ লম্বা সময় ধরে জগিং করুন।
৬) Pamper Yourself / নিজের ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দিন-
yoga করা শুরু করুন। লম্বা সময় ধরে গোসল করুন। নতুন কোন শখে নিজেকে জড়িয়ে ফেলুন।
৭) Ask For Support / সহায়তা চেয়ে নিন-
বন্ধু, সহকর্মীদের এবং পরিবারের সদস্যদের কাছে সহায়তা চান। তাদের সহনশীলতা চান। তাদেরকে জানিয়ে দিন যে আপনি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন। এজন্য হয়তো প্রথম কিছুদিন আপনার মেজাজ খিটখিটে বা রাগান্বিত থাকবে তবে। তাদেরকে সেটা আগে থেকেই জানিয়ে রাখুন। আপনি যদি আপনার কাছের মানুষদের সাপোর্ট না চান তাহলে তারা এ ব্যাপারে তেমন মাথা ঘামাবে না। একবার চেয়ে দেখুন, তারা অবশ্যই আপনাকে সাহায্য করবে। আপনি তখন বুঝতে পারবেন- এর শক্তি কতখানি।
বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের আপনার সামনে ধূমপান করতে না করুন। অনুরোধ করতে ভয় পাবেন না। এটা যে আপনার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আপনি পরে বুঝতে পারবেন।
৮) Destroy All Your Cigarettes / আপনার সিগারেটগুলো নষ্ট করে ফেলুন-
ছেড়ে দেবার পর আপনার ঘরে বা আলমারিতে, বা ড্রয়ারে রাখা বাকি সিগারেটগুলো দ্রুত নষ্ট করে ফেলুন। পানিতে ভিজিয়ে নষ্ট করুন যেনো এগুলো কোনভাবেই খাবার মতো অবস্থায় না থাকে।
৯) Write It Down / নন- স্মোকার সম্পর্কে লিখুন-
নন- স্মোকার বা ধূমপান থেকে বিরত থাকার ১০ টি ভালো দিক সম্পর্কে লিখুন। তারপর, ধূমপানের ১০ টি খারাপ দিক সম্পর্কে লিখুন।
১০) Dont Pretend / জাহির করবেন না-
এরকম কোন মনোভাব জাহির করবেন না যে, ধূমপান কোন একসময় বেশ উপভোগ্য একটা জিনিষ ছিলো আপনার জন্য। মোট কথা, ধূমপানের ব্যাপারে কোন কথাকেই মনে স্থান দেয়া যাবে না।
১১) Affirm Yourself / নিজের ইচ্ছাকে দৃঢ় করুন-
দিনে কয়েকবার, নিজের মনে কথাটা বিড়বিড় করুন যে- 'আমি নন- স্মোকার'।
ধূমপান ছাড়তে চাচ্ছেন, এরকম ব্যাক্তিদের বেশ বড় একটা অংশ ধূমপান ছেড়ে দেবার প্রথম কয়েকদিনেও নিজেদেরকে ধূমপায়ী বা স্মোকার ভাবেন। এজন্য, নির্জন অবস্থায় মনে মনে 'আমি নন- স্মোকার'- এই কথাটি যদি বারবার উচ্চারন করতে থাকেন তাহলে এই কথাটি আপনার নিজের প্রতি- 'স্মোকার' ধারনাটিকে পরিবর্তন করে দিতে সক্ষম। যদিও এই পদ্ধতিটি আপনার কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে তবে এটি একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি।
১২) Holding Out / ধরে রাখুন এই আত্মবিশ্বাস-
প্রথম কয়েক সপ্তাহ এই জিনিসগুলো মেনে চলতে পারলে ধূমপান করার ইচ্ছা বাঁ প্রবনতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। তবে একটা কথা প্রতি মুহূর্তে মারাত্মকভাবে মনে রাখতে হবে যে, হঠাৎ করেই আপনার মধ্যে সিগারেট খাওয়ার বাসনা জেগে উঠতে পারে। হয়তো আপনি কোন কারনে চিন্তিত, দ্বিধাগ্রস্ত, কোথাও ঘুরতে গেছেন বা পার্টিতে গেছেন, আপনার মনে হবে, "একটা সিগারেটই তো, ব্যাপার না"- এই ইচ্ছাটা আপনার মনে হঠাৎ করেই জেগে উঠবে এবং তা খুবই অপ্রত্যাশিতভাবে। আপনি যদি তখন সেটার প্রতিরোধ করতে না পারেন তাহলে এই একটি মাত্র সিগারেটই আপনাকে নিয়ে যাবে আপনার পুরানো পরিচয়ে।
এই ধাপগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন। আপনি অবশ্যই ধূমপানের মরণ ছোবল থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন। আরও কিছু উপায় আছে ধূমপান থেকে পরিত্রান পাবার জন্য তবে, এগুলো বেসিক। এগুলো দিয়েই শুরু করতে পারেন।
-সুত্রঃ quitsmoking
শেষ কথা-
একটু চিন্তা করলে আপনিই বুঝতে পারবেন যে, ধূমপান খুব জরুরী কিছু না। এটা সম্পুর্ন আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। মানুষ ইচ্ছা করলে পারেনা, এমন কোন জিনিষ নেই।
অদম্য ইচ্ছাশক্তি মানুষকে সবসময়ই তার লক্ষে পৌঁছাতে সহায়তা করেছে। আপনাকেও করবে।
মনে রাখবেন, আপনি যদি ধূমপান ত্যাগ করতে পারেন তাহলে আপনি বেশীদিন বাঁচার আশা করতে পারবেন। হার্ট- অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্যান্সার এগুলো আপনাকে খুব সহজে আক্রমন করতে পারবে না। সুতরাং, সুস্থ সুন্দর জীবন কামনা করুন।
পরিবারের কথা চিন্তা করে, সময় থাকতে স্বেচ্ছায় নিজের মৃত্যুকে ক্রয় করা থেকে বিরত থাকুন। হতাশ হবেন না এবং আশা ছাড়বেন না।
"Hope is not a dream but a way of making dreams become reality"
---------------------------------------------------------------
বিঃদ্রঃ- যারা 'স্মোকার' তারা হয়তো আমার এই পোস্ট দেখে আমাকে মনের মতো গালি দিচ্ছেন। আমি তাতে কিছু মনে করবো না কারন এটাই স্বাভাবিক। তবে আমি শুধু আপনাদের একটি পথ দেখানোর চেষ্টা করছি যে পথ, প্রচলিত ধোঁয়াটে পথের চেয়ে অনেক পরিষ্কার। জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে এই পোস্ট হয়তো আপনাদের কাজে আসবে আশা করি। জীবনের মূল্য, কোন না কোন সময় সবার কাছেই ধরা দেয়, দেবে। ধুমপানমুক্ত দেশ গড়ার আশা রেখেই শেষ হলো পোস্ট--------