নিরামিষ নামক এই অখাদ্য থেকে কবে মুক্তি পাবো আমি? স্বাস্থ্য তেমন একটা খারাপ না। রোগ- বালাইও আল্লাহ্র রহমতে তেমন একটা হয় না। তারপরও, ডাক্তারের কঠিন নির্দেশ, তাই না মেনে উপায় নেই। বলা যায়, বাধ্য হয়েই নিরুপায়।
খাওয়া নিয়ে আমার অনেক ঝামেলা হয়। মনমতো না হলে খাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। মাঝে মাঝে মেজাজ খুব খারাপ হয়ে যায় খাওয়া- দাওয়া নিয়ে। মাছ খেতে তেমন একটা ভালো লাগে না, তাই যেদিন মাছ রান্না করা হয় সেদিন আব্বা- আম্মার বকুনির তোয়াক্কা না করেই বাইরে থেকে ‘নান্না’ (পুরান ঢাকার ফেমাস বিরিয়ানী) মেরে আসি। ভোজন রসিক হলে যা হয় আরকি। ভালো খাবার ছাড়া মুখে সয় না কিছু।
সেদিন রাতে যথারীতি খেতে বসলাম। পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা। খাবার প্লেটে চোখ পরতেই মেজাজ তিরিক্ষে হয়ে গেলো। প্লেটের এক কোনায় বেশ অনেকখানি জায়গা নিয়ে আরাম করছে আমার চিরশত্রু- ‘নিরামিষ’ (ভিতরে হাজার বিচি সম্বলিত)।
সাথে রুই মাছ ফ্রাই, ঢেঁড়স ভাজি, আর আলু ভর্তা। আমার তখন কেনো জানি নিজেকে জেলখানার কয়েদি মনে হচ্ছিলো। যদিও আমার জানা মতে, ঢাকার জেলখানাগুলোতে এসব খাবার দেয়ার প্রশ্নই উঠে না তারপরও, মনে হওয়া থেকে কে ঠেকাবে? খাবো না বলে মনস্থির করলাম। এসব হাবিজাবি দিয়ে খাওয়া যায় নাকি? দেখেই আমার বমি আসছিলো।
উঠে দাঁড়ালাম। আম্মা প্রচণ্ড চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিলেন। বললেন, খাবারের সামনে থেকে এভাবে উঠে যাওয়া ঠিক না, গুনাহ হবে, ভাতগুলো অভিশাপ দিবে- আরও অনেক কিছু।
কথাগুলো গায়ে মাখলাম না। এটা আমার জন্য নতুন কিছু না। মাঝে মাঝেই আমি এমন করি। যেদিন মনমতো তরকারী থাকে না, সেদিন রাগ করে আর খাই- ই না। আমি আমার রুমে চলে এলাম। আম্মা ডিম ভাজতে রান্নাঘরে ঢুকলেন।
PC- টা অন করাই ছিলো। ব্রাউজিং শুরু করলাম পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়ে। দেশী- বিদেশী কিছু ভালো খাবারের ছবি দেখেই সময়টা কাটাবো ঠিক করলাম। চোখের ক্ষুধা কিছুটা মিটবে।
প্রায় মিনিট খানেক পর একটা ‘ফটোগ্রাফে’ হঠাৎ চোখটা আঁটকে গেলো।
"১৯৯৩ সালে সুদানে দুর্ভিক্ষের সময় তোলা একটি ছবি। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত একটি মেয়ে শিশু, খাবারের খোঁজে একটু দূরে অবস্থিত খাদ্য- গুদামের দিকে যাবার চেষ্টা করছে। কঙ্কালসার দেহটিতে একফোঁটা শক্তি নেই চলার মতো। তাই সে হাল ছেড়ে দিয়ে আসন্ন মৃত্যুর অপেক্ষা করছে। একটু দূরে দাড়িয়ে এক শকুন বাচ্চাটির উপর নজর রাখছে। সে অপেক্ষা করছে বাচ্চাটির মৃত্যুর জন্য, কখন বাচ্চাটি মারা যাবে আর কখন সে তাকে দিয়ে নিজের ক্ষুধা মেটাবে"।
ছবিটি তুলেছেন- ‘কেভিন কার্টার’।
একজন দক্ষিন- আফ্রিকান ফটোজার্নালিস্ট। কার্টারের দায়িত্ব ছিলো, ছবি তোলা এবং সেখান থেকে চলে আসা। ‘প্রফেশনালিজম’ এর খাতিরে মৃত্যুপথযাত্রী এই ছোট্ট বাচ্চাটির ছবি তুলে সে দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করেন। বাচ্চাটির শেষ পরিনতি কি হয়েছিলো তা আর কখনও জানা যায়নি। ছবিটির জন্য কেভিন ‘পুলিৎজার’ পুরষ্কার পান তবে, বিশেষভাবে সমালোচিত হন সেই বাচ্চাটিকে সাহায্য করতে ব্যার্থ হওয়ায়।
এই ছবিটি তোলার ঠিক ৩ মাস পরেই কেভিন মারা যান। অনেকের মতে, এই ছবিটি তোলার পর পরই তিনি নাকি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরেন। বাচ্চাটিকে সাহায্য করতে না পারার অনুশোচনায় দগ্ধ হয়েই নাকি শেষমেষ আত্মহত্যা করেন। তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ৩৩ বছর। মৃত্যুর পর তার লেখা একটি ডায়েরি পাওয়া যায়। ডায়েরীতে কেভিনের যে নোটটি পাওয়া যায় তা ছিলো এরকম-
"Dear God, i promise i will never waste my food no matter how bad it can taste and how full i may be. I pray that He will protect this little child, guide and deliver her away from her misery. I pray that we will be more sensative towards the world around us and not be blinded by our own selfish nature and interests. I hope this picture will always serve as a reminder to us that how fortunate we are and that we must never ever take things for granted."
এছাড়া আরও একটি লেখা পাওয়া যায়, তা হলো-
“I am depressed ... without phone ... money for rent ... money for child support ... money for debts ... money!!! ... I am haunted by the vivid memories of killings and corpses and anger and pain ... of starving or wounded children, of trigger-happy madmen, often police, of killer executioners ... I have gone to join Ken, if I am that lucky”
-পুরো ব্যাপারটা পড়ার পর চোখ ফেটে পানি বেরিয়ে এলো। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে খাবার ঘরে এসে চুপচাপ খাওয়া শুরু করে দিলাম। আম্মা ডিম ভাজা নিয়ে পাশে দাড়িয়ে রইলেন আর খানিকটা অবাক ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।
................................................ ................................................
(উপরে উল্লেখিত ঘটনাটি ৯৯% সত্য)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:২৩