somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"টয় স্টোরি"- খেলনার আড়ালে মানুষের গল্প !!!

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
টয় স্টোরি (TOY STORY)-

ছোটবেলা থেকেই 'খেলনা' জিনিসটা- আমার অতি প্রিয় একটা জিনিষ ছিলো। (এখনও...... ;))ছোটবেলায় কম-বেশি আমরা সবাই বিভিন্নরকম খেলনা দিয়ে খেলেছি।
যেকোনো ধরনের খেলনার প্রতি তখন আমার বিশেষ একটা ঝোঁক ছিলো। কেনো জানি খেলনাগুলোকে অনেক আপন মনে হতো। মনে হতো, এরাই আমার আসল বন্ধু- (বাচ্চাকালের বাচ্চাসুলভ চিন্তা- ভাবনা... :P)
সে যাই হোক, ভেবে দেখুন যদি এমন হয়- আপনার খেলনাগুলো জীবিত! তাদের মধ্যেও প্রান আছে! যখন আপনি তাদের সামনে থাকেন না তখন তারা নিজেদের মধ্যে কথা- বার্তা বলে, হাঁটা চলা করে, আপনাকে নিয়ে সমালোচনাও করে- তবে কেমন হতো!!!
এরকম একটি ভাবনাকে কেন্দ্র করেই তৈরি করা হয়েছে অসাধারন একটি মুভি যার নাম- TOY STORY

মুভিটি তৈরি হয়েছে বাচ্চাদের কিছু খেলার পুতুল নিয়ে। তবে, মনে রাখতে হবে এটা- HOLLYWOOD. তাই নিছক 'পুতুল খেলার' ঘটনা ভাবা ঠিক হবেনা। খুব সাধারন একটা ঘটনা হলেও এর মধ্য দিয়ে আঁকা হয়েছে মানুষের ভিতরে লুকিয়ে থাকা হিংসার কথা, হিংসার কারনে ডেকে আনা বিপদের কথা, হতাশায় ভেঙ্গে না পরার কথা, বন্ধুত্ত্বের কথা, সম্মিলিত প্রচেষ্টার দ্বারা অসাধ্য সাধনের কথা, অকৃত্রিম ভালোবাসার কথা।

* এখন পর্যন্ত মুভিটার ৩ টা পার্ট বের হয়েছে।
১ম টি- ১৯৯৫ সালে
২য় টি- ১৯৯৯ সালে
৩য় টি- ২০১০ সালে
Steve Jobs- এর প্রখ্যাত স্টুডিও Pixar Animation- এ মুভিটি তৈরির কাজ সম্পন্ন করা হয় এবং ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্বে ছিলো Walt Disney Picture.
মুভির বিভিন্ন চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন- Tom Hanks, Tim Allen, Don Rickles এবং Jim Varney সহ আরও অনেকে।
ডিরেক্টরঃ Lee Unkrich
রাইটারঃ John Lasseter, Andrew Stanton, Lee Unkrich
মুভিটি রিলিজের পর অসংখ্য প্রশংসা পায় এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে 'অস্কারের' জন্যও মনোনীত হয়। জায়গা করে নেয় সর্বকালের সেরা টপ কিছু মুভির লিস্টে। ১ম, এবং ২য় পার্ট অস্কারের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পাওয়ার সাথে ছোটখাটো অনেক পুরষ্কারও জিতে নেয়। ৩য় পার্টটি, ২০১০ সালে জিতে নেয় সেরা অ্যানিমেটেড মুভির অস্কার।

* সংক্ষেপে 'টয় ষ্টোরির' ঘটনা-
অ্যান্ডি, ৬/৭ বছরের খেলনা- পাগল একটা বাচ্চা ছেলে। তার ঘরে রয়েছে অসংখ্য খেলনা। যখন ঘরে কোন মানুষ থাকেনা তখন এই খেলনাগুলো নিজেদের মধ্যে কথা বলা শুরু করে। এই খেলনাগুলোর লিডার 'উডি'

একটি কাউবয় পুতুল এবং অ্যান্ডির সবচেয়ে প্রিয় খেলনা। সকল কাজে খেলনার দলটাকে নেতৃত্ব দেয় 'উডি', সবাই তাকে খুব মানে এবং ভালবাসে।
এক সপ্তাহ পর, অ্যান্ডি এবং তার পরিবার তাদের পুরনো বাড়িটি ছেড়ে নতুন বাড়িতে চলে যাবে। পুরনো বাড়িতে অ্যান্ডির শেষ জন্মদিন পালনের আয়োজন করা হয়। ওদিকে, খেলনার দলটাও উত্তেজিত হতে থাকে এই ভেবে যে, জন্মদিনে অ্যান্ডি নতুন কি কি খেলনা গিফট পাবে, নতুন খেলনাগুলো কি তাদের বন্ধু হবে, নাকি শত্রু? এভাবে একসময় শেষ হয় তাদের প্রতীক্ষার পালা। অ্যান্ডির ঘরে আসে নতুন একটি খেলনা, যার নাম- 'বায'।

'বায' নতুন প্রজন্মের আদলে গড়া একটি 'স্পেস- রেঞ্জার', অর্থাৎ 'নভোচারী'।
গঠনগত দিক থেকেও সে কিছুটা শক্ত- সামর্থ্য এবং আকর্ষণীয়। শিশু অ্যান্ডি স্বাভাবিকভাবেই 'বায'- এর প্রেমে পরে যায় এবং দিনরাত তাকে নিয়েই ব্যাস্ত থাকে। কাউবয় 'উডির' দিকে তার আর নজর পড়েনা। নিজের স্মার্টনেস এবং আকর্ষণীয় ব্যাক্তিত্ব দিয়ে 'বায' জনপ্রিয় হয়ে পরে অন্যান্য খেলনাগুলোর কাছেও। 'বাযের' একটাই সমস্যা ছিলো- নিজেকে কখনও সে খেলনা মনে করতো না। ভাবতো সে সত্যিকারের কোনও 'নভোচারী'।
যাই হোক, এভাবেই 'বায' দখল করে নেয় 'উডির' জায়গা।

শুরু হয় হিংসা। 'উডি' তার নিজের জায়গা ফিরে পাবার জন্য আপ্রান চেষ্টা শুরু করে। একদিন দুর্ঘটনাবশত 'উডির' আঘাতে 'বায' জানালা দিয়ে পড়ে যায় পাশের বাড়িতে। যদিও এটা 'উডির' ইচ্ছাকৃত নয়। অন্যান্য খেলনারা 'উডির' এই কাজে তার উপর ভীষণ ক্ষেপে যায়। তারা 'উডিকে' ভুল বুঝতে শুরু করে। 'উডি' তাদেরকে বোঝাতে পারেনা যে, এটা সে ইচ্ছা করে করেনি।
পাশের সেই বাড়িটাতে অ্যান্ডির বয়সীই একটা ছেলে থাকতো- সিড। কিন্তু, সে অ্যান্ডির মতো শান্ত প্রকৃতির ছিলো না। সে ছিলো, প্রচণ্ডরকম দুষ্ট। খেলনাদের সাথে রুঢ় আচরণ করতো। হয় বোম দিয়ে ধ্বংস করে দিতো না হয় পুরিয়ে ফেলতো। মোট কথা, খেলনার উপর টর্চার করে সে এক ধরনের শান্তি পেতো। এটাই তার কাছে খেলা।
ওদিকে 'উডি' তখন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, যতো বিপদই হোক, সে ফিরিয়ে আনবে 'বাযকে'।
হিংসা কাজ করলেও 'উডি' প্রকৃতপক্ষে ছিলো, উদার প্রকৃতির। নিজের অনিচ্ছাকৃত ভুলের মাশুল দেয়ার জন্য বেরিয়ে পরে 'উডি'।
অনেক বাধা অতিক্রম করে পাশের বাড়িতে পৌঁছায় সে।
ঘটনাক্রমে সিডের হাতে চলে আসে 'বায'।
'বাযকে' বাঁচাতে গিয়ে 'উডিও' আটকা পরে যায় সিডের জালে। পরদিন সিড বিশাল এক 'রকেট-বোম' কিনে আনে। উদ্দেশ্য, 'বাযকে' এটার সাথে বেঁধে উড়িয়ে দেয়া হবে। ধ্বংস করে দেয়া হবে।

'উডি' মরিয়া হয়ে পরে 'বাযকে' বাঁচানোর জন্য। ওদিকে 'বায', ঘটনাক্রমে বুঝতে পারে যে, সে আসলে কোন নভোচারী নয়। নিছক একটি শিশুর খেলনা যা, প্ল্যাস্টিক দিয়ে তৈরি। হতাশায় ভেঙ্গে পরে সে। হাল ছেড়ে দিয়ে সে আসন্ন ধ্বংসের অপেক্ষ করতে থাকে।
অপরদিকে, 'উডি' তাকে বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকে 'বাযের' প্রতি অ্যান্ডির ভালবাসা। সে বলে, -একজন সত্যিকারের নভোচারীও অ্যান্ডিকে এরকম আনন্দ দিতে পারবে না যেরকম আনন্দ তুমি অ্যান্ডিকে দাও। আমরা খেলনা, আমরা জানি একটা বাচ্চার কাছে আমাদের মূল্য কতখানি।
এরপর 'উডি' নিজের ভুল স্বীকার করে নেয় এবং বলে যে, অ্যান্ডির সবচেয়ে প্রিয় খেলনা হিসেবে তার জায়গা 'বায' দখল করে নেয়াটা সে মেনে নিতে পারেনি, তাই সে এমন করেছে। তবে, এখন সে বুঝতে পারছে, বন্ধুত্বই আসল জিনিষ এবং, তাদের প্রতি অ্যান্ডির অকৃত্রিম ভালবাসা, যেটা তাদেরকে নিজের আসল পরিচয় খুজে পেতে সাহায্য করে। তারা অ্যান্ডির আদরের খেলনা, এটাই তাদের সবচেয়ে বড় পরিচয়।
'বায' ব্যাপারটা বুঝতে পারে। এরপর তারা দুজন মিলে অন্যান্য খেলনাদের সহায়তায় সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হয়। তবে, পালানোর আগে তারা সিডকে এমন শিক্ষা দিয়ে যায় যার ফলশ্রুতিতে সিড, এরপর থেকে খেলনা দেখলেই ভয় পায়।

* এই হলো 'টয় স্টোরির' ১ম পার্টের ঘটনা। পরের পার্টগুলোতে তারা দলবদ্ধভাবে আরও অনেক অ্যাডভেঞ্চার করে, মজা করে, যা না দেখলে বোঝানো সম্ভব নয়।
২য় পার্টের মূল বিষয়- কোন কারনে অ্যান্ডির খেলনাদের কাছ থেকে 'উডির' দূরে সরে যাওয়া এবং বন্ধুত্বের টানে, অ্যান্ডির টানে পুনরায় ফিরে আসা।
৩য় পার্টের মূল বিষয়- অ্যান্ডির বড় হয়ে যাওয়া এবং খেলনার জীবন থেকে ব্যাস্ত জীবনে প্রবেশ করা। তার ছোটবেলার অতি প্রিয় খেলনাগুলো এবং সবচেয়ে প্রিয় 'উডি', 'বায' এদের ছেড়ে দূরে চলে যাওয়া। তবে শেষমেষ অ্যান্ডি ঠিকই বুঝিয়ে দেয় যে তার সবচেয়ে পছন্দের খেলনাটি- "উডি"।

* খেলনা বিষয়ক একটা মুভি। খেলনার পুতুলদের দ্বারা যে কিভাবে মানুষের জীবনের কিছু স্পর্শকাতর এবং ইমোশনাল দিক তুলে ধরা যায়, এবং বাস্তব কিছু শিক্ষা দেয়া যায়, তা এই মুভিটি দেখলে যে কেউ বুঝতে পারবে। আমার অসম্ভবরকম প্রিয় একটা মুভি। ৩য় পার্টের শেষ মুহূর্তে চোখের জল আমি কোনভাবেই ধরে রাখতে পারিনি। নিজের সেই সময়টার কথা মনে পরে গেছে যেই সময়টা, কোনকিছুর বিনিময়েই আর ফেরত আসবে না। খেলনার জগতের প্রতি নিজের অকৃত্রিম ও অন্যরকম একটা ভালোবাসার কারনেই পোস্টটি দিলাম।
বেশ হিট এবং পপুলার একটা মুভি। অনেকেই দেখেছেন, যারা দেখেন নাই তাদের জন্য-
টরেন্ট ডাউনলোড লিংক (এখানে ১,২,৩ সবগুলাই পাওয়া যাবে)

পোস্ট উৎসর্গ- দুনিয়ার সকল খেলনাপ্রিয় মানুষদেরকে।
.............................................. :) .......................................
পোস্ট তৈরিতে মোট সময় লেগেছে- ৪ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট (ইনক্লুডিং- পানি খাওয়া, টয়লেট যাওয়া)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:১৩
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×