নামটির সাথে অনেকেই হয়তো পরিচিত। ডয়েল সাহেবের বিখ্যাত 'শার্লক হোমস' এর মতই এটিও একটি কাল্পনিক চরিত্র। ১৮০০ শতাব্দির শেষ দিকের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং অনুপ্রেরনা যোগানো কাল্পনিক একটি চরিত্র 'অ্যালান', যাকে সর্বকালের সেরা অ্যাডভেঞ্চারাস চরিত্রও ধরা হয়।
এর জনক 'স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড'।
'হ্যাগার্ড' সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। পৃথিবীর অন্যতম একজন সেরা অ্যাডভেঞ্চার লেখক তিনি। তার লেখা কাহিনীগুলো যারা পড়েছেন তারা ভালো করেই জানেন, কি পরিমান টগবগে উত্তেজনা থাকে তার লেখায়। সাহিত্যে 'লস্ট ওয়ার্ল্ড' সেক্টরটির জন্মদাতাও কিন্তু হ্যাগার্ড। তিনি মূলত একজন ইংলিশ লেখক। ১৮৫৬ সালের ২২ জুন ইংল্যান্ডের নরফোকে তার জন্ম। জীবনের খুব বড় একটা সময় তিনি আফ্রিকায় কাটান। তাই আফ্রিকার প্রতি তার এক ধরনের গভীর ভালবাসা তৈরি হয়। সে কারনেই তার বেশিরভাগ লেখাগুলো আফ্রিকা কেন্দ্রিক।
'অ্যালান কোয়াটারমেইন'- তার তৈরি একটি অমর চরিত্র। 'শার্লক হোমসকে' যেমন পাঠকরা একসময় ধরে নিয়েছিলো সত্যিকার রক্ত- মাংশের মানুষ, ঠিক তেমনটি ঘটেছিলো অ্যালানের ক্ষেত্রেও।
পাঠকদের বিরাট একটা দল, ধরে নিয়েছিলো 'অ্যালান কোয়াটারমেইন' নামে সত্যিই কেউ আছে অথবা কখনও ছিলো।
অ্যালান কোয়াটারমেইন (Allan Quatermain)-
কোয়াটারমেইন চরিত্রটি মূলত একটি শিকারি চরিত্র, যার জন্ম ইংল্যান্ডে। তবে, জীবনের প্রায় পুরো সময়টাই তিনি কাটিয়েছেন দক্ষিন আফ্রিকার বর্বর জংলীদের সাথে। ইংল্যান্ড শহরের তথাকথিত ভদ্র সমাজ, সুশীল ব্যাক্তিবর্গ তার ভালো লাগে না, যাদের সকল কাজের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের কৃত্তিমতা। তাই, এক সম্ভ্রান্ত ইংরেজ পরিবারে জন্ম নিয়েও তিনি দক্ষিন আফ্রিকার অন্ধকারাচ্ছন্ন সভ্যতাকে বেঁছে নেন জীবন কাটানোর জন্য। সখ্যতা গড়ে তোলেন সেই বর্বরদেরকে সাথে।
কালো জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তার দুই ভাই ও তার মা একসাথে মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনাক্রমে বেঁচে যান 'অ্যালান' ও তার বাবা। শোকে পাথর হয়ে পড়া তার বাবা সভ্য জীবনের রুষ্টতা দেখে ছেলেকে নিয়ে চলে আসেন দক্ষিন আফ্রিকায়। এখানে এসে তারা শুরু করেন নতুন জীবন। ছেলে 'অ্যালান' বেড়ে উঠতে থাকে বর্বরদের সাথে। ধর্মযাজক বাবার কাছে থেকে তিনি যাবতীয় সকল শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহন করেন। 'অ্যালানের' বাবা ততদিনে হয়ে ওঠেন আফ্রিকার জুলুল্যান্ডের বর্বরদের সর্দার। সবাই তাকে মন থেকে মেনে নেয় তাদের নেতা হিসেবে। এক সময় বৃদ্ধ হন তিনি। তার মৃত্যুর পর ছেলে 'অ্যালান' হন তাদের নতুন সর্দার। সাদা চামড়ার লোক হওয়া সত্ত্বেও বর্বররা তাকে গ্রহন করে নেয় নিজেদের রক্তের ভাই হিসেবে। স্থানীয় ভাষায় নাম দেয়- 'Macumazahn'- (Watcher-by-Night) যার বাংলা অর্থ- 'রাতের অতন্দ্র প্রহরী'।
তার নিশাচরতা আর প্রখর বুদ্ধিমত্তার কারনেই মূলত বর্বররা তাকে এই নাম দেন। তার সঙ্গী হ্যান্স এবং আমস্লোপগাস, যারা বিপদে- আপদে সবসময় 'অ্যালানের' পাশে থাকেন। তারা অনেক অ্যাডভেঞ্চারে যান। সেগুলো নিয়েই 'অ্যালানের' গল্প। এইসব অ্যাডভেঞ্চারের মধ্য দিয়েই তার জীবন অতিবাহিত হয়। প্রেম, ভালবাসা, বিয়ে, স্ত্রি-বিয়োগ, বর্বরদের সাথে যুদ্ধ, অন্যায়ের প্রতিবাদ, হাঁসি- কান্না, ইত্যাদি সবকিছুর মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে তার পৃথিবী বিখ্যাত সব অ্যাডভেঞ্চার কাহিনীগুলো। সারাটা জীবন তিনি কাঁটিয়ে দেন শিকার আর অ্যাডভেঞ্চারের নেশায়।
'অ্যালান' মূলত একজন শিকারি যার নিশানা কখনই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। হ্যাগার্ডের বর্ণনা অনুযায়ী 'অ্যালান' ছিলেন মধ্যবয়স্ক ছোটখাটো অগোছালো এক মানুষ, যার মধ্যে মানুষকে আকর্ষণ করার মতো কিছু নেই। রুক্ষ দাড়িয়ে থাকা চুলগুলো কখনই আঁচড়াতেন না। মাথায় থাকতো হান্টার হ্যাট, আর সারা মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি। তিনি তার জীবনে অনেকগুলো অ্যাডভেঞ্চারে গিয়েছেন। অনেক কিছু শিকার করেছেন। সেই শিকার কাহিনীগুলো এখনও সারা পৃথিবীর পাঠকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে। যেই কাহিনীগুলো পড়তে গেলে গায়ের লোম সব দাড়িয়ে যায়। এতটা উত্তেজক আর রোমাঞ্চক সেই কাহিনীগুলো। সারা জীবন অ্যাডভেঞ্চার আর শিকারে কাঁটিয়ে 'অ্যালান' বৃদ্ধ হয়ে পড়েন এবং আফ্রিকার বহু দুরের নাম না জানা একটি অঞ্চলে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে নিয়ে লেখে কাহিনীগুলো পড়ে পাঠক নৈতিকতা, সাহসিকতা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো সাহস অর্জন করতে পারে। কাহিনীগুলোতে উঠে আসে তথাকথিত কিছু ভদ্র সমাজের আসল রুপ, সভ্যদের মাঝে লুকিয়ে থাকা বর্বরতা।
'অ্যালানকে' নিয়ে লেখা পৃথিবী কাঁপানো অ্যাডভেঞ্চার কাহিনীগুলোর মধ্যে রয়েছে-
1835–1838: Marie (1912)
1842–1843: "Allan's Wife", title story in the collection Allan's Wife (1887)
1854–1856: Child of Storm (1913)
1858: "A Tale of Three Lions", included in the collection Allan's Wife (1887)
1859: Maiwa's Revenge: or, The War of the Little Hand (1888)
1868: "Hunter Quatermain's Story", included in the collection Allan's Wife (1887)
1869: "Long Odds", included in the collection Allan's Wife (1887)
1870: The Holy Flower (1915)
1871: Heu-heu: or, The Monster (1924)
1872: She and Allan (1920)
1873: The Treasure of the Lake (1926)
1874: The Ivory Child (1916)
1879: Finished (1917)
1879: "Magepa the Buck", included in the collection Smith and the Pharaohs (1920)
1880: King Solomon's Mines (1885)
1882: The Ancient Allan (1920)
1883: Allan and the Ice-gods (1927)
1884–1885: Allan Quatermain (1887)
পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সেরা অ্যাডভেঞ্চার কাহিনীগুলোর মধ্যে প্রথম যে কাহিনীটিকে ধরা হয় তা হলো 'ট্রেজার আইল্যান্ড'। হ্যাগার্ড তার বড় ভাইয়ের সাথে বাজি ধরেন যে, 'ট্রেজার আইল্যান্ড'-এর চেয়ে রোমাঞ্চকর কাহিনী লেখার ক্ষমতা তার আছে এবং ১৮৮০ সালে 'সলোমনের গুপ্তধন' লিখে তিনি সেটা প্রমান করেন। এই গল্পের নায়ক ছিলেন 'অ্যাল্যান কোয়াটারমেইন'। হলিউডে 'অ্যালানকে' নিয়ে অনেক মুভি নির্মাণ করা হয়েছে। অনেক টিভি সিরিজও তৈরি হয়েছে। আমাদের সবার অতি পরিচিত এবং প্রিয় চরিত্র 'ইন্ডিয়ানা জোন্স' কিন্তু 'অ্যালানের' আদলেই তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রতি জানা গেছে, হলিউড কিংবদন্তী 'স্পিলবার্গ' নাকি 'অ্যালান কোয়াটারমেইনকে' নিয়ে নতুন করে মুভি তৈরির পরিকল্পনা করছেন।
প্রোজেক্ট গুটেনবার্গ - এ নিচের বইগুলোর নাম লিখে সার্চ দিলে পাওয়া যাবে তবে পি ডি এফ ফরম্যাট হয়তো পাওয়া যাবে না।
King Solomon's Mines
Allan Quatermain
Allan's Wife
Maiwa's Revenge
Marie
Child of Storm
The Holy Flower
Finished
The Ivory Child
The Ancient Allan
She and Allan
'অ্যালান কোয়াটারমেইন' আমার খুব প্রিয় একটি চরিত্র। তার কাহিনি পড়ে অনেক কিছু শিখেছি, জেনেছি। অনুপ্রানিত হয়েছি অনেক কাজে। কাল্পনিক একটি চরিত্র যে এমনভাবে কারও মধ্যে ঢুকে যেতে পারে এটা তার গল্প না পড়া পর্যন্ত কেউ বুঝবে না। এই কাল্পনিক চরিত্রটি আমার অন্যতম 'আইকন'।
অনেক কিছুই লিখতে পারিনি সময় স্বল্পতার কারনে। ভালোভাবে হয়তো লেখাটা গোছানও হয়নি, তবু, এই পোস্টটা তার উদ্দেশ্যে। তার মতই অগোছালো হোক তার এই পোস্ট।
পোস্ট উৎসর্গ- Allan Quatermain (Macumazahn)
........................................ ..................................................
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:৫০