মূল লেখা ঃ View this link
একটি ফটোগ্রাফ। পুরো শরীরই ডেবরিসের তলায়। তবে ডেবরিসের উপর দৃশ্যমান আছে শরীরের আরও একটু অংশ; একটা হাতের কবজি আর আঙুলে ফিতা দিয়ে পেঁচানো আইডি কার্ড।
মুখ দেখে বোঝা যায়, ছেলেটির বয়স কোনোক্রমেই আঠারোর বেশি নয়। নিতান্ত কিশোর। আঙুলে এমনভাবে প্যাঁচ দিয়ে সে তার আইডেন্টিটি কার্ড বেঁধে রেখেছিল যেন শরীর-মুখ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেলেও প্রিয়জন-পরিজন তাকে চিনে নিতে পারে।
গার্মেন্টসের ভয়াবহ সব সিরিয়াল দুর্ঘটনা শ্রমিকদের মগজে এ কোড পাঠিয়ে দিয়েছে যে, ‘‘তুমি হয়ে পড়তে পার বেওয়ারিশ, আঞ্জুমানে মফিদুলের গাড়ি এসে তোমাকে সাঁই সাঁই করে নিয়ে গিয়ে মাটিচাপা দিয়ে দিবে। আর তোমার পরিবার-পরিজন সারাজীবন অপেক্ষা ও হাহাকারের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াবে!’’
মৃত্যুর কতটা কাছাকাছি গিয়ে বা কোন পর্যায়ে তার সচেতনতা তাকে একমাত্র এ বার্তাই দিয়েছিল যে, শক্ত করে বেঁধে রাখ তোমার পরিচয়পত্র; এ শহরে, এ দেশে খুব সহজেই, স্থায়ী নাম-পরিচয়-ঠিকানাওয়ালা জীবিত মানুষেরা গার্মেন্টেসে ভয়াবহ আগুন বা সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনির হাতে মরে হয়ে যায় ‘বেওয়ারিশ’ লাশ। লাশকাটা ঘর থেকে শুরু করে নদীতে ভেসে ওঠা বেওয়ারিশ লাশ- কত কত ঘটে যাচ্ছে আমাদের যাপনে-উদযাপনে।
স্টিল ফটোগ্রাফগুলোর মাধ্যমে যে ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন দেখি: ইট-বালি-সুড়কির স্তুপে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা নারী, যার এক হাতের ভেতর দিয়ে একটি রড ঢুকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে রেখেছে; নুপুর-পরা একটি পা, শরীরটা স্তুপের তলায় আটকাপড়া; মৃত এক নারীর উপর উপুড় হয়ে পড়ে থাকা এক পুরুষ; শুধু একটি হাত; ফর্মাল প্যান্টের সঙ্গে ফর্মাল সু-পরা একটি পা; একলা ঝুলে থাকা একটি আইডি কার্ড; সে কিশোর, যে হাতের আঙুলে আইডি কার্ড পেঁচিয়ে মরে গিয়েও ঘোষণা দেয়, ‘তবু আমারে দেব না ভুলিতে’।
তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।