একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখলেই পরিস্কার বোঝা যায় যে সৃষ্টিকর্তা বলে একটি পরম সত্ত্বা আছেন।
ধরুন এই পৃথিবীর কথা। এখানে বায়ু আছে। সেই বায়ুতে অক্সিজেন আছে যা মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য। আবার পানির কথা ধরুন। এটা বিশ্লেষন করলেও অক্সিজেন পাবেন। মাছের কিন্তু মানুষের মত নাক নেই। তারা ফুলকার সাহায্যে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহন করে থাকে। তাদের ফুলকার ম্যাকানিজমটাই ওইরকম।
প্রকৃতি কিন্তু ইউনিফরম না। এখানে ডাইভারসিটি আছে। যেমন পানীকূলের জীবন ধারনের জন্যে প্রকৃতিতে শুধু যে বায়ু ও পানি আছে তাই নয়- আছে নানা ধরণের উদ্ভিদ, ফল, মূল। এই ফলগুলো কিন্তু সবগুলো একই রকম নয়। একেকটি একেক রকম। কোন ফলে হয়ত আছে স্যালিক এসিড আবার অন্য ফলে হয়ত দেখা যাবে আছে টারটারিক এসিড।
এই বৈচিত্রই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করছে। কারণ প্রানীগুলো শুধু একই ধরনের খাবার গ্রহন করছে না। তারা একেক সময়ে একেকটা খাদ্য গ্রহন করছে। ফলে তাদের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
কোন মানুষ যদি প্রকৃতি তৈরী করতে চায় তাহলে কিন্তু সে এরকম বিপুল বৈচিত্রময় প্রকৃতি তৈরী করতে পারবে না। আর প্রকৃতি যদি এমনি এমনিই তৈরী হতো তাহলে সব ধরণের প্রজাতির প্রাণীর বেঁচে থাকার মত পুষ্টি উপাদান সুষমভাবে প্রকৃতির মধ্যে বিদ্যমান থাকতো না।
কোন কোন ফলে শাস বেশি আছে এবং টক। আবার কোন কোন ফল সুমিষ্ট। এই যে বৈচিত্র- এটাই পৃথিবীতে প্রাণীকুলের বেঁচে থাকার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে।
শুধু প্রাণীগুলোর ফুড চেইনের কথা বিবেচনা করলেই বোঝা যায় কেউ একজন অত্যন্ত নিপুনভাবে সব ধরণের উদ্ভিদ তৈরী করেছেন। এবং যেহেতু তিনি উদ্ভিদ তৈরী করেছেন তাই তিনি জানেন এগুলোর উপাদান কি কি। সেই উপাদানগুলো কিভাবে প্রাণীর শরীরে স্থানান্তিরিত (খাদ্য গ্রহন ও পরিপাকের মাধ্যমে যেটা হয়ে থাকে) হবে সেটা কেবল তার পক্ষেই জানা সম্ভব। তাই প্রাণীর শরীরে সেই রকম ম্যাকানিজম বিদ্যমান যা প্রকৃতির উপাদানগুলো সহজে নিজ শরীরে স্থানান্তিরত করতে পারে।
আঁখ বা ইক্ষু। এর বাইরে আবরণটি অত্যন্ত শক্ত। অথচ ভেতরে রয়েছে শুক্রোজ যা অত্যন্ত মিষ্ট। এই শুক্রোজ পানির সাথে মিশ্রত থাকে আঁখের মধ্য তরল হিসেবে। আঁখের যদি প্রতিটি কোষ বিশ্লেষন করেন তাহলে দেখবেন এই মিশ্রনটি হোমোজেনিয়াস।
ডাব বা নারিকেল। এরও বাইরের আবরণ অত্যন্ত শক্ত। কিন্তু ভেতরে রয়েছে অনেকখানি সুমিষ্ট তরল। এই তরল উৎপাদনের প্রক্রিয়া কিন্তু খুব সহজ নয়। এটা কোন বিজ্ঞানী চাইলেও তৈরী করতে পারবে না।
আবার এমনি এমনিও তৈরী হবে না। এর জন্যে প্রয়োজন একটি প্রক্রিয়া।
কমলা। আমরা দেখেছি নারিকেলের মধ্যে পানি থাকে এমন অবস্থায় যা গ্লাসে ঢালা যায় বা চুমুক দিয়ে খেয়ে ফেলা যায়। কিন্তু কমলার মধ্যে যে ফ্লুইড থাকে সেটা কিন্তু নারিকেলের মত থাকে না। এটা বিভিন্ন সফট কোষের মধ্যে বিন্যস্ত থাকে।
সৃষ্টিকর্তা শুধু ফলমূলই তৈরী করেননি। মানুষের খাবার চাহিদা মেটাবার জন্যে প্রক্রিতিতে রয়েছে ধান। শুধু ফলমূল খেয়ে জীবন ধারণ করা কষ্টকর। তাছাড়া পৃথিবীর সব স্থানে সমানভাবে ফলমূল উৎপাদিত হয় না। তাই এমন একটি উদ্ভিদ সৃষ্টি করা হয়েছে যা কোটি কোটি মানুষের খাদ্যের চাহিদা মেটায়।
সৃষ্টিকর্তা কিন্তু প্রানীর খাদ্য হিসেবে শুধু উদ্ভিদের সৃষ্টি করেননি। তিনি এই খাদ্যচক্র এমনভাবে তৈরী করেছেন যেখানে এক প্রানীই হবে আরেক প্রাণীর খাদ্য। যেমন মানুষের খাদ্য মুরগী, বাঘের খাদ্য হরিণ, মানুষ ইত্যাদি।
এই যে চক্র, এটা কি এমন কারো পক্ষে তৈরী করা সম্ভব যিনি এই সকল উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহের গঠন সম্পর্কে জানেন না?
উত্তর হবে না। এটা শুধু এমন কারো পক্ষেই তৈরী করা সম্ভব যিনি সকল প্রাণীর সম্পর্কে সম্যক অবগত।
তাই বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে সুস্পষ্টভাবেই বলা যায় যে এই মহাবিশ্ব, প্রকৃতি এসবের একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন।