কয়েকদিন ধরেই অপেক্ষায় আছি।বৈশাখ,বৃষ্টি-দুটোরই।হেলতে দুলতে আয়েশী চালে বৈশাখ এই এলো বলে।কিন্তু দ্বিতীয় জনের এখনো কোন খোঁজ নেই।আজকাল দেখি বেশ রকমের গরম পড়া স্টার্ট করেছে।সকাল থেকেই রৌদ্রের খেলা চলে।বৃষ্টিতো দূরে থাক,আশি বছরের বুড়োর পাকা চুলের মত শুধু সাদা মেঘের ওড়াওড়ি।ঐ মেঘে নাকি মন কেমন কেমন করে।গরমের চোটে গলাটাই শুকিয়ে আসে শুধু।মন অবধি আর পৌঁছতে পারেনা।তবু হাঁ করে মাঝে মাঝে আকাশ দেখি।এক কোণায় বৃষ্টি নামানি মেঘ যদি দেখা যায়।কিচ্ছুনা।শুধু একটুখানি বৃষ্টি।ভেতর,বাইরের সব মেঘ ঝেটিয়ে বিদায় করতে পারে এরকম একটা বৃষ্টি।
কয়েকদিন ধরেই মনটা গুমোট হয়ে আছে নানা কারণে।মাত্র শেষ হওয়া মিড এক্সাম বিপর্যয় ভুলতে কষ্ট হচ্ছে।অথচ হিসাব নিকাশ করতে গেলে সব দায়ভার নিশ্চিন্তে আমার কোলে চড়ে বসবে।কাজেই উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর জন্যও এক মিলিমিটার জায়গায় বাকি নেই।যত বড় হচ্ছি দিন দিন তত গাধা হচ্ছি।নিজের ভাল যে বোঝেনা তাকে গাধা ছাড়া আর কি বলা যায়।আমিও সব মেনে নিয়ে হে হে করে হেসে উঠি।যেন গাধা হওয়াতেই দুনিয়ার সব সুখ।আই ইউ টির বিরক্তিকর জিনিসগুলার মধ্যে একটা হচ্ছে মিড এক্সাম শেষ হতে না হতেই পেছন থেকে সেমিস্টার ফাইনাল ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলে।কাজেই মিড এক্সাম খারাপ করে শান্তিমত কয়েকদিন হাপুস হুপুস কাঁদবো সে উপায়ও রাখেনি বজ্জাত অথরিটি।মিড এক্সাম শেষ হতে না হতেই শার্টের হাতায় চোখে মুছে সেমিস্টার ফাইনালে আরো বড়সড় কান্নাকাটির জন্য প্রস্তুত হও।"বাছা,পালাবে কোথায়??" বাংলা সিনেমার ডায়লগের মত তখন মনে হয়- "ছেড়ে দে শয়তান,এ জীবন আর রাখবোনা!!" মনের কথা মনেই থাকে।জীবন তো আর বাংলা সিনেমা না।
এতদিন শুধু শুনতাম।আর এখন বোঝার ঠ্যালায় বাপ মায়ের দয়া দাক্ষিণ্যে প্রাপ্ত জানটা যায় যায় অবস্থা।মেকানিক্যাল এ যখন ভর্তি হলাম তখন থেকেই শুনে আসছি-এইটা এইরকম সাবজেক্ট যা সেইরকম কঠিন।ফার্স্ট ইয়ারের তাচ্ছিল্যে সেইটা বরাবরই উড়িয়ে দিয়েছি।কিন্তু থার্ড ইয়ার এ আর সম্ভব হচ্ছেনা।পড়াশুনা নিয়ে কোনদিনই সিরিয়াস ছিলাম না।আমার মত পাবলিকও এখন রেফার্ড এক্সাম এর দুঃস্বপ্ন দেখে ইদানিং ঘুমের মদ্ধে চিল্লায়ে উঠতেসে।মেকানিক্স স্যারকে দেখলে এখন নবাব সিরাজ উদদৌলা ছবির জল্লাদ মনে হয়।মাথা থেকে ঘাড় নামানোর ধান্দায় যে মানুষটা পরীক্ষায় দুর্বোধ্য প্রশ্ন করার জন্যে নিজের জীবন সঁপে দিয়েছে।সাথে গলাকাটা অন্যান্য সাবজেক্ট গুলাও বসে নেই।এমন মাইনকার চিপায় জীবনে খুব বেশি পড়িনি এ কথা হলফ করে বলতে পারি।
এত কিছুর পরেও বন্ধুদের হাসি হাসি মুখগুলোই এখনো পুরো যান্ত্রিক হতে দেয়নি।ওদের দিকে তাকিয়ে আটটা পাঁচটা ক্লাস করার যন্ত্রণা মুছে ফেলি হাসিমুখে।হই হই করে মাঠে নেমে যাই ফুটবল নিয়ে।কিংবা করিডোরে ঘন্টার ঘন্টা ক্রিকেট খেলা।সন্ধ্যা রাতে রুম আঁধার করে ভোর অবধি নতুন ডাউনলোড করা কোন ইংলিশ সিরিয়াল পাগলের মত একটার পর একটা দেখে যাওয়া।আমার জীবনে বাবা মার চে বন্ধুদের সান্নিধ্যেই বেশি সময় কেটেছে।কখন কীভাবে পরিবারের জায়গাটুকু এইসব বজ্জাতগুলা দখল করে নিয়েছে টেরই পাইনি।তবে ইদানিং টের পাচ্ছি।আর তো বেশি দেরি নেই।খুব বেশি হলে আর দেড়টা বছর।চেনা চেনা মুখগুলো চোখের সামনে থেকে ঝাপসা হওয়া শুরু করবে।কাঁধে যে জায়গাটাতে তুহিন কিংবা মুহিব হাত রেখে চলতো সে জায়গাটুকুতে বাস্তবতা নামের রষকষহীন বেয়াদব মানুষটা জোর করে খামচে ধরবে।স্মৃতিটুকুতেও কি ছায়া ফেলতে চাইবেনা? দেখা যাক...
দূরের চিন্তাগুলো আপাতত ওখানেই থাকুক।তারচে গল্পের বোকা কাকটার মত চোখ বন্ধ করে দুনিয়ার সব অস্থিরতা থেকে নিজেকে কিছুক্ষণের জন্য সরিয়ে রাখি।নচিকেতা বাবুর সাথে গলা মিলাতে পারলেও খারাপ হয়না-"এই বেশ ভাল আছি"
হ্যা,ভালই আছি।কথাটা আজকাল বড়বেশি বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়...
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ৯:৫৮